somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মন মগজে যখন পারভারসন

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছদ্মনামে ৬টি সত্যি ঘটনা আগে বলি।
এক;
স্থান-ইডেন কলেজের গেট। একটা পাগল ছিল। সে প্রতিদিন ইডেনের গেটে দাড়িয়ে থাকত। তার টার্গেট থাকত নরম সরম দেখতে মেয়েরা। এমন কাউকে বের হতে দেখলেই সে দৌড়ে যেত। কাছে গিয়েই লুঙ্গীর খুট ধরে বলত, “আপা, একটা জিনিস দেখবেন?” অমনি মেয়েরা লজ্জায়/আতঙ্কে দৌড়ে পালিয়ে যেত। এটাই ছিল পাগলের আনন্দ। গল্পের একটা দ্বিতীয় অংশ আছে। সেটা শেষে বলব।

দুই;
স্থান-খিলগাও। অনিন্দ্য তার স্ত্রী দীপান্বিতাকে নিয়ে একটি এপার্টমেন্ট বাড়ির এ্যাটিকের ঘরে থাকে। টোনাটুনির সংসার। কোনো এক হেমন্তের বিকেলে অনিন্দ্য বাসার ছাদে দাড়িয়ে কাছেই মাঠে বাচ্চাদের খেলা দেখছে। দীপান্বিতা রান্নাঘরে তার জন্য পাকোড়া ভাজছে। ভাপসা গরমে তার গায়ে হালকা পোষাক। ৩০০ গজ দূরে আরেকটা বাড়ির ছাদে কিছু বাচ্চা খেলছে। দীপান্বিতা পাকোড়া ভাজার ফাঁকে ফাঁকে তাদের খেলা দেখছে। চিলেকোঠার সিড়িতে বসে থাকা একজন মাঝবয়সী লোককে সে দেখলেও খেয়াল করেনি। অনেকক্ষণ পরে কেন যেন তার দৃষ্টি আকর্ষিত হল সেই মাঝবয়সী লোকটার দিকে। মেয়েদের মনে হয় ৩য় আরেকটা চোখ আর ৬ নম্বর সেন্সটি বিধাতা বিশেষভাবে দিয়েই দেন, কারন দরকার পড়ে। দীপান্বিতা খেয়াল করে, মাঝবয়সি লোকটা তার লুঙ্গীর খুট উঠিয়ে তার ..........টি জোরে জোরে দোলাচ্ছে। তার লক্ষ্য দীপান্বিতা। বিষ্ফোরিত চোখে দীপান্বিতা কয়েক মুহূর্ত দেখল ব্যাপারটা। তবে সে নেহায়েত টিপিক্যাল লাজুক বাঙালী কন্যা নয়। মুহূর্তে সে চিৎকার করে লোকটাকে ডাকল। তার চিৎকারে বাচ্চাগুলোও খেলা থামিয়ে ঘটনা কী তা জানতে চেষ্টা শুরু করল। অনিন্দ্য ছুটে আসল। অতঃপর যা ঘটে তাই। মধ্যবয়সি লোকটার অস্বীকার, বাচ্চাদের কৌতুহলী চেষ্টা, অনিন্দ্য’র তীব্র বাক্যবান। লোকটা নেমে গেল নিচে।

তিন;
ঘটনাস্থল যাত্রাবাড়ি। অফিস ফেরত ফারিয়া আর অঙ্কূশ বাসায় ফেরে একসাথে। পথের মধ্যে একটা বাজার বসে রাত্রে। দু’জনে বাসার দরকারী কয়েকটা টুকটাক জিনিস কিনতে বাজারে ঢোকে। একটু অন্ধকার রাস্তার ধারটা। কেনাকাটা করতে গিয়ে অঙ্কূশ দাম মেটাতে একটু পিছনে পড়ে। ফারিয়া একটু এগিয়ে যায়। হঠাৎ চলতে থাকা একটা লোক ঝুকে পড়ে ফারিয়ার হিপে একটা চাপড় মারে। সে খেয়াল করেনি তার একটু পেছনেই তার স্বামী এগোচ্ছে। ঘটনাটা ফারিয়া খুব খেয়াল করল না। খেয়াল করল অঙ্কূশ। এমনিতে শান্তশিষ্ট অঙ্কূশের মাথায় রক্ত খেলে গেল। সাথে সাথে সে কলার চেপে ধরে দুমাদুম কষে দিল কয়েকটা ঘুষি। ঘটনার আকষ্মিকতায় ফারিয়া কিছুই না বুঝে চেচাতে লাগল। অঙ্কূশকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করল। পাবলিক গোল হয়ে দাড়িয়ে মজা দেখতে লাগল। অনেকক্ষণ ধস্তাধস্তির পরে চান্স পেয়ে ছুটে পালাল সেই লোকটা। একই ঘটনা ফারিয়ার সাথে হয়েছিল বাসের ভিতরে। সে বসেছে একদম পেছনের দিকের একটা সীটে। পাশেই অঙ্কূশ বসা। হঠাৎ সে খেয়াল করে, পেছন হতে কেউ তার বুকে হাত দেবার চেষ্টা করছে। প্রথমে সে ভেবেছিল ভুল হচ্ছে। কিন্তু পরক্ষনেই সে স্পষ্ট বুঝতে পারল, পেছনের একজন যাত্রী সীটের ফাঁকা স্থান হতে হাত বাড়িয়ে তার বুকে হাত দিয়েছে। পরবর্তি ঘটনাপ্রবাহ খুব গতানুগতিক। ফারিয়ার চিৎকার, অঙ্কূশের রণমূর্তি, বাসের কয়েকজন সদাশয় মানুষের ফারিয়ার পক্ষ নিয়ে ওই লোফারটাকে ধোলাই, অতঃপর তার পলায়ন।

চার;
চারু। ইউনিভার্সিটি হোস্টেলে থার্ড ইয়ারের ছাত্র। নিজের খরচ চালাতে সে একটা টিউশনি করে। ছাত্র লেভেল ৭ এর। বাড়িতে বাবা-মা ও তার বড় চাচী, মানে যৌথ সংসার। ছাত্র’র চাচা থাকেন বিদেশে। চাচী সম্পর্কে বড় হলেও বয়সে ছাত্রের মায়ের থেকে ছোট। ছাত্রের বাবা বেশিরভাগ সময়ে ট্যুরে থাকেন। পড়ানো শুরু করার কিছুদিন পরে চারু অবাক হয়ে খেয়াল করে, কাজের মেয়ের বদলে ছাত্রের চাচী চা পরিবেশন করতে শুরু করলেন। চা নামিয়ে রাখবার সময় অনেকটা সময় নিচু হয়ে চারুর সামনে কাপ এগিয়ে দিতেন। কাপের সাথে মৃদু হাসিও। পূর্ণ যুবক চারু কিছুটা আন্দাজ করলেও দুর্মূল্যের বাজারে টিউশনিটা বজায় রাখার স্বার্থ তাকে চুপ রাখে। কিছুদিন যেতে যখন তিনি দেখেন চারুর কোনো পরিবর্তন হয়নি, তিনি চা পরিবেশনের সময়ই একদিন ছাত্রকে বলেন, “রুপূ, তোমার স্যার এত নিরস কেন?” তার ডেসপারেশন চারুকে হতবাক করে দেয়। বাসার মাঝের একটা রুমে রোজ পড়ায়। রুমের পাশেই ছাত্রের বাবা-মায়ের বেডরুম। যতক্ষন পড়াত রুমের দরোজাটা বন্ধই থাকত। কিছুদিন পরে সে খেয়াল করল, রুমের দরোজা খোলা থাকা শুরু করল। ছাত্রের মা মাঝে মাঝেই পড়ার সময় এই রুমে আসা শুরু করলেন। একটা তীব্র পারফিউমের গন্ধ পেত চারু। অনেক দামী ও উত্তেজক। সেটাকে সে আমলে নিত না। কিন্তু সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা ঘটে একদিন। চারু রুপূকে পড়াতে গেছে যথারীতি। বেডরুমের দরোজা আগে থেকেই খোলা। পড়ার ঘর হতে ওই রুমটার অনেকটা দেখা যায়। দরোজার উল্টোপাশে একটা বড় ড্রেসিং টেবিল। হঠাৎ চারুর চোখ যায় সেদিকে। চারু হতবাক হয়ে আয়নায় দেখে রুপূর মা ছোট্ট একটা টুলে বসে। তার হাতে চিরুনী। আর গায়ে একটি সুতাও নেই। আয়নায় খুব পরিষ্কারভাবেই চারু আর রুপূর আম্মা-দুজনকে দেখা যাচ্ছে। রুপূর আম্মা সেটা দেখেও যেন দেখছেন না। চারু সেই মাসের বেতনটাও আর কখনো আনতে ওমুখো হয়নি। একদিন কথাচ্ছলে সে রুপূর কাছে শুনেছিল, রুপূর বাবা বেশিরভাগ সময়ই বাড়ির বাইরে থাকেন। আর তার বড় চাচার বয়স তার চাচী হতে ১৯ বছর বেশি।

পাঁচ;
রবিউল ৭ বছর ধরে একটি শিশুসদনে থাকে। তার ৪ বছর বয়স হতেই সে এখানে। এখানকার ফ্রি স্কুলে পড়ার পাশাপাশি সে প্রিন্সিপাল ম্যাডামের টুকটাক কাজও করে দেয়। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম তাকে প্রায়ই তাকে সেজন্য চকোলেট, ক্যান্ডি দেন। তার ভাল লাগে ম্যাডামের কাজ করে দিতে। কিন্তু তার তখনই ভাল লাগে না, যখন ম্যাডামের কাজ হয়ে গেলে তাকে কাছে ডেকে যখন তিনি তাকে আদর করে দেবার সময় তার হাত, উরুতে আদর করেন, বারবার তার গালে হাত রাখেন। এমনকি রাতের পড়াশোনা শেষে সবাই যখন ঘুমোতে যায় বা টিভিরুমে যায়, তখন প্রিন্সিপাল ম্যাডাম তাকে রুমে ডেকে নেন কাজের কথা বলে। কিন্তু প্রায়ই সে খেয়াল করে, ম্যাডাম তাকে ডেকে কোনো কাজ করান না, বরং তাকে তার খোলা পিঠে মালিশ করে দিতে বলেন, কখনো বা তাকে পাশে বসিয়ে তার লাবন্যর প্রশংসা করতে করতে তার গালে, হাতের বাজুতে, পিঠে কানে হাত বোলাতে থাকেন। কখনো কখনো সেই হাত নেমে যেতে থাকে আরো নিচে। ছোট্ট রবিউল বোঝে না এটা কি সত্যিই স্নেহ? মায়ের সাথে থাকার কথা তার মনে পড়ে না। স্নেহ কি এমনই হয়? কিন্তু স্নেহ করলেতো তার ভাল লাগত। তার খারাপ কেন লাগে?

ছয়;
রুমকী একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে কনসালট্যান্ট হিসেবে আবেদন করে জুন মাসে। এমনিতে তার বেশ কিছু বছর অভিজ্ঞতা আছে সেলস ডেভেলপমেন্ট নিয়ে। এই মাল্টিন্যাশনাল ফার্মটির অফিস বাড্ডায়। আবেদন করার বেশ কিছুদিন পরে তার ইন্টারভিউ ডাক পড়ে। কিন্তু রুমকী খুব অবাক হয়ে যায়, যখন শোনে তার ইন্টারভিউ হবে বিকেল ৬ টায় আর কলটি করেছেন স্বয়ং প্রতিষ্ঠানের সিইও। ইন্টারভিউও নেবেন সিইও নিজে। একটু দমে গেলেও রুমকী ওয়েবসাইটে কোম্পানীটির পরিচীতি আর অফার দেখে রাজি হয়। ইন্টারভিউ’র দিন রুমকী একটু আগেই হাজির হয়। কিন্তু ততক্ষণে সেই ১২ তলার উপরের অফিস ফাঁকা হয়ে গেছে। কর্মীরা প্রায় সবাই বাড়ি চলে গেছে। একজন কমবয়সি রিসেপশনিস্ট আর দুয়েকজন সার্ভিস স্ট্যাফকে রুমকী ঘোরাফেরা করতে দেখল। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এলেও তার ডাক পড়ে না। এরই মধ্যে নিভে গেছে অফিসের বেশিরভাগ লাইট, সন্ধ্যার মুখে কেমন একটা অস্বস্তিকর নিরবতা অফিসটাতে। রিসেপশনিস্ট মেয়েটাও তাকে বসতে বলে একসময় বেড়িয়ে গেল। তারও প্রায় ২৫ মিনিট পরে তার ডাক পড়ে। সিইও’র রুমটা একটু ভেতরের দিকে। সিইও’র রুমের দরোজা ঠেলে যখন সে ঢোকে তখনই চোখে পড়ে তার টেবিলে বরফ আর গ্লাসভর্তি হুইস্কি। ইন্টারভিউএর কোনো আয়োজনই দেখল না সে। সিইও তাকে এটা সেটা প্রশ্ন করেন, তার ফ্যাশন চয়েস, কম বয়স, কেন জব করবে, আর কে আছেন, বিবাহিত কিনা-এসব প্রশ্ন করলেও তার কাজ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করে না। রুমকী খুব অস্বস্তি নিয়ে কথা চালিয়ে গেলেও তার সিক্সথ সেন্স তাকে সতর্ক করে। একটা পর্যায়ে সিইও সাহেব তার চেয়ার ছেড়ে উঠলেন। তিনি উল্টো দিকে দরোজার দিকে যেতে চাইলেন বলে মনে হল। রুমকীর হঠাৎ কী যেন হল। সে চেয়ার ছেড়ে স্প্রিংয়ের মতো লাফিয়ে ওঠে। এক লাফে দরোজার কাছে পৌছে যায়। কখন যে সে দরোজার হাতলে হাত রাখল, নব ঘুরিয়ে টেনে দরোজা খুলল, কখন যে সে ছুটে আসা সিইওকে ধাক্কা দিয়ে বের হল কিছুই আর তার মনে থাকে না। সে শুধু শুনল, “ক্যাচ হার”। অনেক কষ্টে আর চেষ্টায় প্রাণপনে ছুটে সেদিন রুমকী কোনো বিপদ ছাড়াই বাসায় ফেরে। প্রায়ই কোনো না কোনো রুমকীর জন্য বিভিন্ন কর্পোরেটে এমন ফাঁদ পাতা হয়।

সাত;
এটি কোনো গল্প নয়। সমাজের প্রাত্যহিক জীবনে নারী বা পুরুষ কিভাবে পারভার্টদের শিকারে পরিনত হয় তার নমুনা বলি। পুরুষ বন্ধু বা সমবয়সী কলিগদের অযাচিত স্পর্শ, গায়ে হাত দিয়ে কথা বলার প্রবণতা, আত্মীয় সন্মন্ধীয় ব্যাক্তি কর্তৃক ছেলে বা মেয়ে শিশুদের অস্বাভাবিক আদর, ঠাট্টা সম্পর্কীয়দের অতিরিক্ত মাখামাখি, অশ্লীল বা ইঙ্গিতপূর্ন জোকস, অশ্লীল শব্দ করা বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, অনৈতিক বা অর্থপূর্ণ এডাল্ট মেসেজিং, নারীর বা পুরুষের রূপের বিশেষত ফিগারের প্রশংসা, অকারন ভিডিও কলিং কিংবা নোংরা ভিডিও শেয়ারিং, সহকর্মীদের দলবেঁধে অফিসে বা ক্যান্টিনে বিশেষত একজন নারীকে উদ্দেশ্য করে নোংরা জোকস বা কনটেন্ট নিয়ে মজা করা, পথচলতি কিংবা কর্মজীবি নারীর শরীরের প্রতি নজর, বিশেষভাবে বারবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো কিংবা একসেপ্ট করতে পিড়াপিড়ি করা, অসময়ে বাসায় আসার আবদার ধরা কিংবা অসময়ে কর্মীকে বিশেষত নারী কর্মীকে ইচ্ছাকৃতভাবে নিরিবিলিতে ডেকে পাঠানো, লেট নাইট পার্টিতে যেতে বা ট্যুরে যেতে পিড়াপিড়ি করা, পার্টিতে নাচতে পিড়াপিড়ি করা, অকারনে বা ইনটেনশনালী স্পর্শ করার চেষ্টা, মধ্যবয়সী নারী বা পুরুষের ইঙ্গিতপূর্ণ শরীরি আবেদন দেখানো-এই সবকিছুই পারভারসনের নানা রকম প্রকাশ।

পারভারসন একটি মানসিক বৈকল্য। যার কোনো স্থান, কাল, পাত্র, জেন্ডার ভেদ নেই। সমাজের প্রচলিত ধারনাকে ভুল প্রমান করে দেখা গেছে, পারভারসন যেমন পুরুষের একটি ব্যাধি, তেমনি এটি শুধু পুরুষের মধ্যেই নয়, একটা বড় সংখ্যক নারীদের মধ্যেও এর প্রকোপ তীব্রভাবে বিরাজমান। পারভারসনের প্রভাবেই সমাজে ইদানিং বেড়েছে ধর্ষণ, ধর্ষন পরবর্তি খুন, পরকীয়া, প্রেমজনিত প্রতারনা ইত্যাদি। পারভারসন ছড়িয়ে যাচ্ছে দৃষ্টিতে। আমরা অস্বীকার করতে পারব কি, একজন নারীর সাথে কথা হলে বা দেখা হলে তার শরীরের আবেদনময় অংশগুলোর দিকে আমাদের দৃষ্টি ঘোরে না? আমি একজন ব্যক্তির গল্প শুনেছিলাম যার বিকৃত হামলা হতে তার বাসার কাজের মানুষ এমনকি তার পুত্রবধূ পর্যন্ত রেহাই পাননি। তার নিজের মেয়েরা পর্যন্ত তার সামনে আসত না। আমি বেশ কিছু পারভার্টকে কাছ থেকে দেখেছি। তাদের একটা এ্যালিবাই ছিল। পারভারসনকে তারা এমনভাবে প্রক্ষেপন করত, শিকারকে এমন অর্থপূর্ণভাবে কিংবা আবেদনময়ীভাবে এপ্রোচ করত, যাতে শিকার আকর্ষিত হয়। আবার শিকার যদি কোনো কারনে বিদ্রোহ করে, তবে যেন বলতে পারে, আমি তো আসলে ফান করছিলাম।

পারভারসনের অনেকগুলো ধরন আছে। তার মধ্যে আছে: শিশুদের প্রতি বিকৃত আকর্ষন, মধ্যবয়সি নারীর প্রতি আকর্ষন, বিবাহিত পুরুষের প্রতি আকর্ষন, পর্নোগ্রাফির প্রতি আকর্ষন,
শুধু ট্রান্সডেন্ডারের প্রতি আকর্ষন, অশ্লীল সাহিত্যের প্রতি আকর্ষন, দলবদ্ধ বিকৃত যৌনতার প্রতি আকর্ষন, বিকৃত যৌনাচারের অভ্যাস, শুধুমাত্র ব্রোথেল প্রিয়তা ইত্যাদি। পারভার্টদের একটি টাইপ হল একজিবিশনিষ্ট। খিলগাওয়ের গল্পটার কুশিলবকে মনে আছে? এধরনের পারভারসনকে বলে এক্সিবিশনিজম। এধরনের মানসিক বিকৃতিতে আক্রান্তদের কাছে এই বিকৃতভাবে নিজের প্রাইভেট পার্টস প্রদর্শনই সব। স্বাভাবিক কোনো প্রক্রিয়াতে তারা খুব একটা বিশ্বাসি না। পারভারসন আমাদের মন মগজেই থাকে। হঠাৎ করে তার প্রকাশ ঘটে না। বছরের পর বছর বিকৃতি মনে জন্ম নেয়, বড় হয়, রোদ পানি পেয়ে পুষ্ট হয়। অপেক্ষায় থাকে উপযুক্ত সুযোগের। সুযোগ পেলেই সে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পারভারসন কোনো নির্দিষ্ট জাতিতে, এলাকায়, জেন্ডারে বা সমাজে সীমাবদ্ধ না। জিনে পারভারসন নিয়ে হয়তো কেউ জন্ম নেয় বা নেয় না। কিন্তু উপযুক্ত কিংবা ততোধিক বিকৃত পরিবেশ, পরিস্থিতি, অবারিত সুযোগ, অর্থের অঢেল সংস্থান, ক্ষমতা মানুষের পারভার্ট মনোভাবকে বাড়িয়ে তোলে। এমনও দেখা গেছে, শৈশবে বড়দের পারভারসনের শিকার হওয়া একজন মানুষ বড় হয়ে নিজেই বিকৃতির অধিকারী হয়ে পড়েন।

কেউ কেউ বলে থাকেন, ধর্মীয় অনুশাসন মানাই হতে পারে পারভারসনের অবসানের পন্থা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ধর্মীয় লেবাসে কিংবা (তথাকথিত) ধর্মাচরনে থাকা মানুষেরাও তাদের বিকৃত মানসিকতা নিয়ে হামলা করেছেন তাদের শিকারকে। শিশুরাও বাদ পড়ছে না তাদের লক্ষ্য হতে। হয়তো বলবেন, সত্যিকারের ধর্মভীরু কখনো অন্যায় করেনা। আরে ভাই, বিষয়টা স্ববিরোধী হয়ে গেল না? যিনি পারভারসন মনে লালন করেন আর পারভার্টের কাজও করেন তার ধর্মকর্মতো তাকে বিরত রাখছে না। আর যদি ওগুলো না করতেনই, তবে তো তিনি এমনিতেই প্রকৃত ধর্মপ্রান হয়ে যেতেন। সেখানে প্রকৃত ধর্মভিরুতার ভুমিকা কী?

তবে উপায়? দুঃখিত। হয়তো অপরাধ বিশেষজ্ঞ আর মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা ভাল বলতে পারবেন এর সঠিক সমাধান। আমার সীমিত জ্ঞানে অনেক বিষয় আসে। সবগুলো বলতে গেলে বিরাট একটা বালাম হয়ে যেতে পারে। তার আগেই লেখার শুরুতে একটা গল্প বলছিলাম ইডেন কলেজের। বলেছিলাম লেখার শেষে বাকিটা বলব। তো একদিন সেই পাগল গেটে দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ একজন ছাত্রীকে বের হতে দেখে সে ছুটে যায় সেদিকে। পাগলটা যথারীতি সেই ছাত্রীর কাছে গিয়ে বলল, “আপা, একটা জিনিস দেখবেন?” কিন্তু সেদিন পাগলের ভাগ্য খারাপ। ছাত্রীটিও ছিল মারদাঙ্গা। সে তথাকথিত শরম, লাজ ভুলে রুখে দাড়িয়ে বলল, “দেখাও”। ব্যাস, ওইদিন পাগলটা মাথা নিচু করে সেই যে চলে গেল, আর কোনোদিন তাকে ইডেনের গেটে দেখা যায়নি।

আমার মনে হয় কি, প্রতিরোধটাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার পারভারসনের বিরুদ্ধে। আমাদের দেশের গণমানুষের মনে বিশেষত মেয়েদের বিশ্বাস করানো হয়, লজ্জা আর গোপনীয়তা তাদের বৈশিষ্ট। অন্যায়, বিকৃত দৃষ্টি, অনৈতিক প্রস্তাবকে লুকিয়ে ছাপিয়ে রাখতে হয়। তা না হলে তারই সম্মান বিনষ্ট হবে। যেই দেশে ধর্ষক নয়, ধর্ষিতাকেই সবাই ব্লেম করে, ধর্ষিতাকে লুকিয়ে রাখতে হয়, সেখানে রুখে দাড়ানোর কথা কেউ ভাববেনা-এটাইতো স্বাভাবিক। চাপা পড়ে যায় পারভার্টের পরিচয়, অজানা থাকে তাদের বিকৃত মন মানসিকতা, বিকৃত রুচীর মানুষের নোংরা কর্মকান্ড। চুপ থাকার আর চুপ করিয়ে দেবার সংস্কৃতি যতদিন না অবসান হবে, ততদিন পারভার্টরা দাপিয়ে বেড়াতে পারবে।

আমাদের আরোপিত মিথ্যা সম্ভ্রম ও সংকোচের ট্যাবু ভাঙতে শিখতে হবে। আক্রান্ত নয়, হামলাকারীকে ঘৃনার মুখে ফেলতে হবে, সামাজিক বয়কটের মুখে ফেলতে হবে। আর হ্যা, অবশ্যই বিচারহীনতার সংস্কৃতি হতে বেরোতে হবে। আমাদের সার্বিক সমাজব্যবস্থার যেই দ্রূত অধঃপতন ও পরিবর্তন হয়েছে আর হচ্ছে, তার খোলনলচে বদলে তাকে একটি সুস্থ্য সমাজে না আনতে পারলে কোনো প্রেসক্রিপশনই কাজে আসবে না। কারন ওই দ্রূত পরিবর্তনশীল সমাজের হাত ধরে পশ্চিম হতে শুধু প্রগতি আর উন্নয়নই আসছে না, আসছে বিকৃতি, আসছে অধোগতি, আসছে নৈতিকতার অবনমন, আসছে লোভ, লালসা, হঠকারীতা, দুঃসাহস, আসছে সস্তায় বিকৃত সম্ভোগের সম্ভার। ডিশ টিভি, ইন্টারনেট আর স্মার্ট ফোন-তিনের যথেচ্ছা সুলভ সরবরাহ মিলে ঘরের কোণে এমনকি ক্ষুদে ক্ষুদে অপ্রাপ্তবয়স্কদের হাতের তালুতে চলে আসছে দেশ বিদেশের সব রঙিন সংগ্রহ। সকালের রোদটুকু শুধু মিষ্টি উষ্ণতাই তো নিয়ে আসে না, তার পেছনেই থাকে পুড়িয়ে দেবার তীব্র উত্তাপ। লুকিয়ে থাকে অতি বেগুনী রশ্মির ক্রূঢ় ভ্রূকুটি।

প্রযুক্তি আর পরিবর্তন শুধু আশির্বাদই বয়ে আনে না। বয়ে আনে অশুচি, অশুদ্ধ, নোংরাকেও। পরিবর্তনকে ঠেকানো যায় না হয়তো, কিন্তু তাকে সহনীয় ও যুক্তিগ্রাহ্যভাবে কল্যানের পথে ধাবিত করা যায়। সেই আবেদনটুকুর বড় অভাব এদেশে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৪৮
২১টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×