somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আফ্রিকার জনসংখ্যা তিন গুণ বাড়ছে (জনসংখ্যা-৪)

৩০ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আফ্রিকার জনসংখ্যা অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাড়ছে। আফ্রিকার একটি দেশ উগান্ডা। উগান্ডার জনসংখ্যা বর্তমানে ২৭.৭ মিলিয়ন। ২০২৫ সালে এ দেশের জনসংখ্যা অনায়াসে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যাবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ সংখ্যা হতে পারে ৬৫ মিলিয়ন কিংবা তারও বেশি অর্থাৎ বৃটেনের মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান। আরো ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে এ হারে বাড়তে থাকলে আগামী ৪৪ বছর পর এ দেশের জনসংখ্যা হবে চীনের বর্তমান জনসংখ্যার সমান। এ বিপুল জনসংখ্যার খাদ্য এবং প্রয়োজনীয় চাহিদা যোগানোর মতো সম্পদ দেশটির নেই।
উগান্ডার একজন সাধারণ মহিলা গড়ে সাত সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকে। প্রায় ৩০ বছর ধরেই উগান্ডার জন্মহার অস্বাভাবিকভাবে বেশি। দেশটির প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার ১৫ বছরের নিচে বয়স। এরা খুব শিগগিরই নতুন জন্ম দেয়া শুরু করবে। প্রতি পাচজন মহিলার মধ্যে মাত্র একজন জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করে।
উগান্ডার মতোই আফ্রিকার অন্যান্য দেশের অবস্থা। ২০৫০ সাল নাগাদ চাদ, মালি, গায়ানা, লাইবেরিয়া, নাইজার, বুরুন্ডি এবং মালাওয়ি অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর জনসংখ্যা তিনগুণ বাড়ছে। জনসংখ্যার দিক দিয়ে নাইজেরিয়া পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম দেশ হতে যাচ্ছে। কঙ্গো এবং ইথিওপিয়া থাকছে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে। বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রতি সাতজনের একজন আফ্রিকান। শিগগিরই এই সংখ্যা হবে প্রতি চারজনে একজন আফ্রিকান।
অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ডেমগ্রাফার বা জনসংখ্যাবিদ এবং পরিবার পরিকল্পনা এক্সপার্টরা জানাচ্ছেন, আফ্রিকার জনসংখ্যার ভবিষ্যৎ ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক। সম্পূর্ণ আফ্রিকার জনসংখ্যা বাড়ছে বিস্ফোরণের মতো। এর পাশাপাশি বিশ্বের জনসংখ্যা মানচিত্র পরিবর্তিত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আফ্রিকার দারিদ্র্য নির্মূল করা তো যাবেই না বরং এতো মানুষের খাদ্য সরবরাহ করাও পুরোপুরি অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে বিজ্ঞানীরা জানান।
উগান্ডার পপুলেশন সেক্রেটারিয়েটের পরিচালক জোথাম মুশিংগুজি উচ্চ ফার্টিলিটি (বা মহিলা প্রতি জন্মহার) এবং দারিদ্র্যের মধ্যে একটি পরিষ্কার যোগসূত্রের কথা বলেন। তিনি প্রশ্ন করেন, আমরা এসব অতিরিক্ত মানুষের জন্য চাকরি, বাড়ি, চিকিৎসা সুবিধা এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারবো কি? তবে আফ্রিকার সবাই তার মতো সচেতন নয়। আফ্রিকার অধিকাংশ দেশের সরকার গৃহযুদ্ধ, এইডস এবং অন্যান্য রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে এতোই ব্যস্ত যে তাদের এসব দিকে নজর দেয়ার মতো সময় নেই।
আফ্রিকার জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ফলে উন্নয়নই যে শুধু বাধাগ্রস্ত হবে তা নয়, এর ফলে আফ্রিকার কৃষিভূমিসহ বিভিন্ন সম্পদের মালিকানা নিয়ে হানাহানি অনেক বাড়বে। আফ্রিকার অতিরিক্ত এ জনসংখ্যার অনেকেই বিদেশে পাড়ি দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে।
আগের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, শক্তিশালী সরকার এবং কঠোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আফ্রিকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঠেকাতে পারে। এ জন্যই দক্ষিণ আফ্রিকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে এসেছে। ১৯৭৮-এ উগান্ডার প্রতিবেশী কেনিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জন্মহার (মহিলা প্রতি আটজন) ছিল। এ সময় কেনিয়ার সরকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। ফলে ৯০ দশকের মাঝামাঝিতে দেশটির জন্মহার পাচের চেয়েও কমে আসে।
এর পরও আফ্রিকার কিছু নেতা জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা সর্ম্পকে মোটেও সচেতন নয়। উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইয়োউরি মুসেভানি বিশ্বাস করেন তার দেশের জনসংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। গত বছরের জুলাইয়ে এমপিদের প্রতি তিনি বলেন, জনসংখ্যা বিস্ফোরণকে আমি ভয় পাই না। জনসংখ্যা একটি বিশাল সম্পদ।
আফ্রিকার জুড়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, বড় পরিবারগুলো শক্তিশালী পরিবারে পরিণত হয়। নাইজেরিয়াতে নতুন এক জরিপে দেখা যায়, দুই সন্তান আছে এমন মাত্র চার শতাংশ মহিলা আর সন্তান চান না অর্থাৎ ৯৬% আরো সন্তান চান।
এছাড়া শিশু মৃত্যুর হারও আফ্রিকার বেশি। সন্তান বাচবে কি না এ বিষয়টি নিশ্চিত না থাকায় অনেক মা বেশি সন্তান নেন।

আফ্রিকার সংস্কৃতিতে জন্মবিরতিকরণ বিষয়গুলোকে পছন্দ করা হয় না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, মহিলাদের জন্মবিরতিকরণ সম্বন্ধে তথ্য এবং সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। ইথিওপিয়ার মাত্র আট শতাংশ বিবাহিত মহিলা জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন।
ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশনের ডিরেক্টর জেনারেল স্টিভেন সাইনডিং জানান, দাতাদের অবশ্যই এর দায় কাধে নিতে হবে। জাতিসংঘের মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল হিসেবে ২০১৫ নাগাদ পৃথিবীর দারিদ্র্য নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে লক্ষ্য হিসেবে নেয়া হয়নি। আফ্রিকার গুরুত্বও দেয়া হয়নি। সাইনডিং আরো বলেন, সাব-সাহারান আফ্রিকার জনসংখ্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। দাতারা তাদের লক্ষ্য শুধু এইডসের প্রতি নিবদ্ধ রেখেছেন। জনসংখ্যার বিষয়টি কোনো গুরুত্ব পাচ্ছে না- এটি আফ্রিকার জন্য এক ট্র্যাজেডি।
উগান্ডার ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান এলি মুগুমিয়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা সম্পর্কে একমত। পূর্ব আফ্রিকার অন্যতম বড় কাপড় এবং খাবারের বাণিজ্যকেন্দ্র কামপালার ওউইনো মার্কেট। এলি মুগুমিয়া জানান, কামপালার ওউইনো মার্কেটে দিনে মাত্র ছয় মহিলা এবং দুই পুরুষ জন্মবিরতিকরণ সম্পর্কে তথ্য জানতে আসে। উগান্ডায় বর্তমানে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে খুব সামান্য খরচ হয় বলে জানান তিনি। কিন্তু মানুষ এসব বিষয়ে খোজ রাখে না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:২৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×