somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যদি মৃত্যুকে মেনে নিতেই হয়

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

------------প্রতিদিন অফিসে যাবার পথে দু’টো কবরস্থান পথে পড়ে। রোজ ৪ বার মৃত্যুকে বা মৃতদেরকে কাছ থেকে দেখতে হয়। হঠাৎ হঠাৎ ভাবি, মাটির ওপরে যেমন ৭০০ কোটি মানুষ সংসার পেতে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সরব সেই পৃথিবী। তার ঠিক নিচেই, মাটির তলায় আরো একটা নিরব সংসার জগত প্রতিনিয়ত চলমান আছে। এমন এক জগত যেখানে কোনো শব্দ নেই, ছন্দ আছে; ভাষা নেই, কষ্ট বা সুখ আছে।

।।
খুব নিকট সময়ের মধ্যে হুবহু আমার বয়সী, ব্যাচমেট ও বন্ধু তিনজন মানুষ পাশে চলতে চলতে হঠাৎ বিধাতার চরণে ঠাঁই পেয়েছেন।
প্রতিটি মৃত্যু কাঁপিয়ে দিয়ে যায় পুরো স্বত্ত্বাকে। মৃত্যুকে ঠিক কোন ফ্রেমে ব্যখ্যা করা সম্ভব? আমাদের দেশের মানুষ যেন ঠিক ৪০ হলেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে শুরু করে। আমি ৪০ ওর্দ্ধদের প্রায়ই বলতে শুনি, “আর কদ্দিন"।

সবচেয়ে বেশি ভয় পান কাকে? বউ? বস? বাবা? পুলিশ? পলিটিশিয়ান?
মৃত্যুকে আমার সবচেয়ে বেশি ভয়। একটা দমকা এসে সব স্পন্দন থামিয়ে দেবে,
সব প্রাণপ্রাচুর্য ফুরিয়ে দেবে,
সব সাড়া থামাবে।
আমি থাকব না অথচ সব থাকবে,
সবাই থাকবে! রাত নামবে, ভোর হবে,
পাখি ডাকবে, বেহায়া বসন্ত বাতাস কোকিলকে পাগল করবে।

শুধু আমি মৃত্তিকা শয়ানে। সব দেখব, শুনব, বুঝব কিন্তু নিজেকে জড়াতে পারব না। বড় বিষন্নতায় আচ্ছন্ন হই মৃত্যুকে ভাবলে। অন্ধকার মৃত্যু তবু বিষন্নতা নিয়ে বারবার মনে পড়ে। মরে যেতে হবে-এই ভাবনা বিবস করে দেয় আমায়। জীবনের আর কতদিন বাকি?

এদেশের মানুষ যদি গড়পরতায় ৫০-৬০ বছর বাঁচে তাহলে আর কিছু বছর, কিছু দিন। এরপর এক আধাঁরের আবছায়া। এই রূপ, রস রঙ্গ ভরা জগতে পড়বে না আমার পা।

প্রথমদিন সবাই শোকে কাতর হবে, দ্বিতীয় দিন চুলা জ্বলবে, পরের দিন শোক স্তিমিত হয়ে আসবে, সবাই “বেঁচেতো থাকতে হবে” বলে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসার সংগ্রামে নামবে। জীবন জগত এগিয়ে চলবে তার নিজের মতো।

আমি মরে গেলে তারপর এই পৃথিবীতে কী কী পরিবর্তন আসবে? বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি হতে কমে ১৫ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯ হয়ে যাবে কিন্তু আমার মতো সামান্য আদম সন্তানের মৃত্যুতে তো আর রেকর্ড বদলাবে না তাই সংবাদে, পেপারে, বাচ্চাদের বইয়ে সেটা ১৬ কোটিই থেকে যাবে। বাসাটায় নতুন ভাড়াটিয়ার জন্য ২-লেট ঝুলবে। ভাড়াটিয়া না পাওয়ায় ২-লেট বোর্ডটায় ধুলা আর কাকের চুনা হাগুর দাগ ভরে উঠবে।

ইন্সুরেন্স কোম্পানীর দালাল শকুনের মতো খুঁজে বেড়াবে ক্লেইমের টাকা লোপাট করে দেবার কোনো ফাঁকফোকর বের করা যায় কিনা। পাড়ার মোড়ের পানের দোকানটা আগের মতোই চা-পান বিক্রি করেই যাবে। হয়তো চায়ের কাপ ৬ টাকা হতে ৭ টাকা হবে আর চা-খোররা তা নিয়ে তার সাথে তর্ক জুড়বে। দোকানী হয়তো তার পানের মধ্যে চুনের ঘষা দেবার ফাঁকে ভুলে একবার তার নতুন কাস্টমারকে আগের অভ্যাসে বলে বসবে,

“জর্দা কী দিমু”।

বাজারের চেনা দোকানদার দুই চারদিন আমার অপেক্ষায় থাকবে, তারপরই তার “ইশপেশাল” কাস্টমারকে ভুলে নতুন কাউকে খুজে নেবে তার “ইশপেশাল” প্রোডাক্টটা গছিয়ে দেবার জন্য।

অফিসের গাড়ি প্রতিদিনকার মতো আমার গলির মাথা দিয়ে সেই রেইনট্রি গাছটার নিচে দিয়ে দ্রুত অফিসের দিকে ছুটবে। যেখানটায় বসে গাড়ি আসতে আসতে দেশ উদ্ধারের কাজ করতাম সেই বেঞ্চটায় ধুলা জমবে। হয়তো অন্যকোনো কর্পোরেট দাস বসে অপেক্ষা করবে।

কলিগরা? হাহ হাহ হা!

বন্ধুরা একটা শোক সভা আয়োজন করবে। সেই সভায় সিঙ্গারা কোথা হতে আসবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি কমিটি গঠিত হবে। ফেসবুকের গুনগ্রাহিরা দুই চারদিন পরে লক্ষ্য করবে সেই আতেলটার ফালতু কথাবার্তা আর পোষ্ট হচ্ছে না। আইডি বদলেছি ভেবে কেউ কেউ অন্যপথে খুঁজবে।

অনেকদিন পর কেউ পোস্ট করবে “বিশিষ্ট ফেসবুকিয়ান”........ সাহেব অমুক তারিখের অমুক সময় ........ফরমাইয়াছেন। সাথে সাথে তার পোষ্টে ৩১টা লাইক পরবে। কেউ কমেন্টসএ লিখবে “আহা! বড় ভাল লোক ছিল (??????????)।

কররস্থানের রক্ষক মাঝে মাঝে উপরে গজানো আগাছা পরিষ্কার করে দেবে। কারো জন্যই জগত থেমে থাকে না, থাকারও নয়, থাকতে নেই।

জীবন ফুরিয়ে আসছে। দ্রুত অতি দ্রুত। আমি তার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। সে খুব শীগগীরই আসবে।

মৃত্যু আসবেই তার সময়মতো------------
তবে আমি তোমার জন্য প্রস্তুত----------
শুধু এখনো কিছু বিদায় নেবার বাকি--------
সেটুকু ফুরসত কি তুমি দেবে না আমায়?---------
শুধু অল্প কিছুটা সময় ভিক্ষা দাও।------
কিছুটাই, তার বেশি নয়।

উপলব্ধি: একমাত্র মুত্যুই সত্য। বাকিটা শুধু বেঁচে থাকার অভিনয়

ছবিয়াল: সস্তা মোবাইল ক্যামেরা

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×