somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুররেম সুলতান -উসমানীয় ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে একজন

১৪ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(প্রায় ১৫০২ – ১৫ এপ্রিল ১৫৫৮)

হুররেম সুলতান
রোক্সেলানা হিসেবেও পরিচিত।"রোক্সেলানা" সম্ভবত তার মূল নাম নয় বরং তার ডাকনাম ছিল, যা তার রুসাইন বংশসূত্রকে নির্দেশ করত।১৬শ-শতাব্দীর পরবর্তী এবং ১৭শ- শতাব্দীর শুরুর দিকে তুর্কি বিষয়ে গবেষক পোলিশ কবি সামুয়েল ত্বারদভস্কির দেয়া তথ্য অনুসারে, হুররেম সম্ভবত কোন ইউক্রেনীয় অর্থোডক্স ধর্মযাজক পিতার ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। তিনি পোল্যান্ড রাজ্যের রুথেনীয় ভয়ভডেশিপের প্রধান শহর ল্বও-এর ৬৮ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বের রুহাটাইন নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন (বর্তমান পশ্চিম ইউক্রেন)।১৫২০-এর দশকে ক্রিমিয়ার তাতাররা ওই এলাকার একটি তড়িৎ অভিযানের সময় তাকে বন্দী করে একজন দাসী হিসেবে নিয়ে আসে (সম্ভবত প্রথমে ক্রিমিয়ার নগরী কাফফায়, যা দাস ব্যবসার একটি প্রধান কেন্দ্র, এরপর কনস্টান্টিনোপলে) এবং তাকে প্রথম সুলাইমানের হারেমের জন্য বাছাই করে।
অল্প সময়ের মধ্যেই রোক্সেলেনা তার মনিব সুলায়মানের সুনজরে চলে আসেন এবং সমসাময়িক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঈর্ষার পাত্রীতে পরিণত হন। শীঘ্রই তিনি সুলায়মানের প্রিয়তম সঙ্গিনী বা হাসেকি সুলতান হয়ে ওঠেন। সুলতানের উপর হুররামের প্রভাবের কথা দ্রুত আশেপাশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। তিনিই সুলতানের সর্বাধিক সংখ্যক সন্তানের জন্ম দেন।


উসমানীয় সম্রাট প্রথম সুলাইমানের প্রিয়তম প্রমোদ দাসী ও পরবর্তীকালে তার বৈধ স্ত্রী এবং সম্রাটের সন্তান শাহজাদা মুহাম্মদ, মিরহিমাহ সুলতান, শাহজাদা আবদুল্লাহ, সুলতান দ্বিতীয় সেলিম, শাহজাদা বায়েজিদ এবং শাহজাদা জাহাঙ্গীরের মাতা ।
দুইশত বছরের অটোম্যান ঐতিহ্যকে ভঙ্গ করে, একজন প্রাক্তন উপপত্নী এভাবে অবশেষে সুলতানের বৈধ পত্নী হয়ে ওঠে, যা প্রাসাদ ও নগরীর প্রত্যক্ষদর্শীদের জন্য অত্যন্ত হতবাককারী একটি বিষয় ছিল।
তিনি ছিলেন উসমানীয় ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে একজন এবং নারীদের সালতানাত নামে পরিচিত । তার স্বামী প্রথম সুলায়মানের শাসনকালে তিনি সুলতানের প্রধান স্ত্রী বা "হাসেকি সুলতান" ছিলেন। তিনি তার স্বামীর মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জন করে ।

প্রাসাদে প্রভাব বিস্তার

ইস্তাম্বুলের হেরেমে হুররেম সুলতান সুলায়মানের প্রথম স্ত্রী, মাহিদেভরান সুলতানের একজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। ১৫২১ সালে হুররেম তার প্রথম পুত্র মেহমেদের জন্ম দেন এবং এরপর আরও চার পুত্র, যা সুলতানের একমাত্র পুত্রের মাতা হিসেবে অর্জিত মাহিদেভরানের মর্যাদাকে ধূলিসাৎ করে দেয়। সুলায়মানের মাতা, আয়শে হাফসা সুলতান, এই দুই মহিলার শত্রুতাকে একপাক্ষিকভাবে গোপন রাখতেন কিন্তু ১৫৩৪ সালে তার মৃত্যুর পর, একটি তুমুল লড়াই সঙ্ঘটিত হয়, যেখানে মাহিদেভরান হুররেমকে মারধর করেন। এ ঘটনায় সুলাইমান ক্ষুব্ধ হয়ে পরবর্তীতে মাহিদেভ্রানকে পুত্র মুস্তফা সহ প্রাদেশিক রাজধানী মানিসায় পাঠিয়ে দেন। এই নির্বাসনকে দাপ্তরিকভাবে সবার কাছে দেখানো হল যে, এটি হল সাঞ্জাক বেয়লিজি বা আপাত উত্তরাধিকারীর প্রথাগত প্রশিক্ষণ।



হুররেম এবং মাহিদেভরান মিলে সুলাইমানের ছয় পুত্রসন্তানের জন্ম দেন, যাদের মধ্যে ৪ জন ১৫৫০ সালের মধ্যে জীবিত ছিল: মুস্তফা, সেলিম, বায়েজিদ, ও জাহাঙ্গীর। এদের মাঝে, মুস্তাফা ছিল বয়োজ্যেষ্ঠ উত্তরাধিকারী হিসেবে হুররেমের সন্তানের অগ্রবর্তী ছিলেন। হুররেম জানতেন যে নিয়মানুসারে মুস্তাফাই সুলতান হবে, এবং তার নিজ সন্তানদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হবে। তথাপি মুস্তফাও সকল ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বিচক্ষণ বলে অনেকেই তাকে প্রাধান্য দিত এবং পারগালি ইব্রাহীম পাশাও তাকে সমর্থন করতেন, যিনি ১৫২৩ সালে সুলতানের প্রধান উজির হন। অনেক তথ্যসূত্রে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ইব্রাহিম পাশা হুররেম সুলতানের চক্রান্ত ও প্রাসাদে তার উঠতি প্রভাবের একজন ভুক্তভোগী ছিলেন, বিশেষ করে অতীতে শাহজাদা মুস্তফাকে সমর্থন করার কারণে। হুররেমকে অন্তত আংশিকভাবে হলেও উত্তরসূরি বাছাই করার চক্রান্তের জন্য দায়ী বলে ধরা হয়। তবে সুলায়মানের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তিনি দাপ্তরিক ও সরকারি কোন কাজে ভূমিকা রাখতেন না। এই বিষয়টি তার শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে প্রতিবন্ধক ছিল। প্রথম আহমেদের শাসনামলের আগপর্যন্ত সাম্রাজ্যে সুলতানের মৃত্যু হলে, উত্তরসূরি নির্বচনের কর্মকাণ্ডে বেসামরিক অস্থিরতা ও বিদ্রোহ প্রতিহত করতে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজপুত্রদের গোপনে বা প্রকাশ্যে হত্যা করা হতো। নিজ পুত্রদের প্রাণদণ্ডকে এড়াতে, হুররেম মুস্তাফার অভিশংসনের সমর্থকদের নির্মূল করতে নিজ প্রভাবকে কাজে লাগাতে শুরু করলো।

এভাবে হুররেমের প্ররোচনায় পরিচালিত ক্ষমতার লড়াইয়ে,সুলাইমান ১৫৩৬ সালে ইব্রাহিমকে খুন করেন এবং এবং তার কন্যা মিহিরমার স্বামী ও তার স্নেহভাজন জামাতা রুস্তম পাশাকে (প্রধান উজির ১৫৪৪-১৫৫৩ এবং ১৫৫৫-১৫৬১) তার স্থলাভিষিক্ত করেন। বহু বছর পর, সুলায়মানের দীর্ঘ শাসনামলের শেষের দিকে, তার পুত্রদের শত্রুতা আরও স্পষ্ট ও প্রকট আকার ধারণ করে। অধিকন্তু, রুস্তম পাশা ও হুররেম সুলতান উভয়ই সুলায়মানকে মুস্তফার বিরুদ্ধে উসকিয়ে দেন এবং মুস্তফাকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। ১৫৫৩ সালে সফভীয় ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানকালে, সুলতান সুলায়মান মুস্তাফার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।একটি তথ্যসূত্র অনুসারে, সে বছর তিনি তার বাবাকে সিংহাসনচ্যুত করার পরিকল্পনার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়, তার অভিযুক্ত হওয়ার কারণটি প্রমাণিত ও অপ্রমাণিত হওয়ার মাঝখানে আঁটকে থাকে।মুস্তফার মৃত্যুর পর, মাহিদেভরান প্রাসাদে তার অবস্থান হারান (আসন্ন উত্তরাধিকারীর মা হিসেবে) এবং বুরসায় গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন। শেষের দিকে তার সৎপুত্র দ্বিতীয় সেলিম সুলতান হওয়ার পর (১৫৬৬) তাকে নিয়মিত ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করায় তাকে আর দারিদ্রে ভুগতে হয় নি। ১৫৫৮ সালে হুররেমের মৃত্যুর পরেই কেবলমাত্র তার পুনর্বাসন সম্ভবপর হয়।কথিত আছে যে, জাহাঙ্গীর, হুররেমের কনিষ্ঠ সন্তান, তার সৎ-ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে বেদনাকাতর হয়ে কয়েক মাস পরেই মারা যান।

১৫৫৩ সালে সুলায়মান মুস্তাফাকে প্রাণদণ্ড দেয়ার পর, সৈন্যদের মধ্যে একটি বড়মাপের অসন্তুষ্টি ও অস্থিরতার উত্থান হয় যারা রুস্তম পাশাকে মুস্তফার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন। এ ঘটনায় সুলায়মান রুস্তম পাশাকে বরখাস্ত করেন এবং ১৫৫৩ সালে কারা আহমেদ পাশাকে প্রধান উজির হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু সবে দুই বছর পর, কারা আহমেদ পাশাও হুররেম সুলতানের নোংরা চক্রান্তের স্বীকার হন, কারণ হুররেম তার জামাতা রুস্তম পাশাকেই আবারও প্রধান উজির হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। ১৫৫৫ সালে কারা আহমেদ পাশাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং রুস্তম পাশাকে আরও একবার প্রধান উজির (১৫৫৫-১৫৬১) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

সুলায়মান বাকি জীবনে রাজসভাতেও হুররেমকে তার সাথে থাকতে দেন, যার ফলে আরেকটি প্রথা ভঙ্গ হয়, আর তা হল, যখন সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারীগণ উপযুক্ত বয়সে পৌঁছুবে, তাঁদেরকে তাঁদের রাজ উপপত্নীসহ (উত্তরাদিকারিদেরকে তাঁদের মাতাসহ) নিকটস্থ প্রদেশে শাসনের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হবে, উক্ত উপপত্নীদের সন্তান ক্ষমতায় বসার আগ পর্যন্ত তারা ফিরে আসতে পারবে না।সুলতানের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবেও হুররেম ভূমিকা পালন করেছেন, এবং প্রতীয়মান হয় যে তিনি বৈদেশিক নীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও প্রভাব রেখেছিলেন।রাজা সিগিসমন্ডাস দ্বিতীয় অগাস্টাসকে প্রেরিত তার দুটি চিঠি এখনো টিকে আছে, এবং স্বভাবতই তার জীবদ্দশায় পোলিশ- অটোমান মৈত্রীচুক্তির মাধ্যমে পোল্যান্ড রাজ্যের সঙ্গে অটোম্যান সাম্রাজ্যের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান ছিল। করেছিলেন এবং সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন।

হুররেম সুলতান ১৫ ই এপ্রিল ১৫৫৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন । সুলায়মানের সমাধির পাশেই তার সমাধি অবস্থিত, যা সুলায়মানিয়ে মসজিদের প্রাঙ্গনে অবস্থিত



সূত্র-
১। উইকিপিডিয়া
২। অনলাইন পত্রিকা


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৩৮
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×