somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘন বর্ষায় দার্জিলিং ভ্রমন- কিছু পথের পাঁচালী

১২ ই জুন, ২০১৫ সকাল ৭:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

শিলিগুড়ি পর্ব-২

কামরুপ-কামাখ্যার মায়ার জালের কথা ছোট বেলায় গল্পের মত শুনেছি। ভারতে ঘুরতে এসে ৭০ কিলো পথ মাড়িয়ে সেই বাংলাদেশের সীমানায়ই রয়ে গেলাম।এক্ষণে আবার সেই কামরুপ-কামাখ্যার মায়ার জালের কথাই বারবার মনে পড়ছে।

শিলিগুড়িকে বই পুস্তুকে শিলিগুড়ি করিডোর বলে জেনে এসেছি। তার আভাসও পাচ্ছি। ফুলবাড়ীর মোড় থেকে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা সীমান্ত মাত্র ১০ মিনিটের পথ। তাহলে দূরত্বটা কল্পনা করলেই বোঝা যায়। অথচ এতটুকুন দূরত্বের মাঝে যেন বৈদ্যুতিক খুঁটি আর তারের লহর বয়ে যাচ্ছে। মাথার উপর কেবলি দিগন্ত বিস্তৃত তার আর তার। হবেই বা না কেন ? একটা দুইটা নয়। উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত সাতটা রাজ্যের সাথে বৃহৎ ভারতের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই শিলিগুড়ি। মাথার উপরের তারগুলি ঐ সব রাজ্যের দিকেই গেছে।


মাথার উপরে হাই ভোল্টেজ তারের মেলা।

বুড়িমারীর মত বাংলাবান্ধাতেও ট্রাকের সারি।ত্রিফলার নীচে কোনটিতে আছে নেপাল থেকে আসা কমলা,আপেল অথবা বালি বা পাথর।তবে ব্যস্ততার অতটা বালাই নেই।ট্রাক সিরিয়ালে রেখে ড্রাইভার দিব্যি রাস্তার উপরেই লুডু খেলায় মেতে উঠেছে।


বোম পাশে বিএসএফ ফাঁড়ি,দূরে ডানে বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত।

কাঁধে ছোট মাপের ব্যাগ গলায় ক্যামেরা। এ বেশে রিক্সা থেকে নামতেই সীমান্ত প্রহরীদের চোখগুলি যেন হরিণের মত উৎকর্ণ হয়ে উটল। তবুও জিরো পয়েন্ট মাড়িয়ে একেবারে চেকপোস্টের ডেরায় গিয়ে উপস্থিত হলাম।


ফুলবাড়ীর জিরো পয়েন্ট,সাথে বিএসএফের চেক পোস্ট।

-কোন চ্যানেল থেকে এসেছেন? জওয়ানটি একটা ট্রাক ড্রাইভারের কাগজ চেক করছিলেন। কাজের ফাঁকেই প্রশ্নটি করে বসলেন।
-বসৃ,চ্যানেল থেকে আসলে তো সাথে আরও লোক থাকত।
-কোন পত্রিকা থেকে এসছেন?
-চ্যানেল,পত্রিকা কোথাও থেকে নয়, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এবার জওয়ানের চোখ দুটি আমার দিকে স্থির হয়ে গেল। একগাদা হিন্দি আউড়িয়ে অনেকটা রাগশ্বরেই অনেকগুলো প্রশ্ন করে বসলেন।
-এতক্ষণ বাংলায় বলছিলেন,বাংলাদেশী শুনেই হিন্দি শুরু করে দিলেন?
-কিন্তু এখান দিয়ে তো পার হতে পারবেন না।চেংড়াবান্ধা দিয়ে যেতে পারবেন।ফাঁড়ি থেকে অপেক্ষাকৃত পদস্থ গোছের একজনকে আসতে দেখছিলাম।পিছন থেকে তিনিই বলে উঠলেন।


চেকপোস্টের সামনে দুই বিএসএফ জওয়ান।ফুলবাড়ীর দিকে মুখ করে তোলা।

যাহোক অফিসার জওয়ানটির সাহায্যে বর্ডার প্রান্তটিতে অনেকক্ষণ থাকার সৌভাগ্য হ’ল।যে পর্যন্ত যাবার অনুমতি নেই সেখানেও আর কেউ বাঁধা দিল না।ক্যামেরার আচ্ছামত সদ্যবহারও করে নিলাম।পরভূম থেকে মাতৃভূমিকে দেখছি। নিজ দেশের দূরের কৃষি জমিতে দু,একজন কৃষককেও চোখে পড়ল। সে এক আশ্চর্য্য অনুভূতি।অথচ মাত্র সকালবেলায়ই ঐ আঙিনা থেকে এসেছি।


চেকপোস্টের সামনে থেকে তোলা।দূরে বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত।রাস্তার উপর ঐ টিনের চালাটিই ভারতের শেষ স্থাপনা।

বাংলাবান্ধা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর হতে পারত।কেননা বাংলাদেশের আর যে কয়টা স্থলবন্দর রয়েছে সেগুলি দিয়ে কেবল ভারতের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য চলে।বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত,নেপাল,ভুটানের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রফতানি সুযোগ রয়েছে।ইমিগ্রেশন সুবিধা না থাকায় ভারত, নেপাল আর ভুটানের দর্শনীয় শহরগুলো বেশ কাছে হলেও মানুষ পারাপার হয় না। কিন্তু বিশেষ প্রক্রিয়ায কেবল ট্রাক পারাপার হয়।তবে চেংড়াবান্ধা-বুড়িমারীর রাস্তার চেয়ে এখানকার রাস্তাঘাট অনেক ভাল।পোর্ট সংশ্লিষ্ট স্থাপনাও অনেক বেশি।চেংড়াবান্ধা-বুড়িমারী ল্যান্ড পোর্টের ভারত অংশে মনে হয় চেয়ার টেবিল নিয়ে লোকজন আপাতত বসেছে ভ্রাম্যমান কোন সেবা দিতে।


ফুলবাড়ী ল্যান্ড পোর্ট অফিস।


একটি ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকছে।বাংলাদেশের সীমানায় ভারতে ঢোকার অপেক্ষায় কয়েকটি ট্রাক।রাস্তার উপর ঐ টিনের চালাটিই ভারতের শেষ স্থাপনা।


দূরে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা জরো পয়েন্ট দেখা যাচ্ছে।ছবিটি সংগৃহীত।

এবার ফিরতি যাত্রা। তবে ফেরার সময় সেই পরোপকারী অফিসার জওয়ানটিকে খুঁজেও পেলাম না। যেখানে রিক্সা ছেড়ে দিয়েছিলাম সেখানে রিক্সার কোনও চিহৃ দেখলাম না।তবে খানিকক্ষণ দাঁড়াতেই রিক্সা পেয়ে গেলাম।


যেখান থেকে উঠেছিলাম সেই ফুলবাড়ী মোড়ে রিক্সা নামিয়ে দিল।শিলিগুড়ির অনেক ধরণের যান পাওয়া যায়।তবে কি ভেবে কোনটিতে না উঠে সোজা উত্তর মুখো হাঁটা ধরলাম।কিছুক্ষণ এগিয়েই একটা গোল চত্ত্বর।এটাই ফুলবাড়ী বাইপাস।

গোল চত্ত্বর থেকে একটা রোড ডানপাশের একটা ক্যানেল ধরে পশ্চিমে মহানন্দা ব্রীজের দিকে গেছে। ডানপাশের ক্যানেলটিই বিখ্যাত Ambari Canel.তিস্তা নদীর পানি আটকিয়ে বিভিন্ন ক্যানেল দিয়ে চালান দেয়া হচ্ছে কৃষি ক্ষেত্রে,চা বাগানে, আম-লিচু-কমলার বাগান পরিচর্যায়,শিল্প কারখানার বর্জ্য ধৌতকরণ কার্যে। Ambari Canel সেসব ক্যানেলগুলোর অন্যতম।


Ambari Canel ।বাংলাদেশে অনেক নদীতেও এত পানি দেখা যায় না।

তিস্তার মুখ থেকে ফুলবাড়ী পর্যন্ত অনেকখানি দূরত্ব।এই দূরত্বে আসতে ক্যানেলে অকেগুলো Lock Gate বসিয়ে ডানে-বামে ক্যানেল থেকে অনেক পানি নিয়ে নেয়া হচ্ছে। এর পরেও ক্যানেলে যত পানি দেখলাম বাংলাদেশে অনেক নদীতেও এত পানি দেখা যায় না।

ক্যানেলের অবশিষ্ট পানি গিয়ে পড়ছে মহানন্দা নদীতে।মহানন্দা ব্যারেজের কারণে এ পানি ব্যারেজ চুইয়ে বাংলাদেশে যেতে পারে না। Ambari Canel এর মত মহানন্দা ব্যারেজ থেকে Ghoshpukur Canel দিয়ে মহানন্দার এ পানি আবার দক্ষিণ-পশ্চিমের কৃষি জমিতে,বাগান পরিচর্যায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।অত্যন্ত সুষ্ঠ পরিকল্পনা সাথে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৫ রাত ১০:২৩
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×