somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবচেয়ে রহস্যজনক ভূমিকায় ছিলেন জিয়াউর রহমান।

২৭ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পাকিস্তান ভাঙ্গার প্রধান ও প্রথম কারণ ভারত, দ্বিতীয় কারন রাশিয়ার বাতাস ভেসে চলা বামসম্প্রদায়, তৃতীয় ও উল্লেখযোগ্য কারন পাকিস্তানী হানাদার শাসকগোষ্ঠীর নির্বুদ্ধিতা। এই তিনটি কারণও ব্যার্থ হয়ে যেত যদি জিয়া রহস্যময় আচরন না করতেন।
৭১ এর আগে ভারত পাকিস্তানের কাছে নাস্তানাবুধ হওয়ার অন্যতম কারন পূর্ব পাকিস্তান। তাই পাকিস্তানের ক্ষমতা খর্ব করা ছিল ভারতের টার্গেট। সে টার্গেট অনুযায়ী তারা এদেশীয় বামপন্থীদের স্বপ্ন দেখায় একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের যেখানে সমাজতন্ত্রের পতাকা ঊড়বে। বামদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
এজন্য ভাসানী সহ বামেরা ৭০ এর নির্বাচন বয়কট করে। প্রথমে সব বাম এক থাকলেও তা বেশী দিন টিকে নি। কারন ভারতের শত্রু ছিল চীন এবং পাকিস্তান। শত্রুর শত্রু বন্ধু এই নীতিতে পাকিস্তান ও চীন ছিল বন্ধু। তাই চীনের ইঙ্গিতে চীনের বাতাসে বড় হওয়া এদেশীয় বামেরা পাকিস্তান ভাঙ্গার চিন্তা থেকে সরে আসে।
এজন্য আপনারা দেখবেন ভাসানী মুক্তিযুদ্ধে নিষ্ক্রিয় ছিল। অথচ প্রথম স্বাধীনতার দাবী তুলেছিল ভাসানী। এটা ছাড়াও ১৪ই ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করা মুনীর চোধুরী সহ সকল চীনা বাম বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানের প্রতি অনুগত থাকার শপথ করে বিবৃতি দিয়েছিল। তথ্যসূত্রঃ আখতার মুকুলের “চরমপত্র”।
অথচ এই মুনীর চোধুরী গংদের নাকি পাকিস্তানী ও আল বদরেরা হত্যা করেছিল। আজিব!! ১৪ ই ডিসেম্বর নিহত হওয়া সব বুদ্ধিজীবীই ছিল পাকিস্তানপন্থী।
ঐদিকে রাশিয়াপন্থীরা স্বাধীনতার জন্য বেশ তোড়জোড় শুরু করে। তারা বক্তব্য বিবৃতিসহ নানান ধরণের প্রস্তুতি। তারা প্রথম দোসরা মার্চ নতুন প্রস্তাবিত রাষ্ট্রের পতাকা উত্তোলন করেন শেখ মুজিবের বাড়ির সামনে। কিন্তু মুজিব তা নামিয়ে ফেলে দেন। সেখানে পাকিস্তানের পতাকা আবার উড়িয়ে দেন।
মুজিবের কাছে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রাধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কুখ্যাত ভুট্টো। সে পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্তু তা মুজিবের তুলনায় অনেক কম। ২৪ শে মার্চ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আলোচনা চলতে থাকে। এখানে একটা কথা বলা দরকার, আলোচনা ইয়াহিয়া খানের সদিচ্ছার কারণে হচ্ছে। মুজিব যে কোন আলোচনার জন্য করাচি কিংবা পিন্ডি যেতে অসম্মত হয়েছে। তাই ইয়াহিয়া ভুট্টোকে নিয়ে ঢাকায় এসেছে। ভারত যখন দেখলো পাকিস্তান স্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে আগাচ্ছে তখনই তারা তাদের ট্রাম্পকার্ডটি ছাড়লো।
ভারতের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হল কয়েকটি ছবি, যাতে দেখানো হল ছাত্ররা সশস্ত্র প্যারেড করছে স্বাধীনতার দাবীতে। ছবিটি মিথ্যে ছিল না। রাশিয়াপন্থীরা ছবিটি সরবরাহ করেছে ভারতের কাছে। ব্যাস!! আর যায় কই? গোঁয়ার ভুট্টো এটাকে পুঁজি করে সেদিনই ঢাকা ছাড়ে ইয়াহিয়াকে নিয়ে। দূরত্ব বাড়তে থাকে।
এর মধ্যে হাজার হাজার সৈন্য আসতে থাকে ঢাকায়। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমন করে বর্বর সেনাবাহিনী। ইকবাল হলে বাধা দেয় ছাত্ররা। কিন্তু সেনাবাহিনীর ভারী অস্ত্রের সামনে দাঁড়াতে পারেনি ছাত্ররা। সেদিন প্রায় ৫০ জন কে হত্যা করা হয়। বিদ্রোহ হয় পুলিশ লাইনে। তাও নিয়ন্ত্রনে এসে যায় সকাল নাগাদ। তথ্যসূত্রঃ দ্যা ডেড রেকনিং, শর্মিলা বসু।
এতসব কিছুর পরও হয়তো পাকিস্তান ভাংতো না, যদি জিয়া দৃশ্যপটে না আসতেন। যদিও বামেরা বিপ্লব বিপ্লব করতো, কিন্তু তাদের প্রস্তুতি সে আকারে ছিল না। আওয়ামীলীগ কিংকর্তব্যবিমুঢ়। রাশিয়াপন্থীদের অলরেডি বিল্পব হজম হয়ে গিয়েছে সেনাবাহিনীর বর্বরতা দেখে।
হঠাৎ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র হতে স্বাধীনতা ঘোষনা করলেন অচেনা অখ্যাত একজন লোক। তিনিই জিয়া। বাংলাদেশের তথাকথিত স্বাধীনতার রূপকার। এটা আমার কাছে এখনো অপরিষ্কার জিয়া কার গুটি হয়ে এই ধরণের ঘোষনা দিলেন?
অনেকেই বলবেন হয়তো তার বাঙ্গালীপ্রেম জেগে উঠেছে। কিন্তু কথাটা সঠিক নয় এই কারণে যে, যদি দেশপ্রেম হত মূল উপজীব্য তাহলে তিনি তার সাথে থাকা আরো অনেক বাঙ্গালী অফিসারের সাথে আলোচনা করে এই ঘোষনা দিতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। এবং তিনি নিজেকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট দাবী করেছেন। দেশপ্রেম হলে তা অবশ্যই নেতাদের কারো পক্ষ হয়ে ঘোষনা দিতেন। হোক ভাসানী কিংবা মুজিব।
যাই হোক, ইগোতে লাগলো আওয়ামীগের। কোথাকার কে ঘোষনা করে বসলো স্বাধীনতার!! এতক্ষনে তাহাদের হুঁশ হলো। তারা একত্রিত হতে লাগলো ওসমানীর সহযোগিতায় সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুরে। ১০ এপ্রিল নতুন সরকার গঠিত হল। সেখানে কোন প্রতিনিধিত্বই ছিল না জিয়ার। স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট কে একটি সেক্টরের কমান্ডার করা হল মাত্র। আর জিয়ার ঘোষণাকে ম্লান করে দেয়ার উদ্দেশ্যে ঘোষনাপত্রের শেষে উল্লেখ করা হয় এই ঘোষনা পত্রটি কার্যকর হচ্ছে ২৬ মার্চ হতে।
এভাবেই একাত্তরে একটি কলঙ্কজনক ও লজ্জাজনক ইতিহাসের জন্ম হয়। আমার বিশ্বাস আগামী একশ বছর পর আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম অত্যন্ত দুঃখ নিয়ে ৭১ এর ইতিহাস পড়বে। আমরা যেভাবে এখন দুঃখ নিয়ে নবাব সিরাজ উদ্দোলার ইতিহাস পড়ি। বাচ্চারা অবাক হবে কিভাবে ৭ কোটি মানুষ নিজেকে আলাদা করেছে ৪ কোটি থেকে। শুধু মাত্র কিছু মানুষের হটকারিতায়।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানে বাঙ্গালী ছিল সাড়ে সাত কোটি, পাঞ্জাবী ছিল প্রায় দুই কোটি, সিন্ধি ও বেলুচ মিলে ছিল প্রায় দুই কোটি আর কাশ্মীরী সহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী মিলে ছিল প্রায় ৫০ লক্ষ।
বিরল ও লজ্জাজনক ইতিহাসটি হলো সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী স্বাধীনতা চেয়েছে সংখ্যালঘুর কাছে। অথচ কথা ছিল পুরো পাকিস্তান শাসন করবো আমরা বাঙ্গালীরা। সে সুযোগ, সামর্থ সবই আমাদের ছিল। আইনের বলে আমরাই পাকিস্তানের শাসক হই। কারণ ১৯৭০ এর নির্বাচনে আমরা বাঙ্গালীরা একক ভাবে সরকার গঠন করার মত আসন পেয়েছি।
তাহলে কার স্বার্থে এই স্বাধীনতা? কে চেয়েছে এমন ফালতু স্বাধীনতা? যে স্বাধীনতা আমার ক্ষমতা খর্ব করে দেয় !!
শেখ মুজিব কিংবা আওয়ামী লীগ কখনোই স্বাধীনতা চায় নি। চাইতে পারে না। যদি চেয়ে থেকে তাহলে বুঝতে হবে শেখ মুজিবের কোন ধরণের রাজনৈতিক জ্ঞান নেই নতুবা তার মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
কারণ গণতান্ত্রিক পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের পজিশন ছিল সবচাইতে ভালো। ১৯৫৩ সাল ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তা খুব স্পষ্ট হয়ে উঠে। কিন্তু পাকিস্তানে গণতন্ত্রের চর্চা ছিল খুবই কম। তাই আওয়ামীলীগের মূল দাবী ছিল গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য সংগ্রাম। স্বাধীনতা কখনোই নয়।
তাহলে আবারো প্রশ্ন রাখতে চাই কার স্বার্থে এই স্বাধীনতা? কেন এই স্বাধীনতা? কার স্বার্থে প্রচুর রক্ত ঢেলে, বহু নারীর ইজ্জত নষ্ট করে ক্ষমতা খর্ব করা হল? কিসের নেশায় স্বাধীনতার নাম করে এদেশের নিরস্ত্র খেটে খাওয়া সাধারন মানুষগুলোকে সেনাবাহিনীর বন্দুকের মুখে দাঁড় করানো হল?
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×