একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর সারা দেশ বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করলেও কিশোরগঞ্জের মানুষ সে আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। কারণ এ জেলা শহরটি সেদিনও ছিলো রাজাকার, আল-বদরদের দখলে। পরদিন ১৭ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চতুর্মুখী সাঁড়াশি আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর এই ধ্বজাধারী ঘাতকরা পরাজয় মানতে বাধ্য হয়। যেই সকল ঘৃণ্যিত রাজাকারের জন্য কিশোরগঞ্জবাসীর চিরদিনের ঘৃণা তার মধ্যে অন্যতম দেওবন্দের মাও. আশ্রাফ আলী থানভীর অন্যতম খালিফা মাও. আতাহার আলী। এই কুখ্যাত রাজাকার কিশোরগঞ্জে কমপক্ষে ৩ হাজার লোককে হত্যা করে। সে মূলত: পরিচিত ছিল নেজামে ইসলামের নেতা মাওলানা আতাহার আলী দেওয়ান হিসেবেই। তার অন্যতম সাগরেদ ছিল বর্তমান দেওবন্দীদের অন্যতম পূজনীয় মওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ ওরফে হাফেজ্জী হুজুর। এছাড়া আতাহার আলীর মুরিদ ও খলিফা মওলানা আতাউর খান ( সেই সময়কার স্বাধীনতাবিরোধী ইসলামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক) তার পীর আতাহার আলীর কুকীর্তিতে সহযোগীতা করে (বিএনপি আমলে সে এমপি হয়)।
১) বর্তমানে বাংলাদেশ জেনোসাইড আর্কাইভে এ রাজাকারদের নাম রয়ে গেছে:
* রাজাকার-মওলানা আতাহার আলী, সাং ঘোঙাদিয়া, জেলা-সিলেট।
* রাজাকার-মওলানা আতাউর রহমান খান পিতা মওলানা আহম্মদ আলী খান, কিশোরগঞ্জ সদর।
* মওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ, (হাফেজ্জী হুজুর) সভাপতি, খেলাফত আন্দোলন, গ্রাম-সোহাগপুর, থানা-বেলকুচি, পাবনা
২) দেওবন্দী সিলসিলার বা নিখিল ভারত জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের (দেওবন্দ) উত্তসুরী ‘পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম’ নামক দলটিও সেই সময় মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এ দলটির পশ্চিম পাকিস্তান শাখার নেতৃত্বে ছিলেন মুফতী মাহমুদ ও পূর্ব পাকিস্তান শাখার নেতৃত্বে মৌলানা মহীউদ্দীন।
৩) শাকের হোসেন শিবলী’র লেখা “আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের খোজে” নামক বইয়ের রেফারেন্স দিয়ে অনেকেই বলতে চান: হাফেজ্জীর অনুপ্রেরণায় মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিল বা ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ফতওয়া দিয়েছিল।
এদের উত্তরে বলতে হয়: শাকের হোসেন শিবলী’র লেখা “আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের খোজে” একটি চরম বিভ্রান্তিমূলক ও ইতিহাস বিকৃত বই, যেই বইটি জামায়াত যুদ্ধাপরাধের দায় এড়ানো জন্য ছেপেছিল। যুগান্তর পত্রিকার ধর্মীয় পাতার বিভাগিয় সম্পাদক শাকের হোসেন শিবলী “আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের খোজে” নামক বিতর্কিত বইয়ে বহু কুখ্যাত রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেখায়। এই বইয়ের লেখাগুলো যুগান্তর পত্রিকায় ধারাবাহিক আসলে যুগান্তর পত্রিকা ব্যাপক সমালোচনার মুখে। সারা দেশ থেকে যুগান্তর অফিসে ফোন আসে এই উপহাসমূলক লেখা বন্ধ করার জন্য। ব্যাপক সমালোচনার মুখে যুগান্তর পত্রিকা ধারবাহিক লেখাটি বন্ধ করে এবং একই সাথে শাকের হোসেন শিবলীকে বরখাস্ত করে। এই বইটি ব্যাপক সমালোচিত এবং জাতিকে বিভ্রান্ত করতেই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছাপায় যুদ্ধাপরাধীদের পেয়িং এজেন্ট শিবলী । আর এই বিভ্রান্তিকর বইয়েই দেওবন্দী মওলানা কুখ্যাত রাজাকার আতাহার আলী ও হাফেজ্জীকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা যুগশ্রেষ্ঠ মিথ্যা ও ধোকাবাজি নামান্তর।
প্রকৃত সত্য হচ্ছে, জামায়াতের পাশাপাশি কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররাও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। যাদের সহায়তায় ’৭১-এ করা হয় বহু খুন ধর্ষণ ও লুটতরাজের মত ওয়্যার ক্রাইম ।
৪) অনেকে বলতে পারেন: কওমী রাজাকারদের অনেকে যেমন হাফেজ্জী হুযুর তো মারা গেছে। তার বিচার হবে কি করে?
উত্তর হচ্ছে: এই কওমী রাজাকারা যাদের হত্যা, ধর্ষণ, সম্ভ্রমহরণ করেছে তারা তো তাদের ক্ষমা করেনি। তাহলে আমরা এদের ক্ষমা করব কিভাবে?
নাৎসী যুদ্ধাপরাধীদের যেমন কবর থেকে তুলে বা কবরের গায়ে আঘাত করে বিচার করা হয়েছিল তেমনি এই মৃত কওমী রাজারকারদেরও অনুরূপ কায়দায় বিচার করতে হবে, দিতে হবে অনুরূপ শাস্তি।
*****১৯৯১ সালে প্রকাশিত ‘কিশোরগঞ্জের ইতিহাস’ গ্রন্থে এসব ঘাতক-দালালদের অনেকের নামই বিধৃত হয়েছে। ছড়াকার মুক্তিযুদ্ধের গবেষক এবং ১৯৭১-এর একজন বীর শহীদের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাহান রচিত ‘রক্তে ভেজা কিশোরগঞ্জ’ গ্রন্থেও উল্লিখিত হত্যাকাণ্ডের বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


