somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া

২৫ শে মে, ২০০৮ সকাল ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব দ্রুত বরফ গলে যাচ্ছে....
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া ঠিক কি ধরনের হতে যাচ্ছে তা একেবারে নির্দিষ্ট করে বিজ্ঞানীরা বলতে পারছেন না। তবে প্রতিক্রিয়া যে হবে তা নিশ্চিত। অধিকাংশ বিজ্ঞানীর ধারণা প্রকৃতির এ প্রতিক্রিয়া হবে মানুষের জন্য প্রতিকূল। এক পর্যায়ে পরিবর্তনগুলো এতো দ্রুত ঘটবে যে সে সময় মানুষের কিছুই করার থাকবে না।

পানি কতোখানি বাড়বে
সাগরে ভাসমান বরফ গলে গেলে যে ক্ষতি হয় সেই তুলনায় মেরু ও গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলন বেশী ক্ষতিকর। সাগরের বরফ প্রধানত সমুদ্রের পানিতে ভাসমান এবং গলে গেলেও সমুদ্রের পানির উচ্চতায় তেমন পার্থক্য হয় না। কিন্তু মেরু এবং গ্রিনল্যান্ডের বরফ প্রধানত শক্ত মাটির উপর উপরে জমে আছে। গ্রিনল্যান্ডের বরফ প্রায় তিন কিলোমিটার এবং দক্ষিণ মেরুর বরফ প্রায় চার কিলোমিটার পুরু। শুধু গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে গেলেই সমুদ্রের পানির লেভেল প্রায় ৭ মিটার উচু হয়ে যাবে। দক্ষিণ মেরুর দক্ষিণাংশ গলে গেলে তা সমুদ্রে যোগ করবে আরো ৬ মিটার উচু পানি। দক্ষিণ মেরুর পূর্ব অংশের বরফও যদি গলে যায় তাহলে পানি বাড়বে আরও প্রায় ৭০ মিটার।

বিশাল এই পানিরাশির মাঝে তলিয়ে যাবে প্রায় সম্পূর্ণ বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশ। সমুদ্রের পানি মাত্র ১ মিটার বাড়লেই বাংলাদেশের ১৭% জমি সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। ১৮০০০ বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠ বর্তমান অবস্থার চেয়ে ১৩০ মিটার নিচে ছিল।
১৯৯২ সালের পর থেকে স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে সমুদ্রের উচ্চতা সূক্ষ্মভাবে মাপা সম্ভব হচ্ছে। ফলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রতি বছর প্রায় ৪ মিলিমিটার করে উচু হচ্ছে। গত শতাব্দীতে তা ২ মিলিমিটার করে বাড়ছিল।
১৯৯০ সালের পর থেকে সমুদ্রের পানির উচ্চতা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। হিমবাহ, গ্রিনল্যান্ড এবং মেরু অঞ্চলের বরফের গলনের ফলে সমুদ্রের পানি বাড়ছে আবার তাপ বাড়ার ফলেও পানির আয়তনও বাড়ছে। এর ফলে উচু হচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠ।
মেরুর লারসেন বি. (একটা আলোচিত বরফখণ্ড) গলে যাওয়া মানে এটা নয় যে বাকি সব ঠিক আছে। এর আশেপাশের বরফখ-গুলোর জন্যও এটি বিপজ্জনক। এর নিচে পানি আছে। গলে যাবার পর এর নিচের পানিও গরম হওয়া শুরু হয়। ফলে এর আশেপাশের বরফগুলোও ধীরে ধীরে গলে যায়। পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির গ্লেসিওলজিস্ট রিচার্ড এ্যালে জানান প্রত্যেক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পানির তাপমাত্রা বাড়লে বরফখ-গুলো ১০ মিটার পুরুত্ব হারায়।

ঘূর্ণিঝড়ের চক্রে পৃথিবী
১৯৭০-এর পর থেকে ভয়ংকর সাইক্লোনের সংখ্যা এই উপমহাদেশে অনেক বেড়েছে। ইন্ডিয়ান উপমহাদেশের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সাইক্লোনের মধ্যে ১৪৮০ এবং ১৭৩৭ সালের সাইক্লোন (সঠিক ক্ষয়ক্ষতি জানা যায়না)। ১৮৬৪ সালে কোলকাতার সাইক্লোনে প্রায় ৬০ হাজার লোক নিহত, বাংলাদেশে ১৯৭০-এর সাইক্লোনে প্রায় ৫ লক্ষ এবং ১৯৯১-এ প্রায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার নিহত, ১৯৯৯-এ ইনডিয়ার উড়িষ্যায় প্রায় ১০ হাজার নিহত হয়েছে। কয়েকদিন আগে বার্মাতে সাইক্লোন নার্গিসের আঘাতে অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে দশ বিলিয়ন ডলারের।
ঘূর্ণিঝড় পৃথিবীতে বাড়ছে। প্রায় তিন দশক শান্ত থাকার পর আমেরিকার পূর্ব উপকূল ১৯৯৫ সালের পর থেকে অশান্ত হয়ে পড়ে। ২০০৪ সালে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে আলোচিত প্রাকৃতিক দূর্যোগের একটি ছিল হারিকেন ক্যাটারিনা। অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আবহাওয়া দূর্যোগ এটি।
সাইক্লোনকে ক্যাটেগরিতে ভাগ করে এর শক্তিমত্তা বুঝানো হয়। বড় ধরনের সাইক্লোন (ক্যাটেগরি ৩, ৪ বা ৫) বলতে ঘন্টায় ১৭৭ কিলোমিটারের বেশী গতির সাইক্লোনকে বুঝানো হয়। ১৯৪৪-এর আগে সাইক্লোন মাপার নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা ছিল না। ১৯৪৪ থেকে ১৯৬৯ সালের ডেটা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ২.৪টি বড় ধরনের সাইক্লোন হয়েছে। কিন্তু ১৯৯৫ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে সমগ্র পৃথিবীতে ঘূর্ণিঝড় অনেক বেড়ে গেছে প্রতি বছর প্রায় ৩.৫৫টি বড় সাইক্লোন, হারিকেন বা টাইফুন দেখা গেছে।

তার প্রতিফলন কমে যাওয়া
বরফাচ্ছাদিত সাদা এলাকা তাপ প্রতিফলন করে এবং কালো বা গাঢ় রঙের এলাকা তাপ প্রতিফলন শোষণ করে। পৃথিবীর বরফগুলো গলে গেলে সাদা এলাকা কমে যাবে। ফলে তাপ প্রতিফলন কমে যাবে এবং পৃথিবীর তাপ বৃদ্ধি পাবে।

সামুদ্রিক কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ
সমুদ্রের বিভিন্ন উদ্ভিদ কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে। ঠান্ডা সমুদ্র বেশী পরিমাণে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে এবং গরম সমুদ্র কম পরিমাণ শোষণ করে। সমুদ্রের তাপ বেড়ে গেলে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ কমে যাবে এবং পৃথিবীর তাপ বৃদ্ধি পাবে।


মাটি
মাটি থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়। মাটিতে অবস্থিত অসংখ্য জীবাণু এজন্য দায়ী। শীতপ্রধান অঞ্চলের মাটিতে এ ধরণের জীবাণু কম থাকে। মাটির তাপমাত্রা সামান্য বাড়লে জীবাণুগুলো সংখ্যায় বাড়বে। ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন বাড়বে।

মেঘ
মেঘের কি ধরণের পরিবর্তন হবে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা দু ধরনের মতামত দিচ্ছেন। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনলজির প্রফেসর রিচার্ড লিন্ডজেন জানান পৃথিবীর তাপ বৃদ্ধির ফলে বেশী পানি বাষ্প হয়ে আকাশে উঠবে এবং এর ফলে আকাশে বেশী মেঘ দেখা যাবে। এই মেঘগুলো সূর্যতাপকে ভূপৃষ্ঠে আসতে বাধা দিবে। ফলে পৃথিবীর তাপ কিছু পরিমাণে কমবে। অন্য কিছু বিজ্ঞানী অনুমান করেন যে, মেঘ বাড়লেও তাতে তাপের কোনো তারতম্য ঘটাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০০৮ সকাল ৯:৫৫
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×