somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় - যেখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে সম্পূর্ণ জিম্মি - পর্ব ০১

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার খুব ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । সে এই লেখাটি আমাকে ইনবক্সে পাঠিয়েছে । সে নিজে এই লেখাটি পোস্ট করতে ভয় পাচ্ছে, কারণ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের মতই । মানে কিছু মুখ ফুটে বললেই সর্বনাশ । তাই তাকে সাহায্য করার জন্যই লেখাটি হুবহু এখানে প্রকাশ করলাম । তবে এই লেখাটিই শেষ নয় । খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কিত এমন খবর আরও আসছে পরবর্তীতে ।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা বিভাগের একটি ঐতিহ্যবাহী উচ্চ শিক্ষার আদর্শ প্রতিষ্ঠান । ১৯৮৯ সালে ভিত্তি প্রস্তর আবিস্কার করা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯১ সালে । ঐ সময় ফরেষ্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি, আর্কিটেকচার, রুরাল অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিশারিজ - এই পাঁচটি ডিসিপ্লিন নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয় ঐ সময়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই শিক্ষাপীঠের । পরবর্তীতে অবশ্য ফিশারিজ ডিসিপ্লিন পরিণত হয় ফিশারিজ ও মেরিন রিসোর্স টেকনোলোজিতে । এরপর ধীরে ধীরে ডিসিপ্লিনের সংখ্যা বাড়তে থাকে । বর্তমানে পাঁচটি স্কুল (ইউনিট) ও একটি ইন্সটিটিউটের আন্ডারে মোট ২৪ টি ডিসিপ্লিন রয়েছে এখানে । আরও কয়েকটি ডিসিপ্লিন খোলার অপেক্ষায় । সব মিলিয়ে বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪৫০০ জন । আবাসিক হল মাত্র ৩ টি । এর মধ্যে ছেলেদের মাত্র ২ টি এবং মেয়েদের মাত্র ১ টি । সর্বোপরি ছোট্ট পরিসরে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি নিঃসন্দেহে দেশের সায়িত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট ক্যাম্পাসের অধিকারী ।

এই বিশ্ববিদ্যালয়টির পড়াশুনার মান সন্তুষ্টিজনক । তিনটি একাডেমিক ভবনে চলে শিক্ষা কার্যক্রম । একটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভবন, একটি ব্যাংক ভবন, একটি সেন্ট্রাল লাইব্রেরী ভবন ও শিক্ষক--কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি চলছে প্রায় ২৫ বছর ধরে । প্রশাসনিক এসব ভবন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের যথেষ্ঠ চিন্তা থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীদের থাকা নিয়ে তেমন চিন্তা দেখা যায় না বিশ্ববিদ্যালয় সেই কতৃপক্ষের । এই জন্য একটি মাত্র আবাসিক হলে নতুন ভর্তি হওয়া মেয়েদের একসাথে গাদাগাদি করে রাখা হয় গণরুমের কথা বলে । আর ছেলেদের তো ছিটই হয় দ্বিতীয় বর্ষের শেষে গিয়ে অথবা তৃতীয় বর্ষের প্রথমে গিয়ে । অনেক ডিসিপ্লিনেই দেখা যায়, চতুর্থ বর্ষের ছাত্রও ছিট পায়নি । একটি ছেলেদের হল প্রায় কমপ্লিট করা হলেও অজানা কারনবশত ছিট বুরাদ্দ করা হচ্ছে না । এর দরুন, ছাত্র-ছাত্রীদের দুর্ভোগ কেবলই বাড়ছে ।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল রাজনীতিহিন পরিস্থিতি । অর্থাৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চিরাচরিত রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল কিংবা অন্যান্য কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয় না । কিন্তু সমস্যা বাধে গত চার-পাঁচ বছর আগে থেকে । বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ জমা বরাদ্দ সংক্রান্ত মামলায় ফেঁসে যান ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলোজি ডিসিপ্লিন থেকে হওয়া সাবেক উপাচার্য । এর ফলস্বরূপ তাকে তার পদ বাধ্য হয়ে অবসরের কয়েকদিন আগেই ছাড়তে হয় । নতুন উপাচার্যের দায়িত্ব নেয় তৎকালীন উপ-উপাচার্য । যিনি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ তথা একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাস করে, পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান । তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ঊর্ধ্বতন লোকই জানে, এটা বর্তমান সরকারের আমলেই সম্ভব হয়েছে । অর্থাৎ তিনি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাতেই এই পদটি অর্জন করেছেন ।

এর মধ্যে অন্যতম আরেকটি সমস্যা তৈরি হয় আবার অন্য ভাবে । বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমদিত যতগুলো সংগঠন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে সেগুলো বেশ সক্রিয় এবং ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার পাশাপাশি অন্যান্য সহ-একাডেমিক কার্যক্রমে বেশ সহায়ক । কিন্তু সম্পূর্ণই ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে একটি সংগঠনের অনুমতি দেয়া হয় চেতনা'৭১ নাম করে । এই সংগঠনটির উদ্দেশ্য নাচ-গান-অভিনয়-বিতর্ক ইত্যাদি কিছুই ছিল না । এই সংগঠনের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক পথ চলা । একপক্ষের সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ এই সংগঠনের মাধ্যমে রাজনীতি করতে ইচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে শুরু করে এই সংগঠনের কার্যক্রম । এর ফলস্বরূপ সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি প্রতিষ্ঠানে শুরু হয় রাজনৈতিক ব্যানার টাঙ্গানো, কথায় কথায় সরকারের গুণগান গেয়ে উপাচার্য, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক ও কিছু শিক্ষকের কথা বলা, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন-মৃত্যুদিন পালন (যা আগে কোনদিন হয়নি), বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন (এইটা সম্পূর্ণই পরিস্কার) ইত্যাদি ।

অথচ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা কোন ন্যায্য বিষয় নিয়ে কথা বললেই তাদেরকে দুর্ভোগের শিকার হতে হয় নানা ভাবে । ছোট-খাট বিষয় নিয়ে নিজেরা মত দিলেও সমস্যা । যেমনঃ কয়েকদিন আগে এক ডিসিপ্লিনের ছাত্র-ছাত্রীরা ফেসবুকে তাদের নিজস্ব একটি সেক্রেট গ্রুপে একজন স্যারের বিতর্কিত ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করে । এই খবর কোন এক বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে ঐ স্যারের কাছে পৌঁছায় । এরপর তিনি আরও কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে এক হ্যাকারের সহায়তায় ঐ ফেসবুক গ্রুপটি হ্যাক করেন । পরবর্তীতে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে এক টার্ম বা ৬ মাস ও আর্থিক জরিমানা করা হয়, মানহানির কারণে । এই হল তাদের নিচু মানসিকতার চিত্র । এরকম উদাহারণ আরও হাজারটা আছে ।

ক্যাম্পাসে শিক্ষকরা পুরোপুরি স্বৈরাচারী মনোভাব প্রদর্শন করে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি । জুনিয়র কাউকে কিছু বললেই সাসপেন্ড, স্যারদেরকে ন্যায্য কিছু বললেই সার্টিফিকেট আটকে দেওয়ার হুমকি বা সাসপেন্ড, তাছাড়া পরীক্ষায় ইচ্ছে করে কম নম্বর দেওয়ার প্রবণতাও এই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকদের মাঝেই বিদ্যমান ।

প্রাক্তন কিছু শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের সময়ও জালিয়াতি চলে । উপরের মহলে যোগাযোগ থাকলে যে কোন রেজাল্টধারী ব্যক্তিই এখানে শিক্ষক হতে পারে । এর জন্য অবশ্য মোটা অংকের টাকার লেনদেনের খবরও পাওয়া যায় । এই কারণেই যোগ্য শিক্ষকের বর্তমানে খুব অভাব এখানে ।

পরিশেষে এতটুকুই বলতে হয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আজ পুরোপুরি অসহায় এই শিক্ষকদের কাছে । শিক্ষকরা ঠিকি নিজেরা পুরোদমে রাজনীতি করে গেলেও ছাত্র-ছাত্রীরা এক জায়গায় অনেকে একসাথে বসলেও তাদেরকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হয় । তাই সবার কাছে এই প্রশ্ন করতে বাধ্য হচ্ছি, আসলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব হচ্ছেটা কি ?

(আরও ঘটনা নিয়ে আসছি আস্তে আস্তে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×