পাশ্চাত্যে লাগামহীন যৌন স্বাধীনতা ও পরিবার-ব্যবস্থায় ধ্বসের মত নৈতিক অবক্ষয়ের পেছনে বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও ডারউইনের চিন্তাধারার প্রভাব রয়েছে। এইসব দৃষ্টিভঙ্গিতে মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। আর এরই পরিণতিতে পাশ্চাত্যে যৌনাচার হয়ে পড়েছে অবাধ এবং পরিবারগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
পাশ্চাত্যে নৈতিক অধঃপতন দিনকে দিন শোচনীয় হচ্ছে। সেখানে কে কত বেশি নৈতিক ও পারিবারিক মূল্যবোধগুলোকে পদদলিত করবেন তারই প্রতিযোগিতা চলছে। চারিত্রিক অধঃপতন ও বিচ্যুতির এই ধারাকে তারা যৌন বিপ্লব বলে অভিহিত করছেন। ফলে পরিবার ব্যবস্থা উপনীত হয়েছে পতনের দ্বার-প্রান্তে।
ইতালিয় দৈনিক ‘লাস্তাম্পা’ এক প্রতিবেদনে লিখেছে, “অত্যন্ত অমানবিক ও অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্য যে আমোদ-ফুর্তির জন্য ইতালীয়রা একে-অপরের কাছে স্ত্রী ধার দিচ্ছে।”
রোমের ‘তুস্কানা’ নামক একটি সুন্দর এলাকায় গ্রীষ্মকালীন অবকাশ কাটানোর জন্য যেসব আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয় তাতে সম্মতি দেয়ার আগে নারী ও পুরুষদের খুব ভালভাবে ভাবনা-চিন্তা করতে বলেছে এই দৈনিক। কারণ, সেখানে বসবাস করতে হলে স্বামী বা স্ত্রীকে অন্যের স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে বদল করতে হতে পারে পারস্পরিক ধার হিসেবে।
দৈনিক ‘লাস্তাম্পা’ আরো লিখেছে, “প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে প্রায় ৫০ হাজার নারী-পুরুষ ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলের ২০০টি নাইট ক্লাবে তাদের স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের সঙ্গে বদল করেন। এ ছাড়াও গাড়ীর পার্কিং, সমুদ্র সৈকতের বিশেষ স্থানে এমনকি কবরস্থানের মত নানা জায়গায় স্বামী-স্ত্রী বদলের হাজারো ঘটনা ঘটছে। এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে ‘ ফিডার’ নামের একটি সংস্থা। সংস্থাটি ইতালিতে স্বামী-স্ত্রী বদলকারীদের সংখ্যা ৫০ হাজার বলে উল্লেখ করলেও বাস্তবে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি। অনুমান করা হচ্ছে এ ধরনের ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় বিশ লাখ। ফিডার আরো জানিয়েছে, ইতালিতে স্ত্রী বদলকারী পুরুষদের গড় বয়স প্রায় ৪৩ এবং মহিলাদের বয়স ৩৫। আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হল, ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লোসকুনিও কিছু দিন আগে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী রাসমুসেনের সঙ্গে স্ত্রী বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।” লাম্পট্যের জন্য কুখ্যাত বার্লোসকুনি তার স্ত্রী ভেরেনিকার বিনিময়ে রাসমুসেনের স্ত্রীকে গ্রহণ করতে চাইলেও রাসমুসেন ও তার স্ত্রী তাতে রাজি হয়েছিলেন কিনা তা উল্লেখ করেনি দৈনিকটি।
ইউরোপের কয়েকটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ব্রিটেন, হল্যান্ড ও বেলজিয়ামের ‘নতুন পরিবার’ নামে একটি গ্রুপ শনিবারে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ওই রাতের জন্য নিজ স্ত্রীরদেরকে পরস্পরের সঙ্গে বদল করেন। এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে পরিবারগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, অথচ ইউরোপের বিচার বিভাগ এইসব নোংরা কাজের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখাচ্ছে না। এ সব অনাচারের বিরুদ্ধে ইতালির খ্রিস্টান পাদ্রিরা গির্জাগুলোতে বক্তব্য রাখবেন বলে কেউ কেউ আশা করলেও মনে হয় যেন তারাও অসচেতনতার গভীরে নিমজ্জিত রয়েছেন। উতসব অনুষ্ঠানে স্বামী-স্ত্রী বদলের এ সব ঘটনা ‘পাইকারি সম্পর্ক’ নামে পরিচিত এবং এ ধরনের নোংরা রীতি ইউরোপ ও আমেরিকায় ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে।
পাশ্চাত্যে অবাধ যৌনাচার ও ব্যাভিচারের মত নৈতিক অধঃপতন যে চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, দৈনিক লাস্তাম্পার প্রতিবেদনই তার প্রমাণ। পাশ্চাত্যে এখন সব কিছুই যৌন-অশ্লীলতার সঙ্গে একাকার হয়ে আছে। মনে হয় যেন পশ্চিমা সভ্যতার সদস্যরা ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার চেতনা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন। আরো পরিহাসের ব্যাপার হল পাশ্চাত্যের এইসব অনাচারের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে তাকে স্বাধীনতার বিরোধী, স্বৈরাচারী ও প্রতিক্রিয়াশীল বলে অপবাদ দেয়া হয়।
পাশ্চাত্যে নৈতিক অনাচার এতটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে যে এমনকি গির্জাগুলোও এ সব অনাচারের মোকাবেলায় নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করছে না। এসব ব্যাপারে মুখ খুলতে গেলে গির্জাকে মানুষের স্বাধীনতা-বিরোধী বলা হতে পারে বলে তারা নীরবতা অবলম্বন করছেন।
বিশিষ্ট ফরাসি চিন্তাবিদ মন্তেস্কু শার্ল মনে করেন সমাজগুলো দুইভাবে ধ্বংস ও দুর্নীতির শিকার হয়:
প্রথম পথটি হল- মানুষ যখন আইন মানে না। তবে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু দ্বিতীয় পথটি হল- খোদ আইনই জনগণকে দুর্নীতি ও বিচ্যুতির দিকে ঠেলে দেয়। এই দ্বিতীয় সংকটের নিরাময় অসম্ভব। কারণ, যখন ওষুধের মধ্যেই থাকে সমস্যা বা রোগের বীজ তখন তা রোগ ও ব্যথা আরো ছড়িয়ে দেবে- এটাই স্বাভাবিক।
পাশ্চাত্যের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংকট উপরোক্ত দুই শ্রেণীর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণীর।
আসলে পশ্চিমারা যখনই আইন থেকে ধর্ম, মানবীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে দূরে রেখেছে তখনই তাদের অধঃপতন শুরু হয়েছে। সেখানকার অবস্থা এখন এমন যে, অনৈতিক ঘটনাগুলোকে আর পরিসংখ্যানের সীমায় প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, অনৈতিকতা সেখানে সংখ্যার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। পাশ্চাত্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশু জন্ম নেয় পরিবারের বাইরে অবৈধভাবে। সেখানে কোনো পরিবার টিকে থাকার ঘটনাই বরং ব্যতিক্রমী ঘটনা।
পাশ্চাত্যের বিয়েগুলোর শতকরা ৮০ ভাগই তালাকে গড়াচ্ছে। সেখানে বিবাহ-পূর্ব যৌন-সম্পর্ক এবং বিয়ের পরও বহুমুখী ব্যাভিচার এখন যেন সামাজিকভাবেই স্বীকৃত বিষয়। সমকামিতার মত জঘন্য বিষয়ও আজ আইনসিদ্ধ অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে পাশ্চাত্যে। সমকামীরা পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে প্রকাশ্যে জনসমাবেশ করে এই বিকৃত যৌন-জীবনকে স্বাভাবিক মানুষের জীবন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দাবি জানাচ্ছে। এরিমধ্যে পাশ্চাত্যের বহু সরকার সমকামীদের কথিত বিয়েকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ধর্ম ও নৈতিকতা থেকে দূরে থাকা এবং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে কোনো উপায়ে ভোগ-লিপ্সা চরিতার্থ করার চরম বস্তুবাদী মনোভাবের কারণেই পাশ্চাত্যের আজ এই চরম দুর্দশা। তারা ভুলে গেছে মানুষ সৃষ্টির এবং নবী-রাসূল পাঠানোর খোদায়ী উদ্দেশ্য। উন্নত নৈতিক জীবন নিয়ে চিন্তাভাবনারই কোনো সময় নেই তাদের।
পাশ্চাত্যে বস্তুবাদী চিন্তার পেছনে ডারউইনের বিভ্রান্ত তত্ত্বের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এই তত্ত্বে অনুযায়ী মানুষ বস্তুগত ও প্রাণীগত বিবর্তন প্রক্রিয়ার ফসল। প্রাকৃতিক নিয়মের অংশ হিসেবেই তারা আবির্ভূত হয়েছে আগের প্রাণীর চেয়ে উন্নত সংস্করণ হিসেবে ও এগিয়ে যাচ্ছে আরো উন্নত প্রাণী হওয়ার পূর্ণতার দিকে। পশ্চিমাদের অনেকেই খুব দ্রুত এই তত্ত্বকে মহাসত্য হিসেবে মেনে নিয়েছে এবং এরই আলোকে পদদলিত করেছে সব ধরনের মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ। হযরত আদম ও হাওয়া (আ.) সৃষ্টির ঘটনা এবং মানুষের মর্যাদা সংক্রান্ত আসমানি কিতাবের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয় না ডারউইনের বিবর্তনবাদী তত্ত্বে বিশ্বাসী পশ্চিমারা। আল্লাহ কর্তৃক মানুষ ও সৃষ্টি জগত অস্তিত্ব লাভ করা এবং পরকাল ও নবুওয়্যাতের মত বিষয়গুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে পশ্চিমা জড়বাদীরা।
ডারউইনের বস্তুবাদী মতবাদের আলোকে পশ্চিমারা গড়ে তুলেছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা মতবাদ। তাই তার তত্ত্বটি নিছক কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের গণ্ডিতে সীমিত নয়। এ তত্ত্বের ভিত্তিতেই অবাধ যৌন-স্বাধীনতায় গা ভাসিয়ে দিয়েছে পশ্চিমারা এবং ধ্বংস করছে পরিবার ব্যবস্থা। জড়বাদী ও ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই পাশ্চাত্য ছবি, ছায়াছবি ও গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছে ব্যাভিচার বা অশ্লীলতার বিস্তারে। বিয়ে ও পরিবার তাদের কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ছে। অথচ পরিবার মানবীয় ভালবাসা ও উচ্চতর গুণাবলীর বিকাশ তথা মানুষ গড়ার ও সুশিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং পবিত্র উপায়ে মানুষের যৌন চাহিদা পূরণের মাধ্যম। মহান আল্লাহর প্রতিনিধি ও সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ উচ্চতর আধ্যাত্মিক লক্ষ্য অর্জনের যোগ্যতা রাখে। তাকে কেবল খাওয়া-পরা ও ভোগের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। মানুষ যদি শুধু পশুর মত জৈবিক চাহিদা পূরণকেই জীবন মনে করে তাহলে সে হয়ে পড়বে আধ্যাত্মিক দিক থেকে মৃত এক জীব যে জন্য মৃত্যুর পর তাকে জবাবদিহি করতে হবে।
মোটকথা পাশ্চাত্যের বস্তুতান্ত্রিক জীবন-ধারা মানুষের নিরাপত্তার প্রধান কেন্দ্র পরিবারগুলোকে ধ্বংস করছে। সেখানকার সন্তান ও শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে বাবা-মায়ের স্নেহ হতে। একইভাবে বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা জীবনের শেষ সময়ে বঞ্চিত হচ্ছে আপনজনদের সান্নিধ্য ও স্নেহ-ভালবাসা থেকে। সিনেমা ও নাটকের মাধ্যমে অপবিত্রতম যৌন-সম্পর্ক, ব্যাভিচার ও হৃদয়হীনতাকে বৈধ ও প্রত্যাশিত বলে তুলে ধরা হচ্ছে পাশ্চাত্যে। ফলে মানুষের ও বিশেষ করে নারীর মনুষ্যত্ববোধকে বিলুপ্ত করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে মানুষের স্মৃতিপট থেকে।
পাশ্চাত্যে লাগামহীন যৌন স্বাধীনতা ও নৈতিক অবক্ষয়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২০টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়
আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন
নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন
দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।