somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১২ বছরে ১০০ কোটি উৎপাদন (জনসংখ্যা- ২)

২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুই হাজার বছর আগে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৩০ কোটি। এই জনসংখ্যা বেড়ে ৫০ কোটিতে পৌছতে সময় লাগে প্রায় ১৫০০ বছর। ১৯০০ সালের আগে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল বছরে প্রায় ০.০০২ শতাংশ। জাতিসংঘের হিসাব মতে, প্রতি বছর পৃথিবীর জনসংখ্যা ১.৩ শতাংশ করে বাড়ছে। ১৯৮৭ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিলো ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি)। তার মাত্র ১২ বছর পরে ১৯৯৯ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬ বিলিয়ন। অর্থাৎ মাত্র ১২ বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি বেড়ে গেছে।
পৃথিবীর জনসংখ্যার বৃদ্ধির এ হার কখনোই সমান ছিল না। পরিবেশের প্রভাব, খাদ্য সরবরাহ, রোগ এবং যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে জনসংখ্যার বৃদ্ধি প্রভাবিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধিসহ কিছু কারণে পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে।
পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৬.৫ বিলিয়নের বেশী। ১৭ শতকের পর থেকে মানুষের বিজ্ঞান, কৃষি, শিল্প এবং সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর জনসংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় মানুষের শ্রম কমিয়ে দেয় পশু এবং পরে বিভিন্ন ধরনের উন্নত যন্ত্র।
১৯৫০-এর পর থেকে মানুষের সভ্যতায় যুক্ত হয় নতুন এক অধ্যায়। এ সময় থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে রোগ ব্যাধিকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। এমনকি অনুন্নত দেশগুলোও চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নতি লাভ করে। বিভিন্ন রোগের টিকার বহুল প্রসার ঘটে এ সময়। কৃষি ক্ষেত্রে আসে উচ্চ ফলনশীল প্রযুক্তি, সহজলভ্য পানি সেচ ব্যবস্থা এবং কীটনাশক। ফলে খাদ্য উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়।
অনুন্নত দেশগুলোতে ১৯৫০-এ গড় আয়ু ছিল ৩৫-৪০ বছর কিন্তু ২০০০ সালে তা বেড়ে প্রায় ৬৬ বছর হয়েছে। এসব কারণে বহু দেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ৩.১ শতাংশ পর্যন্ত এসে দাড়িয়েছে। এ হারে বাড়ার ফলে মাত্র ২৩ বছরে বহু দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। উন্নত দেশের তুলনায় অনুন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যা বাড়ার হার বেশি।
২০০০ সালে ১.২ বিলিয়ন মানুষ উন্নত দেশগুলোতে বাস করলেও ৪.৯ বিলিয়ন মানুষ অনুন্নত দেশগুলোতে বাস করে। এশিয়ার পূর্ব এবং দক্ষিণ অংশে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক লোক বাস করে। চীন ও ভারতের জনসংখ্যা এর মধ্যে অন্যতম। ইউরোপ ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলোর জনসংখ্যা প্রায় ১৪ শতাংশ। উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা মিলে ১৪ শতাংশ, আফ্রিকা ১৩ শতাংশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো পৃথিবীর জনসংখ্যার ১ শতাংশ ধারণ করে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বিভিন্ন অঞ্চলে আলাদা। বর্তমানে আফ্রিকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। ২০২৫ সালে আফ্রিকার জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। দক্ষিণ এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার জনসংখ্যা প্রায় সমান থাকবে। এ সময় পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের জনসংখ্যা সামান্য কমবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ২০ শতাংশ লোক উন্নত দেশগুলোতে বাস করে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ হার কমে ১৫ শতাংশে দাড়াবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বর্তমানে নতুন জন্ম নেয়া প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে নয়জনই অনুন্নত দেশগুলোর।
বহু দেশের অর্থনীতি এখন কৃষি প্রধান থেকে শিল্প প্রধান অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ অঞ্চলেই বড় আকারে অভিবাসন হচ্ছে। গ্রামের মানুষ শহরে চলে আসছে, অনেক গ্রাম শহরে পরিণত হচ্ছে। বর্তমানে গ্রামের চেয়ে নগরের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ১৯৫০-এ পৃথিবীর ২৯ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করতো। তবে ১৯৯০ সালে ৪৩ শতাংশ এবং বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ শহরে বাস করে বলে অনুমান করা হয়।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর শহরে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এসব শহরে বিপুলসংখ্যক মানুষকে বাস করতে হচ্ছে বস্তি এলাকায়। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে এ ধরনের শহরগুলো মানুষের চাহিদা মেটাতে পারছে না, ফলে জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে।
বয়স্ক জনসংখ্যা অনেক দেশের জন্যই সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরো বাড়বে। জাতিসংঘের হিসাব মতে, ১৯৫০-এ উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইওরোপ এবং এশিয়ার উন্নত দেশগুলোতে ৬০ বছরের বেশি বয়সের লোক ছিল প্রায় ১২ শতাংশ কিন্তু ২০৫০ সালে এ সংখ্যা হবে ৩৩ শতাংশ।
(ছবি: ইন্টারনেট)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৩:১৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×