somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাউথ আফ্রিকা ভ্রমণ। গন্তব্য- ক্যাপটাউন

০২ রা আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়াই হুট করেই মনে হল সাউথ আফ্রিকা ঘুরতে যাব। সবার পছন্দের তালিকায় আগে থাকে ইউরুপ, আমেরিকা, সিংগাপুর। কিন্তু কি কারনে জানিনা আমার পছন্দ আফ্রিকার কিছু দেশ। সাউথ আফ্রিকা বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দেশের মধ্যে ১০টির একটি, সাউথ আফ্রিকার একটি শহর ক্যাপটাউন, এই ক্যাপটাউন বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর শহরের ১৫টি শহরের মধ্যে একটি। তাই ভাবলাম ক্যাপটাউন যাওয়া যাক। কি দেখবো, কোথায় ঘুরবো কিছুই ঠিক করিনি, এত ঠিক করারই বা কি আছে, হোটেলে বসে ইন্টারনেটে খুঁজেই সব বের করা যায়।রওনা দেওয়ার আগে ইন্টারনেটে খুঁজ নিয়ে জানলাম এখন ক্যাপটাউনে শীতের সময় চলছে, কিন্তু এত বেশি শীত থাকবে ভাবতেও পারিনি। প্লেন যখন জোহানেসবার্গ ল্যান্ড করেছে এয়ারপোর্টের যেদিকেই তাকাই দেখি সবাই আপাদমস্তক শীতের কাপড়ে মুড়ানো।আমার গায়ে ছিল হাল্কা শীতের কাপড়। জোহানেসবার্গ এয়ারপোর্ট নেমে যখন দেখি শীতে জমে যাওয়ার মত অবস্থা তখন তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে মোটা জ্যাকেট আর মোজা পড়ে নিলাম।


একপাশে সাগর আরেকপাশে শপিংমল


হোটেলে উঠে জানালার পর্দা সরাতেই এমন দৃশ্য দেখে জার্নির সব ধকল দূর হয়ে গেল

জোহানেসবার্গ থেকে এবার যেতে হবে ক্যাপটাউন, প্লেনে দুই ঘন্টার জার্নি। ক্যাপটাউনের পথে যখন রওনা দিলাম তখন ঝকঝকে আকাশ। আমার স্বভাব হল যখনই প্লেন জার্নি করি, যদি দিনের বেলা হয়, আমি বাইরে তাকিয়ে দেখি। প্লেন ছাড়ার আধা ঘন্টামত কিছু সবুজ ভূমি দেখতে পেয়েছিলাম। এরপর শুধু উঁচুনিচু টিলা আর মরুভূমির মত মনে হচ্ছিল। কেমন জানি অদ্ভুত লাগছিল। সাহারা মরুভূমি প্লেনের উপর থেকে দেখতে যেমন এগুলি তেমন না। আমি শুধু ভাবছিলাম কখন সবুজের দেখা পাব কিন্তু যতই প্লেন ল্যান্ড করার সময় চলে আসছিল নিচে মরুভূমির মত আর উঁচুনিচু পাহাড়গুলি আরো বেশি করে দেখা যাচ্ছিল, কোন সবুজের দেখা নাই। প্লেন ল্যান্ড করার সময় বুঝতে পারলাম এগুলি সব পাথরের পাহাড়, যার জন্য কোন সবুজ নেই, ছোট ছোট কিছু গাছপালা থাকলেও প্লেন থেকে দেখা যাচ্ছিল না।






এটা ক্যাপটাউন স্টেডিয়াম

ক্যাপটাউন এয়ারপোর্টে নেমে লাগেজ নিয়ে সামনে আসতেই দেখলাম ট্যাক্সির কাউন্টার। হোটেল থেকে আমাদের জন্য গাড়ি আসার কথা, আমরা কিছুক্ষণ খুঁজলাম আমাদের নাম লিখে কেউ দাঁড়িয়ে আছে কিনা কিন্তু কাউকেই দেখিনি। আমরা অবশ্য জোহানেসবার্গ থেকে ক্যাপটাউন আসার দুইটা প্লেন মিস করেছি, কিন্তু হোটেলে জানাতে পারিনি তাই হয়ত ড্রাইভার অপেক্ষা করে চলে গিয়েছে। আমরা ভাবলাম এয়ারপোর্টের ভেতর থেকে ট্যাক্সি না নিয়ে বাইরে থেকে নিব। বাইরে এসে দেখি শতশত গাড়ি পার্ক করা কিন্তু কোন ড্রাইভার নেই। একজনকে বললাম আমাদের ট্যাক্সি লাগবে। সে আমাদের পাশেই একটা অফিসমত দেখিয়ে সেখানে যেতে বললো। গিয়ে দেখি এক মহিলা বসা, তাকে বললাম আমাদের ট্যাক্সি লাগবে। সেই মহিলা বাইরে এসে যেখানে শতশত গাড়ি পার্ক করা তা দেখিয়ে বললো তোমাদের কোন গাড়ি পছন্দ, আমরা একটা পছন্দ করে দেওয়ার পর সে অফিসে গিয়ে চাবি এনে আমাদের হাতে দিয়ে বলল অনেকেই নিজেরা ড্রাইভ করতে পছন্দ করে, তারা এখান থেকে গাড়ি নিয়ে যায়, বেড়ানো হয়ে গেলে যাওয়ার সময় আবার গাড়ি ফেরত দিয়ে যায়। আমরা বললাম যে আমরা তো রাস্তা চিনিনা তাই গাড়ি নিয়ে কি করবো, আমাদের ড্রাইভার সহ গাড়ি লাগবে। তখন সে মহিলা বললো তোমরা এখানে কোন ট্যাক্সি পাবেনা, এয়ারপোর্টের ভেতর থেকে ড্রাইভার আনতে হবে।




অনেককেই দেখলাম সাগরপাড়ে বসে এদের বিভিন্ন রকম খাবার দিচ্ছে।

আবার এয়ারপোর্টের ভেতর এসে ট্যাক্সি ড্রাইভার নিয়ে তারপর হোটেলে এসেছি। এয়ারপোর্ট থেকে শহরে আসতে প্রায় চল্লিশ মিনিটের মত লাগে। গাড়িতে বসে দুইপাশে তাকিয়ে শুধু দেখছি আর ভাবছি এত সুন্দর একটা শহর কিভাবে হয়। যেদিকেই তাকাই চোখ ফেরানো যায় না,প্রকৃতি যেন উজার করে সব ঢেলে দিয়েছে এখানে। পুরা ক্যাপটাউন পাথরের পাহাড় আর আটলান্টিক সাগড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়ের ঢালে নানারকম ফুলের গাছ।






পর্যটকদের বিনোদনের সব রকম ব্যবস্থায় এখানে আছে। লাইভ মিউজিক, সিনেমা হল, থিয়েটার, বিভিন্ন এক্সিবিশন, অসংখ্য খাবারের দোকান

হোটেলে এসে ফ্রেস হয়ে রিসিপশনে জিজ্ঞেস করলাম আজ কোথায় যাওয়া যাবে। এয়ারপোর্টে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়ে যাওয়াতে সেদিন আমাদের হাতে তেমন সময়ও ছিলনা। তারা বললো তাদের শাটল বাস আছে,ফ্রি সার্ভিস দেয় বিভিন্ন ট্যুরিষ্ট স্পটে, ট্যুরিষ্টদের নামিয়ে দিয়ে আসে, আবার নিয়ে আসে। সকাল ছয়টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তাদের এই সার্ভিস পাওয়া যায়। আমাদের হাতে সেদিন বেশি সময় না থাকাতে তারা বলল ওয়াটার ফ্রন্ট নামে একটা জায়গা আছে ওখানে যাওয়ার জন্য, সব ট্যুরিষ্টরা অবসর সময় ওখানে কেনাকাটা করে,লাইভ মিউজিক শুনে, খাওয়া দাওয়া করে সাগরের পাড়ে হাঁটাহাঁটি করে কাটায়।তাই আমরাও তাদের শাটল বাসে করে চলে গেলাম ওয়াটার ফ্রন্ট। সেখানে অনেকক্ষণ ঘুরেফিরে, রাতের খাবার খেয়ে একটা ট্যাক্সি ঠিক করে হোটেলে ফিরলাম। ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে ঠিক করলাম যে আমরা যে কয়দিন থাকবো সে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুধু আমাদের জন্যই থাকবে।


এগুলো কাদের মূর্তি জানা হয়নি


সাগরপাড়ে বসে জাহাজের আসা যাওয়া দেখতে ভালোই লাগে। একপাশে জাহাজ মেরামত করা হয়।





এক পাশে ঘুরেফিরে অন্যদিকে দেখি আরো কিছু শপিংমল ও বাচ্চাদের বিনোদনের ব্যবস্থা আছে।একটা খালের মত পাড় হয়ে ওপারে যেতে হবে কিন্তু কিভাবে যাব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাত দেখি একটা ব্রিজ এসে লাগলো।যখন কোন জাহাজ আসা যাওয়া করে ব্রিজ একপাড়ে সড়ে আসে, আবার চলে গেলে ব্রিজ অন্যপাড়ে লাগে, তখন মানুষজন পার হয়।












আছে সাইট সিয়িং বাস। একদিনের টিকেটে ৫টি ট্যুরিষ্ট স্পট দেখায়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:০৯
১৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×