গত পোস্টেই ( । খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় - যেখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে সম্পূর্ণ জিম্মি - পর্ব ০১ ) বলেছিলাম যে, আমার খুব ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । সে এই লেখাটি আমাকে ইনবক্সে পাঠিয়েছে । সে নিজে এই লেখাটি পোস্ট করতে ভয় পাচ্ছে, কারণ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের মতই । মানে কিছু মুখ ফুটে বললেই সর্বনাশ । তাই তাকে সাহায্য করার জন্যই লেখাটি হুবহু এখানে প্রকাশ করলাম । তবে এই লেখাটিই শেষ নয় । খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কিত এমন খবর আরও আসছে পরবর্তীতে ।
যাই হোক, গত পর্বে মূলত শিক্ষকদের রাজনীতি ও প্রতিহিংসা নিয়ে কথা বলেছিলাম । আজ আরও কিছু বলবো । খুলনা শহরের স্থানীয় মানুষজন হলে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের মুরগী বলেই সম্বোধন করে । কারণ হলের যতপ্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতি এই হলগুলোতে হলেও হলের আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের এগুলো নিয়ে উচ্চবাচ্য করার কোনই সুযোগ নেই । প্রথমে বলি, খান জাহান আলী হলের কথা । এই হলটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় হল এবং উপর থেকে অর্থাৎ স্যাটেলাইট থেকে জুম করে দেখলে দেখা যাবে খান জাহান আলী হলের উপরিভাগ ঠিক KU লেখা । যাই হোক, এই হলে বেশ কয়েকদিন (প্রায় ছয় মাস) আগে প্রভোস্ট হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি । যিনি একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের একজন সদস্য, একটি ডিসিপ্লিনের ডিসিপ্লিন প্রধান, একটি স্কুল (ইউনিট) এর ডিন এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় হলটির প্রভোস্ট । এতগুলো পদ একসাথে চালিয়ে যাওয়া নিতান্তই একটি রেকর্ড এখানে । অথচ গত সরকারের (বিএনপি) আমলে এই শিক্ষকের তেমন অস্তিত্ব-ই ছিল না ।
তবে এটা সত্যি তার খান জাহান আলী হল (সংক্ষেপে খাজা হল) এর প্রভোস্ট হওয়ার সুবাদে হলটির অনেক প্রকার উন্নতি সাধন হয়েছে । কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গিয়ে এই হলের দীর্ঘদিনের পুরনো ক্যান্টিন লিজ দেওয়া যে ব্যক্তির কাছে, তাকে হল থেকে একপ্রকার বের করে দেওয়া হয় । ক্যান্টিন লিজ নেওয়া ব্যক্তিটির সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা হলে বিভিন্ন ছাত্রদের (প্রাক্তন ও বর্তমান) কাছে বাকী ছিল কিন্তু তার অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও তাকে আর থাকতে দেওয়া হয়নি । এরপর এই ছয়মাসে মোট প্রায় তিনবার ক্যান্টিনের দরপত্র দেওয়া হলেও, কেউই আর তেমন টিকতে পারেনি । এমনকি ছাত্ররাও এই কারণে গোপনে গোপনে বেশ ক্ষুব্ধ কিন্তু তাদের নীরব থাকা ছাড়া কোন উপায়ই নেই । এমনকি সবচেয়ে ছোট মনের যে কাজটি প্রভোস্ট স্যার করেছেন, সেটি হলো গেটে তিনি এন্ট্রি খাতার ব্যবস্থা করেছেন । হলের অনাবাসিক ছাত্রদের বা অন্য হলের ছাত্রদের হলে ঢুকতে গেলে এই এন্ট্রি খাতায় নিজের নাম লিখে, হলে ঢুকার উদ্দেশ্য ও সময় লিখে হলে ঢুকার নিয়ম করা হয়েছে । ছাত্রদের এরকম এন্ট্রি খাতায় নাম লিখিয়ে হলে প্রবেশ করা অত্যন্ত বিব্রতকর । কিন্তু নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে কর্তৃপক্ষ ঠিকই এরকম জুলুম করে যাচ্ছে ।
এবার আসি ছাত্রদের আরেকটি হল, খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ হল (সংক্ষেপে খাবা হল) নিয়ে । এই হলটির প্রভোস্ট এমন একজন যিনি নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য, একটি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর এবং আরেকটি ডিসিপ্লিনের প্রধান । অথচ যেই ডিসিপ্লিনের তিনি প্রধান সেই ডিসিপ্লিনের প্রধান তার হওয়ার কোন যৌক্তিকতাই নেই । তিনিও এই সরকারের আমলেই বেশি টাইমলাইটে আসতে পেরেছেন । তার সময়ে খাবা হলের অবস্থা ভালো । তবে এখানেও সমস্যা ছাত্রদের খাওয়া সম্পর্কিত । অর্থাৎ সাধারণত ছাত্রদের ক্যান্টিন লিজ দেওয়া হলেও ডাইনিং দুই বছর আগেও ছাত্ররাই দায়িত্ব নিয়ে চালাতো । কিন্তু কোন এক সমস্যার কারণে এক বছর আগে, কোন এক ব্যাচের সব ছাত্ররা মিলে প্রভোস্ট স্যারকে গিয়ে অনুরোধ করে যেন এই ডাইনিং-এর দায়িত্বও ক্যান্টিন লিজ নেওয়া ঐ ব্যক্তির কাছেই দেওয়া হয় কারণ তারা এখন ডাইনিং চালাতে অপারগ । প্রভোস্ট স্যার ছাত্রদের এই কথা মেনে নেয় এবং ক্যান্টিনের ঐ লিজ নেওয়া ব্যক্তির কাছেই ডাইনিং-এর দায়িত্বও অর্পণ করে । কিন্তু সমস্যা বাধে এই তিন-চার মাস ধরে । ক্যান্টিন লিজ নেওয়া ব্যক্তিটি এতদিন ক্যান্টিনের পাশাপাশি ডাইনিং-এ মোটামুটি ভালো খাবার সরবরাহ করলেও এখন তার সরবরাহ করা খাবারের কোয়ালিটি খুবই খারাপ । এমতাবস্থায় বর্তমান ফাইনাল ইয়ারের ছাত্ররা প্রভোস্ট স্যারকে গিয়ে অনুরোধ করে পুনরায় ডাইনিং-এর দায়িত্ব ছাত্রদের হাতেই ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য । কিন্তু এখন প্রভোস্ট স্যার, সহকারী প্রভোস্ট স্যাররা ও অন্যান্য হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীসমূহ একজোট হয়েই যেন টালবাহানা শুরু করে । এর নেপথ্যে কারণ হলো, ডাইনিং-এ হল কর্তৃপক্ষ ভুর্তুকি দিতো প্রায় ত্রিশ হাজার থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকার মত । এই টাকাটা ক্যান্টিনের লিজ নেওয়া ব্যক্তিটিকেই ডাইনিং-এর দায়িত্ব দেওয়ার পর পুরোপুরি হল কর্তৃপক্ষ-এর পকেটেই ঢুকে । যা সবাই মিলেই ভাগবাটোয়ারা করেই খায়, এমনটাই সন্দেহ হলের আবাসিক ছাত্রদের । যাই হোক, এই বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি । এমনকি হল কর্তৃপক্ষ ইদানিং প্রায়ই ছাত্রদের ভুলিয়ে ভালিয়ে এই দাবী থেকে পিছা ছাড়িয়ে দিচ্ছে ।
(বাকিটা আগামী পর্বে)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



