somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা, আমার ঢাকা

২৫ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার স্বদেশী জীবনের ৯৮ শতাংশই কেটেছে ঢাকায়। আমার স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির বন্ধু-বান্ধব সবাই ঢাকার। ছোটবেলার পাড়াতো বন্ধু-বান্ধব, বড়বেলার কর্ম-স্থলের সহকর্মীরা যারা এক পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে যায়, তারাও ঢাকায়। আমার এবং আমার স্ত্রীর বেশীরভাগ আত্বীয়-স্বজনও ঢাকায়। তাই ঢাকার সাথে আমার সম্পর্ক পুরাটাই আত্বিক। চোখের সামনেই ঢাকাকে আস্তে আস্তে বদলাতে দেখেছি। শান্ত নিরিবিলি সবুজ ঢাকা থেকে আজকের ইট-পাথরের বৃক্ষহীন কুৎসিৎ ঢাকা। কিছু মানুষের অদম্য লোভ-লালসার কাছে পরাজিত একটা অনুপম সুন্দর শহরের মৃত্যু। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিইবা করতে পারতাম! বিডিআর ২নং গেইট থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত কি বিশাল বিশাল গাছ ছিল। ইট বিছানো সাতমসজিদ রোড মনে পড়ে যেখানে রাতের আধো-অন্ধকারে রিক্সাওয়ালারাও যেতে চাইতো না। কলাবাগানের মেইনরোডে দাড়ালে প্রায় আসাদগেট পর্যন্ত দৃষ্টি চলে যেতো, ওদিকেও সাইন্স ল্যাবরেটরী ছাড়িয়ে যেতো বাধাহীন দৃষ্টি। খুব ছোট ছিলাম, ডিভাইডার-বিহীন রাস্তার পাশে দাড়িয়ে চিন্তা করতাম, এত বড় রাস্তা বানানোর মানে কি? স্কুলে পড়ার সময় স্কুল পালিয়ে ভাড়ার সাইকেলে পুরো ঢাকা টো টো করে ঘুরে বেড়ানো, পুরান ঢাকায় টিকেট কেটে ভিসিআরে হিন্দি/ইংলিশ সিনেমা দেখতে যাওয়া, আরও কত হাজারো স্মৃতি ঢাকার অলিতে-গলিতে!

আজ অনেক বছর ধরে প্রবাসী। বছরে অন্তত একবার ঢাকায় আসি। দেশে আসি বললাম না, কারন সত্যি কথা বলতে, আসি ঢাকার টানে। ঢাকা থেকে ফেরত আসার পরে ২/৩ মাস ঠিক থাকি, তারপরই আস্তে আস্তে আবার মন খারাপ হওয়া শুরু হয়। আকাশে প্লেন দেখলে চোখে পানি চলে আসে। বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে কিন্তু এই যে ঢাকাকে নিয়ে লিখছি, বার বার চোখে পানি চলে আসছে। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, আমার মন বাড়াবাড়ি রকমের খারাপ (সেটা যে কারনেই হোক) দেখলেই আমার স্ত্রী বলে, চলো ঢাকা থেকে ঘুরে আসি (আমার দেখাদেখি ও-ও দেশ বলে না, বলে ঢাকা)। সবাইকে বলে আমি নাকি বউ এর চেয়ে ঢাকাকে বেশী ভালোবসি কারন ওর জন্য ও কখনও আমার চোখে পানি দেখেনি, ঢাকার জন্য দেখেছে। আমি প্রতিবাদ করি না, কি জানি, হলেও হতে পারে! আমার স্ত্রী সবসময় প্লেনে জানালার ধারে বসে, ঢাকার কাছে আসলে আমি নীচে দেখার জন্য পাগল হয়ে যাই, স্ত্রী ধমক দিয়ে বলে, কি দেখবা, এখনও কিছুই ঠিকমতো দেখা যায় না। তারপর আমার করুণ চোখ দেখে দয়া হয়, একটু জায়গা দিয়ে বলে, আচ্ছা দেখো। এটা শুধু ওর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। সবাইকে বলে, সবাই হাসাহাসি করে। আম্মা বলেন, তুই কি পাগল? আকাশ থেকে ঢাকা দেখার কি আছে? আমার আবেগ কেউ বুঝতে পারে না। আমি আসলেই পাগল! নিজেকে বোঝাই, অতিরিক্ত আবেগ তো আসলে পাগলেরই নামান্তর!

মন খুব খারাপ হলে একগাদা টাকা খরচ করে লন্ডনের বাংগালী এলাকা হোয়াইট চ্যাপেলে যাই। পিয়াজু-ছোলা খাই। টিএসসি বা বেইলীরোডের স্বাদ পাই না। জিলাপী-সিংগারা খাই, পুরান ঢাকার স্বাদ পাই না। তবুও যাই, তবুও খাই। খাই আর মন খারাপ করি। বউ বলে, মনই যদি খারাপ করো তাহলে যাও কেন, খাও-ই বা কেন? ঢাকায় নামার পর থেকেই শুরু করি খাওয়া। বছরের ক্ষুধা মিটানোর চেষ্টা। টং দোকানের চা, রাস্তার ঝালমুড়ি-চানাচুর মাখা, হালিম, চটপটি যা সামনে পড়ে তাই খাই। ২/৩ দিনের মধ্যেই পেট নেমে যায়, টয়লেটে দৌড়াদৌড়ি, বাড়ি থেকে বের হতে পারি না। প্রতিবছর একই ঘটনা। বউ বলে, পেটে যখন সহ্যই হয় না, তখন খাও কেন?

কি উত্তর দিবো? আমি নিজেই কি ঠিকমতো জানি?

ঢাকাকে নিয়ে অনেক নেগেটিভ কমেন্টও হয়, যদিও এর জন্য ঢাকা দায়ী না। যেমন ব্লগার ঢাকাবাসী বলেছেন: ঢাকা নিয়ে আর কি বলবেন, এটা পৃথিবীর নিকৃস্টতম জঘন্যতম কুৎসিৎ অপদার্থ বাসের অযােগ্য একটা শহর নামের কলঙ্ক। ভাগাড় এর চাইতে ভাল হয়! আমিও উনার সাথে বহুলাংশে একমত। আসলে আবেগ-উদ্বেগ আর ভালোবাসা থেকেই এসব কথা আসে। ঢাকা নিয়ে অকৃত্রিম আবেগ-উৎকন্ঠা না থাকলে এসব কথা বলা যায় না। কতটা দুঃখ থেকে মানুষ এসব কথা বলে, আমি বুঝি। কথায় আছে না, শাসন করা তারই সাজে, সোহাগ করে যে! আসলে ঢাকার আজকের অবস্থার জন্য যারা দায়ী তারা তো কোনদিনই সুন্দর পরিচ্ছন্ন ঢাকা চায় না। ব্যক্তিস্বার্থ তাদের কাছে সবচেয়ে বড়। স্বপ্নে দেখি, আমাদের অপূর্ব সুন্দর ঢাকা শহর। দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসছে এই শহরের সৌন্দর্য দেখার জন্য। স্বপ্নেই দেখি, বাস্তবে তো ইহজনমে দেখে যেতে পারবো না! দেশে যতদিন থাকি, ঢাকায় থাকি। ট্রাফিক জ্যাম, দূষিত পরিবেশ, নোংরা-আবর্জনা উপেক্ষা করেই থাকি। বউ অভিমান করে। আম্মা বলেন, যা, বউকে নিয়ে রাংগামাটি-কক্সবাজার ঘুরে আয়। আমি খুটি গেড়ে বসে থাকি। আমার আবাল্যপ্রেম ছেড়ে কোথায় যাবো? যতদিন পারি জড়িয়ে ধরে থাকি, আসন্ন বিচ্ছেদের আশংকায়।

কিছু মনে করবেন না। লেখাটা একটু এলোমেলো, অগোছালো হয়ে গেল। তবে তাই সই। মনের এলোমেলো আবেগ সবসময় গোছানোর দরকার কি? থাক না এভাবেই। যেমন আছে আমার সবচেয়ে প্রিয় আবেগের শহর ঢাকা! এলোমেলো...অগোছালো!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:১৫
২৭টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×