বই রিভিউ
বইঃ তিথিক্ষয় ও আকাশগঙ্গা
লেখকঃ মহিবুল আলম
পৃষ্ঠাঃ ৯১
মূল্যঃ ৪০টাকা
প্রকাশকালঃ ১৯৯৬
বাংলা একাডেমী
হঠাৎ একটা আওয়াজে পারুর ঘুমটা ভেঙে গেলো। আওয়াজটা ভারী কোন বস্তুর পতনের। মনে হলো কাদার উপর ধপাস আছড়ে পড়েছে।
পারু শংকিত কান পাতলো, ঠাহর করতে চেষ্টা করলো- কোনদিক থেকে আওয়াজটা এসেছে। কিন্তু সে ঠাহর করতে পারলনা।
পারু একা, সম্পূর্ণ একা। অবশ্য পারুর সাথে আরো কয়েকটা জীব বাস করছে। একটা ছাগীর বাচ্চা, মাটির পাতিলে তিনটে টকি মাছ, আরেকটা বেহাল আকারের ইদুর।
গতদিন ধরে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। মা বেচে থাকতে একবার মাকে জিজ্ঞেস করেছিলো আকাশে এত পানি থাকে কোথায়? মা সঠিক জবাব দিতে পারেনি, শুধু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছিলো, সবই কুদরতের লীলা।
আবারো পুবের বেড়া ঘেসে ফিসফিসানি শব্দ হলো। পারুল সতর্ক কান পাতলো। বৃষ্টির রাতে ফিসফিসানি শব্দ শুনে বুঝা যায়না মানুষের শব্দ নাকি টুপটুপ পাতা ঝড়া পানির শব্দের সাথে নির্মল হাওয়া বয়ে যাওয়ার শব্দ।
পারুর বাবার কথা মনে এলো। বছর চারেক আগে কারখানায় কাজ করার নামে চট্টগ্রাম চলে যায়। গোমতী নদীটার ধারে বাবার প্রতিক্ষায় থাকার পরেও 'পারুল বেগম' ডাক শুনতে পায়নি কখনোই। জানা গেছে ওখানে তিনি নতুন সংসার পেতেছেন।
কুপির আলোটা নিভুনিভু করছে, হয়ত নিভেও যাবে কিছুক্ষণ পর। বাইরে আবারো ফিসফিসানি শব্দ হল, সাথে কাদায় হাটাচলার ছোপ ছোপ শব্দ, পাশে বেড়া ঘেঁষে দাঁড়ানোর শব্দ। পারুলের সন্দেহ এবার ধরা দিল, আর যাই হোক এটা বাতাসেত শব্দ হতে পারেনা। উঠান পেরিয়ে চাচার ঘর। একবার ভেবে নিল চাচাকে ডাকবে কিনা। ডগমগি ধুমসি গাই চাচীর অত্যাচারের কথা মনে করে আর ডাক দেয়ার সাহস করল না। এমনিতেই গত দুই দিন পেটে অন্ন জুটে না।
পারুল প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছে। বিছানা থেকে কুপিটায় তেল ঢালতে উঠতে যাবে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই খপ করে দরজাটা খুলে গেল....
বই সম্পর্কেঃ বইয়ে সর্বমোট ৭টি গল্প রয়েছে।
উত্তর দুয়ারী
ধূসর মরীচিকা
বর্ষাবান
তিথিক্ষয় ও আকাশগঙ্গা
জলভাঙার পুরুষ
অর্বাচীন নোঙর
বেগুনি উপাখ্যান
প্রতিটি গল্পই গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে চিত্রায়িত করা হয়েছে। তিতিক্ষয় ও আকাশগঙ্গা মূলত ট্রাজেডিক গল্প সংকলন। লেখক মুহিবুল আলম সযত্নে সুন্দরতম সাবলীল ও সাহিত্যের মাধুর্যতায় মিশিয়েছেন ট্রাজেডিকে। এটা সত্যিই অসাধারণ যে গল্পগুলোর পটভূমি গ্রামীণ এবং প্রতিটি গল্পেই একেকটি দৃষ্টিচালন দৃশ্য উপস্থাপন করেছেন লেখক। কখনো স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ায় ভূলবসত বিবাহ বিচ্ছেদ এবং ঈদ্দ্যৎ বিয়ে। কখনো মাতব্বরদের গ্রাম্য শালিসি। কখনো ডাক্তার এবং রোগীর মধ্যে অদ্ভুত সম্পর্ক। কখনো বাবা-মা মরা পারুর করুন ইতিহাস। প্রতিটি গল্পে লেখক ফুটিয়ে তুলিয়েছেন ৮০-৯০এর দশকের সত্যিকারের গ্রাম্য দৃশ্য। এমন অসাধারণ উপস্থাপন এবং সৃষ্টির জন্যে লেখক অবশ্যই পাঠকদের মনে জায়গা করে নিবেন।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ ৯১ পৃষ্ঠার বই হলেও শেষ করতে বেশ সময় লেগেছে আমার। উচ্চমানের সাহিত্যিক ভাষা হওয়ার কারনে বুঝে নিতে সময় লেগেছে কিছুটা। বেশ ইনফরমেটিভ, প্রতিটি চিত্র এমনভাবে লিখেছেন যে পাঠক বুঝে যাবে মুলত ক্যারেক্টার এখন কি করছে, কোন অবস্থায় আছে, তার মনের মধ্যে কি চলছে এসব। সবমিলিয়ে বইটি পড়ার সার্থকতা হল অনেক কিছু জানতে পারা, অনেক কিছু শিখতে পারা। এমন এমন কিছু বিষয় লেখক টেনে নিয়ে এসেছেন যা সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি অবশ্যই সবাইকে বইটি পড়ার অনুরোধ করবো।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৮