দেখুন, লিখে রাতারাতি কিছু পরিবর্তন করা যায় না। এটা একটা নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা। লেখালেখি খুব যৌক্তিক একটা বিষয়। যা মন চায়, তা লেখার সুযোগ নেই। আপনাকে ভেবে দেখতে হবে, আপনি যা লিখছেন তার যৌক্তিকতা কী? আপনি কিন্তু নিজে পড়ার জন্য লিখছেন না, আপনি লিখছেন অন্যের পড়ার জন্য, অন্যে পড়বে বলেই আপনাকে অন্যের কথা ভাবতে হবে। ধর্ম দীর্ঘদিনের অনূশীলীত একটা বিষয়, হাজার বছর ধরে মানুষ কিছু রীতিনীতি লালন করছে বিশ্বাসের আলোকে, যেগুলো সামষ্টিকভাবে ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ধর্ম নিয়ে অনেক কথা বলা যায়, প্রাসঙ্গিকভাবে অনেক কিছু বলার সুযোগ আছেও, সেক্ষেত্রে কেউ আপনাকে মারতে আসবে না। কিন্তু আপনি গালাগালি করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন কেন? পৃথিবীর কয়েকশো কোটি লোকে যা মেনে চলছে, এক ঝটকায় তা উড়িয়ে দিতে চাওয়াটা কিন্তু বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। বিজ্ঞান এবং ধর্ম মুখোমুখি দাঁড়া করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব কিন্তু আপনার নয়। প্রয়োজনে তারা নিজেরাই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাবে এবং একটি টিকে থাকবে, অথবা সাম্যবস্থায় চলবে। অনাবিস্কৃত অংশটুকু সবসময়ই ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত হয়ে থাকবে, পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে অনেক কিছু থাকবেও, তাই আপনি আমি বললেই ঈশ্বর বিনাশ হয়ে যাবে -এমন ভাবার কোন কারণ নেই। ঈশ্বর থাক, থাকলে সমস্যা কী? নাস্তিকেরও তো ঈশ্বর আছে, নেই? আপনার অদেখা-অজানা-কল্পনায় ভেসেবেড়ানো বিষয়গুলোকে আপনি কী বলবেন? যুক্তিতে আপনি মানতে চান ঈশ্বর নেই, কিন্তু তাতে মুক্তি কি হয়? মাঝে মাঝে ‘মূর্খে’র ঈশ্বর এসে আপনাকেও কি নাড়া দিয়ে যায় না? এটাই বাস্তবতা, এখানেই মানুষের অসহায়ত্ব। আপনি যতটা অসহায়, পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ তার চেয়ে অনেক বেশি অসহায়। ধূর্ত অসভ্য দূর্নীতিবাজ লম্পট বাটপাড়দের কথা বাদ দেন, অসহায় মানুষদের কথাই ধরুন না, তারা যাবে কোথায়? আমার দিদিমা, শেষ বয়সেও যার একটি সন্তান মারা গিয়েছে, সে যাবে কোথায়? তার তো একমাত্র ঈশ্বরেই আশ্রয়। আমার মা, সারাক্ষণ তার একটাই কথা, কী আর করা, ঈশ্বর যা চেয়েছে তাই হয়েছে, তার মত একজন অতি ভালো মানুষকে কি আমি বলব- মা, এসব বাদ দাও তো, ঈশ্বর বলে কিছু নেই? বলব না। বলার প্রয়োজন নেই।
প্রচলিত ধর্মগুলোকে বিশ্বাস না করার যথেষ্ট কারণ আছে, আপনি নাস্তিক হতে পারেন, কিন্তু নাস্তিকতার চর্চা আপনি কেন সব জায়গায় করতে যান? তাছাড়া আরেকটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ- নাস্তিকতাকে আস্তিকতার বিপরীত তত্ত্ব হিসেবে ভাবতে যাইয়েন না। এবং ঈশ্বরকে বধ করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েন না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩