ভাবলাম বিষয়টা নিয়ে কিছু বলব না, কিন্তু না বলে পারলাম না। ষোল তারিখের পাকিস্তানের একটি স্কুলে গণহত্যার বিষয়টিতে একদল মানুষ যেভাবে রিএ্যাক্ট করছেন, সেটা খুবই দুঃখজনক। ষোল তারিখেই পাকিস্তানে এমন নির্মম ঘটনা ঘটল বলে, পাকিস্তানে শোক করতে হবে বলে, তারা খুবই আনন্দিত। আরও ভয়ংকর বিষয় হল, তারা এই নির্মম গণহত্যা টিকে বাঙালিদের অভিশাপ বলে অভিহিত করছেন!!
তালেবান গোষ্ঠি একটি স্কুলে ঢুকে একদল কচি কচি শিশুকে পিঁপড়ার মত মেরে ফেলেছে, এ বিষয়টাতে আনন্দ প্রকাশের কিছু নাইরে মনা.....আমি হাতজোড় করে মাফ চাই, দয়া করে কেউ এ জাতীয় কথাবার্তা আর বইলেন না।।। আপনারা নিজেরাও জানেন না, পাকিস্তানের প্রতি অযৌক্তিক ভাবে ঘৃণা প্রকাশ করতে গিয়ে আপনারা তালেবানকে প্রশ্রয় দিয়ে ফেলছেন!!!
একই ষোল তারিখ আমাদের পাহাড় ছিল অশান্ত। বিজয়ের দিনেই বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষীরা কয়েকজন আদিবাসীদের ঘরে হামলা চালিয়েছিল তাদের “উচ্ছেদ” করতে...! হ্যাঁ, পাহড়ে যখন এই চলছিল, সমতল তখন অর্থহীন স্টুপীড বিজয় উৎসবে ব্যাস্ত ছিল। কই সেই কথাটা একবার চিন্তা করেন, যে নিজে বিজয় পালন করছেন, অথচ দূর পাহাড়ে আপনার বয়সী কোন একটা কিশোর কোথায় থাকবে,কোথায় আশ্রয় নেবে, সেই চিন্তা করছে....
সেটা না হয় ভিন্ন প্রসঙ্গ।
কিন্তু আরকেটু পিছনে যাই। ২০০৪ সাল। ১৪ এপ্রিল। বাংলা পহেলা বৈশাখ। ঢাকায় রমনা বটমূলে তখন চলছিল বৈশাখের গান, অজস্র মানুষ একত্র হয়েছিল বাঙালির প্রাণের উৎসবে। কী হল তখন??? বুম!!! গ্রেনেড ফাটল কয়েকটা। যে মানুষটা একটু আগেও মা|থা দুলিয়ে মঞ্চের গানের সাথে গলা মিলাচ্ছিল, পর মুহূর্তেই তার পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল...কারো মগজ বেরিয়ে এল, কারো হাত ছিঁড়ে ঝুলতে লাগল।
এই হল তালেবান। তাদের মতের বাইরে যা কিছু তাই তারা ধ্বংস করে দিবে। মাটির সাথে মিশায়ে দিবে। তাদের কথা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা বা আধুনিক শিক্ষার কোন দরকার নাই, মেয়েরা তো প্রশ্নই উঠেনা, ছেলেদেরও দরকার নাই। কোরান পড়তে পারলেই হল। শুধু শিক্ষা না, জীবনের কোন ক্ষেত্রে ই আধুনিক কোন কিছুর দরকার নাই। এইজন্য স্কুলটাকে এবং স্কুলে পড়তে যাওয়া বাচ্চাগুলোকে শেষ করে দিল.... সবসময় তাদের কর্মপন্থা টা ঠিক এইধারায় চলে। যে যে ক্ষেত্রে তারা আর কন্ট্রোলে আনতে পারবেনা, সেটাকেই তারা ধ্বংস করে দেবার প্ল্যান করবে। প্রথমে ধমক-ধামক দিয়ে দেখবে ,তারপর কাজ না হলে, ঠিক ঐভাবে বুম!!!
এখন বিষয়টা এমন না যে, তালেবানের রুই-কাতলা যারা, তারা সবাই অশিক্ষিত-বকলম। তারা এই মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায় শুধু তাদের দ্বারা শাসিত রাষ্ট্রের মানুষগুলোকে তাদরে কব্জায় রাখতে...! গোটা পাকিস্তান, আফগানিস্তান, এর চেহারা তো চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে। দুনিয়ার সবখানেই তাদের কারখানা। কেবল ভিন্ন ভিন্ন নামের আাড়লে।
পাকিস্তানকে আমি ঘৃণা করি। চরমতম ঘৃণা। কিন্তু তাই বলে আমি কখনোই চাইব না, একদল রাক্ষস-খোক্কস মিলে দেশটি গিলে ফেলুক!! আমি কক্ষণো চাইবনা কচি কচি বাচ্চাগুলো জানোয়ারদের গুলির মুখে মরে যাক!! পাকিস্তানের প্রতি যদি এতই ঘৃণা থাকে মনের ভিতর, তাহলে পাকিস্তানী কাপড় কেনা বন্ধ করেন! গণহারে মা-বোন-দাদী-নানীরা যে পাকিস্তানী কাপড় কেনা শুরু করেছেন, সেটা বন্ধ করেন!! পাকিস্তানী মেহেদী কেনা বন্ধ করেন!! আতিফ আসলাম আর রাহাত ফতেহ আলী খান এর গান শোনা বন্ধ করেন। পাকিস্তানী চ্যানেল দেখা বন্ধ করেন!! পাকিস্তানী হুজুর আমদানী করে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী পালন বন্ধ করেন, বাঙালী সুফীমনা সুন্নী হুজুর দিয়া মিলাদুন্নবী পালন করেন, আমাদের দেশে মারফতে দিক্ষিীত হুজুরের সংখ্যা আল্লাহর অশেষ রহমতে কম তো না মুমীন... আন্তর্জাতিক যেসব উৎসবে (যেমন- চলচ্চিত্র, সাহিত্য, আলোকচিত্র কিংবা উদ্যোক্তাদের উৎসব) অন্যান্য অনেক দেশের সাথে পাকিস্তানও হাজির থাকে, সেসব উৎসব বর্জন করুন অথবা পাকিস্তানের উপস্থিতি ব্যান করুন!! কমনওয়েলথ, সার্ক, এইসেই-হ্যান্যোন এগুলা থেকে পাকিস্তানরে বাইর করে দ্যান নাইলে বাংলাদেশ নিজেই পদত্যাগ করে বের হয়ে আসুক, আছে হ্যাডাম???? অতি মাত্রায় প্রগতি দেখাতে গিয়ে পাকিস্তানী “সুশীল” সমাজের মানুষদেরকে ছাব্বিশে মার্চ জাতীয় স্মৃতিসৌধে বক্তিমা দেয়া বন্ধ করেন!! আল্লাহর দোহাই লাগে!!!আছে এসব করার সাহস????? বুক হাত দিয়ে নিজেকে জিগেস করেন..................ইশটাটাশ পরে দিয়েন!!
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার---
আমাদের এদেশীয় যারা সুড়সুড়ি গোষ্ঠী, যারা যখন-তখন আওয়াজ তোলেন ইসলামকে রক্ষা করতে, তারা কিন্তু এই গণহত্যায় একেবারে চুপ! কারণ ঘটনা তো “সুড়সুড়ি”র বড়ভাই “চুলকানি”ই ঘটিয়েছে............ক্যামনে আওয়াজ তুলবে মনা.....!
আবার আরেকদল সুড়সুড়ি গোষ্ঠী, যাদের কাজই হল কতক্ষণ ইসলামকে কালা সাবান দিয়ে ধোয়া, তারাও ক্যাঁ ক্যাঁ শুরু করসে, মুসলিম মুসলিমকে মারসে তো, তাই কোন আওয়াজ নাই, অ্যান-ত্যান, হাবিজাবি, আরও কতকিসু।
বাজীরে....নাম তার তালেবান হোক, আর লস্কর-ই-তৈয়্যবা হোক, আরএস হোক আর জামাত হোক.বা আরও যা কিছু আছে হোক, নেটওয়ার্ক তো তাদের একটাই রে বাজী...তারা যা করছে বা করে থাকে, তা সবই আন্তঃনেটওার্কিয় প্ল্যান-প্রজেক্ট।
সুতরাং, পাকিস্তানের প্রতি ইমোশোনাল জায়গা থেকে আমরা এমন কিছু করে বা বলে বসতে পারিনা, যা তালেবানকে সমর্থন যোগায়, কখখনো না!!! কারণ সেম নেটওয়ার্ক শুধু পাকিস্তানেই না, আমাদের বাংলাদেশেও সক্রিয় আছে, এবং খুব ভালভাবেই সক্রিয় আছে!!!
সেইসাথে ফেসবুকে দুই-চারলাইন ইশটাটাশ প্রসবের আগে দয়া করে মাথাটাকে ঝালিয়ে নিন। চিন্তা করুন, কী বলছেন, কী অর্থ দাঁড়াচ্ছে এর... সভ্য হোন ।
সত্যিকার অর্থে পকিস্তানের প্রতি আমাদের সমস্ত ঘৃণা সেদিনই সফলভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হবে, যেদিন আমরা পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে গেছিলাম যে কারণে, সেই কারণটাকে যদি স্বার্থকভাবে সফল করতে পারি। আমাদের বাংলাদেশকে যেদিন অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারব, আামদের কুটিরশীল্প যেদিন সবার ঘরে ঘরে প্রথম পছন্দ হবে, আমাদের ওয়ালটন যেদিন স্যামসাং/অ্যাপল/এইচপি’র সাথে ধাক্কাধাক্কি করে কম্পিটিশিন করবে বিশ্ববাজারে, সেদিন আমাদের ঘৃণা, ক্ষোভ সফল হবে।
যেদিন আমরা সব যুদ্ধাপরাধীকে দড়িতে ঝুলাতে পারব, সেদিন আমাদের ঘৃণা, ক্ষোভ সফল হবে।
যে তিরানব্বই হাজার সৈনিককে বিনা বিচারে তাদরে দেশে ফেরত পাঠিয়েছিলাম, তাদের বিচার যেদিন করতে পারব, আমাদের ঘৃণা, ক্ষোভ সফল হবে।
এখনো “ইউনাইটেড পাকিস্তান” আদর্শে বিশ্বাসী যারা তাদরেকে যেদিন নির্মূল করতে পারব, সেদিন আমাদের ঘৃণা, ক্ষোভ সফল হবে।
আমাদেরই মাটিতে তালেবানী রাষ্ট্র কায়েমে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে যারা, তাদের মূলোৎপাটন করতে পারব যেদিন, সেদিনই আমাদের ঘৃণা, ক্ষোভ সফল হবে।
জল-পাহাড়-সমতল, সবখানের মানুষ যেদিন দৃপ্ত কন্ঠে পরম বিশ্বাসে বলে উঠবে আমিও একজন বাংলাদেশী, সেদিনই কেবল আমাদের ঘৃণা, ক্ষোভ সফল হবে।
যেদিন বালাদেশ তার “বাংলাদেশ” হবার স্বপ্নটুকু পূরণ করতে পারবে, সেদিনই আমাদের ঘৃণা ক্ষোভ সফল হবে।