সত্যি করে বলছি বাংলাদেশের কোটা পদ্ধতি আমার একেবারেই পছন্দ না । অনেকেই ভাবতে পারেন হয়তো এই কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে আমি মোটেও উপকৃত হচ্ছি না, এই কারণেই বলছি । জী, না, এটা সম্পূর্ণ আত্মসম্মানবোধ থেকেই বলছি । যদি আমি একই আত্মসম্মানবোধ মানুষ হিসেবেই কোটা পদ্ধতি ব্যবহারের উপযুক্ত হতাম, তাও বলতাম এই কথা । বাংলাদেশে কোটা পদ্ধতি সাধারণত অনেক ধরনেরই হয় । মুক্তিযোদ্ধা কোটা, উপজাতি কোটা, জেলাভিত্তিক কোটা ইত্যাদি ।
আচ্ছা, আপনি কি উপজাতি কোটার সুবিধা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন? তাইলে কি আপনি নিজেই এই দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে নিজেকে দাবী করতে পারেন ? না, পারেন না । কারণ আপনি এই দেশের নাগরিক নন । আপনি শুধুই একজন উপজাতীয় অধিবাসী । উপজাতি কোটা করার প্রধান কারণগুলো হচ্ছে এরা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে থাকে । এরা অনেকক্ষেত্রেই সুবিধা বঞ্চিত থাকে । এখানে অনেকগুলো কিন্তু আছে । একজন স্বাধীন নাগরিক হয়ে তারা তো দেশের পক্ষে ভোট দিতে পারেন । এদের মধ্যে সত্যি যারা পড়াশুনায় আগ্রহী, তারা কিন্তু সেই প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে পড়ে থাকে না । তারা ঠিকই শহরে কিংবা সুবিধাযুক্ত স্থানগুলোতে এসে পড়াশুনার সুযোগ-সুবিধা নেই অন্যান্যদের মতই । তাহলে এই কোটা করে বৈষম্য করার মানে কি ?
আচ্ছা, আপনি কি মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন? এবার, সিরিয়াসলি ? আপনি নিজেই বলুন না, আপনি কি ঠিক করছেন ? একজন মুক্তিযোদ্ধা কি দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন এমন কিছু পাবার আশায় ? ফেসবুক কিংবা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলোতে কিন্তু অহরহ এই কৌতুকটি করা হয় যে, "যুদ্ধের সময় যদি আমার বাপ একটা পাথর কিংবা ইটের টুকরাও ছুঁড়ে মারতো, তাইলে এখন আমরা এই মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা নিতে পারতাম ।" কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি কৌতুক ? এটাকে কৌতুক বানাচ্ছে এই কোটা পদ্ধতি । তাছাড়া এখন প্রতি বছর মুক্তিযুদ্ধ তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে । এই হালনাগাদ তালিকায় প্রতি বছরই হাজার হাজার নতুন নতুন মুক্তিযুদ্ধ যোগ হচ্ছে । এদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি নিয়েছেন কিন্তু আসলে মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মগ্রহনও করেননি । আবার হয়তো অনেকেই যুদ্ধের সময় ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন । তারাও মুক্তিযোদ্ধা । হাস্যকর । এই সরকার তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেই ক্ষমতায় এসেছিল । মানে এই চেতনা কিন্তু রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে । আবার হাস্যকরভাবে নতুন আইন হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরাও এই মুক্তিযুদ্ধ কোটার সুবিধা পাবে । কেউ কি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ছেলে এখন কাঁধে ঝোলা নিয়ে এখন ফেরি করে বেড়ায় ভাঙাচুরা কিংবা প্রকৃত অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা সারাজীবন বিকলাঙ্গ কিংবা নিহত হয়ে গেলেও ঐ মুক্তিযোদ্ধা তথা সাহসী বীরের ছেলেমেয়েরা কোনদিন তাদের বাবা কিংবা মায়ের নাম ভাঙ্গিয়ে কোনদিন সুবিধা আদায় করেনি । আসলে এই কোটাটা কারও প্রাপ্য নয় বরং দেশের সব মানুষের পক্ষ থেকে একটি উপহার । আর আপনিই কিনা এটার অপব্যবহার করছেন ? ভালোই ।
আচ্ছা, আপনি কি জেলাভিত্তিক কোটার সুবিধা নিয়েছেন না নিচ্ছেন ? এই কোটাটাও হাস্যকর । জেলাভিত্তিক কোটার সুবিধা আদায়কারী এই লোকগুলো কি দেশের বাইরের মানুষ ? এক জেলায় একাধিক যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ থাকলেও এই কোটার কারণে সকলে তাদের সেই যোগ্যতার মূল্যায়ন পাবেন না । এটা কি মগের মুল্লুক নাকি ? যতসব ফালতু নিয়ম-কানুন ।
আসলে এই কোটা পদ্ধতি আমাদের দেশকে মেধাশুন্য করে তুলেছে অনেকাংশেই । বিসিএসের মত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাতেও এক কোটার জন্য এক বছর নষ্ট হয় দেশের হাজারো-লক্ষ মেধাবীদের । আরে ভাই, যোগ্যতাই আসল । কোটার সুবিধা নিয়ে আবার অন্যান্যদের কাছে বড়াই করার ক্ষেত্রে এইসব কোটার সুবিধা আদায়কারী লোকগুলোর লজ্জা করা উচিৎ । এখন আমার সাথে একমত হলে আসুন হাতে হাত মিলাই আর না হলে ? কি আর করার । ঐ যে দূরে যে দোকানটি দেখছেন, ওখানে মুড়ি পাওয়া যায় । কিনে চাবাতে থাকুন, আশা করি খারাপ লাগবে না আর ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৬