ভারতীয় প্রেসিডেন্ট প্রণব বাবু বাংলাদেশকে তিস্তা সহ অন্যান্য নদ-নদীর পানির সুষ্ঠ বন্টনে যে আশ্বাস দিয়েছে তাতে বর্তমান হাসিনার সরকারের অগাধ বিশ্বাস আছে। গতকাল ১৫ই মার্চ এমনই কথা বলল দিল্লীতে নিযূক্ত বাংলাদেশী হাইকমিশনার তারেক করিম। ভারতের এনডিটিভি চ্যানেলকে এটা সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় আধাঘন্টা ব্যাপী স্বাক্ষাৎ দেন তারেক করিম;
Click This Link
তারেক করিমের কথা হল নেপাল, ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশের পানির বন্টনকে আভ্যন্তরীন পানি ব্যাবস্থাপনায় পরিবর্তন করা দরকার;
Bangladesh, India, Bhutan and back to back Bangladesh, India and Nepal because these are two separate basins we don't link them up and at some point of time the linkage will come because it's not just management we have changed the rhetoric from water sharing to water management.
তার এই কথা অস্বচ্ছ ও উজানের দেশ ভারত হতে শুস্ক মৌসুমে বাংলাদেশের ন্যায্য পানি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত নয়। কারণ আমাদের ভারতের সাথে করা ১৯৭৭, ১৯৮২র লিখিত চুক্তিতে যথাক্রমে ৩৪ হাজার ও ২৪ হাজার কিউসেক পানি গ্যারান্টি ক্লজ শুস্ক মৌসুমের জন্য নির্ধারিত ছিল। মূল কথা হচ্ছে ভারত হতে শুস্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি প্রাপ্তি। সময়মত পানি না আসলে বাংলাদেশ কিভাবে এই পানি ব্যাবস্থাপনা করবে। তারেক করিম এমন ধরণের কথা বললে যেখানে ভারত সরকার নিজেদের উজানের রাষ্ট্র হিসেবে আমাদেরকে শুস্ক মৌসুমে ন্যায্য পানি দেওয়ার চেয়ে আভ্যন্তরীন দূর্বলতার অজুহাত দেখিয়ে পাশ কাটাবে। বাংলাদেশকে যেন শুস্ক মৌসুমে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় তথা ফারাক্কা দিয়ে ন্যায্য পানি না দিতে হয় তাই তড়িঘড়ি করে হাসিনাকে দিয়ে ভারত ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদী চুক্তি করিয়ে নেয়। হাসিনা এই চুক্তির আগে দেশবাসী, সংসদ এবং দেশীয় নদী-পানি বিশেষজ্ঞদের মতামত বা তাদেরকে তথ্য জানানোর পরোয়া করেনি। কারণ এই ৩০ বছরের চুক্তিতে কোন গ্যারান্টি ক্লজ নাই। বলা হয়েছে যে ফারাক্কার উজানে ৭৫ হাজার কিউসেক পানি জমলেই কেবল বন্টন হবে। সেখানে ভারত পাবে ৪০ হাজার এবং বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক। এটাই হল চাণক্য ও প্রতারণা। কারণ ভারতের গঙ্গা নদ সেই দেশের যে রাজ্যর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তাতে কৃত্রিম ফিডার খাল সহ পাম্পের মাধ্যমে ব্যাপক পরিমাণে পানি সরিয়ে নেওয়া হয়। তাই শুস্ক মৌসুমে ফারাক্কায় এই ভাবে কোনদিনও ৭৫ হাজার কিউসেক পানি জমবে না। হাসিনার মত দালাল পেয়েই ভারত একটা বড় দাউ মারে। পরে যখন ২০০১-০৬ জোট সরকার এই নিয়ে ভারতের সাথে দেন দরবার করতে যায় তখন ভারত বলে যে বাংলাদেশ বর্ষা মৌসুমে পানি ধরে রাখতে পারে না। ২০০৫ সালে বাংলাদেশের সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী মেজর (অব) হাফিজ তখনকার ভারতীয় হাইকমিশানর মিজ বিনা সিক্রির কাছে এই অভিযোগ করেন যে বাংলাদেশ শুস্ক মৌসুমে ন্যায্য পানি পাচ্ছে না। তখন মিজ বিনা সিক্রি বলেন;
Indian High Commissioner Veena Sikri said the JRC mandated dialogue has been active since 2003 and the problem of Bangladesh's water resources was its mismanagement.
Hafiz Uddin BB and Veena Sikri contradict over water sharing of common rivers
Click This Link
আমি ২০০৪-০৫ এ বাংলাদেশের বিভিন্ন বাংলা দৈনিকে বিনা সিক্রির বিভিন্ন বিবৃতিতে বলতে দেখছি "বাংলাদেশ বর্ষা মৌসুমে পানি ধরে রাখতে পারে না"। তাই যদি হয় তখন ভারতের সাথে শুস্ক মৌসুমের জন্য পানি চুক্তি করে কি লাভ হল? এমনতো কখনও শুনিনি যে কোন দুটি দেশ একটি অভিন্ন নদীর পানি শুস্ক মৌসুমের জন্য বন্টন চুক্তিও করে আবার জলাধার নির্মাণ করে বর্ষা মৌসুমের পানিও ধরে রাখে! একেবারেই অদ্ভুত! বিনা সিক্রির কথা শুনে মনে হয় যে ভারত শুস্ক মৌসুমে সঠিক পানি না দিলেও বর্ষা মৌসুমে দশ গুণ পানি দেয়, সেটাই আমরা ধরে রাখতে পারি না কথা হল একই বছরে গ্রীষ্মে পানি না দিলেও বর্ষা মৌসুমে সুদে আসলে ভারত আমাদের বকেয়া পানি শোধ করে দিচ্ছে
এই কথাটাই ২০০১-০৬ মেয়াদে বিগত জোট সরকার মানতে চায়নি। আর অন্যদিকে ঐ সময় হাসিনা ও তার দল আলীগ তখনও আনন্দে বলত আমরা সফল পানি চুক্তি করেছি। এখন ৩০ বছর মেয়াদী ফারাক্কা চুক্তিতে বাংলাদেশ শুস্ক মৌসুমে পানি না পেলেও আজ থেকে ৮ বছর আগের বিনা সিক্রির কথাতেই তাল মিলাচ্ছে বাংলাদেশ। তাতে বাংলাদেশ শুকিয়ে যাক না কেন দালাল হাসিনা গং ভারতের গুণগাণ গাইবে। ১৯৬৭ ও ১৯৭৫ সালে আমাদের মোট নৌপথের দৈর্ঘ্য ২৪ হাজার কিমি থাকলেও বর্তমানে আছে ৬ হাজার কিমি! ভারতের কল্যাণে বারো আনাই গায়েব। কিন্তু তারেক করিম বলবেন এটা আমাদের পানি অব্যাবস্থাপনার পরিণতি!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৪:৪১