somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যদি লড়াইয়ে হেরে যাই

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন লড়াইয়ে যদি হেরে যান আপনি, কি করবেন ?

রবার্ট ব্রুস হার স্বীকার করেন নি। বার বার লড়াইয়ে ফিরে এসেছেন। ষষ্ঠতম বারে তিনি আর হারেন নি, জিতেছেন এবং লড়াইয়ের সমাপ্তি নিশ্চিত করেছেন।

দারাশিকোর পূর্বপুরুষ মোঘল সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবরও হারতে রাজী ছিলেন না। তার জীবন কেটেছে লড়াইয়ের ময়দানে - হেরেছেন, ফিরে এসেছেন, জিতেছেন, আবার হেরেছেন, আবার ফিরেছেন, জিতেছেন - তার এই লড়াইয়ের আবর্তন শেষ পর্যন্ত তাকে বিজয়ী করেছে, মুঘল সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করে তিনি লড়াই থেকে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। কিন্তু তার বংশধর মুঘল সম্রাজ্যের সন্তান দারাশিকো লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর ফিরতে পারেন নি। প্রতিপক্ষের তুলনায় তিনি জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু যোগ্য ছিলেন না। লড়াইয়ে ফেরার স্বপ্ন নিয়ে তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু লড়াইয়ে ফেরার আগেই তার মুন্ডু চলে গিয়েছিল প্রতিপক্ষের কাছে।

লড়াইয়ে হেরে গেলে সেই হার সহ্য করতে না পেরে দড়িতে ঝুলে পড়ে অনেকে। কেউ কেউ নিয়ম ভেঙ্গে প্রতিপক্ষকেই মেরে ফেলে - তাতে অবশ্য লড়াইয়ে জেতা হয় না, লড়াইয়ের মাত্রা পরিবর্তন হয় কেবল।

আমার যে লড়াই, তাতে হেরে গেলে আমি কি করবো? প্রথমে পালিয়ে যাবো, তারপর হারিয়ে যাবো।

বর্তমানের ইন্টারকানেক্টেড এই দুনিয়ায় কিভাবে হারিয়ে যেতে হয় সেটা শেখা যাবে জ্যাক রিচারের কাছ থেকে - বই পড়ে অথবা সিনেমা দেখে। জ্যাক রিচার ইউএস এর বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে দেশ থেকে বের হন, তারপর অবৈধ পাসপোর্ট নিয়ে আবার দেশে প্রবেশ করেন। জ্যাক রিচারের কোন ইমেইল নেই, কোন ফেসবুক বা টুইটার আইডি নেই। জ্যাক রিচারের কোন মোবাইল ফোন নেই, ট্যাক্স আইডেন্টিফাইং নাম্বার নেই, ইউটিলিটি বিল রেজিস্ট্রেশন নেই। তার কোন গাড়ি নেই - সে হিচহাইকিং বা পাবলিক বাসে ভ্রমণ করে। তার সাথে থাকে টাকা পয়সা, ভাঁজ করা যায় এমন টুথব্রাশ, এটিএম ডেবিট কার্ড এবং একটি এক্সপায়ার্ড পাসপোর্ট। জ্যাক রিচারকে কেউ খুঁজে পায় না, বরং প্রয়োজন হলে জ্যাক রিচারই খুঁজে নেয়। হারিয়ে যাওয়া খুব কঠিন কিছু না।

দেশের মধ্যেই পালিয়ে যেতে হলে হিল ট্র্যাক্টস আদর্শ জায়গা। মুহাম্মদ জাফর ইকবালের 'আকাশ বাড়িয়ে দাও' উপন্যাস পড়ে আমি প্রথম ধারনা পেয়েছিলাম পালিয়ে থাকার এই জায়গা সম্পর্কে। হিল ট্র্যাক্টস ঘুরে এসে নিশ্চিত হয়েছি। দেশের বাইরে? কানাডা, আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্স, শ্রীলংকা, নিদেনপক্ষে ভারতের কোলকাতা অথবা মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গবাদ জেলায় অজন্তা গুহার আশে পাশে। আমেরিকায় গ্রান্ড ক্যানিয়নে ঘুরে বেড়ানোর সময় আবদুল্লাহ আবু সাইয়ীদের 'ওড়াউড়ির দিন'কে মনে করব। শ্রীলংকায় যাবো জেফরি বাওয়ার আর্কিটেকচারাল কাজকর্ম দেখতে, এবং আর্কিওলজিক্যাল সাইটস। হুমায়ূন আহমেদের 'রাবনের দেশে আমি ও আমরা' বইতে তার সাথে ছিল স্ত্রী শাওন - আমার সাথে কে থাকবে? কোলকাতায় বা মহারাষ্ট্রে ফেলুদা ছিল তোপসের সাথে, ফেলুদাকে বাদ দিয়ে অজন্তা গুহা, কিংবা কোলকাতার সেমিট্রি আমার ভালো লাগবে? বোধহয় এ কারণেই ফ্রান্সে আমার যাওয়া হবে না। কারণ সেখানে মিউজিয়াম আর 'শ্যাতো' দেখতে হলে আমার অবশ্যই চাই একজন মার্গারেট, সুনীলের যেমন ছিল 'ছবির দেশে কবিতার দেশে' বইতে। মার্গারেট হবার প্রতিশ্রুতি দিলে আমি হেরে যাওয়ার পর ঠিক ফ্রান্সে চলে যেতাম, তারপর জ্যাক রিচারের মত পরিচয় গোপন করে মার্গারেটের সাথে ঘুরে বেড়াতাম - মিউজিয়ামে, আর শ্যাতো-সাইটগুলোতে।

হেরে যাওয়ার পর পালিয়ে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা সেটাও একটা লড়াই, সেই লড়াইয়েও যদি হেরে যাই, তখন কি হবে?

১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×