সবাইকে ভালোবাসা জানিয়ে আমার প্রথম ব্লগ শুরু করছি। অনেক ভুলত্রুটি হবে, ততটা তথ্য পুষ্টও হবেনা, আশা করি আপনারা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন!!
শুরু করি কিছু প্রাপ্তি দিয়ে,
ভারতের প্রথম স্যাটেলাইট আর্যভট্ট মহাকাশে প্রতিস্থাপিত হয় ১৯শে এপ্রিল ১৯৭৫ সালে! সেই শুরু, এখনও ইসরো সেই গর্ব কে দিন দিন বাড়িয়ে তুলছে। আজ ভারত সর্বমোট ৮৪ টা স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে(শুধু ভারতের, অন্য দেশের স্যাটেলাইট গুলো বাদ দিলাম)। ভারতের প্রথম দিকের স্যাটেলাইট গুলো ছিলো মূলত পরীক্ষা মূলক ও দেশের প্রত্যক্ষ চাহিদা পূরণের জন্য। যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থা, বেতার সম্প্রচার, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ইত্যাদির কাজের জন্য INSAT ও IRS সিরিজের স্যাটেলাইট গুলো পাঠানো হয়েছিল! পরীক্ষা মূলক স্যাটেলাইট ছিল ROHINI সিরিজের স্যাটেলাইট গুলো। আর মহাকাশ গবেষণা বলতে গেলে চন্দ্রযান-১ ২০০৮ সালে, যা ছিল একটি সফল প্রচেষ্টা, ভারতের এই লুনার প্রোব প্রথম প্রমান করে চাঁদে জলের উপস্থিতি! তারপর ধরা যেতে পারে মার্স অরবিটার মিশন বা মঙ্গলযানকে, এটা সাম্প্রতিকতম সাফল্য। এখানে গর্ব করার মত বিষয় হলো, দেশ হিসেবে ভারত তৃতীয়তম দেশ যারা মঙ্গলে সফল অভিযান করে অর্থাৎ আমেরিকা, রাশিয়ার পরেই, মহাকাশ গবেষণা সংস্থা হিসেবে চতুর্থতম নাসা, এসা (ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি) ও রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থার পরেই ভারতের ইসরো! তার থেকেও বড় সাফল্য, ভারতই একমাত্র দেশ যারা মঙ্গলে প্রথম প্রচেষ্টায় সফল অভিযান করে! মঙ্গলযানের জন্য ভারত National Space Society থেকে Space Pioneer Award পেয়েছে!! তার পর ভারতের প্রথম স্পেস টেলিস্কোপ ASTROSAT ২০১৫ সালে পাঠানো হয়, এই ধরণের টেলিস্কোপ স্যাটেলাইট মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি দেশের আছে! আজ ভারত নিজস্ব পজিশনিং সিস্টেম (GPS এর মত) তৈরি করছে যা প্রায় শেষের দিকে, সিস্টেমটা তৈরি করতে IRNSS সিরিজের ৭টা স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে! ভারত আজ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে কোনো দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেনা, ভারতের নিজস্ব উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা আছে।। এক্ষেত্রে PSLV ও GSLV সিরিজের রকেট গুলি সফলতম। ভারতের একসঙ্গে একবারে ২০টা স্যাটেলাইট প্রতিস্থাপনের রেকর্ড আছে, নাসার এই রেকর্ড ২৯টি। অজ্ঞতা ও মোবাইলে ব্লগ লেখার কারণে আরো অনেক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারলাম না।
এবার আসি সমালোচনায়, যে উদ্দেশে আমার এই ব্লগ লেখা।। অধিকাংশ বাংলাদেশি ভাই ও অল্প কিছু ভারতীয় ভাইরা ভারতের এই মহাকাশ গবেষণা নিয়ে সমালোচনা করে।। তাদের বক্তব্য যে দেশে এত দারিদ্র, যাদের পায়খানা নেই(!) তাদের এমন বিলাসিতা করা উচিত না। পায়খানার প্রসঙ্গে আর আলোচনা করলাম না, কিছুটা সমস্যা অবশ্যই আছে এ বিষয়ে তবে বাংলাদেশিরা যতটা ভাবে ততটা না, এখন কিছুটা উন্নতিও করেছে। যাইহোক তাদের আমি বলছি, মহাকাশ গবেষণা বিলাসিতা না। এবিষয়ে আমি আমার বক্তব্যকে পয়েন্ট অনুসারে তুলে ধরছি।।
১: আমার প্রথম যুক্তি হলো, এইযে মহাকাশ গবেষণায় এত টাকা খরচ হচ্ছে যেমন মঙ্গল অভিযানে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে! এই টাকা কি স্যাটেলাইটে ঢুকিয়ে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে? এই টাকা খরচ হয়েছে বিভিন্ন খাতে, ফলে অনেক ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, সংস্থার কর্মসংস্থান হয়েছে! একটাকাও বিদেশে যায়নি, কারণ সম্পূর্ণ অভিযানটি ভারতের নিজস্ব টেকনোলজি ও কাঁচামালের ভিত্তিতে হয়েছে!!
২: এতে আমাদের মতো গরিবের কি লাভ হলো?? আমাদের মতো গরীবদের আয় সাধারণত উপরে উল্লেখিত শ্রেণীর উপর নির্ভর করে, ফলে ওদের আয় বাড়লে আমাদেরও বাড়বে!! (সম্পূর্ণ আমার মনগড়া থিওরি)
৩: সমালোচনাকারীদের যুক্তি এত টাকা বাজে (!) খরচ না করে দেশের কাজে লাগাতে হত। আচ্ছা ওই টাকা গুলো কি আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বা জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল?? মহাকাশ গবেষণা কি দেশের কাজ না??
৪: সমালোচকদের যুক্তি এই টাকা গুলো গরিব মানুষদের কল্যানে ব্যবহার করতে হতো, সরকার কিভাবে জনগণের পিছনে কিভাবে টাকা খরচ করে?? জনমুখী প্রকল্প?? এই ধরণের প্রকল্প গুলো অধিকাংশ ব্যর্থ! একটা সমীক্ষা বলছে সরকার এই ধরণের প্রকল্প গুলোতে যত টাকা খরচ করে তার ১০% সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায় বাকি যায় নেতা, আমলাদের পকেটে!! যেমন রেশন ব্যবস্থা, দুটাকা কেজি দরে চাল দিয়ে ভর্তুকির বোঝাই দেশের অর্থনীতিকে ভেঙে না দিয়ে দেশকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ভালোনা যেখানে মানুষ ৩০ টাকা দরে কিনে খেতে পারবে?? মহাকাশ গবেষণা পারবে দেশকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে!!
৫: এবার আসি লাভের প্রসঙ্গে, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ প্রতি বছর প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করে, একটা ছোট্ট দেশের যদি এত চাহিদা হয় তাহলে ভারতের কত হতে পারে?? ভারত তো নিজের প্রয়োজন মেটাই তার উপর অন্য দেশকে স্যাটেলাইট ভাড়া দিয়ে অনেক আয় ও করে!!
৬: ভারত এ পর্যন্ত ৫৭টা বিদেশি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে, বলাহয় ভারতের উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা অনেক সস্তা!!! অনেক নির্ভরযোগ্য, সমালোচকেরা ভেবে দেখেছেন এভাবে কত বিদেশি মুদ্রা আয় করা যায়?? আজ নাসাও ভারতের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী, পরবর্তী মঙ্গল অভিযানে, সম্ভবত ২০২২ সালে।।
৭: কার্গিলের যুদ্ধে আমেরিকা ভারতের জন্য GPS বন্ধ করে দিয়েছিল, কারণ তখন তারা পাকিস্তানের বন্ধু (!), তাই নিয়ে ভারতের সেনাবাহিনী অনেক বিপাকে পড়েছিল।। নিজস্ব প্রযুক্তি থাকলে অন্যের মুখাপেক্ষীও হতে হতোনা, GPS এর তথ্যের দরুন কোটি কোটি টাকাও গুনতে হতোনা।। আশার কথা এমন সিস্টেম এবার ভারতের হাতের মুঠোয় আসতে চলেছে!!
৮: মহাকাশ গবেষণা সার্বিক ভাবে বিজ্ঞানের উন্নতিতে ভীষণ ভাবে প্রভাব রাখে, বিজ্ঞানের উন্নতি কি মানুষের উন্নতি না??
৯: ইসরো ভারতের প্রতিরক্ষা বিষয়ে অনেক প্রভাব বিস্তার করে, যেমন- মিসাইল টেকনোলজি, বর্ডারে নজরদারী।।
১০: মহাকাশ গবেষণায় সাফল্যের কারণে ভারত আন্তর্জাতিক দরবারে যে সমীহ আদায় করেছে তা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিশ্চই ভারতের পক্ষে ইতিবাচক!!
মোটামুটি এগুলোই আমার যুক্তি সমালোচনার বিরুদ্ধে।। আবারও বলছি, জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ও মোবাইলে ব্লগ লেখার জন্য খুব তথ্য বহুল লেখা লিখতে পারলামনা তার জন্য দুঃখিত।। ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!!