somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৪৪ বছর বিবিসি’র ওয়েব সাইটে স্বাধীনতা যুদ্ধের ভূল তথ্য!!

২৯ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জাতি সংঘ এর সদস্য দেশ হিসেবে মোট ১৯৩টি স্বাধীন দেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশও একটি সদস্য দেশ। সবগুলো দেশ জাতি সংঘ এর সদস্য দেশ হলেও এগুলোর মান ও ক্ষমতার বিশেষ মানদণ্ডে সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে। এতগুলো দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নামের দেশটি বিশ্ব দরবারে আরও বিশেষ গুনে পরিচিত যা অন্য দেশগুলো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। যদিও নোংরা রাজনৈতিক চর্চা ও ক্ষমতা লিপ্সু নেতৃত্বের কারণে নেতিবাচক পরিচিতি টাও মাঝে মধ্যে বেশ চাওয়ার হয়ে বিশ্ব বাসীর কাছে পৌঁছে, তাই নেতিবাচক পরিচিতি বাংলাদেশের মানুষের জন্য বেশ বেদনাদায়ক বিষয়। বিশেষ করে ঘুষ-দুর্নীতি, ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক বৈষম্য ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত। তবে যে বিশেষ গুনে বাংলাদেশ অন্য সব দেশ থেকে আলাদা তা হল, আমাদের ভাষা আন্দোলন ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। বিশ্বে একমাত্র দেশ বা জাতি আছে যারা ভাষার জন্য যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছে।ভাষা আন্দোলন বা ভাষার জন্য যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছে এমন দ্বিতীয় কোন দেশ বা জাতি পৃথিবীতে পাওয়া যাবে না। ২১শে ফেব্রুয়ারী এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত পেলেও এর গোঁড়ার ইতিহাস সেই ভাবে তুলে ধরা হয় না। যেমনটি মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মহান স্বাধীনতা এর গৌরব গাঁথা ইতিহাস তুলে ধরা হয়না, না জাতীয় পর্যায়ে, না আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। প্রচারে প্রসার বলে একটি কথা আছে। আর এর জন্য বর্তমানে গণমাধ্যম সর্বাধিক কার্যকর মাধ্যম। গণমাধ্যমে যদি এখন কোন ভূল তথ্যও প্রচার করে সেটাও একসময় সত্য হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক ভাবে সমধিক পরিচিত গণমাধ্যম হল বিবিসি (ব্রিটিশ ব্রড কাস্ট) যা সবার কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য একটি মাধ্যম। যেকোন বক্তব্য, বিবৃতি ও যুক্তিতর্কে এই সমধিক গ্রহণযোগ্য গণমাধ্যম বিবিসি’র রেফারেন্স দেওয়া হয়। যা প্রতিপক্ষ মানতে বাধ্য হয়ে যায় কারণ বিবিসি বলে কথা। তাহলে ভাবুন তো একবার সেই বিবিসি যদি কোন অসত্য তথ্য প্রচার করে তাহলে কেমন হবে? আর হ্যাঁ নির্মম হলেও সত্য যে ১৯৭১ সাল থেকে গত ২৭শে মার্চ ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ, বাংলাশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে মারাত্মক একটি ভূল তথ্য ধারণ করে ছিল বিবিসি ওয়েব সাইটে। বিবিসি ওয়েব সাইটে কান্ট্রি প্রোফাইল নামে একটি অংশে বিশ্বের সবগুলো দেশের প্রোফাইল দেওয়া আছে। স্বাভাবিক ভাবে বাংলাদেশ নামও একটি প্রোফাইল আছে। সেখানে তাঁরা বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস লিখতে গিয়ে তাঁরা লিখেছিলেন যে, “১৯৭১ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় ভারতীয় বাহিনীর সাহায্যে পূর্ব পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশের জন্ম হয়”। তাহলে ভাবুন তো বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মহান স্বাধীনতা, ৩০ লক্ষ শহীদ এর প্রাণ দান, ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হানি এসব কি মিথ্যা? একটি বিশেষ তথ্য খুঁজতে গিয়ে যখন বিবিসি’র ওয়েব সাইটে এরকম একটি মিথ্যা তথ্য দেখি তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি তাই সঙ্গে সঙ্গে বিবিসি ট্রাষ্ট কর্তৃপক্ষ এর কাছে অভিযোগ করি আজ থেকে প্রায় দেড় মাস আগে। তাদের লিখেছিলাম যে ১৯৭১ সালে ‘পাক-ভারত যুদ্ধ’ নয়, ১৯৭১ সালে ‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধ’ বা বাংলাদেশ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। উত্তরে তাঁরা আমাকে জানায় যে, তাঁরা সঠিক এবং সাথে একটি উইকিপিডিয়ার একটি লিঙ্ক পাঠায় যেখানে কোন এক হাদারাম আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ কে পাক-ভারত যুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছে। আমি আবার বিবিসি ট্রাষ্ট কে তাদের কাণ্ড জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলি উইকিপিডিয়ার রেফারেন্স দেওয়ার জন্য। আমার অভিযোগের সাথে আমি আবার ইন্সট্রুমেন্ট অফ সারেন্ডার এবং প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া ভারতের সংসদে পাস হওয়া বিলের রেফারেন্স দেয়। বিবিসি ট্রাষ্ট তিন দফা প্রায় দেড় মাস সময় নিয়ে ছিল উচ্চতর পর্যায়ে তদন্তের জন্য সর্বশেষ ২৭ মার্চ তাঁরা ভূলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে আমাকে মেইল করে এবং সেই দিন থেকে সংশোধন আকারে তাঁরা লিখেছেন ‘পাক-ভারত যুদ্ধ ১৯৭১’ এর পরিবর্তে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৯৭১’। এর আগে গত বছর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ৭১ টিভি তাদের সংবাদে বলেছিলেন ‘জেনারেল নিয়াজি তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে ভারতীয় বাহিনীর প্রধান জগদিৎ সিং আরোরা এর কাছে আত্ন সমর্পণ করেন, আসলে আত্ন সমর্পণ করেছিলেন মিত্র বাহিনীর প্রধান আরোরার কাছে। এভাবে দেশে এবং দেশের বাইরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে। সবখানে প্রতিহিংসা বা তোষামোদি সত্য প্রকাশে বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে আছে। কিন্তু সত্য প্রকাশ পাবেই কারণ এটা সত্যের ধর্ম। অনেকে বলেন জনাব মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নন, তাদের মত শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা ৭ই মার্চ তাঁর কালজয়ী বক্তব্যের মধ্যে দিয়েছিলেন। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন তাহলে ২৬শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়? আবার কেউ কেউ বলেছেন এম এ হান্নান নামে এক জন আওয়ামীলীগ নেতা স্বাধীনতার ঘোষক কিন্তু তার কি কোন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি বা দালিলিক প্রমাণ আছে? অতএব আনুষ্ঠানিক ভাবে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। অবশ্য এর বিরোধীরা বলতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। তারপরেও তো বলতে হবে ২৬শে মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান মহান স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। প্রতিহিংসার কারণে যারা মেজর জিয়াউর রহমান কে ২৬শে মার্চ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক মানতে নারাজ তারা প্রকারান্তে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধ কে অস্বীকার করে। কারণ মেজর জিয়াউর রহমান ছাড়া আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন ঘোষণাকারীর দালিলিক প্রমাণ বা স্বীকৃতি নেই। মেজর জিয়াউর রহমান কে স্বাধীনতার ঘোষক না মানলে মুজিব নগর সরকার ও সেই সরকাররের নেতৃতে যে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়ে ছিল তা অবৈধ বলে প্রমাণ হবে। আর প্রতিহিংসার ও অতিরিক্ত তোষামোদের বশবর্তী হয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করলে বিবিসি’র মত সবখানে ‘মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ’ বা ‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধ’ প্রমাণ না হয়ে ‘পাক-ভারত যুদ্ধের’ মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে বলে বিশ্ব দরবারে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। তাই আসুন আমরা সত্য কে সত্য মানি এবং আমাদের দেশ, মহান স্বাধীনতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৩০ লক্ষ শহীদ এর আত্নদান কে যারা বিতর্কিত করতে চাই তাদের প্রতিহত করি।
জয় হোক মেহানতি মানুষের
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:৪৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×