somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ডাকাতি হয়ে যাচ্ছে

০২ রা জুলাই, ২০১১ রাত ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব: ভগবান বাংলাদেশী সিনেমাকে তুমি বাচিয়ে রেখো

রাজনৈতিক সম্পাদিত-প্রকাশিত
ঠিক এই মুহুর্তে দেশের সবচে’ গুরুত্বপূর্ন ইস্যু বোধহয় তেল-গ্যাস রপ্তানি- কনকো ফিলিপস চুক্তির মাধ্যমে দেশের সম্পদ বিদেশে রপ্তানি করে দেয়ার মাধ্যমে কিছু কাঁচা টাকা এবং অবশ্যই ভবিষ্যত দেউলিয়াত্ব-অকল্যানের অর্জন। এই তেল-গ্যাস চুরি ঠেকাতে সচেতন যুবসমাজের এক অংশ নিজ দায়িত্বে উদ্যোগী হয়ে নিজ নিজ ক্ষমতাবলে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে, এবং ই-মিডিয়া বিশেষত: ব্লগ এবং ফেসবুক এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এই প্রতিবাদী শক্তি নিজেদের ‘টোকাই’ নামে ডাকছে।

আক্ষরিক অর্থে টোকাই এর মানে যাই হোক না কেন, প্রায়োগিক দিক থেকে এর গুরুত্ব অসীম। ‘স্বদেশী’ শব্দটি যেমন একদল মানুষকে ব্রিটিশ বিরোধী অন্দোলনে সংঘবদ্ধ করেছিল, টোকাই আন্দোলনও সেরকম ইতিহাস তৈরী করতে পারে। এই তেল-গ্যাস চুরি ঠেকানোর জন্য টোকাইরা যখন বাস্তব এবং ভার্চুয়াল ময়দানে ব্যস্ত তখন চুপিসারে দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে ডাকাতির পয়লা আঘাত হানা হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আবদুল জব্বার খান, খান আতা, ইআর খান, আলমগীর কবির, কাজী জহিরের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প রক্ষার জন্য ১৯৭২ সালে বিদেশী সিনেমা আমদানি বন্ধ করেছিলেন । গতবছর ২৫শে এপ্রিল তারিখে বানিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব:)ফারুক খান ভারতীয় সিনেমা আমদানীর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার কথা জানান এবং বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচানোর জন্যই ভারতীয় ছায়াছবি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বোধহয় বর্তমানে সবচে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশে ১৯৯০-৯১ সালে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল প্রায় ১২৩০, ২০১০ সালে এই সংখ্যা নেমে এসে দাড়িয়েছে ৭৪২-এ। ঢাকার ৪৪টি সিনেমা হলের মধ্যে এখন আছে ৩৩টি, এগারোটিকে গুড়িয়ে দিয়ে গড়ে উঠেছে বিশাল অট্টালিকা। গুলিস্তান, শ্যামলী, নাজ, লায়ন, স্টার, শাবিস্তান, তাজমহল সিনেমা হারিয়েছে অনেক আগেই

সিনেমা হল বন্ধের পেছনে মূল কারণ হলো নির্মিত সিনেমার অবস্থা। কাহিনী আর অভিনয়ের দুরাবস্থা নিয়েও বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে বছরে ১০০টি সিনেমা মুক্তির ইতিহাসও আছে। গত এক দশকের তুলনায় ২০১০ সালে নির্মিত সিনেমার সংখ্যা সবচে কম, মাত্র ৬৩টি। ভয়াবহতার এই শেষ নয় , ২০১১ সালের প্রথম ছয় মাসে, জানুয়ারী থেকে জুন মাস পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে মাত্র ১৯টি সিনেমা, বিনিয়োগকৃত টাকার পরিমান মাত্র ৩০ কোটি টাকা।

বানিজ্যমন্ত্রীর ঘোষনার পরে সেই সময় সিনেমার প্রযোজক-পরিচালক সমিতি এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঘোষনা দেন, প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে আমদানি নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার অনুরোধ করেন। তাদের সাথে সিনেমার সাথে সংশ্লিষ্ট লেখক-বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদে অংশগ্রহন করেন, অবশ্য এই প্রস্তাবের পক্ষে কথা বলেছেন এমন গুনী ব্যক্তিরাও রয়েছেন, যেমন লেখক-পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ।

সিনেমার সাথে সংশ্লিষ্ট ২৫,০০০ লোকের কর্মসংস্থান বিলোপের আশংকা অবশ্য শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে , তিনি বানিজ্যমন্ত্রীকে তিরস্কার করেন এবং প্রস্তাব বাতিলের নির্দেশ দেন। হাইকোর্ট ও এই নির্দেশের সপক্ষে রায় প্রদান করেন। প্রদর্শকরা এই রায়ের বিপক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করেন এবং উচ্চ আদালত তার রায়ে ভারতীয় ছবি আমদানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার আগে যে ছবিগুলোর জন্য এলসি করা হয়েছিল সেই তিনটি ছবিকে অনাপত্তিপত্র দেওয়ার নির্দেশ দেন। অনাপত্তিপত্র প্রাপ্ত তিনটি সিনেমা জোর, বদলা এবং সংগ্রাম ইতিমধ্যেই সেন্সরবোর্ডে জমা দেয়া হয়েছে, খুব শীঘ্রই মুক্তি পাবে সেগুলো। জানা গেছে, থ্রি ইডিয়টস, মাই নেম ইজ খান, তারে জমিন পার, রং দে বাসন্তী, দাবাং, ম্যায় হুঁ না, কাভি আল বিদা না কেহনা, ওম শান্তি সহ মোট ৯টি সিনেমা এই তালিকায় আছে যা এ বছরেই অনাপত্তিপত্রের জন্য আবেদন করা হবে।

মাত্র একজন শাকিব খান নির্ভর সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বেশী দিন টিকে থাকবে না সেটা সত্যি এবং এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে – এতেও আপত্তি নেই – কিন্তু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে দাড়ানোর সুযোগ করে দেয়াও চাই। গত এক দশকে কথিত কমার্শিয়াল সিনেমার বিপরীতে বেশ কিছু নবীন-সৃষ্টিশীল চলচ্চিত্র নির্মাতা এগিয়ে এসেছেন, তাদের নির্মিত সিনেমাগুলো অখাদ্য ‘আর্ট ফিল্ম’ নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসাসফল। অত্যন্ত: ব্যয়বহুল সিনেমা নির্মানের পূর্বেই এর ব্যবসা নিশ্চয়তা পরিমাপ করা হয় এবং নি:সন্দেহে, ভারতীয় সিনেমার প্রবেশ এই নিশ্চয়তাকে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ন করে তুলবে। সাময়িক মুনাফার লোভে একটা সম্ভাবনাময় শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না। ভিনদেশি সিনেমা কিভাবে একটা দেশের ইন্ডাস্ট্রিকে খোড়া করে দেয় তার যোগ্য উদাহরণ ইন্দোনেশিয়া যেখানে ২০০২ সালে নির্মিত সিনেমার সংখ্যা মাত্র ১০ এবং এর পূর্বের দুই বছরে মাত্র ৬টি। বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি আমদানি নির্ভর হয়ে যাবে সেটা কখনোই কাম্য নয়।

অনাপত্তিপত্রের আড়ালে যে তিনটি সিনেমা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং আরও ৯টি প্রবেশ করতে যাচ্ছে, তা যেন এখানেই শেষ হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ২৫০০০ সিনেমা শ্রমিকের নিরাপত্তাই শুধু নয়, দিনে দিনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে যে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা হয়েছে, তাকে অনুৎপাদনশীল অবস্থায় ফেলে রাখার সিদ্ধান্ত হবে হঠকারি। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে আরও উন্নত এবং মুনাফাসম্পন্ন করার জন্য উদ্যোগ আমাদেরকেই নিতে হবে, প্রয়োজনীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমাদেরই সৃষ্টি করতে হবে, কিন্তু সেজন্য ভারতীয় সিনেমা এখনই প্রয়োজন নয়।


দারাশিকো ব্লগের সাথে আপডেটিত থাকুন :)
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×