somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিম কি দুক: সেলুলয়েডের কবি

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
দারাশিকোব্লগ ফ্যানপেজ


কবিতা বোঝার নয়, কবিতা অনুভব করার। সিনেমা যে শুধু দেখার নয়, বোঝার নয় বরং অনুভব করার সেটা বোঝা যায় কিম কি দুকের সিনেমা দেখলে। সাউথ কোরিয়ান এই সিনেমা পরিচালক তার মনের ভাব শব্দে প্রকাশ না করে ইমেজের মাধ্যমে প্রকাশ করার যে মুণ্সিয়ানা দেখিয়েছেন, তা বিস্ময়কর, অসাধারন এবং নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়।

সাউথ কোরিয়ান এই সিনেমা পরিচালক জন্মেছিলেন ডিসেম্বরের ২০ তারিখে, সময়টা ১৯৬০ সাল। জায়গার নাম বংহুয়া, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই জায়গা তাকে সিনেমার জন্য নান্দনিক প্রকৃতিকে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে বেছে নিতে সহায়তা করেছে। শিল্পকলা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, হয়তো এ কারণেই তার নির্মিত সিনেমায় কাহিনী আর ঘটনার বিমূর্ত চিত্র ফুটে উঠে বেশ সফলতার সাথে। স্প্রিং সামার ফল উইন্টার অ্যান্ড .. স্প্রিং সিনেমাটি তার নবম সিনেমা। এই সিনেমার মাধ্যমে সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কিছু দর্শক সৃষ্টি করলেও তার যাত্রা শুরু হয় ক্রোকোডাইল সিনেমার মাধ্যমে।

১৯৯৬ সালে নির্মিত সিনেমা ক্রোকোডাইল। সিনেমার প্রধান চরিত্র পুরুষটি হান নদীর তীরে বাস করে এবং একদিন আত্মহত্যা থেকে বাচায় এক নারীকে। কিন্তু পরবর্তীতে তাকেই ধর্ষন প্রচ্ষ্টো থেকে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় এক অস্বাভাবিক সম্পর্ক। খুব অল্প বাজেটে নির্মিত এই সিনেমাটি কিম কি দুকের চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করতে সহায়তা করেছিল।

১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ - এই চার বছর প্যারিসে নিজের ছবি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছিলেন কিম কি দুক। তারপর নিজ দেশে ফিরে শুরু করেন চিত্রনাট্য লেখা এবং ২০০৫ সালে জিতে নেন কোরিয়ান ফিল্ম কাউন্সিল কতৃক আয়োজিত এক প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার। পরের বছর ক্রোকোডাইল সিনেমার মাধ্যমে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন তা এখনো অব্যাহত আছে। ২০০৮ সালের 'ড্রিম' সিনেমার মধ্য দিয়ে তার নির্মিত সিনেমার সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৫ টি।

স্প্রিং সামার ফল উইন্টার অ্যান্ড ... স্প্রিং সিনেমার মাধ্যমে কিম কি দুক বিশ্ব ব্যাপী পরিচিতি লাভ করলেও এটা কিন্তু তার আলোচিত সিনেমার প্রথমটি নয়। ২০০০ সালে কিম নির্মান করেন দ্য আইল (The Isle)। ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভালে এই সিনেমাটি প্রদর্শিত হয়েছিল। কিম কি দুকের সিনেমা স্টাইল সবার দৃষ্টি আকর্ষন করলেও এই সিনেমাটি তাকে কুখ্যাত করতেও বেশ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ কিছু অসহ্য এবং আপত্তিকর দৃশ্যের কারণে কিছু কিছু দর্শক থিয়েটার হল থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, কিছু দর্শক বমি করে ভাসিয়েছিলেন। হত্যার আসামী এক ব্যক্তি আশ্রয় গ্রহন করেন একটি ফিশিং রিসোর্টে যার মালিক হলো একটি মেয়ে। নির্বাক চরিত্রের এই মেয়েটি বেশ জেদী, নিজের চাওয়া পূরনে তার সামনে কোন বাধাই বাধা নয়। পলাতক আসামীকে ভালোবেসে ফেলে মেয়েটি আর তাই তাকে দু'বার বাচায় আত্মহত্যা থেকে, পুলিশের কাছ থেকে বাচায় আরও দুবার। আবার এই মেয়েটিই ভালোবাসার কারণে হত্যা করে একটি বেশ্যা মেয়েকে, হত্যা করে তার দালালটিকেও। কিন্তু পলাতক আসামী যখন তার কাছ থেকেই পালাতে চায় তখন বেশ অদ্ভুত এক উপায়ে তাকে ফিরে আসতে বাধ্য করে মেয়েটি। তারপর তাদের দুজনের মধ্যে যে সম্পর্কটি গড়ে উঠে তা খুব স্বাভাবিকই বটে। দ্য আইল সিনেমার কাহিনী এরকম সাধারণ হলেও পরিচালনার গুনে তা হয়ে উঠেছে বেশ আকর্ষনীয়।

২০০০ সালেই কিম কি দুক নির্মান করেন আরেকটি সিনেমা, নাম 'রিয়েল ফিকশন'। সিনেমা হিসেবে খুব আলোচিত না হলেও এর নির্মান পদ্ধতির জন্য এটি আলোচিত। এই সিনেমাটি রিয়েল টাইমে নির্মিত, কোন রিটেক নেয়া হয় নি এবং ইচ্ছে করেও লো কোয়ালিটির অনেক ভিডিও এখানে ব্যবহার করেছেন কিম।

পরের বছরই ২০০১ সালে 'ব্যাড গাই' নামে একটা সিনেমা পরিচালনা করে কিম নিজেকে বেশ পরিচিত করে তোলেন এবং বক্স অফিসে কিছুটা হলেও সফলতা লাভ করেন। এই সিনেমার কাহিনী গড়ে উঠেছে জোর করে একটি মেয়েকে পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করানোকে কেন্দ্র করে। গ্যাঙস্টার, বেশ্যাবৃত্তিকে বেশ খোলাখুলিভাবে উপস্থাপন করার কারণে কিমের এই ছবিটি বেশ সমালোচিতও বটে। কিমের বক্তব্য, তিনি এই সিনেমার মাধ্যমে একটি প্রশ্নের উত্তর খুজতে চেয়েছেন, যেখানে সব মানুষ জন্মের সময় সমতা নিয়ে আসে তারা কেন পরবর্তীতে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। এই যে সামাজিক শ্রেনীবিন্যাস কি মুছে দেয়ার মতো নয়?

২০০৩ সালে কিম নির্মান করেন তার স্প্রিং সামার ফল উইন্টার অ্যান্ড ... স্প্রিং সিনেমাটি। সিনেমার কাহিনী একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলাম্বী মন্কের। কিভাবে সময়ের আবর্তনের বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে তার জীবন প্রবাহিত হয় সে গল্পই দেখা যায় এই সিনেমায়। শৈশব, যৌবন, বার্ধক্যে নানা ঘটনা তাকে বুঝতে শেখায়, জীবন একটা চক্র, নির্দিষ্ট সময় পর পর আবর্তিত হয়। মানুষের জীবনের দৃ:খ, আনন্দ, বেদনা ইত্যাদি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন কিম। এই সিনেমায় কিম অনেক পরিবর্তিত বিশেষ করে তার পূর্বের কাজগুলোর তুলনায় যা তাকে সিনেমা বোদ্ধা থেকে শুরু করে সকল স্তরের দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।

২০০৪ সাল কিম কি দুকের জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ন সময় বলা যেতে পারে। এই বছর কিম দুটো সিনেমা নির্মান করেন - একটি সামারিটান গার্ল, অন্যটি থ্রি আয়রন। ১৯৯৬, ২০০০ এবং ২০০১ সালেও দুটো করে সিনেমা নির্মান করলেও এ বছরই দুটো সিনেমার জন্যই পুরস্কার অর্জন করেন। সামারিটান গার্লের কাহিনী দুটো টিনএজ মেয়েকে ঘিরে। তারা দুজনে পরিকল্পনা করে ইউরোপে বেড়াতে যাবার, কিন্তু এক বান্ধবী জি-ইয়ং তার টাকা জমানোর জন্য নিজেকে বেশ্যাবৃত্তিতে জড়ায়, আর তার বান্ধবী ইয়ো-জিন তার দালাল হিসেবে কাজ করে। কোন একদিন পুলিশের হাত থেকে বাচার উদ্দেশ্যে জি-ইয়ং আত্মহত্যা করে, আর তার জমানো টাকা ফেরত দেয়ার জন্য নিজেকে বেশ্যাবৃত্তিতে জড়ায় ইয়ো-জিন। নিষ্পাপমুখী এই মেয়েটির বাবা একদিন জেনে ফেলে তার কর্মকান্ডের কথা, তার অগোচরে পিছু নেয়। কিন্তু অন্তর্বেদনা তাকে ধীরে ধীরে হিংস্র করে তোলে, বিশেষ করে টিনএজ মেয়ের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করায় দু একটা খুন ও সে করতে পিছপা হয় না। কিম কি দুকের এই সিনেমাটি তার অন্যান্য সিনেমা থেকে বেশ আলাদা। সত্যি কথা বলতে কি, এই সিনেমায় কিম কি দুকের সেই চির পরিচিত স্টাইল খুজে পাওয়া একটু কষ্টকর। সিনেমার কাহিনী এবং বর্ননা ভঙ্গী সিনেমাটিকে সার্থক করে তুলতে সাহায্য করেছে।

একই বছর কিমের আরেকটি সিনেমা থ্রি আয়রন মুক্তি পায়। বোধহয় এ যাবত মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর মধ্যে এটাই সবচে' বেশী কাব্যিক এবং বিমূর্ত। যদিও সিনেমার কাহিনীর শুরুটা বেশ আকর্ষনীয়, শেষ দিকে সিনেমার ব্যাখ্যা করতেই দর্শক বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়বেন নি:সন্দেহে। মোটরবাইকের আরোহী এক ছেলে সারা দিন ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বাড়ির দরজায় টেকআউট মেনু লাগায়, আর রাতের বেলা সেই সব বাড়ির মধ্য থেকে খালি একটি বাড়ি বেছে নিয়ে চুরি করে ঢোকে, নিজের ঘরের মতো করে থাকে। আবার রাড়ির মালিক ফিরে আসার পূর্বেই রাস্তায় নেমে পড়ে। এমনই এক ঘটনায় তার সাথে জড়িয়ে পড়ে সান হুয়ার সাথে যে কিনা একসময় বিভিন্ন ন্যুড ফটোগ্রাফির মডেল ছিল। স্বামীর সাথে তিক্ত সম্পর্ক আর মোটরবাইকের আরোহীর ত্রানকর্তার রূপে সে তার সাথেই ঘর ছাড়ে। কিন্তু স্বামী আবার ফিরে পায়। জেলে বন্দী হয় বাইক আরোহী। তারপরই সিনেমার কাব্যিক রূপ চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত হয়।


থ্রি আয়রনের পরে কিম আরও চারটি সিনেমা নির্মান করেছেন, যথাক্রমে দ্য বো, টাইম, ব্রেথ এবং ড্রিম, প্রত্যেক বছরে একটা করে। দ্য বো'তে কাহিনী ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ এবং ১৬ বছর বয়সী এক কুমারী মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে। ৬ বছর বয়সে মেয়েটিকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন বৃদ্ধ। তারপর থেকে মেয়েটি তার সাথেই আছে, থাকছে একটি জাহাজে। ১০ বছরে মাটিতে নামেনি একবারও। বৃদ্ধের ইচ্ছা মেয়েটিকে বিয়ে করবে তার ১৭ বছর বয়সে, সে জন্য সে প্রস্তুতি গ্রহন করে। বৃদ্ধের আরেকটি গুন আছে, তীর নিক্ষেপ করে ভাগ্য গননা করতে পারে সে, এক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করে কিশোরী মেয়েটি। সব কিছু ভালোই চলছিল, ঘটনা পাল্টে যায়, যখন একটি তরুন ছেলে তাদের জাহাজে আসে মাছ ধরতে এবং মেয়েটি তার প্রতি অনুরক্ত হয়। নানাবিধ নাটকীয়তার মাধ্যমে সিনেমা রূপান্তরিত হয় একটি কবিতায়।


টাইম সিনেমার কাহিনীটিও সুন্দর। অসুন্দর চেহারা দেখতে দেখতে প্রেমিক ক্লান্ত হয়ে পড়বে এই আশংকায় প্রেমিকাটি কিছু না জানিয়ে হারিয়ে যায়, প্লাস্টিক সার্জারি করে পরিবর্তন করে তার চেহারার। কিন্তু নতুন চেহারা নিয়ে ফেরত আসার পরে তাকে ভালো লাগলেও প্রেমিক মানুষটি তার অসুন্দর চেহারার পুরাতন প্রেমিকাকে ভুলতে পারে না। মানসিক এক যাতনায় আটকে যায় মেয়েটি।


অন্যদিকে ড্রিম সিনেমায় ছেলেটি স্বপ্নে যা দেখে তাই ঘটে যায় একটি মেয়ের জীবনে। ঘুমানোর সময় হেটে হেটে একের পর এক কাজ করে মেয়েটি। খুন হয়ে যায় একজন। বাচতে হলে ছেলেটি এবং মেয়েটির একত্রে ঘুমানো যাবে না। স্বপ্নে পুরুষটি তার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে মিলিত হতে যায় কারণ তাকে সে অনুভব করে এখনো, অন্যদিকে মেয়েটি প্রচন্ড ঘৃনা করে তার প্রাক্তন প্রেমিককে অথচ ঘুমের ঘোরে তার সাথেই মিলিত হতে যাত্রা করে সে। বেশ ঘোরালো এই পরিস্থিতি পাল্টে যায় যখন মেয়েটি মানসিক রোগীতে পরিণত হয়। এই সিনেমার শেষটাও একে কবিতায় রূপান্তরিত করে।

২০০৮ এর পর থেকে তার সিনেমা নির্মান এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে। তার সবকটি সিনেমার চিত্রনাট্যকারও তিনি। স্প্রিং সামার থেকে শুরু করে বাকীগুলোর সম্পাদনা করেছেন তিনি, অতঁর বলতে যা বোঝায় কিম এখন তাই। কিমের এগারোটি সিনেমা দেখার পর তার পরিচালনার স্টাইল সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। কিমের সিনেমার চরিত্ররা কথা কম বলে। এই 'কম' এর মাত্রা এতটাই তীব্র যে পুরো সিনেমায় তাদের ডায়লগ থাকে না বললেই চলে, কিমের সিনেমায় হিংস্রতার একটা প্রকাশ থাকেই। দ্য আইল সিনেমায় মেয়েটির কোন ডায়লগ নেই, একটি তীব্র চিতকার ছাড়া। থ্রি আয়রন সিনেমায় মোটরবাইকের আরোহীর কোন ডায়লগ নেই, নায়িকা মেয়েটিরও ছিল না, কিন্তু শেষে দু একটি ডায়লগ পাওয়া যায়। স্প্রিং সামারে ও একই অবস্থা। ব্যাড গাই সিনেমায় প্রধান চরিত্র পুরুষটি নির্বাক। সেই দিক থেকে সামারিটান গার্লে সংলাপ রয়েছে বেশ। এমন নয় যে তারা কথা বলতে পারে না, বরং কিম চান দর্শকরা যেন তাদের কোন কথা শুনতে না পারেন। অবশ্য লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে তার সিনেমার ঠিক সেই মানুষগুলোই চুপচাপ যাদের রয়েছে কোন না কোন অপরাধবোধ। কিমের ভাষায়, মানুষের প্রতি তাদের বিশ্বাষ ভঙ্গ হয়েছে, তাই তারা নিরব। তাদের নিরবতা এক প্রকার ভাষাই, সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ। এমনকি তাদের হিংস্রতা তাদের এই গোপন কষ্ট আর বেদনারই একটা বহি:প্রকাশ।

সিনেমায় কিম বেশ হিংস্র, বিশেষ করে জীবিত কীট পতঙ্গ, প্রানীর বেলায় - তার প্রায় সিনেমায় এটা দেখা যায়। মানুষের ক্ষেত্রেও এটা দেখা যায়। দি আইল মুভিতে বড়শির কাটা গিলে খেয়ে আত্মহত্যা করার দৃশ্য মোটেও সহনীয় নয়, ঠিক যেমনটি নয় ব্যাড গাই সিনেমায় কাচ দিয়ে মানুষ হত্যা করার চেষ্টা।

সেক্স নিয়ে কিমের কোন আদিখ্যেতা নেই। বেশ্যাবৃত্তি তার সিনেমায় বারবার ঘুরে ঘুরে এসেছে। ব্যাড গাই, দ্য আইল, সামারিটান গার্ল। অন্যান্য সিনেমায় যৌনতা একটা বড় গুরুত্বপূর্ন অংশ। সেক্সের এই প্রকাশ মোটেও রুচিসম্মত নয়, নান্দনিক তো নয়ই। বরং থ্রি আয়রন সিনেমায় যৌনতার প্রকাশ বেশ নান্দনিক, সাবলীল।

অল্প বাজেটে, সীমিত লোকেশনে কিম যে সিনেমা নির্মান করেন তার বেশিরভাগই ব্যবসা সফল নয়, অন্তত: কোরিয়াতে নয়। তবে, অন্যান্য দেশগুলোতে সিনেমাবোদ্ধাদের কাছে বেশ গ্রহনযোগ্যতা আছে কিমের। একই সাথে সিনেমা সমালোচকদের বিষ-দৃষ্টিসীমানায়ও আছেন কিম কি দুক। তাকে পশু, সাইকো ইত্যাদি নামে অভিহিত করতে বাধে নি সমালোচকদের। এ কারণেই কিম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সাংবাদিকদের কাছে কোন সাক্ষাতকার দেবেন না।

সব মিলিয়ে কিমের সিনেমা কিরকম? আত্মজীবনী? কিম বলেন, অনেকটাই। নিজের জীবনের বেশ কিছু প্রশ্নের সমাধান তিনি খুজে নিচ্ছেন তার পরিচালনার মুণ্সিয়ানা দিয়ে। কতটা কাব্যিক তার সিনেমা? কিম বলেন, সেমি অ্যাবস্ট্রাক্ট। সিনেমার গল্প কবিতায় রূপান্তরিত হয় মুহুর্তেই। দ্য আইল সিনেমায় আসামী লোকটি হারিয়ে যায় জঙ্গলে, সে জঙ্গল মেয়েটির যৌনকেশ ছাড়া আর কিছু নয়। থ্রি আয়রন সিনেমায় ছেলেটি নিজেকে অদৃশ্য করার চাতুরী শিখে নেয়, আর তাই দুজনের একটি পরিবারে থেকেও সে তার প্রেমিকার থেকে দূরে নয় একটুও। ড্রিম সিনেমায় মানসিক রোগী মেয়েটি গলায় দড়ি দেয়, কিন্তু যেটা পড়ে থাকে সেটা লাশ নয়, একটা জীবন্ত প্রজাপতি মাত্র।

আসলেই সেমি অ্যবস্ট্রাক্ট। কবিতা সবসময় কাগজেই লিখতে হয় না, সেলুলয়েডও কবিতার খাতা হতে পারে, কিম কি দুক তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। কিমের প্রতিটি সিনেমা একটি কবিতা, সেখানে রয়েছে বাস্তবতার বাহিরে আরও অতিরিক্ত কিছু, সেখানে কিমের কল্পনা, আমাদের স্বপ্ন - সব কিছুর সংমিশ্রন।


আরও কিছু ব্লগ:
শেয়ার করুন: সম্প্রতি কি সিনেমা দেখলেন?

লো বাজেট ফিল্মমেকারদের জন্য আদর্শ হতে পারে Christopher Nolan এর সিনেমা “Following”

The Butterfly Effect: অতীতের সংশোধন

The Ghost Writer: আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্তরালের গল্প

লো বাজেট ফিল্মমেকারদের জন্য আদর্শ হতে পারে Christopher Nolan এর সিনেমা “Following”
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:১১
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×