somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় - যেখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে সম্পূর্ণ জিম্মি - পর্ব ০২

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত পোস্টেই ( । খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় - যেখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে সম্পূর্ণ জিম্মি - পর্ব ০১ ) বলেছিলাম যে, আমার খুব ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । সে এই লেখাটি আমাকে ইনবক্সে পাঠিয়েছে । সে নিজে এই লেখাটি পোস্ট করতে ভয় পাচ্ছে, কারণ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের মতই । মানে কিছু মুখ ফুটে বললেই সর্বনাশ । তাই তাকে সাহায্য করার জন্যই লেখাটি হুবহু এখানে প্রকাশ করলাম । তবে এই লেখাটিই শেষ নয় । খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কিত এমন খবর আরও আসছে পরবর্তীতে ।

যাই হোক, গত পর্বে মূলত শিক্ষকদের রাজনীতি ও প্রতিহিংসা নিয়ে কথা বলেছিলাম । আজ আরও কিছু বলবো । খুলনা শহরের স্থানীয় মানুষজন হলে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের মুরগী বলেই সম্বোধন করে । কারণ হলের যতপ্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতি এই হলগুলোতে হলেও হলের আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের এগুলো নিয়ে উচ্চবাচ্য করার কোনই সুযোগ নেই । প্রথমে বলি, খান জাহান আলী হলের কথা । এই হলটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় হল এবং উপর থেকে অর্থাৎ স্যাটেলাইট থেকে জুম করে দেখলে দেখা যাবে খান জাহান আলী হলের উপরিভাগ ঠিক KU লেখা । যাই হোক, এই হলে বেশ কয়েকদিন (প্রায় ছয় মাস) আগে প্রভোস্ট হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি । যিনি একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের একজন সদস্য, একটি ডিসিপ্লিনের ডিসিপ্লিন প্রধান, একটি স্কুল (ইউনিট) এর ডিন এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় হলটির প্রভোস্ট । এতগুলো পদ একসাথে চালিয়ে যাওয়া নিতান্তই একটি রেকর্ড এখানে । অথচ গত সরকারের (বিএনপি) আমলে এই শিক্ষকের তেমন অস্তিত্ব-ই ছিল না ।

তবে এটা সত্যি তার খান জাহান আলী হল (সংক্ষেপে খাজা হল) এর প্রভোস্ট হওয়ার সুবাদে হলটির অনেক প্রকার উন্নতি সাধন হয়েছে । কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গিয়ে এই হলের দীর্ঘদিনের পুরনো ক্যান্টিন লিজ দেওয়া যে ব্যক্তির কাছে, তাকে হল থেকে একপ্রকার বের করে দেওয়া হয় । ক্যান্টিন লিজ নেওয়া ব্যক্তিটির সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা হলে বিভিন্ন ছাত্রদের (প্রাক্তন ও বর্তমান) কাছে বাকী ছিল কিন্তু তার অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও তাকে আর থাকতে দেওয়া হয়নি । এরপর এই ছয়মাসে মোট প্রায় তিনবার ক্যান্টিনের দরপত্র দেওয়া হলেও, কেউই আর তেমন টিকতে পারেনি । এমনকি ছাত্ররাও এই কারণে গোপনে গোপনে বেশ ক্ষুব্ধ কিন্তু তাদের নীরব থাকা ছাড়া কোন উপায়ই নেই । এমনকি সবচেয়ে ছোট মনের যে কাজটি প্রভোস্ট স্যার করেছেন, সেটি হলো গেটে তিনি এন্ট্রি খাতার ব্যবস্থা করেছেন । হলের অনাবাসিক ছাত্রদের বা অন্য হলের ছাত্রদের হলে ঢুকতে গেলে এই এন্ট্রি খাতায় নিজের নাম লিখে, হলে ঢুকার উদ্দেশ্য ও সময় লিখে হলে ঢুকার নিয়ম করা হয়েছে । ছাত্রদের এরকম এন্ট্রি খাতায় নাম লিখিয়ে হলে প্রবেশ করা অত্যন্ত বিব্রতকর । কিন্তু নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে কর্তৃপক্ষ ঠিকই এরকম জুলুম করে যাচ্ছে ।

এবার আসি ছাত্রদের আরেকটি হল, খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ হল (সংক্ষেপে খাবা হল) নিয়ে । এই হলটির প্রভোস্ট এমন একজন যিনি নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য, একটি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর এবং আরেকটি ডিসিপ্লিনের প্রধান । অথচ যেই ডিসিপ্লিনের তিনি প্রধান সেই ডিসিপ্লিনের প্রধান তার হওয়ার কোন যৌক্তিকতাই নেই । তিনিও এই সরকারের আমলেই বেশি টাইমলাইটে আসতে পেরেছেন । তার সময়ে খাবা হলের অবস্থা ভালো । তবে এখানেও সমস্যা ছাত্রদের খাওয়া সম্পর্কিত । অর্থাৎ সাধারণত ছাত্রদের ক্যান্টিন লিজ দেওয়া হলেও ডাইনিং দুই বছর আগেও ছাত্ররাই দায়িত্ব নিয়ে চালাতো । কিন্তু কোন এক সমস্যার কারণে এক বছর আগে, কোন এক ব্যাচের সব ছাত্ররা মিলে প্রভোস্ট স্যারকে গিয়ে অনুরোধ করে যেন এই ডাইনিং-এর দায়িত্বও ক্যান্টিন লিজ নেওয়া ঐ ব্যক্তির কাছেই দেওয়া হয় কারণ তারা এখন ডাইনিং চালাতে অপারগ । প্রভোস্ট স্যার ছাত্রদের এই কথা মেনে নেয় এবং ক্যান্টিনের ঐ লিজ নেওয়া ব্যক্তির কাছেই ডাইনিং-এর দায়িত্বও অর্পণ করে । কিন্তু সমস্যা বাধে এই তিন-চার মাস ধরে । ক্যান্টিন লিজ নেওয়া ব্যক্তিটি এতদিন ক্যান্টিনের পাশাপাশি ডাইনিং-এ মোটামুটি ভালো খাবার সরবরাহ করলেও এখন তার সরবরাহ করা খাবারের কোয়ালিটি খুবই খারাপ । এমতাবস্থায় বর্তমান ফাইনাল ইয়ারের ছাত্ররা প্রভোস্ট স্যারকে গিয়ে অনুরোধ করে পুনরায় ডাইনিং-এর দায়িত্ব ছাত্রদের হাতেই ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য । কিন্তু এখন প্রভোস্ট স্যার, সহকারী প্রভোস্ট স্যাররা ও অন্যান্য হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীসমূহ একজোট হয়েই যেন টালবাহানা শুরু করে । এর নেপথ্যে কারণ হলো, ডাইনিং-এ হল কর্তৃপক্ষ ভুর্তুকি দিতো প্রায় ত্রিশ হাজার থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকার মত । এই টাকাটা ক্যান্টিনের লিজ নেওয়া ব্যক্তিটিকেই ডাইনিং-এর দায়িত্ব দেওয়ার পর পুরোপুরি হল কর্তৃপক্ষ-এর পকেটেই ঢুকে । যা সবাই মিলেই ভাগবাটোয়ারা করেই খায়, এমনটাই সন্দেহ হলের আবাসিক ছাত্রদের । যাই হোক, এই বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি । এমনকি হল কর্তৃপক্ষ ইদানিং প্রায়ই ছাত্রদের ভুলিয়ে ভালিয়ে এই দাবী থেকে পিছা ছাড়িয়ে দিচ্ছে ।

(বাকিটা আগামী পর্বে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×