somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

একটি তুলনামূলক আলোচনা : খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার ভারত সফর

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেখ হাসিনা সম্প্রতি ভারত সফর করে এলেন। খালেদা জিয়া গিয়েছিলেন ২০০৬ সালে।
বেগম খালেদা জিয়া কী এনেছিলেন সে সময়ে ? এর একটা ক্ষুদ্র তুলনামূলক আলোচনা এখানে তুলে ধরা হলো ।

এবার শেখ হাসিনার সফরে সন্ত্রাস দমনে তিন চুক্তি এবং বিদ্যুৎ আমদানি ও সাংস্কৃতিক বিনিময় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যু। ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বাস মিলেছে অর্থনৈতিক ও সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার।

প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে স্বাক্ষরিত চুক্তি তিনটি হচ্ছে ১. অপরাধ দমনে পারস্পরিক আইনগত সহযোগিতা চুক্তি ২. সাজাপ্রাপ্ত আসামি হস্তান্তর চুক্তি এবং ৩. আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমন ও মাদক পাচার প্রতিরোধ চুক্তি। এছাড়া বিদ্যুৎ আমদানি ও সাংস্কৃতিক বিনিময় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ভবিষ্যতে ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। এছাড়াও ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে নদী খনন, রেল ও সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়। কোনো একক দেশকে ভারতের এই বিপুল আর্থিক সাহায্য দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। ভারতের বাজারে বাংলাদেশের আরো ৪৭টি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার করার অনুমতি দিয়েছে এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে ট্রানজিট দেবে ভারত। এ সফরে টিপাইমুখ প্রকল্প ও তিস্তা নদীসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যু সমাধানে ফলপ্রসূ আলোচনা ও আশ্বাসও মিলেছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টনে চুক্তি করার ব্যাপারে বাংলাদেশের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও এবারের সফরে তিস্তার পানি বণ্টনে কোনো চুক্তি সই হয়নি। তবে খুব শিগগিরই ‘যৌথ নদী কমিশন’ (জেআরসি) ও মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ড কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়াকে সন্ত্রাস ও দারিদ্র্যমুক্ত শান্তির আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকারও করেন তিনি। বৈঠকে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং আবারো আশ্বস্ত করেন, বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু করবে না ভারত। ড. মনমোহন সিং আরো আশ্বাস দেন, বাংলাদেশ থেকে অধিক সংখ্যক পণ্য ভারতে প্রবেশাধিকার দেয়া হবে। সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ইস্যু জাতিসংঘে নিয়ে যাওয়ায় বৈঠকে অস্বস্তি প্রকাশ করে ইস্যুটি সালিস আদালত থেকে প্রত্যাহার করে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির প্রস্তাব করে ভারতীয় পক্ষ। বাংলাদেশ এ বিষয়ে কিছুই বলেনি। শীর্ষ বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে, সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপকে সক্রিয় করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর শেষে গত ১২ জানুয়ারি প্রদত্ত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘোষণায় উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে সহযোগিতার অঙ্গীকার করা হয়। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ ও ভারত তাদের একে অন্যের সমুদ্র, রেল ও সড়কপথ ব্যবহার করতে দিতে রাজি হয়েছে। নেপাল ও ভুটানে ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশকে তার ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। অন্যদিকে বাংলাদেশ চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতকে ব্যবহার করতে দেবে। যদিও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও মংলা বন্দর বাংলাদেশ শুধু ভারতকে নয়, নেপাল ও ভুটানকেও দেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে ভারত রাজি আছে কিনা সে সম্পর্কে যৌথ ঘোষণায় কিছুই বলা হয়নি। ৫০ দফার যৌথ ঘোষণায় সন্ত্রাসবাদ দমন, ট্রানজিট, সীমান্ত বিরোধ ও ব্যবস্থাপনা, তিস্তা নদীসহ অভিন্ন ৫৪ নদীর পানিবণ্টন, বাণিজ্য বৈষম্য বিলোপ ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা হয়। এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের আশুগঞ্জ ও ভারতের শীলঘাট বন্দরকে পরস্পর ব্যবহার করতে ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণা করা হয়েছে। আশুগঞ্জ থেকে ‘ওভার ডাইমেনশনাল কার্গো’ (ওডিসি) ওয়ান টাইম কিংবা দীর্ঘ মেয়াদে পরিবহনে ব্যবহারের অবকাঠামো উন্নয়নে একটি যৌথ প্রতিনিধিদল সফর করে পর্যালোচনা করবে। এই উন্নয়নের জন্য ভারত প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করবে।
অন্যদিকে ২০০৬ সালের ২০-২২ মার্চ বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শেষ সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, বর্তমান বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া ভারত সফর করেন। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত সে সফরকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল দুদেশেই। তখন দুদেশের মধ্যে দুটি গতানুগতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এগুলো হচ্ছে মাদক পাচার বা চোরাচালান রোধে সহযোগিতা চুক্তি এবং বাণিজ্য উন্নয়ন চুক্তি। বাংলাদেশের জনগণ আশা করেছিল, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা চুক্তিসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, বাণিজ্য ঘাটতি ও তিনবিঘা করিডোরসহ অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সুরাহা না হলেও আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। অথচ সে সময় এ ইস্যুগুলো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উত্থাপনই করা হয়নি। খোদ সরকারের কাছে বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকায় ওই সফরের যৌথ বিবৃতিতেও দুদেশের মধ্যকার এক নম্বর সমস্যা অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন নিয়ে একটি শব্দও স্থান পায়নি। এমনকি ওই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী পানিমন্ত্রী বা কোনো পানি বিশেষজ্ঞও ছিলেন না। আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, খালেদা জিয়ার ভারত সফরের সময় সীমান্ত সমস্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছিল কিনা যৌথ বিবৃতিতে তারও উল্লেখ ছিল না। অথচ প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সীমান্ত সমস্যা। ওই সফরের আগে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব হেমায়েত উদ্দিন কিন্তু বেশ ঘটা করেই সংবাদ সম্মেলনে এসব ব্যাপারে আলোচনা হবে বলেই জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতেও হেমায়েত উদ্দিন ওই সফরকে ফলপ্রসূ বা সম্পর্কের টার্নিং পয়েন্ট বলে গেছেন। তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে ওই সফর একধাপ এগিয়ে গিয়েছে একথা বলতে পারেননি। উপরন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কোনো সংবাদ সম্মেলনে সফরের প্রাপ্তির কথা জানাননি। স্বভাবতই ওই সফরের সময় শীর্ষ বৈঠকের পরদিন সংবাদপত্রগুলোর শিরোনাম ছিল ‘নিরাপত্তা বাণিজ্যসহ সব বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার’, ‘শুভেচ্ছাতেই সীমাবদ্ধ সফর’, ‘বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি সই: খালেদা-মনমোহন বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে মতৈক্য’, ‘বাংলাদেশের প্রাপ্তি শূন্য’ ইত্যাদি।
আজ যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে টানাপড়েনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্কে রূপান্তরিত করে দেশ ফি
রেছেন, সে সময়ে বিরোধী দলসহ বিভিন্ন মহল এ সফরকে ব্যর্থ দেখাতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে নস্যাৎ করার কুৎসিত ষড়যন্ত্রের চর্চা এদেশে অব্যাহত রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। এ ষড়যন্ত্র কখনো কখনো হয়ে ওঠে রাজনীতির হাতিয়ার। আজকের বিশ্বায়নের যুগে যখন সারা দুনিয়া অর্থনৈতিক কূটনীতিকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিচ্ছে, সে সময়ে এ ভারত বিদ্বেষী মনোভাবের নামে সরকারকে সহযোগিতার বদলে অসহযোগিতা করার মানসিকতা জনগণের কাছে কতোটা গ্রহণযোগ্য হবে সে প্রশ্নই সকলের।






সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:২৯
২৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×