somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিরিয়ানীর রাজা, রাজার বিরিয়ানী ঃ হায়দ্রাবাদী দম বিরিয়ানী - ১

০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




পূর্বকথাঃ দিন কয়েক আগে ব্লগার কালীদাস এর রান্নার পোস্টে আলাপচারিতার মাঝে এক পর্যায়ে আমি বলেছিলাম যে ইস্টার এর ছুটিতে আমি হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানী রান্না করেছি। তো কথা বলতে বলতে শায়মা বললো রেসিপিটা দিতে। শায়মা আর কালীদাসের আগ্রহেই আমার এই পোস্ট। আমার দূরতম চিন্তাতেও এটা নিয়ে লেখার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তাই এই পোস্ট দু'টা সামুর দুই সেলেব শায়মা এবং কালীদাসকে উৎসর্গ করলাম।


রান্না করা আমার একটা শখ। ইউটিউবের কল্যানে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মুখরোচক খাবার আমি ঘরে বসেই বানাই। কোনটাই খুব একটা খারাপ হয় না। এখন আমি বিশ্বাস করি যে, রান্না হচ্ছে একটা আর্ট। তবে দেশে থাকতে কেউ যদি আমাকে এই কথা বলতো, আমি নিঃসন্দেহে খুব একটা গুরুত্ব দিতাম না। বিদেশে সেট্ল হবার পর খাওয়া-দাওয়া নিয়ে পড়লাম মহা বিপদে! কাহাতক আর হাবিজাবি খেয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলা যায়? ঠেকায় পড়েই শুরু করলাম রান্না। দেশের অনেক ছেলের মতোই যে আমি জীবনে কোনদিন রান্নাঘরের ধারে-কাছে ঘেষি নাই, সেই আমিকে আমি নতুনভাবে আবিস্কার করলাম। আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করলাম, রান্না করে আমি মজা পাচ্ছি!!!

রান্নাতে হাত পাকা হওয়ার পর আস্তে আস্তে দেশী সাধারন ভাজি-ভর্তা-কারী রান্না থেকে আমার উত্তরণ ঘটলো। দেশী-বিদেশী রেসিপির সংমিশ্রনে নিত্য নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে লাগলাম। পোলাও-কোর্মা ইত্যাদি রান্না তখন আমার কাছে হাতের তুড়ি বাজানোর মতোই সহজ! এমনি সময় বেশ কয়েক বছর আগে আমার বোনের সাথে ফোনে কথা হচ্ছিলো। রান্না নিয়ে আমাকে গর্ব করতে দেখে ও বললো, যেদিন হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানী ঠিকভাবে রান্না করতে পারবি, সেদিন বুঝবো তুই রান্না করতে পারিস! আমি বললাম, এইটা কোন ব্যাপারই না আমার কাছে। তুই খালি রেসিপিটা দে। ওর কাছ থেকে রেসিপি শুনে নিলাম। ওভার কনফিডেন্সের কারনে ইউটিউবও দেখি নাই। ক’দিন পর রান্না করলাম। যে জিনিসটা তৈরী হলো তাকে আর যাই হোক কোনভাবেই বিরিয়ানী বলা যায় না, হায়দ্রাবাদী তো বহুত দুরের কথা!! মুরগীর মাংস পুড়ে হাড়ির সাথে লেগে গিয়েছে, চাল অতি সিদ্ধ হয়ে জাউ ভাতের মতো দেখাচ্ছে! রাগে গর গর করতে করতে ১৫/২০ টা ভিডিও দেখলাম, ভালোভাবে তৈরী হলাম, তারপর আবার রান্না করলাম। যে কোন কারনেই হোক তারপর কোনবারই ওটার চেয়ে ভালো রান্না আর করতে পারি নাই, স্বাদ এখনও মুখে লেগে আছে!

আর বর্তমানের অবস্থা শুনবেন? আমার শহরে দেশী ভাই-বোনেরা বিরিয়ানী রান্না করতে গেলেই আমাকে ডাকে, এডভাইজারী রোল প্লে করার জন্য।

সেই রেসিপিটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। প্রথমে ভেবেছিলাম শুধু রেসিপিটাই দিয়ে দিবো। কিন্তু সেটা এক পর্বের জন্য বড় হয়ে যায়। আবার দুই পর্ব করলে প্রতিটা পর্ব ছোট হয়ে যায়। মহাসমস্যা! তাই ভাবলাম হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানীর ইতিহাসটাও জানি এবং জানাই, তাহলে দু’টা পর্বের সাইজও ঠিক থাকে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। তাহলে চলুন, প্রথমে হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানীর ইতিহাসটা জেনে নেই অতি সংক্ষেপে, তারপর রেসিপি!!!

শুরুতেই বলি, বিরিয়ানী একটা উর্দু শব্দ যেটা ফার্সী ভাষা থেকে এসেছে। অনেকের মতে, ফার্সিতে ’বিরিন্জ’ মানে হলো ভাত, সেখান থেকেই বিরিয়ানী শব্দের উৎপত্তি। মতান্তরে, এটি ফার্সি শব্দ ’বেরিয়ান’ থেকে এসেছে যার মানে হলো ভাজা বা রোস্ট করা। ইতিহাসবিদ লিজি কলিংহামের মতে, বিরিয়ানীর উৎপত্তি পারস্যে। মুঘলরা এটা ভারতবর্ষে নিয়ে আসে।

মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব আসাফ জাহ ১ কে দক্ষিনাত্যের গভর্নর হিসাবে নিয়োগ দেন। ইনি পরবর্তীতে নিজাম-উল-মুল্ক উপাধি ধারন করেন। এই হায়দ্রাবাদী নিজামদের রাজকীয় বাবুর্চীখানায় তৎকালীন প্রচলিত বিরিয়ানীকে পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা পরিমার্জন করে বর্তমান হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানীর রুপ দেয়া হয়। হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানী সব ধরনের বিরিয়ানীর উপরে স্থান করে নিয়েছে এর ইউনিক রান্নার পদ্ধতি, সুঘ্রান এবং অতুলনীয় স্বাদের কারনে।

এবার চলেন রান্না শুরু করি। প্রথমেই বলে নেই, আমার বর্ণনা হবে আমি যেভাবে রান্না করি তার উপর ভিত্তি করে। আপনি চাইলে অনেকভাবেই এর পরিবর্তন করতে পারেন, কোন সমস্যা নাই। একটা উদাহরন দেই; আমি মাংস মেরিনেট করে ফ্রীজে রেখে দেই। পরদিন রান্না করি। এখন আপনি চাইলে ২ ঘন্টা, ৬ ঘন্টা কিংবা ৮ ঘন্টাও রাখতে পারেন। তবে, আমার গবেষণার ফলাফল হচ্ছে একদিন ফ্রীজে রাখলে বিভিন্ন মশলার নির্যাসগুলো ভালোভাবে মাংসের ভিতরে ঢোকে। ফলাফল তো আমার প্রিয় রাধুনী ব্লগারদের বলে দিতে হবে না! স্বাদ কয়েকগুন বেড়ে যায়। আরেকটা কথা, আমি কোন উপকরনের লিস্ট দিচ্ছি না। অনেক লম্বা। রন্ধন-পদ্ধতির সাথে সাথেই আপনারা উপকরনের লিস্টটাও অটোমেটিক্যালিই পেয়ে যাবেন। যাউকগা, প্যাচাল বন্ধ করে আপনাদেরকে প্রথম দিনের মূল কাজ বলে দিচ্ছি।

প্রথমেই ৭/৮ টা বড় পেয়াজ বেরেস্তা কাট দিয়ে বেরেস্তা বানান। পুড়বেন না, গোল্ডেন ব্রাউন রং ধারন করলে টিস্যু পেপার দেয়া প্লেটে নামিয়ে ফেলবেন। তেল শুষে নিলে নেড়ে-চেড়ে ঝরঝরা বানান, একটা আরেকটার গায়ে যেন লেগে না থাকে।

(টেচা-টেবিল চামুচ, চাচা-চা চামুচ)

এবার মাংসের টুকরাগুলো (২ টা মাঝারী সাইজের মুরগী) একটা পাত্রে নিয়ে তাতে ১ টেচা লেবুর রস, লবন, ১/২ চাচা হলুদ গুড়া, ১ চাচা মরিচ গুড়া, আদা বাটা দেড় টেচা, রসুন বাটা ১ টেচা, টক দই ১ কাপ, বেরেস্তা ১/২ কাপ, ঘি ১/২ কাপ, ৫/৬ টা কাচা মরিচ লম্বা ফালি করে কাটা, কাচা পেপে বাটা ১ টেচা, ধন্যাপাতা কুচি ১ কাপ, পুদিনা পাতা কুচি হাফ কাপ, ৬টা সবুজ এলাচ (দাত দিয়ে অল্প ভেঙ্গে), কালো এলাচ ৩টা (অল্প থেতলানো), লং ৫ টা, দারুচিনি ২টা মাঝারি সাইজ, যাভিত্রি ৩টা, ৭ দানা কালো গোলমরিচ, ৩টা তেজপাতা দিয়ে ভালো করে মেখে ফ্রীজে রেখে দিন। ব্যাস, প্রথম দিনের কাজ শেষ।

প্রবাসী রাধুনীদের বলছি, ভয় পাবেন না। সাহস করে ঝাপিয়ে পড়ুন। দেখবেন রান্না শেষে মুখের হাসি চওড়া হবে। আর যখন অন্যরা প্রশংসা করবে তখন দাত সবগুলো কেলিয়েই হাসতে পারবেন। তো, হয়ে যাক!!!!


*আগামী পর্বে সমাপ্য*

ছবি, তথ্য নেট থেকে।

বিরিয়ানীর রাজা, রাজার বিরিয়ানীঃ হায়দ্রাবাদী দম বিরিয়ানী - ২
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:১৮
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×