somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিরল কিছু মানসিক রোগ

১১ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানসিক রোগ নিয়ে বাংলাদেশে অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে৷ সব মানসিক রোগকেই পাগলামি আর রোগী কে পাগল বলার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়৷ হতাশা ও তো একটা মানসিক রোগ যা কম বেশি অনেকের মধ্যেই আছে৷ তার মানে কি তারা সবাই পাগল? মানসিক রোগীদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করাও খারাপ চোখে দেখা উচিত যা করা হয়না৷ এখানে যে সব টপিক গুলো নিয়ে বলা হয়েছে তার সবগুলোই কঠিন মানসিক রোগ নয়৷ কিছু আছে যেগুলো কে অন্য কোনো জটিল মানসিক রোগের প্রাথমিক চিহ্ন বলা যেতে পারে৷ আর কিছু আছে যেগুলো অস্থায়ী মানে অল্পদিন পর নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়৷ আসুন কিছু বিরল এবং আপাত দৃষ্টিতে মজার মানসিক রোগ সম্পর্কে অল্প ধারণা নিয়ে ফেলি৷

বিগোরেক্সিয়া - শরীরের পেশী বাড়াতে অতিরিক্ত চর্চা করা৷ শরীরচর্চা করতে পারলে অস্থির হয়ে পরা৷ নিজেকে বারবার আয়নায় দেখা এর লক্ষণ৷ শরীরচর্চায় যাওয়ার জন্য কাজ, পরিবার, বন্ধুদের সময় না দেয়া আর ক্ষতি আছে জেনেও পেশী বাড়াতে ড্রাগ ব্যবহার করা ৷

বিবলিওমেনিয়া - দরকার ছাড়া বই কেনা বা সংগ্রহ করা৷ একই বই এর কযেকটা টা করে কপি কেনা৷ বই এর অনেক বড় সংগ্রহ তৈরী প্রবল ইচ্ছা অনেক সময় পরিবারের ও পরিবারের প্রয়োজনের প্রতি অনাগ্রহ তৈরী করে৷

রিডুপলিকেটিভ পারামনেসিয়া - এক্ষেত্রে রোগীর মনে হয় সে যে জায়গা টা দেখছে তা অন্য কোথাও একই ভাবে আছে বা অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হয়েছে৷ যেমন তাকে ঢাকায় একটা হসপিটাল এ ভর্তি করা হলো তার সবসময় মনে হবে এমন একটা হসপিটাল অন্য কোথাও একই ভাবে আছে বা হসপিটাল টা আসলে গাজীপুর এ আছে৷ এভাবে ভ্রান্ত ধারণার কারণে ভয় পেতে থাকে আর স্বাস্থ্য আরো খারাপ করে৷ যদি চিন্তা টা তার কর্মস্থল নিয়ে হয় তাহলে কাজ ও ঠিকমত করতে পারেনা৷

প্যারিস সিনড্রম - জাপানি ভ্রমনকারীরা এই রোগ এ আক্রান্ত হয়৷ প্যারিস এর শান্ত পরিবেশ আর ভদ্র মানুষের গল্প পরে বা সিনেমা দেখে ঘুরতে আসা জাপানি ভ্রমনকারীরা যখন আধুনিক ও দ্রুত বর্ধনশীল প্যারিস এর রূপ দেখে আর প্যারিস এর লোকেদের কাছে নগন্যতম খারাপ ব্যবহার পায় তখন মানসিক ভাবে এতটাই ভেঙ্গে পরে যে তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে হয়৷ শুধুমাত্র এই কারণে প্যারিস এ জাপানি এম্বেসীতে ২৪ ঘন্টা হেলথ বুথ আছে কয়েকটা৷

সেলেব্রিফিলিয়া - কোনো সেলেব্রিটির অন্ধ ভক্তের সেই সেলেব্রিটি সাথে ভালবাসার সম্পর্ক বা শারীরিক সম্পর্ক করার ইচ্ছা এত তীব্র হয়ে যায় যে সে ওই সেলেব্রিটি কে নিয়ে ভাবতে ভাবতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে৷

হাইব্রিস্টফিলিয়া - অপরাধীদের প্রতি খুব বেশি আগ্রহী হওয়া৷ অপরাধীদের সাথে প্রেম এমন কি শারীরিক সম্পর্ক তৈরির প্রবল ইচ্ছা৷

ট্রাইকটিলোমেনিয়া - অস্থিরতা বা হতাশার সময়ে নিজের ভ্রু বা মাথার চুল টেনে টেনে তোলার তীব্র ইচ্ছা৷ দেখা যায় যে তুলতে তুলতে মাথার এক জায়গায় চুল ই শেষ হয়ে গেছে৷ মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায়৷

বয়েনথ্রপি - এই রোগ এ একজন নিজেকে গবাদি পশু ভাবতে শুরু করে৷অনেক ক্ষেত্রে ঘাস খেতে ও দেখা যায়৷

এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রম - এই রোগ এ ঘুমানোর পর হঠাত মাথার ভিতরের কোনো বিকট(কারো চিত্কার বা কোনো কিছই ভাঙ্গার )শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়৷ স্বপ্নের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই৷

মুনশাউজেন সিনড্রম - ডাক্তার বা নার্স এর দৃষ্টি কেড়ে বেশি সেবা বা সময় পাওয়ার জন্য রোগীর বেশি বেশি অসুস্থতার ভান করা৷ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অবশ্য এটাকে রোগ না বলে প্রয়োজন বলতে হবে৷ কারণ টাকার ডাক্তার বা নার্সের কাছে একটু সেবা পাওয়া কষ্টকর৷

এলিস ইন দা ওয়ানডারল্যান্ড - রোগী সব সময় তার নিজের শরীরের মাপ বা আশপাশের অনন্য বস্তুর মাপ নিয়ে সন্দেহে থাকে৷ তার কাছে মনে হয় তার শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ গুলো ছোট বা বড় হয়ে গেছে বা তার আশেপাশের সব কিছু ছোট হয়ে যাচ্ছে৷ অনেক সময় পায়ের নিচের মাটিও তাদের কাছে অনেক কাছে মনে হয়৷

আপোটেমনোফিলিয়া - নিজের শরীরের সুস্থ কোনো অঙ্গ কেটে ইচ্ছা৷অনেক সময় এই ইচ্ছা এত তীব্র হয় যে আসলেই রোগী কোনো সার্জন এর কাছে গিয়ে অসুস্থতার ভান করে তার হাত বা পা কেটে ফেলে দিতে বলে৷

এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রম বা ড: স্ট্রাঞ্জ লাভ সিনড্রম - এক্ষেত্রে মনে হয় যে রোগীর হাত গুলোর আলাদা জীবন আছে৷ অনেক সময় দেখা যায় রোগীকে না বলে দিলে তার হাত কোথায় কি করছে সে সম্পর্কে সে একেবারেই কিছু জানেনা৷ উদাহরন-দেখা গেল তার হাত একাই তার বা তার সঙ্গিনীর বোতাম বা জিপার খুলে ফেলছে অথচ তার সেদিকে খেয়াল নেই এমন কি সে বুঝতেও পারেনা ৷

ফরেন একসেন্ট সিনড্রম - এক্ষেত্রে রোগী এমন কোনো দেশ বা জায়গার ভাষায় হঠাত কথা বলতে শুরু যেখানে সে কখনো যায়নি বা ওই ভাষা সম্পর্কে তার কোনো ধারনাই নাই৷যেমন হঠাত আপনার রাজশাহী র কোনো বন্ধু দেখা গেল সিলেট এর একসেন্ট কথা বলা শুরু করে দিল যদিও সে সিলেট এ কখনো থাকেনি৷

কাপগ্রাস সিনড্রম - এক্ষেত্রে রোগীর মনে হয় তার কোনো বন্ধু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য বা তার স্বামী/স্ত্রী একই রকম দেখতে অন্য কাউকে দিয়ে বদলে দেয়া হয়েছে ৷

জেনিটাল রেট্রাকসন সিনড্রম - ছেলে রোগীর মনে হয় তার যৌনাঙ্গটি আসতে আসতে ছোট হয়ে যাচ্ছে এবং এক সময় সেটা তার শরীরের ভিতরে হারিয়ে যাবে আর মেয়ে রোগীর ক্ষেত্রে তারা ধারণা করে যে তাদের বুক আস্তে আস্তে সমান হয়ে যাচ্ছে৷

ফিয়ার অফ নাম্বারস - অনেকেই ১৩ নাম্বার কে ভয় পায়৷ এর মাঝে আডল্ফ হিটলার ও ছিলেন ৷ তবে এশিয়াতে বেশি দেখা যায় ৪ নাম্বার নিয়ে ভীতি৷

স্টেনডাল সিনড্রম - এক্ষেত্রে কোনো খুব সুন্দর দৃশ্য বা খুব সুন্দর একটা পেইনটিং বা কোনো ঐতিহাসিক স্থাপনার সামনে গেলে দেখা যায় হঠাত করে মাথা ফাকা হয়ে যায়, মাথা ঘুরাতে থাকে৷ দম বন্ধ হয়ে আসে এবং অনেক সময় অজ্ঞান হতেও দেখা যায়৷ এক কোথায় সৌন্দর্য সহ্য করতে পারেনা৷

কন্টার্ড ডেলিউসন বা ওয়াকিং ডেড সিনড্রম - রোগী এমনিতে স্বাভাবিক আচরণ করলেও একটু বেশি দুশ্চিন্তা বা হতাশ আসলেই তার মনে হতে থাকে সে মৃত এবং তার শরীরের ভিতরের সব পচে গেছে৷ সে একবার মারা গেছে তাই আর মরবে না এই চিন্তা থেকে অনেক সময় বিপদজনক কাজ করার চেষ্টা করে এবং অনিচ্ছাকৃত আত্মহত্যা করা হয়ে যায়৷

লিমা সিনড্রম - এক্ষেত্রে কোনো অপহরণকারি বা জিম্মিকারি যাকে অপহরণ বা জিম্মি করেছে তার প্রতি এমনিতেই মনের অজান্তে অনেক বেশি যত্ন, সেবা বা ভালবাসা দেখাতে শুরু করে৷

স্টকহোম সিনড্রম - এটা লিমা সিনড্রম এর উল্টোটা৷ যাকে অপহরণ করা হয়েছে সে অপহরণকারীর প্রতি যত্ন আর ভালবাসা দেখাতে শুরু করে৷ অনেক ক্ষেত্রেই অপহরণকারীকে এতটা বিশ্বাস করে যে তাকে সব রকমের সাহায্যও করে এমন কি তার সাথে এই কাজের একটা অংশ হয়ে যায়৷

জেরুজালেম সিনড্রম - জেরুজালেম মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি তিন সম্প্রদায়ের পবিত্র স্থান৷ জেরুজালেম এ এসে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থান দেখার পর অনেকে বিভিন্ন রকম দৃশ্য দেখতে পায়-এক কোথায় হেলুসিনেশন হয়৷ কেউ কেউ বলে তারা জিব্রাইল(আ) -কে দেখতে পেয়েছে কেউ বলে যিশু কে দেখতে পেয়েছে৷ দু-এক সপ্তাহ পর এটা এমনি ই ঠিক হয়ে যায়৷

ফ্রেগলি ডিলিউসন - এটা কাপগ্রাস সিনড্রম এর উল্টো৷ এখানে রোগীর মনে হয় তার আসেপাশে যত লোক আছে তা একজন ই যে কিনা বিভিন্ন রূপ নিয়ে তার সামনে আসে৷

আমার লিখা প্রথম ব্লগ৷ অনেক কিছুই ভুল থাকতে পারে তাই ভুল গুলো ধরিয়ে দিলে বা কিভাবে আরো ভালো করে লিখা যাবে তা বললে ভালো হয়৷ সবাই মানসিক অস্থিরতা থেকে দুরে থাকবেন এটাই কামনা৷
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫১
১৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×