শহরে যখন অস্থিরতায় ভোগি, একাকিত্ব ভীষণভাবে কাবু করে ফেলে তখন কারও না কারও সান্নিধ্যে নিজেকে ব্যাস্ত রাখার চেষ্টা করি । দীর্ঘ দিন স্বগ্রামে থাকার সুবাদে কবি মনির ইউসুফ ভাইয়ের সাথে দেখা হয়নি। তাই ২৫শে ডিসেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যার অন্তিমলগ্নে দেখা করতে ছুটলাম, কনকর্ডে, আমাদের "কবিতার রাজপথ" পত্রিকার অফিসে । অফিসের প্রবেশ মুখে চমকে ওঠলো মন, অফিসের পাশে কুলিং কর্ণারের দোকানের একপাশে বসে প্রিয় কিছু শিল্প কারিগর বসে আড্ডা জমাচ্ছেন। কবি সরদার ফারুক, কবি ওবায়েদ আকাশ, গল্পকার বিলাল হোসেন সহ আরো অনেকে । এইসব শিল্প স্রষ্টাদের মুখায়ব দেখে মনের মধ্যে বিষাদের কালো রেখা আনন্দমেঘের আভায় ঢাকা পরে গেলো । তাঁদের খুনসুটি আলাপন শিল্প-সাহিত্যের মধ্য জমে ওঠেছে তা টের পেয়েছিলাম। ফলে, আড্ডায় হামলা দেওয়ার ইচ্ছা হলোনা বলে অফিসে ঢুকে মনির ভাইয়ের সাথে কথা জমাবার চেষ্টা করছি । তারপর উপরের তলায় একটা কাজ(প্রাকৃতিক) সেরে ভাবলাম সিগারেট খেতে যাবো তখন দেখি প্রিয় স্রষ্টারা কনকর্ড থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন, মুখে তাদের আসন্ন বইমেলার আনন্দের হাসি । তাদের সাথে কথা হলো আরো কিছুক্ষণ, নতুন বইয়ের টাটকা গন্ধ যেনো টের পাচ্ছিলাম । অতঃপর বিদায় শেষে ধুমপান সেরে অফিসে গিয়ে ঢুকে বসতে না বসতে আরেক স্রষ্টা হাজির হলেন ধুমকেতুর মতোন । কবি, চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর । মনের মধ্যে বিস্ময়কর সুন্দর নেচে ওঠলো । কবি টোকন দা কে বহুবার শাহবাগে দ্যাখেছি । কিন্তু এতো কাছ থেকে একই জায়গায় বসে কথা বলবো সেটা ভাবতে পারিনি । আড্ডা ধীরে ধীরে গভীরতার দিকে ছুটলো আমাদের আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে তুলল কবি চৈতী আপুর মেয়ে মেধা । টোকন দা মেধাকে নিয়ে তাঁর শিশুসুলভ আচরণের উন্মেষ ঘটালেন । সবার মুখে মেধা হাসি ফুটালো তাঁর চঞ্চলা আর বুদ্ধী দীপ্ত কথার মধ্য দিয়ে । আমাদের আড্ডা চলতে থাকলো । বিশ্ব সাহিত্যিক, কবি, নগুগী, নিকানো পাররা, রবীন্দ্রনাথ, মাইকেল সহ অনেকেই আমাদের আড্ডায় শামিল হতে লাগলেন। কবি দিলদার হোসেন, কবি টোকন দা, কবি আমীর খসরু স্বপন (কিছুক্ষণ ছিলেন, আড্ডার শেষলগ্নে প্রত্যাবর্তন), কবি মনির ইউসুফ এবং ওনার একবন্ধু সম্ভবত নাম জাকির হোসেন (তিনি আড্ডার মাঝামাঝি পর্যন্ত ছিলেন) ও আমি । চা-সিগারেট চলছে কবি টোকন দা'র, চলচ্চিত্র নিয়ে গল্প করছেন। বিশ্ব চলচ্চিত্র নির্মাতারাও টোকন দা'র অট্টহাসি আর কথার মধ্য দিয়ে আমাদের আড্ডায় শামিল হলেন । আলাপ জমে ওঠছে, সময় যে কি নিষ্ঠুর তা ফের বুঝিয়ে দিলো । অনিচ্ছা সত্তেও আড্ডার পরিসমাপ্তি শেষ করে বের হয়ে পরলাম টোকন দা, দিলদার হোসেন, মনির ভাই, স্বপন ভাই ও আমি ।সবাই মিলে চা পান করবো এই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের উপর ভর করে....
ফের আড্ডা জমে ওঠলো, চায়ের কাপে । কাঁটাবন মোড় থেকে শাহবাগ যাওয়ার পথে হাতিরপুল যাওয়ার আরেকটি রাস্তা আছে । সেই রাস্তারমুখে বসে আমাদের আড্ডা আবার জমে ওঠলো । চা-সিগারেট চলছে । এবার কিছুটা জীবনের গল্পের দিকে ফিরে তাকালেন সবাই । আমি মুগ্ধস্রোতার মতোন কথা শুধু শুনছি। টুকিটাকি কিছু বলার চেষ্টা করছি। ঠান্ডা পরিবেশ আর সোডিয়াম লাইটের রুপালি আলোয়ে আমাদের চারপাশ ভিজে একাকার। হালকা অন্ধকারের ভিতর আমরা ডুবে আছি। এখানে আড্ডা-গল্প শুরুর দিকে চা-সিগারেট পান করে স্বপন ভাই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছুটলেন গন্তব্যের দিকে। মৃদু অন্ধকারের ভিতর জীবনের গল্প বড় নির্মম বাস্তব হয়ে ধরা দিলো যেন আমার সামনে । আড্ডার পুরোভাগ জুড়ে আমাদের মাতিয়ে রাখলেন কবি দিলদার হোসনে। আমাদের আড্ডার প্রথম অগ্রজ, আড্ডার ভিতর জানতে পারলাম কবি দিলদার হোসেনও চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত, চলচ্চিত্র নির্মানও করেছেন । সম্ভবত "একজন মুক্তিযোদ্ধা" নামক একটা শর্টফিল্ম। যাহোক, আড্ডার আনন্দের মেজাজে শাহবাগ থেকে সিগারেট টানতে টানতে বাসায় ফিরছি, হালকা যানবাহন, রিকশা, ঠান্ডা পরিবেশের ভিতর দিয়ে আমি ছুটছি.....
বিষাদ আব্দুল্লাহ
২৭/১২/১৫, ঢাকা ।
বিঃদ্রঃ আড্ডারত অবস্থায় ছবিগুলো আমি তুলেছি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫