মসজিদুন্ নববীতে পবিত্র জুম'আর খোৎবায় মুহ্তারাম ইমাম আব্দুল মুহসিন আল-কাসেম ০৪/০১/১৪২৪ হিজরীতে এই খোৎবাটি প্রদান করেন। এর অনুবাদ করেছেন মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র (বর্তমানে>) ড. সাইফুল্লাহ্ বিন আহমাদ কারীম। আল্লাহ্ ওনাদের সর্বত্তোম প্রতিদান দিন।
মসজিদে নববীর ইমাম ও খাত্বীব ফাদিলাতুশ শাইখ আবদুল মুহসিন মুহাম্মাদ আল ক্বাসেম তাঁর জুম'আর খুৎবায় বলেন-
হে মুসলমানগণ! বান্দাহদের উপর আল্লাহর অফুরন্ত নে'আমতের একটি হচ্ছে মাস ও বছরের আবর্তন। আল্লাহ তা'আলা বলেন, ((তিনি তোমাদের জন্য সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়মিত ভাবে নিয়োজিত করে দিয়েছে, আর রাত্রি ও দিবাকে তোমাদের উপযোগী করে দিয়েছে। আর যা তোমারা চেয়েছ তার প্রত্যেকটি বস্তু তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন, যদি আল্লাহর নে'আমত গণণা কর তবে গুণে শেষ করতে পারবেনা। নিশ্চয়ই মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী ও অকৃতজ্ঞ ।)) [সূরা ইবরাহীমঃ ৩৩-৩৪]
রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ((দু'টি নে'আমতের ব্যাপারে অনেক মানুষ ধোঁকায় নিপতিত, তা হচ্ছে সুস্থতা ও অবসর।))
এ কারণেই আল্লাহ তা'আলা তাঁর কিতাবের অনেক জায়গায় সময়ের বিভিন্ন অংশের কসম বা শপথ করেছেন, যেমন রাত্রি, দিবস, ফজর, আসর ও পূর্বাহ্ন। আজ আমরা আমাদের জীবন থেকে একটি পরিপূর্ণ বছর বিদায় দিচ্ছি যাতে আমরা আমাদের আমলসমূহ সংরক্ষণ করেছি, যা হাশরের দিন আমাদের আমলে তুলে ধরা হবে। কতই না দ্রুত দিনগুলো কেটে গেছে, কত বন্ধু এতে আমরা হারিয়েছি, কত বিপদের এতে আমরা মুখোমুখী হয়েছি, কত পাপই না আমরা এতে করেছি। দিবা রাত্রি আমাদের এসব আমলের সংরক্ষণস্থল। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ((সকল মানুষই সকালে উপনীত হয় নিজেকে বিক্রেতা হয়ে, হয়ত সে স্বীয় আত্মাকে আযাদ কারী হয়, অথবা সে স্বীয় আত্মাকে ধ্বংসকারী হয়।)) সময়ের অনেক দুঃখ কষ্ট রয়েছে যা আনন্দ হিল্লোলে পরিবর্তন হয়ে যায়। পক্ষান্তরে অনেক আনন্দ রয়েছে যা হতাশায় পরিবর্তন হয়ে যায়। বুদ্ধিমান সে ব্যক্তি যে এ ক্ষেত্রে শিক্ষা গ্রহণ করে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, ((তিনি দিবা ও রাত্রিকে পরিবর্তন করেন, নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানবানদের জন্য শিক্ষা নিহিত।)) [সূরা আন্-নূরঃ ৪৮]
একটি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে গেছে, এতে যে আমল আল্লাহর বান্দাহরা করেছে তাই তাদের সামনে অচিরেই তুলে ধরা হবে। ((সে দিন মানুষকে সে আগে পিছে যা করেছে তা সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হবে।)) [সূরা আল-কিয়ামাহঃ ১৩] সুতরাং এ দিন গুলোর আমল নামায় তুমি তোমার আখেরাতের জন্য কি সঞ্চয় করেছ? নিজেকে নির্জনে নিয়ে তা হিসাব কষে নাও।
মাইমুন ইবনে মাহরান রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন, ((বান্দাহ মুত্তাকী হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে স্বীয় আত্মার সাথে নিজের পার্টনার এর চেয়ে ও বেশী হিসাব না কষে।)) পথ প্রাপ্ত জ্ঞানবান সে ব্যক্তি যে নিজের আত্মার সাথে বুঝাপড়া করে নিজের আত্মার হিসাব গ্রহণ করে, দিনের কাজসমূহ রাতে এবং রাতের কাজসমূহ দিনে খতিয়ে দেখে এর মধ্যে যা প্রশংসনীয় উত্তম তা বাস্তবায়ন করে যা ঘৃণীত ও তিরস্কৃত পরিত্যাগ করে ভবিষ্যতে তা না করার কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়।
আবু হাতেম ইবনে হিব্বান রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন, "বিবেকবানদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট সে, যে সর্বদা স্বীয় আত্মাকে সমালোচনা করে।" মূলতঃ আত্মসমালোচনার অনুপস্থিতি ব্যক্তিকে প্রবৃত্তির তাড়নায় ডুবে থাকার দিকে হাতছানি দেয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন, ((নিশ্চয়ই তারা হিসাবের আশা করতনা।)) [সূরা আন্-নাবাঃ ২৭]
স্বীয় দোষত্রুটি ও অবাঞ্চিত কর্ম সম্পর্কে জানা মূলতঃ বিভ্রান্তি হতে বাধা প্রদান করে থাকে। তাই বান্দাহ তার নিজের সম্পর্কে জানা, তারা কবরের পরিণতি সম্পর্কে উপলব্ধি করা তার মাঝে আল্লাহর গোলামী ও তার নিকট অবনমিত হওয়ায় বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে। এতে সে স্বীয় আমলের মাধ্যমে আত্মতৃপ্তিলাভ করে না; তা যতই না বড় হোক, পাপকে তুচ্ছ মনে করে না; তা যতই না ছোট হোক।
আবুদ্ দারদা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ((মানুষ আল্লাহর ব্যাপারে মানুষদেরকে অসন্তুষ্ট না করা পর্যন্ত সম্পূর্ণ দ্বীনের জ্ঞান লাভ করতে পারবে না, অতঃপর যখন সে স্বীয় আত্মার দিকে মনোনিবেশ করবে এতে সে তার প্রতি আরও কঠোর ভাবে অসন্তুষ্ট হবে।)) সুতরাং যখন মানুষের সাথে বসবে তখন নিজেকে উপদেশ দাও যে, মানুষ তোমার বাহ্যিকে দিক লক্ষ্য করছে আর আল্লাহ তা'আলা তোমার আভ্যন্তরীন সব লক্ষ্য করছেন। যে তার গোপনীয় বিষয়কে আল্লাহর দৃষ্টি ও ইখলাসের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করে নেয়, আল্লাহ তার প্রকাশ্য বিষয়কে সফলতার মাধ্যমে সুশোভিত করে দেন।
(অসমাপ্ত)
২. নব বর্ষের শুরুতে স্বীয় আত্মার সাথে কিছু বুঝা পড়া: আব্দুল মুহসিন আল-কাসেম
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:২৮