somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু দিবসের পোস্ট সেতো বন্ধু দিবসেই দিতে হয় (সে এক বিরাট কাহিনী যদিও সংক্ষেপিত হাহাহা)

০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বন্ধু দিবস আজ। আমার এমন দিবসগুলো ভালই লাগে। অনেকেই এসব দিবসকে মন্দ বলেন, আমার মন্দ লাগে না। বন্ধু দিবস মনে আসলেই কেমন জানি একটা শিহরণ বয়ে গেলো। প্রতিটি বন্ধু দিবসেই আমি বন্ধুদের নিয়ে লিখি। আজো লিখেছি। আগামীতেও লিখব।

এই বন্ধু দিবস নিয়ে যার মনে যতই সংশয় আর বিতৃষ্ণা থাকুক না কেনো। দিবসের কথা মনে করে অনেকেরই হয়তো পুরাতন বন্ধুদের কথা একবার হলেও মনে হয়েছে। পিছনে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। যতই মুখে বকবকানি করুন না কেনো বুকে হাত দিয়া বলেন তো বন্ধুদের কথা কি মনে হয়নি। আর প্রতি দিনই যদি মা দিবস, বাবা দিবস, বন্ধু দিবস থাকতো তবে বিশেষ দিবসের মর্যাদা থাকত বলে আমার মনে হতোনা। যেমন মা দিবসে আমার ছেলেরা সুন্দর করে এঁকে আমাকে গিফট করে। কই এ গিফট তো প্রতিদিন পাই না। আমি এমন গিফট পেয়ে আপ্লুত হয়। আমার ভাল লাগে খুব ভাল লাগে।





বন্ধু দিবসটাও তেমন ......ভাল লাগে খুব ভাল লাগে। বন্ধুদের ভাবতে ভাল লাগে । তাদের কথা মনে করে ভাল্লাগে। কত স্মৃতিময় দিনগুলো ফেলে রেখে এসেছি। যদিও আমাদের যুগে এখনের মতো এমন প্রেম পিরিতি ছিলনা । বন্ধুদের সাথে চলতে গিয়ে কখনো মনে হয়নি এরে ভাললাগে তারে ভালবাসি। ছেলেমেয়ে মিলিয়েই ছিল আমাদের বন্ধুত্ব জীবন যা মেয়েবেলার সময়কার যা অতীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবুও তাদের ভুলা সহজ কাজ নয়। তারাও আমাকে ভুলবে না আমি জানি।



প্রাইমারী গন্ডি পেরিয়ে আমি গার্লস স্কুলে ভর্তি হয়েছি। সেখানে পেয়েছি অগণিত বন্ধু। যদিও সবার কথা মনে নেই তবুও বেস্ট ফ্রেন্ডগুলো এখনো আমার বেস্ট ফ্রেন্ডই রয়ে গেছে-আছে। আমাদের যোগাযোগও বহাল আছে এখনো যদিও কথা হয় না বেশী কিংবা দেখাও হয় না তবু আমরা আছি একে অপরের সাথে জড়িয়ে। স্কুলের প্রতিটি দিনই ছিল বন্ধু দিবস। মেয়েরা মেয়েরা থাকায় সেখানে একটু বেশীই দুষ্টামি করতাম আমি। চুলের বেন্ট খুলে হাতে ধরিয়ে দিতাম, বেণী খুলে দিতাম। একজনের ওড়না আরেকজনের সাথে বেধে দিতাম। সবাই বলতো এ আর কারো কাজ নয় -এটা নিশ্চিত ছবির কাজ। গায়ে গতরে গড়নে আমি খুবই পিচ্চি ছিলাম আর সবাই আমার চেয়ে উচ্চতায় স্বাস্থ্যে বেশ ভাল ছিল। পিচ্চি থাকাতে দুষ্টামির সুবিধাটা একটু বেশীই ছিল । মেডামরা আমাকে পাগল বলে ডাকতেন। ক্লাসে এসেই বলতেন পাগলটা কই।

সেই সময় এপ্রিল ফুলের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানা ছিল না তাই সে সময়ে এপ্রিল ফুল বেশ ঘটা করে পালন করতাম আমরা বান্ধবীরা মিলে। স্যার থেকে শুরু করে সবাইকে ঠকাতাম। কি যে হাসাহাসি আর মজা আহারে । সে সময় চার আনায় আইসক্রিম খেতাম। এক টাকায় একটু দামীটা। এক টাকা যেদিন পেতাম চারজনে মিলে চারটা আইসক্রিম খেতাম। আর বাদাম খেতাম স্কুল বিরতির সময় ছাদে বসে। সবাই কাঠফাটা রোদে বসেই বাদাম খেতাম। আর সুযোগ পেলেই ব্যান্ড বাজনায় মত্ত হতাম । প্রকট শব্দে মেডাম স্যার রা বেত নিয়ে দিতে দৌড়ান।

একদিন বিজ্ঞান ক্লাসে আধা ভাঙ্গা বেঞ্চিতে বসে ক্লাস করছিলাম। মেডাম আমাকে কি জানি বলতেছেন আর আমি উত্তর দিচ্ছি। মেডাম পাশ ফিরলেই হঠাৎ আমার বেঞ্চিটি ভেঙ্গে নিচে পড়ে যাই। মেডাম আশ্চর্য্য বলেন আরে পাগলটা কই গেলো ? এই না তার সাথে কথা বলছিলাম। তখন ক্লাসে হাসির রোল পড়ে যায় বেঞ্চির নিচেই বসে আছি.....তারপর টেনে তুলে বান্ধবীরা সেদিন কি যে ব্যথা পেয়েছিলাম। আর শালার বান্ধবীরা হেসেছিলিস এখন পাইলে তোদের খবর ছিলোরে হাহাহা।

স্কুলের কথা বর্ণনা করতে গেলে লেখা শেষ হবে না। যখন নাইনে পড়ি তখন কোচিং করতে গিয়ে ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব হয়। বয়েস স্কুলে যেতাম কোচিং করতে। এক ক্লাস ভর্তি ছাত্র/ছাত্রি। সেখানে রুবেল ছিল আমার মতই দুষ্ট তবে সে একেবারে অনেক বেশী দুষ্ট। স্যারের সাথে যে কি মজা হতো। একদিন বেঞ্চিতে হাতের ঘষায় এমন একটা শব্দ করে আর সবাই ভাবে রুবেল প্রাকৃতিক কাজ সেড়েছে...... বায়ূ নিক্ষেপন করেছে হায়রে হায় রে ক্লাসে একটু একটু হাসি তারপর কেউ আর হাসি সামলাতেই পারে না শেষ পর্যন্ত স্যার নিজেই হেসে ফেললেন। এমন আরো কত ঘটনা বন্ধুদের সাথে বলে শেষ করা যাবে নিশ্চিত আমি।

কোচিং করতে গিয়ে ছেলে বন্ধু যারা বা যাদের সাথে সখ্যতা হয়েছিল, কলেজে গিয়ে তাদের দেখা পাই। এবং আজো আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট আছে। একসময় সবাই হারিয়ে গেছিলো....... সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাদেরকে আবার পেয়ে যাই এবং যোগাযোগটা ঠিক আগের মতই আছে হারামীগুলার সাথে।

মেয়েদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বান্ধবী ছিল পিনু, মুক্তা, নার্গিস, শিফা, শিমু, পলি, শুভ্রা, মনোয়ারা আরো অনেকেই আপাতত নাম মনে আসতেছে না। স্কুল পাশ দেয়ার পর যে যার মতো বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়ে যাই । হারিয়ে গেলো কিছু বন্ধু আবার নতুন করেও কিছু বন্ধু পাই। আর ছেলেদের মধ্যে, সোহেল, রিপন, রোবেল, সেলিম, মাহফুজ, তুহিন, মতিউর আরো অনেকেই । ইন্টার পড়াকালীন সবচেয়ে বেশী সখ্যতা হয় পিনু, রোবেল, সেলিম, সোহেল, রিপন, মুক্তা, শিফা, শিমুদের সাথে। আমার বাড়ি গ্রামে আর ওদের বাড়ি চুনারুঘাট শহরে। আমি তিন কিলোমিটার রাস্তা হেটে স্কুলে আসতাম-পরে কলেজের পথ ছিল আরো দূরে। তখন যান চলাচল কম ছিল আর আম্মা রিক্সাভাড়া দিয়ে টাকাটা বাচিয়ে রাখতাম। কখনো অত্যধিক বিলাসিতা আমি করি নি। আব্বা তখন সেনাবাহিনীতে জব করতেন। তখনকার দিনের বেতন নিতান্তই কম ছিল আর সব বান্ধবীরাই আমার চেয়ে অর্থসম্পদশালী।

কলেজের দিনগুলা বেশী আনন্দ ছিল। তখন মনে একটু একটু প্রেম প্রেম ভাব আসছিল যদিও পিচ্চি থাকার কারণে হারামীগুলা আমাকে ভালবাসে নাই গাধার গাধা কোথাকার এক একটা হাহাহা। ফাঁকে দিয়া আমাকে পিয়ন বানাইছে শালা তোদেরকে এখন সামনে একটা ঘুষি দিতাম নাকে। তখন দেখেছি একেকজনকে ফরহাদ মজনু হতে এসব থেকে আমি খুব মজা পেতাম আর সিজনাল প্রেমিক হতাম। একটু সুন্দর হলেই ভাল লাইগা যাইত আবার দুদিন পরে সেটা থাকত না হাহাহা। আর ক্লাসে সবচেয়ে বকা খেতো রুবেল। শালা আমাকে লক্ষ্য করে কাগজের ঢিল ছুঁড়তো আর আমরা মেয়েরাও তখন ঢিলাঢিলি শুরু করে দিতাম। দোষ গিয়ে পড়তো রুবেলের উপর। স্যার হুংকার ছেড়ে বলতেন রুবেল তোর মাথাটা ঘাড় থেকে ছিঁড়ে ফেলব। যা বাইরে গিয়ে দাঁডড়িয়ে থাক আহা কি মজা যে পেতাম । তবে ক্লাসটা বোরিং লাগতো তখন।



তখন থেকেই রাজনীতির সাথেও পরিচয় ঘটেছিল। কি বিভৎস কয়েকটা দিন ছিল মনে হলে শিউরে উঠি। প্রায়ই কলেজে মারামারি হতো। একদিন এমন এক মারামারির পর্যায়ে আমার বান্ধবী মনোয়ারা তার মাথায় কে জানি চেয়ার দিয়ে ঢিল ছুঁড়ে তার মাথা ফেটে রক্ত নদী। সব বান্ধবীরা যে যার মতো করে চলে গেছে। অবশ্য বড় ভাইয়েরা আর অন্যান্য ছেলেরা মেয়েদের গায়ে কিংবা তাদের ভয়ানকতার সাথে আঁচ লাগতে দেননি। সবাইকে কমন রুমে রেখে ভাইয়েরা ছিলেন চারিদিকে পাহারায়।



তো মনোয়ারা ফাটা মাথা নিয়ে কি করব ভাবতেছি আর ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে রিক্সা করে আমিই তাকে নিয়ে গেলাম হাসপাতালে । তার মাথায় সেলাই লাগবে অথচ অজ্ঞান করা হবে না উহ কি বিভৎস। তার পাশে একজনের হাত কাটা চারিদিকে রক্ত আর রক্ত । সেসব দেখে আমি হাসপাতালের বারান্দায় আসামাত্র জ্ঞান হারাই। অনেক উচু বারান্দা থেকে নিচে পড়ে যাই। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমার চারপাশে ডাক্তার আর মাথা ফাটা রোগী মনোয়ারা । তাকে সামলাবো কই আর তখন সেই আমাকে সামলিয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছিল।



এমন করে দুটি বছর কেটে গেছিলো কত আনন্দ আর আড্ডা গল্পে। পরীক্ষার কয়েকমাস আগে আবার কোচিং শুরু। কমার্স নেয়াতে একটু বেশী কষ্ট করতে হয়েছিল। তখন বান্ধবী হিসেবে পিনুই ছিল সব কিছুর সঙ্গী। তার বাসায় প্রায়ই গিয়ে থাকতে হতো । দুই বান্ধবী মিলে অংক করতাম। উদ্বৃত্ত পত্র মিলাতাম । তার বাসা যেনো আমার নিজেরই বাসা। খালাম্মা এত্ত আদর করতেন । পিনু রিনু সোহাগ সুমন সবাই এত আনন্দ নিতাম বৈকালিক আড্ডায়। কিন্তু বজ্জাত পিনু ছিল বদের হাড্ডি খালি কাইজ্জা লাগত। কথা কাটাকাটি করতে করতে সে আমাকে হাতে নখ দিয়ে লম্বা চির দিয়ে দিত। রক্তাক্ত হাত নিয়ে আমি কম যেতাম না আমিও দিতাম খামচি। তা দেখে খালাম্মা আমাকে ঝাড়ু নিয়া দৌড় তুলতেন । তখন আমি বলতাম খালাম্মাগো আপানার মেয়ে দেখে আপনি পক্ষ নিতাছেন আমার মা হইলে আপনার মেয়ের পক্ষ নিতেন । কিন্তু ঝগড়া একটু পরেই মিটে যেতো । দুইজনের হাতের চির দাগ অনেকদিন থাকতো। আমরা দুইডায় অসম্ভব দুষ্টামি করতাম। পিনুদের পেয়ারা গাছে উঠে সারাদিনই পেয়ারা খেতাম।



ইন্টার পরীক্ষার সময় কমার্সের সাবজেক্ট নাম জানি কি ছিল মনে করতে পারছি না। পিনু আর আমি পাশাপাশি বসেছি। অংক মিলিয়ে শেষে দেখি থিউরি কমন পড়ে নাই । সামনে বসেছে মনোয়ারা কিন্তু সে কিচুতেই আমাদের দেখাবে না। কি করি ভাবছি দুজন আর এমন সময় মনোয়ারার পেল বাথরুম। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। মনোয়ারার কলমে চাপা পড়া খাতা টেনে নিয়ে আসি। পিনু লিখে এ সাইট তো আমি লিখি অই সাইটা পার্থক্যগুলা আর এইভাবেই সবগুলো থিউরিই উঠায়ে ফেলি মুহুর্তে তখন মনোয়ারা এসে স্যারের কাছে বিচার দেয় । স্যার বলে বন্ধু হয়েছো তো খাতা দেখালে দোষ কি শুনি। বাংলা স্যার ছিলেন খুব সহজ সরল। মনোয়ারা সেদিন পাত্তা পায়নি। হাহাহাহা। আর এভাবেই ইন্টার পর্ব শেষ হলো। আবারো বলছি খুবই সংক্ষেপন করে লিখতেছি লিখাটা। লিখতে গেলে শেষ হবে না লেখা।

পরীক্ষা পাশের পর যে যার মতো অনার্স বা ডিগ্রি ভর্তি হয়ে গেলো। হারালাম প্রাণ প্রিয় বন্ধু বান্ধবীদের । যদিও বান্ধবীগুলো হারামী আমাকে আর বেশী মনে রাখে নাই। তখন বন্ধু হিসেবে রিপন সোহেল সেলিম আর রোবেল এদের সাথে খুব ভাল যোগাযোগ ছিল। সেই যোগাযোগের সূত্র ধরেই ওরা একদিন আমাকে বলল চল কম্পিউটারের ব্যবসা করি। আমি আবার ফাঁকে কমিউপউটার কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম। শিখেছিলাম অনেক কিছু। তাদের কথা রাজী হয়ে গেলাম। সবাই সম্মিলিতভাবে টাকা দিয়ে কম্পিউটার, প্রিন্টার, ফটোকপির মেশিন কিনলাম আর নাম দিলাম এবাকাশ কম্পিউটার। চুনারুঘাটের সবাই বলতো একটা মেয়ে হয়ে ছেলেদের সাথে ব্যবসায় নামছে কিন্তু আমার বাবা মা কিছুই বলেননি তাই সাহস পেয়েছিলাম সে যুগে ছেলেদের সাথে ব্যবসা করতে। যাই হোক চুনারুঘাটে আমাদের বসার জায়গা হলো শেষ পর্যন্ত। ইশ কি যে আনন্দঘন দিনগুলি। সেখানে যেতে যেতে শেষে কিন্ডারগার্টেনে চাকুরী পেয়ে যাই। ভোর হতে এগারটা পর্যন্ত ক্লাস করে এসে বসতাম কম্পিউটারে। সেখানে টাইপ করতাম আর টাকা কামাতাম কি যে মজা কাউকে সেটা বুঝাতে পারব না। ওরা আমাকে ম্যানেজার বানিয়ে বসিয়ে দিত চেয়ারে । বন্ধুরা আমাকে খুব সম্মান করতো। সুখে দুখে পাশে থাকতো।

আল্লাহর অশেষ কৃপায় সেখান থেকেই পেপারে বিজ্ঞপ্তি দেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকুরীতে এপ্লাই করি আর অবশেষে চাকুরীটা পেয়ে যাই । সেতো বন্ধুদের জন্যই । ওরা যদি আমাকে তাদের সাথে না রাখতো হয়তো সেদিন পেপার পড়া হতো না গ্রামে থেকে - গ্রামে পেপার যাওয়াটাও বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার ছিল। তোদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ রে দুস্ত । তোদের এখনো আগের মতই মিস করি ভালবাসি। খুব । তবুও আকূতি লাগে বন্ধু,রহো রহো সাথে (রবিঠাকুর) একথাটি মনে আওড়াই। এখন সবাই যে যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত। সোহেল সেলিম মাহফুজ তুহিন এরা বিদেশে আছেন বর্তমানে বউ বাচ্চাসহ। আর রুবেল সিলেটে কলেজের প্রফেসর। পিনু মুক্তাও চলে গেছে আম্রিকা। শিমু, পলি এদের সাথে যোগাযোগ নেই। বাকি রয়ে গেলো শিফা।

পরিশেষে শিফার কথা দিয়েই শেষ করছি। শিফাদের বাসা ছিল আমাদের আড্ডার আরেক কেন্দ্র স্থল। যে কোনো অনুষ্ঠানে ওদের বাসাতেই শাড়ী গয়না সাজন পাতন নিয়ে হাজির হতাম। কারণ গ্রাম থেকে সেজেগুলো বের হওয়া টাফ ছিল সে সময়। শিফার আম্মা আব্বা আর মুক্তাদির ভাই তানজিল আপা এরা এত ভাল ছিলেন কি আর বলব। কোনদিন ওদের বাসা থেকে না খেয়ে আসতে পারিনি। ওদের বাসায় বসত হাজার গল্প আর আড্ডা আর ফাকে চলত সাজুগুজু অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য। বিয়ে হোক আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই হোক সেখানে বসত মিলনমেলা। পরনের কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রেখে যেতাম আর খালাম্মা গুছিয়ে রাখতেন সে সব :( । একদিন হয়েছে কি আইন্ধারে কাপড় বদলাতে গিয়ে উল্টা সালোয়ার পড়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেছিলাম আয় হায়রে ...... মাঝপথে বোন বলে আরে তোর দেখি উল্টা সালোয়ার পরনে হাহাহাহা। কোনমতে এক দৌড় দিলাম বাড়িমুখি। সেসব কথা মনে হলে খুব আনন্দ আর পুলকিত হয়। শিফার কাহিনী নিয়ে একটা কবিতা লিখেছিলাম যেটা আমার এই মেঘ এই রোদ্দুর কাব্যগ্রন্থে আছে। শিফার কাহিনী না হয় কবিতা পড়েই বুঝে নিতে বলব :(

বন্ধুর স্মরণে
========
শিফা-মাঝে মাঝে খুব মনে পড়ে তোকে
কেমন যেনো চিনচিন ব্যথা হয় বুকে ।

এলোমেলো হয়ে পাশে ঘুরে স্মৃতি সেই
পাশাপাশি পিনু, শিমু, মোনা, পলি তুই।

ঘন্টার ঘন্টা কেটেছে বাসায় তোদের
আড্ডা-গল্পে খুব সুখ লাগতো মোদের।

বন্ধু.. তোর বাসা ছিল যে সংযোগস্থল
অনুষ্ঠানে বাসায় তোর বন্ধুদের ঢল ।

অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সবার প্রস্তুতি
শাড়িপড়া সাজ নিয়ে কত খুনসুঁটি।

না খেয়ে আসিনি কভু গিয়েছি যদ্দিন
কিভাবে ভুলব তোর এতোশত ঋণ।

চাচা-চাচী করতেন ভীষন আদর
বাসা যেনো মমতার বিছানো চাদর।

কাটে এমন বন্ধুত্ব কলেজ জীবন
একদিন ঠিক হলো বিয়েরই ক্ষণ।

বিয়ের পরই চলে গেলিরে লন্ডনে
খবর নিস মোদের মনে তোর রাখিস।

ক্ষণ চলে গেছে কেটে গেছে একবছর
শুনি, বেশ ছিলি সুখে কেটেছে প্রহর।

হঠাৎ শুনি অবস্থা তোর সিরিয়াস
উৎকণ্ঠায় ক্ষণ কাটে কষ্টে হাঁসফাঁস।

হাসপাতালের বেডে... হয়েছিস ভর্তি
মুহুর্তে খবর শুনি ছিলো খুব আর্তি।

কেন হল এরকম, বল, হঠাৎ করে
মন কাঁদেরে বিষাদে দু:খে মন ভরে।

ক্ষণে ক্ষণে খোঁজ নেই... করি কত দোয়া
প্রভু ভাল করে দিন, সব হোক ভূঁয়া ।

ভালর লক্ষণ নেই .. শুনি সেথা ছুটে
তুই বেঁচে আছিসরে লাইফ সাপোর্টে।

না শিফা, ফিরে আসতে পারিছনি বেঁচে
শেষমেষ হেরে গেলি মৃত্যুরই কাছে ।

কষ্ট বুকেতে বিধঁল খবরটা পেয়ে
সেইতো আসলি শেষে মড়া লাশ হয়ে ।

অপেক্ষাযে মুখটি তোর দেখার আবার
ঐ লাশ আসছে ধ্বনি উঠল সবার ।

কষ্ট বুকে নিয়ে শেষে তোর মুখটা দেখি
কি সুন্দর লাগছেরে মুখে চেয়ে থাকি ।

কেনো, আমাদের রেখে চলে গেলি শিফা?
সবই আল্লা'র ইচ্ছা সবি তারি কৃপা।

আল্লাহ যেনো বেহেস্ত নসীব করেন
আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি,
শান্তিতে যেনোরে তোকে আল্লাহ রাখেন ।



তবে আরেকটা কথা -মনোয়ারা কথা বলতে ভুলে গেছি। মনোয়ারার বাড়ি ছিল আমাদের স্কুল কলেজের ফেরার পথে আমাদের বাড়ির চেয়ে আগে। বাড়ি ফেরার পথে মনোয়ারা ছাড়তই না তাদের বাড়ি যেতেই হবে এবং ভাত খেয়ে আসতে হবে। তো ভাত খাওয়া এলো এবার বাড়ি ফেরার পালা। ও আমাকে এগিয়ে দিতে দিতে আমাদের বাড়ি পৌছে যেতো হাহাহাহা আবার ওকে ওর বাড়ি পৌঁছিয়ে যেতে আমি আবার ওদের বাড়ির কাছে চলে যেতাম । কেউ কাউকে ছাড়তে রাজী হই না। কি আজব বন্ধন...... এভাবে সন্ধ্যা গড়িয়ে আসতে থাকলে বলতাম আময় তোর আমার বাড়ির মাঝে দাঁড়াই সেখান থেকে দুইজন দুইদিকে দিব দৌড় আর কাউকে এগিয়ে দিতে হবে না। তারপরই পৌছতাম নিজেদের বাড়িতে। এ ঘটনা নিত্যই ঘটত। এই ঘটনা ঘটবে তাই তখন দুইজন দিকে বাড়ি যেতাম হাহাহাহা। আর কথা বাড়ালাম না। এসব ফালতু প্যাচাল পড়ে আমাকে সবাই বকবো মাইরি । ভাগি এখান থেকে.......... তবে যাবার আগে বন্ধুদের নিয়ে ছড়াগুলো পড়বেন কিন্তু-

©কাজী ফাতেমা ছবি
তোরা আমার হাসি খুশি
দুঃখ সুখের জলতরঙ্গ
একাকিত্ব ছাড়তে পারি
ছাড়বো নাকো তোদের সঙ্গ।

বন্ধু তোরা পাশে থাকলে
দুঃখগুলো যায় উড়ে যায়
মনের যতো কষ্ট আছে
তোরা থাকলে যায় দূরে যায়।

ভুল বুঝিস না বন্ধু তোরা
জীবন বড্ড বেরসিক তাই
ব্যস্ত রাখে শত কাজে
সময় পুড়ে ছাই করে ছাই!

তোরা আছিস বন্ধু হয়ে
জীবনজুড়ে সুখের ছোঁয়া
তুই-তুকারি গালাগালি
তোদের মনে সব হয় থুয়া।

দূরে থাকিস দেশ-বিদেশে
বন্ধু তোরাই মনের স্পন্দন
অলীক সূতায় বাধা তোরা
ছিঁড়ে যায় না এমন বন্ধন।

২।
তোমরা সবাই ভাবছ বুঝি
বন্ধু নও কো তোমরা আমার
তোমরাই বন্ধু পাশে আমার
ভালবাসার অথৈ খামার।

স্ট্যাটাস ফেটাস কাব্য ছড়ায়
উৎসাহ আর দেয় কে বলো
মন-খারাপের দিনগুলোতে
আলো হয়ে তোমরাই জ্বলো।

তোমরা পাশে আছো বলে
মনের মাঝে সাহস আসে
লিখতে শুনতে বলতে কথা
মন মরে না ভয়ের ত্রাশে।

মান অভিমান রাগারাগি
এখানেই ফের আসি ফিরে
বিষাদ সকল দূরে ফেলে
হারাই এসে বন্ধুর ভীড়ে!

আছো তোমরা থাকবে তোমরা
বন্ধু হয়ে আমার পাশে
হাসি ঠাট্টা খুঁনসুঁটিতে
তোমরাই থেকো ব্যথা নাশে।

অন্তর হতে জানাই আমি
শুভেচ্ছা আর ভালবাসা
কেউ যাবে না দূরে চলে
মনে রইল এমন আশা।
৩/
©©কাজী ফাতেমা ছবি
‪#‎বন্ধু_দিবস‬
বন্ধু তোরা আছিস কেমন
কাছে থেকেও জানি না
কাছের তোরা দূরেই থাকিস
মানব নাকো মানি না!

নিজের মতো থাকিস তোরা
রাখিস নাতো কারো খোঁজ
তোদের দোরে এসে আমি
রিক্ত হাতে ফিরি রোজ!

সময় তোদের বেঁধে রাখে
ব্যস্ততার এক অজুহাত
মোহ নিয়ে বেঁচে থাকিস
হাজার উড়াল বন্ধুর সাথ।

মোবাইল স্ক্রীনে চক্ষু রেখে
টাচ কীবোর্ডে উঠাস ঝড়
ম্যাসেজবক্সে তীরের বেগে
কথা ছাড়িস যে হড়বড়!

মান অভিমান আবেগগুলো
যায় না ছোঁয়া অন্তরে
যন্ত্রের সাথে ভালবাসা
টানে যে ছুঁ মন্তরে।

বন্ধু দিবস রাত বারোটা
শুভেচ্ছা তোদের প্রতি
খবর নিতে আছিস তোরা
আজ হয়ে প্রজাপতি।

বন্ধু দিবস নিয়ে আমার আরো অসংখ্য লেখা আছে। পড়তে গেলে আপনাদের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটবে যেটা আমি নিশ্চিত। এবং এই লেখাটা পড়েও ধৈর্য্যচুতি ঘটবে। হাহাহাহ । বন্ধু দিবসতো তাই একটু মানিয়ে নিবেন প্লিজ। আর এই লেখা দুই পর্বে দেয়া যায় না বা দেয়া উচিতও না।



এটা জেরীর বন্ধুরা । জেরীও একদিন যেনো লিখতে পারে এমনবন্ধুদের নিয়ে।

আপনাদেরকে বন্ধু দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর ভালবাসা।

কষ্ট করে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। (বানান ভুল মার্জনীয়)
পুনশ্চ: ছবিগুলো আবেগে আপ্লুত হয়ে দিয়ে দিছি । পরে কিন্তু মুছে ফেলব-এ নিয়ে আমাকে নিলর্জ্জ ভাববেন না প্লিজ। ব্লগটাকে আমি আমার পরিবারের মতই দেখি।



ছবি-নেট সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৫৩
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×