প্রিয় মামনি,
কেমন আছো তুমি? আশা করি ভালো আছো। আর আমি…..? তোমাকে ছেড়ে বেশি ভালো নেই । কতোদিন হয় তোমাকে দেখি না। বাবা বলেছে তুমি নাকি স্বর্গে ঈশ্বরের কাছে বেড়াতে গেছ। তুমি তো বলেছিলে ঈশ্বর আকাশের উপরে থাকে, তাহলে সবাই তোমাকে কাঠের বাক্সতে করে মাটির নিচে নামিয়ে দিলো কেন, মা? ঈশ্বর এতো সর্বশক্তিমান, তাহলে তোমার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারলো না কেন? মাটির নিচ দিয়েও কি ঈশ্বরের কাছে যাওয়া যায়??

জানো মা, গত সপ্তাহে আমার অনেক জ্বর হইছিলো। কতো যে কষ্ট হয়েছে আমার! তুমি থাকলে আমার এতো কষ্ট কোনদিনও পেতে হতো না। তুমি আমার মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিতে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে। তুমি তো জানো মা, জ্বর আসলে আমি ভয়ংকর স্বপ্ন দেখি, অনেক ভয় পাই। আগে তো তুমি আমাকে সারারাত জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতে আমার একটুও ভয় লাগতো না। তোমার আদরে কত তাড়াতাড়ি জ্বর ভালো হয়ে যেত, আর এবার সুস্থ হতে অনেক সময় লেগেছে, অনেক খারাপ লেগেছে আমার।

এখন নিজের হাতে খাবার খেতে হয় আমার। হাতের ফাক দিয়ে সব ভাত পড়ে যায়। আমাকে খাইয়ে দেয়ার কেউ নেই। তোমার মনে আছে, তুমি আমাকে কোলে তুলে কত যত্ন করে খাইয়ে দিতে?? আরেকদিন গরম ভাত খেতে গিয়ে আমার অনেক সময় লেগেছিল। আর তাই স্কুলে যেতে দেরি করেছিলাম বলে ম্যাডাম আমাকে অনেক বকা দিছে। আমি একা একা অনেকক্ষণ কেঁদেছি। কেউ জিজ্ঞাসা করেনি কী হয়েছে আমার। তুমি থাকলে কেউ আমাকে বকা দিতে পারতো, বলো মা??

স্কুলের জন্য নিজে নিজেই রেডি হই আমি এখন। শুধু চুলের ঝুটি বাঁধতে পারি না। পাশের বাড়ির আপুকে একদিন বলেছিলাম আমার ঝুটি বেঁধে দিতে, আপুটা এতো শয়তান, আমাকে দিলোই না, উল্টা বকা ঝকা করতে লাগলো। পড়ে আমি মাথা এলোমেলো অবস্থায়ই স্কুলে গেছি। সবাই আমাকে দেখে অনেক হেসেছিল সেদিন। আমার কী যে কষ্ট লেগেছিলো তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না !!!
তুমি তাড়াতাড়ি আমার কাছে চলে এসো, মা। তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়, সত্যিই অনেক অসহায়। ঘুমানোর সময় কেউ আর গল্প বলে ঘুম পাড়ায় না, কপালে চুমু এঁকে দেয় না। তুমি এসে আমাকে গল্প বলে বলে ঘুম পাড়াবে, কেমন? আমার চিঠি পেয়েই চলে আসবে। তোমার অপেক্ষায় থাকলাম। তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি। আজকের মত রাখি। তুমি ভালো থেকো।
ইতি তোমার আদরের,
লেডি কুইন…….
বিঃ দ্রঃ সব চরিত্র কাল্পনিক। তবে আবেগটা বাস্তব। পার্থিব ও স্বর্গীয় সকল মা ভালো থাকুক।