একটা কৌতুক আছে এরকম, “এক যুবক একদিন ধ্যানরত এক সাধুবাবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
“বাবা, আমি যদি কোন যুবতি মেয়ের সাথে রাতে একই বিছানায় ঘুমাই তাহলে কি আমার পাপ হবে?”
উত্তরে সাধুবাবা বললেন, “বৎস, ঘুমাইলে তো আর পাপ হবে না। কিন্তু সমস্যা হল, তোমরা তো ঘুমাও না।”
ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি প্রেম করা বা রিলেশনকে মানুষ একটু খারাপ দৃষ্টিতেই দেখে। বাবা-মা কিংবা পরিবারের কেউই চায় না তার সন্তান প্রেম করুক। এতো পবিত্র একটা জিনিস, কিন্তু কেউই ব্যাপারটা সহজভাবে মেনে নিতে পারে না। সবার প্রেমেরই প্রথমে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের পরিবার। তারা ভাবে, ‘আমার মেয়েটা যে ছেলের সাথে প্রেম করছে সে একটি বখাটে, নেশাগ্রস্ত, নষ্ট একটা ছেলে। একই ভাবে ছেলের মা-বাবা চিন্তা করে, ‘রাক্ষসী মেয়েটা আমার ‘সহজ-সরল’(?) ছেলেটার মাথা খেয়ে নিয়েছে।’ ভাববে না-ই বা কেন?? ছেলে-মেয়ে তো ঘুমায় না। বাবা-মা ঠিকই জানে প্রেমের নামে পোলাপান কী করে। তাই তারা সন্তানের ভালোর কথা ভেবে প্রেমের ব্যাপারে বাধা দেয়। যদিও খুব একটু সুবিধা করতে পারে না। লুকিয়ে লুকিয়ে তারা প্রেম চালিয়েই যায়। তবে, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি প্রেমেরও কিছু পজিটিভ দিক আছে যা ছেলে মেয়ে উভয়েরই জীবনের জন্য অপরিহার্য। আসুন প্রেম করার সুফল গুলো জেনে নেইঃ
নিরাপত্তাঃ ঢাকা শহরের বেশিরভাগ ছেলে মেয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য এসে হোস্টেলে বা বাসায় থাকে। গ্রামে পরিবারকে ছেড়ে এসে একা একা থাকা নিয়ে মা-বাবা একটু টেনশনেই থাকে। একটা মেয়ের ক্ষেত্রে চিন্তা করে, “মেয়েকে কেই বিরক্ত করছে কিনা/ রাস্তায় কোন সমস্যা হয় কিনা/ কেউ খারাপ ব্যবহার করছে কিনা/ বিভিন্ন ছেলেদের সাথে ঘুরতে যায় কিনা ”- ইত্যাদি নানান চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম হয় অনেক মা-বাবার। আবার ছেলের ক্ষেত্রে চিন্তা করবে, ‘আজেবাজে ছেলেদের সাথে মিশে নষ্ট হয়ে যাবে কিনা/ নেশাপানি করবে কিনা/ বেশি আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করে কিনা/ মেয়েদের ‘ইভ টিজিং’ করে কিনা ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে মেয়েটির যদি বয়ফ্রেন্ড থাকে তাহলে মা-বাবার এতো চিন্তা করতে হবে না। কারণ সেই বয়ফ্রেন্ডই মেয়েকে চোখে চোখে রাখবে, শাসন করবে, বখাটে ছেলেদের সাথে মারামারি করে মেয়েকে প্রটেক্ট করবে। মেয়েটি থাকবে ১০০% নিরাপদ। একইভাবে ছেলেকেও তার গার্লফ্রেন্ড নিয়ন্ত্রন করবে সব রকম বাজে অভ্যাস থেকে। ছেলেও থাকবে নিরাপদ। কারণ প্রেম থাকা অবস্থায় যদি কোন ছেলে ‘ইভ টিজিং করে/ নেশা করে/ বেশি আড্ডা দেয়, তাহলে তার কপালে দুর্ভোগ আছে। ছেলে বা মেয়ে তার মা-বাবাকে জানিয়ে কিছু করুর আর না করুক, নিজের প্রেমিক/প্রেমিকাকে সব কিছু জানিয়েই করবে। প্রেমিক/প্রেমিকার ভয়েই সে বিভিন্ন কুকাজ থেকে বিরত থাকে। এভাবেই সেই ছেলে/মেয়ে হয়ে উঠবে আদর্শ একজন মানুষ।
দুরদর্শিতা আসবেঃ প্রেম করলে দুরদর্শিতা বাড়ে। তাদের চিন্তা ভাবনা থাকে ভবিষ্যৎ নিয়ে। কিভাবে সংসার সাজাবে/ কত রুমের বাড়ি হবে/ রুমের কালার কী হবে/ ছেলে- মেয়ে কয়টা থাকবে/ তাদের কোন স্কুলে ভর্তি হবে (অনেকে আবার একটু বেশি ফাস্ট, স্কুলের ভর্তি ফর্মও কিনে রাখে)/ সংসারের আয় কত হবে/ কী কী খাতে ব্যয় করবে ইত্যাদি সব আগে থেকেই চিন্তা করে রাখে। এর ফলে তাদের দুরদর্শিতা আসে।
কর্মঠ হয়ে ওঠেঃ প্রেম করলে সবাই কর্মঠ হয়ে ওঠে (বিশেষ করে ছেলেরা)। ঘুমকাতুরে ছেলেরা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে যায (না উঠলে তো খবরই আছে!!!!)। চাকরি-বাকরির দিকে ঝুঁকতে হয়। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অদম্য চেষ্টা জাগে মনের মধ্যে। মেয়েও তার ফ্লেক্সির টাকা যোগাতে দুই একটা টিউশনী করে।
স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়বেঃ মেসে থাকা হ্যাংলা পাতলা ছেলেটি তার গার্লফ্রেন্ডের স্বাস্থের সাথে ব্যালেন্স রাখতেই খাওয়া দাওয়ার প্রতি বিশেষ নজর দেয়। একচুয়ালি, কাজটা করতে হয় গার্লফ্রেন্ডের জোরাজোরির কারণেই। দুজনকে এক সাথে হাটার সময় "বাচ্চা ছেলেটি আন্টির হাত ধরে টিউশন ক্লাসে যাচ্ছে"" জাতীয় কথা যেন না শুনতে হয়, তাই গার্লফেন্ড তাকে খাওয়ার ব্যাপারে প্যারা দেওয়া শুরু করে। ফলে ছেলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। শুধু তাই না, শীতকালে যে ছেলে সপ্তাহে একবার গোসল করতো, সেও গার্লফেন্ডের প্যারাপ্যারিতে প্রতিদিন শরীর ভেজায়, তা না করলে তো কাছাকাছি বসতে দেবে না। অন্যদিকে মেয়েটিও শরীর ঠিক রাখতে ডায়েটিং করতে শুরু করে, সাজুগুজুর দিকেও মনযোগ দেয়। মোট কথা নিজের প্রতি যত্নশীল হয়ে ওঠে।
উল্লিখিত ছাড়াও আরো অনেক সুফল রয়েছে যা প্রকাশ করতে গেলে ব্লগে সংকুলান হবে না। এইসব কথা চিন্তা করে গার্ডিয়ানদের উচিত কোন প্রেমে বাধা না দেওয়া। এতে করে সন্তানদের নিয়ে অযথা দুঃশ্চিন্তাটা দূর হবে।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ যদি সেই প্রেম না টিকে তাহলে কিন্তু উপরের সব কয়টা গুণেরই পতন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই কারো হিতে-বিপরীত হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২২