somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্টিফেন উইলিয়াম হকিং – সর্বকালের অন্যতম সেরা সাফল্যের উদাহরণ

১৩ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিন এমন যদি আবিষ্কার করেন, আপনি ঠিক আগের মত আর হাঁটতে পারছেন না ? কিংবা হঠাৎ যদি আপনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন ? অথবা যদি এমন হয় , আপনি জানতে পারলেন আপনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত , আর মাত্র ২ বছর বেঁচে আছেন ? - এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া আমাদের জন্য খুবই কঠিন । শুধু কঠিনই নয়, আমরা এগুলো কল্পনাও করতে চাই না ।


কিন্তু বিষয়গুলো সত্যিকারে একজন মানুষের জীবনে ঘটেছে যার নাম স্টিফেন হকিং । শুধুমাত্র মানুষ বললে ভুল হবে কারন তার পরিচয় একটু বেশি – সর্বকালের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী । একজন বিখ্যাত লোক হলেও স্টিফেন হকিং এর জীবন আপনার আমার মত এতটা সহজ ছিল না ।


আরেকটু বিস্তারিত বলি , শুরু থেকে । কিছুদিন আগে আমার এক বড় ভাই তার জীবনের মর্মান্তিক কাহিনী বর্ণনা দিলেন এইভাবে – “ বিদেশে গিয়েছিলেন অনেক স্বপ্ন নিয়ে, কিন্তু হঠাৎ কোমরের বেথায় আক্রান্ত হয়ে জীবন যুদ্ধে হার মানলেন, দেশে ফিরে আসলেন । সেই থেকেই নাকি উনার দুরাবস্থা শুরু । ” তাকে স্রেফ জানিয়ে দিলাম – “ সমস্যাটা আসলে আপনার শরীরের নয় , আপনার মস্তিষ্কের । আপনার মনস্তাত্ত্বিক সক্ষমতা ক্ষীণ । যেখানে স্টিফেন হকিং এর মত উদাহরন পৃথিবীতে আছে সেখানে আপনার এক্সকিউজ গ্রহণযোগ্য নয় ।”
বস্তুত , আমাদের আশপাশে বেশিরভাগ মানুষই এমন , সবকিছুতে এক্সকিউজ খুজে বেড়ায় । কিন্তু এগুলো সবই আমাদের মনস্তাত্ত্বিক সক্ষমতার ঘাটতি ও উপযুক্ত বাস্তব শিক্ষার অভাব । তখনই ঠিক প্রথমবার উপলব্ধি করলাম যে , স্টিফেন হকিং কে নিয়ে একটি ব্লগ লিখা উচিত । আমরা যারা প্রতিনিয়ত সাফল্যের জন্য অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছি , তাদের জন্য অন্যতম অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে এই বেক্তিটি ।

স্টিফেন হকিং এর জীবনী কিংবা উক্তি কমবেশি পড়েনি এমন মানুষ ব্লগে খুজে পাওয়া মুশকিল । আমার এই ব্লগটি মূলত তার জীবনী উল্লেখ করার জন্য নয় কিংবা তার সম্পর্কে তথ্য দেয়ার জন্য নয় বরং তার জীবনীর স্বরূপ তুলে ধরে সফলতার জন্য লড়াই করা সংগ্রামী মানুষদের অনুপ্রেরণার জন্য ।




হকিং এর জন্ম ১৯৪২ সালে, বাবা ড. ফ্রাঙ্ক হকিং একজন জীববিজ্ঞান গবেষক ও মা ইসোবেল হকিং একজন রাজনৈতিক কর্মী। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত হকিং সেন্ট অ্যালবার মেয়েদের স্কুলে পড়েন (সে সময় ১০ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেরা মেয়েদের স্কুলে পড়তে পারতো ) । পরে সেখান থেকে ছেলেদের স্কুলে চলে যান। স্কুলে তার রেজাল্ট ভাল ছিল বটে তবে অসাধারণ ছিল না। বিজ্ঞানে হকিংয়ের সহজাত আগ্রহ ছিল। হকিংয়ের বাবার ইচ্ছে ছিল হকিং যেন তার মতো ডাক্তার হয়। কিন্তু হকিং গণিত পড়ার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু যেহেতু সেখানে গণিতের কোর্স পড়ানো হতো না, সেজন্য হকিং পদার্থবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়া শুরু করেন। অক্সফোর্ডে থাকাকালীন সময়ে মার্ক মোটামুটি পেলেও বিজ্ঞানের প্রতি ব্যাপক কৌতূহলের জন্য সহপাঠীরা তাকে আইনস্টাইন বলে ডাকত ।



ছবিঃ হকিং এর কলেজের দিনগুলো (সাদা শার্ট রুমাল হাতে)

অক্সফোর্ড হতে পিএইচডি করার শেষ বৎসরগুলোতে হকিং প্রথম অসুস্থতা অনুভব করেন। তিনি ঝাপসা দেখতে শুরু করেন ও একবার সিঁড়ি থেকে নিচেও পরে যান । মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি জানতে পারেন তিনি মোটর নিউরন নামক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত । তাকে এটাও জানিয়ে দেয়া হয় যে তিনি আর বেশি হলে ২ বছর বেঁচে থাকবেন । কিন্তু হকিং ডাক্তারদের কথায় কান দেন নি । যদি দিতেন, তাহলে হয়ত তখনই তার মানসিক মৃত্যু ঘটত – এটা তারই ধারণা । মানসিকভাবে ব্যাপক আঘাতপ্রাপ্ত হলেও তিনি স্বাভাবিক পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং গবেষণার দিকে মনোনিবেশ করেন । ১৯৬০ সালের থেকে তাকে হুইল চেয়ার ব্যাবহার করা শুরু করেন । ১৯৮৫ সালে ফ্রাঞ্ছে একটি সম্মেলনে যোগ দেয়ার সময় তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন । তার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে , ডাক্তাররা তার কষ্ট দেখে শ্বাসনালী খুলে দেয়ার জন্য পরামর্শ দেন । কিন্তু তার স্ত্রীর অস্বীকৃতিতে তা করা হয়নি । এ যাত্রায় হকিং বেঁচে যান , কিন্তু তিনি তার বাকশক্তি হারান । এরপর কিছুদিন তাকে ইংরেজি শব্দ যুক্ত বোর্ডের মাদ্ধমে চোখের ইশারায় ভাব প্রকাশ করতে হয় । পরে একটি স্পীচ জেনারেটিং ডিভাইস যুক্ত স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটারের মাদ্ধমে তিনি ভাব প্রকাশ করার সুযোগ পান যা তিনি এখনও ব্যাবহার করছেন । এভাবে জীবনের বহু প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আজ পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে তিনি জানান, ১৯৮০ সালে তিনি নিজের শ্বাসরোধ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন । সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল । তিনি মানেন যে, কেউ যদি আত্মহত্যা করতে চায় তাহলে তাকে তা করতে দেয়া উচিত , কারন সমাজের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই ভাল । তবে তিনি এটাও বিশ্বাস করেন – যতক্ষণ জীবন বেঁচে আছে ততক্ষন সম্ভাবনা আছে । আমাদের সবারই যেকোনো পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে । ডাক্তারদের কথা ভুল প্রমান করে হকিং আজও বেঁচে আছেন । শুধু বেঁচেই নেই বরং অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হয়ে বেঁচে আছেন । ২০১৪ সালে তার জীবনীর উপর নির্মিত “থেওরি অফ এভরিথিং” চলচ্চিত্রটি দেখে নিতে পারেন , খুবই অনুপ্রেরণামুলক ।





ছবিঃ বাস্তবের স্টিফেন হকিং(বামে) ও ছবির স্টিফেন হকিং (ডানে)


আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করি, যেখানে আমাদের মত সাধারন লোকেরা অল্প শোকেই কাতর হয়ে পড়েন , সেখানে স্টিফেন হকিং এর মত লোকেরা কিভাবে জীবনের এতবড় দুর্যোগগুলো মোকাবেলা করেছেন ! এ কথা অনস্বীকার্য যে, স্টিফেন হকিং-রা শুরু থেকেই উন্নত মস্তিষ্ক নিয়ে জন্ম গ্রহন করেননি । বরং , জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত মোকাবেলা করেই তারা উন্নত মস্তিষ্ক ডেভেলপ করতে পেড়েছেন । জগতে মানসিক দুর্যোগের মধ্যে খুবই সাধারন একটি হচ্ছে প্রেমে পরে হৃদয় ভাঙ্গার ঘটনা । প্রতিটি সুস্থ মানুষকে জীবনে অন্তত একবার এই পর্যায়টি অতিক্রম করতে হয় । কিন্তু এই অভিজ্ঞতাটাই আমাদের একটি উচ্চতর মনস্তাত্ত্বিক পর্যায়ে নিয়ে যায়, যেখানে বিপরীত লিঙ্গ সঙ্ক্রান্ত দুর্বলতা আমরা কাটিয়ে উঠি ও অধিকতর বাস্তব জীবনযাপনে অভ্যস্ত হই । এভাবে , যে তার জীবনে অসংখ্য শারীরিক ও মানসিক সমস্যা অতিক্রম করে এসেছে তার জন্য জীবনবাস্তবতা অধিকতর সহজ, সে নতুন যে কোন আঘাতই মোকাবেলা করতে সক্ষম, তাকে অবশ্যই উন্নত মস্তিষ্কের অধিকারী বলা যেতে পারে ।


একজন মানুষের জীবনে একটি ক্ষুদ্র ঘটনাই যথেষ্ট তার মনস্তাত্ত্বিক উৎকর্ষতা বিবেচনা করার জন্য । যেমনঃ একজন মানুষ কতটা মহানুভব হলে নিজের হত্যাকারীকে ক্ষমা করে মরতে পারে (শ্রীকৃষ্ণ) , কিংবা চরিত্রে কি পরিমাণ দৃঢ়তা থাকলে মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও কৃত্তিমভাবে বেঁচে না থাকার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে না (আইনস্টাইন) । আমাদের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে এমন অসংখ্য উদাহরণ । আমাদের উচিত এগুলোকে গভীরভাবে উপলব্ধি করে নিজের জীবনে তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা, নিজের অনুপ্রেরনা নিজেই খুঁজে বের করা । যেখানে হকিং এর মত লোকেরা প্রায় অসম্ভব থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর উদাহরণ দেখিয়েছেন, সেখানে আপনার আমার মত মানুষরা সুস্ত সবল শরীর নিয়ে কিছু করতে পারছি না । আবার সবকিছুতে এক্সকিউজ দাড় করানোর চেষ্টা করছি । আমাদের আসলেই নিজেদের প্রতি ঘৃণা থাকা উচিত ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩১
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×