somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাঝে মাঝে জীবন হয়ে ওঠে অতুলনীয়

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত তিনদিন ধরে পকেটে বিশ টাকা নিয়ে ঘুরছি। টাকা না থাকলেও আমার কোনো কাজ এবং জীবন থেমে থাকে না। টাকা না থাকলে শুধু মাছ মাংস খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, তখন ডিম দুধ ডাল খাই শুধু। সবজিটাও বাদ পড়ে। কারণ, মুদির দোকানে সবজি মাছ মাংস পাওয়া যায় না। বিপদ হয় এই সময় কোনো অতিথি আসলে।

কালকে সেরকম একটা কাণ্ড ঘটল। নিকট আত্মীয় বাসায় এসেছেন, যত্নে ত্রুটি করা যাবে না। প্রথমে ঘরে যা আছে, চা বিস্কুট ইত্যাদি দিয়ে আপ্যায়ন করা হল, এরপর দুপুরে খেতে বলা। তখন বাজে বেলা বারোটা। যত্ন করছি অনেক, ওনারাও কোনোভাবেই থাকতে রাজি হচ্ছেন না, অবশেষে বললাম, তাহলে আমি বাজারে যাই।

ব্যাগ নিয়ে রওনা হলাম। ভাবছি, যদি সত্যিই না থাকবেন, তাহলে এবার বাজারে যাওয়া দেখে বলবেন, “না না, বাজারে যাওয়ার দরকার নেই, আমরা থাকতে পারছি না আসলে।”

কিছু বললেন না ওনারা। আমি বিশ টাকা পকেটে নিয়ে প্রথমে গেলাম একটা মুদির দোকানে। যে দোকান থেকে সবসময় জিনিস কিনি সে দোকানে নয়, কারণ, গত কালকেই অনেক কিছু এনেছি ওনার দোকান থেকে, এ অবস্থায় আজকেই আবার বিলাসী দ্রব্য কিনতে গেলে ভালো কথা হবে না।

অন্য একটি দোকানে গেলাম। ঐ দিন ২১শে ফ্রেব্রয়ারি ছিল, মানে সরকারি ছুটি, সুযোগটা নিলাম। প্রথমে দোকানদারের সাথে কুশল বিনিময় করে বললাম, ভালোই একটা বিপদে পড়েছি, ব্যাংকে গিয়ে দেখি ব্যাংক বন্ধ (পাশে অগ্রণী ব্যাংকের একটা শাখা আছে), এখন টাকা তুলবই বা কী করে, বাজার করার তাহলে কী হবে!

আমার আপদমস্তক তাকিয়ে দোকানদার বললেন, কী নেবেন, আমার কাছ থেকে নেন, টাকা তুলে পরে দিয়ে দেবেন! আমি বললাম, বেশিদিন এই এলাকাই আসি নাই, হুট করে কারো কাছ থেকে বাকীতে জিনিস চাইব!

তবে সত্য হচ্ছে, এলাকায় আসার প্রথম সপ্তাহ থেকেই আমি বাকীতে জিনিস কিনি। উনি এক গাল হাসি দিয়ে বললেন, আপনার সাথে সমস্যা হবে না। [আমাকে উনি কী চিনলেন তা তিনিই জানেন]। সুযোগ পেয়ে ধুমায়ে কিনলাম। ১৩৬০ টাকা বিল করে ব্যাগ বোঝাই করলাম।

এখন কাঁচা বাজার করতে হবে। যেহেতু পোলাউ মাংস খাওয়ানো হবে, তাই মাছ না কিনলেও হবে। আলু মুদির দোকান থেকেই কিনেছি, দই স্প্রািইট- এসবও কিনতে পেরেছি ঐ একই দোকান থেকে, কফিও কিনেছি। এখন মাংস কিনেলেই হয়। তা আবার দেশি মুরগী কিনতে হবে, না হলে মান সম্মান লম্পট সন্দেহবাতিকগ্রস্থ স্বামীর হঠাৎ আক্রমণে নববধুর কাচের চুড়ি ভেঙে পড়ার মত ভেঙে পড়বে।

বিশাল ব্যাগ পাশে রেখে মুরগীর দোকানদাররে বললাম, মামা কেমন আছেন, যদিও তার সাথে কথা এই প্রথম। বললেন, ভালো আছি। চা খাওয়াতেই চাইলাম, পাশে চায়ের দোকান একটা আছে যদিও সেখানে চা খাওয়ার পরিবেশ খুব একটা না।

দুপুর বেলায় ক্রেতার ভিড় নেই তাই দোকানীকে এটা ওটা বলছি। উনি জিজ্ঞেস করলেন, “হঠাৎ কেন চা খাওয়াতে চাইলাম?” বললাম, আসলে অনেক কিনে পকেটের টাকা সব শেষ, এখন মুরগী না কিনলে তো অতিথি আপ্যায়ন হবে না, তাই আপনাকে একটু খাতির করছি, বাকীতে মুরগী চাইব কিনা, না হলে তো বাসায় গিয়ে টাকা নিয়ে আসতে হয় আবার।

সরলতার এ ভান লোকটিকে মুগ্ধ করল। পাশাপাশি একজন “ভদ্রলোকের ছ্যবালামিতে” তিনি কিছুটা মজাও পাইলেন নিশ্চয়ই, ভাব নেওয়ার একটা সুযোগ তৈরি করে দেওয়াও সম্ভব হয়েছে তাকে।

কোনো কথা না বলে উনি দুটো মরগী কাটার অর্ডার দিলেন তার সহকারিকে। আমি ওনার অাস্থা অর্জন করার জন্য ২০ টাকা থেকে ১১ টাকা দিয়ে একটা বেনসন সিগারেট কিনে ধরালাম।

মুরগী তৈরি হল। এবার রিক্সা করতে হবে। কিন্তু পকেটে আছে আট টাকা। ইচ্ছে করেই সিগারেটের দোকান থেকে চারটে দুই টাকার নোট নিয়েছি। খুচরো এক টাকা রেখে এসে বলেছি, থাক, পরে সমন্বয় করবেন। এ ধরনের উদারতা এবং বোকামী মানুষ পছন্দ করে। বিশেষ করে ওরা। এতে ঐ ছোট্ট পরিবেশে আমার সম্পর্কে একটা ‘পজেটিভ ইমেজ’ তৈরি হবে।

রিক্সায় উঠলাম। বাসার কাছে এসে পাশের দোকান পর্যন্ত কথাটা পৌঁছায় ঠিক এতটা জোরে রিক্সালাকে বললাম, ৫০০ টাকা খুচরো হবে, ও বলল, ‘না’, এবার আমি আরো জোরে বললাম, তোমরা তো কোনো সময় ৫০০ টাকা খুচরো করতে পারো না।

কী আর করা, পাশের দোকান থেকে ২০ টাকা নিয়ে রিক্সা ভাড়া মিটালাম। রিক্সা থেকে নেমে ব্যাগ নিয়ে উঠলাম ৪ তলায়। দেখি, আমার মহামান্য অতিথিরা তখন চলে যাবেন যাবেন করছেন। অর্থাৎ, আমি বাজারে যাওয়াতে ওনারা নিশ্চিত হয়েছেন যে ওনাদের যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন অন্য কোনো বাসায় গুরুত্ব যাচাই করতে রওনা হলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:১৯
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×