somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ র্পাবত্য চট্টগ্রামের নৃশংসতম গণহত্যা পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস (০৯-০৯-০৯)

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃশংসতম গণহত্যা পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস

( এই পোষ্টটি ০৯-০৯-০৯ তারিখেই সামুতে দেয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সোয়াইন ফ্লু সেই সুযোগ দিল না)
আজ ৯ সেপ্টেম্বর, পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃশংসতম গণহত্যা পাকুয়াখালী ট্রাজেডির চতুর্দশ তম দিবস। ১৯৯৬ সালের এই দিনে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন শান্তিবাহিনী রাঙ্গামাটি জেলার পাকুয়াখালীতে নীরিহ এবং নিরস্র বাঙালি কাঠুরিয়াদের উপর নির্মম হত্যাকান্ড চালিয়ে তাদের বিবৎস মানসিকতার এক জঘণ্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। স্বাধীনতার পর পরই জেএসএস তথা শান্তিবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু করে। এই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পার্বত্যাঞ্চলের সহজ-সরল পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোকে স্বাধীন জুম্মল্যাণ্ড প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়ে শুরু করে সশস্ত্র তৎপরতার। এর পর থেকে শান্তিবাহিনী এ পর্যন্ত হত্যা করেছে ৩০ হাজারেরও বেশী বাঙালি নারী, শিশু, আবাল-বৃদ্ধ বনিতাকে। ঘটিয়েছে অসংখ্য গণহত্যা। তবে কিছু কিছু গণহত্যার ঘটনা আছে যে গুলোকে কোনভাবেই কোন মানুষের কর্ম বলে বিশ্বাস করা যায় না। এর মধ্যে ২৯ এপ্রিল ১৯৮৪ ইং খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গা গণহত্যা, ৩০ মে ১৯৮৪ইং দিবাগত রাতে সংঘটিত রাঙ্গামাটি জেলার ভূষণছড়া গণহত্যা এবং ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ইং রাঙ্গামাটির পাকুয়াখালী গণহত্যা অন্যতম। পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে যারা ওয়াকিবহাল আছেন তারা পাকুয়াখালী গণহত্যাকে শান্তিবাহিনীর নৃশংসতম গণহত্যা বলে স্বীকার করেন। কেননা সেদিন শান্তিবাহিনী মিটিং করার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ডেকে নিয়ে ৩৫ জন নিরীহ বাঙালি কাঠুরিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। অবাক করার বিষয় হচ্ছে যে, শান্তিবাহিনী সেদিন এতগুলো মানুষকে হত্যা করতে একটি বুলেটও ব্যবহার করেনি। হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, দা-দিয়ে কুপিয়ে এবং বেয়নেট ও অন্যান্য দেশি অস্ত্র দিয়ে খোঁচিয়ে খোঁচিয়ে নানা ভাবে কষ্ট দিয়ে হত্যা করেছিল এই অসহায় মানুষ গুলোকে। প্রতিটি লাশকেই বিকৃত করে সেদিন চরম অমানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল তারা।
১৯৯৬ সালে পুরো পার্বত্যাঞ্চলই ছিল অপোকৃত শান্ত। শান্তিবাহিনী এসময় স্ব ঘোষিত অস্ত্র বিরতি দিয়ে, চাঁদা আদায় এবং অস্ত্র সংগ্রহের প্রতিই বেশি মনোযোগী ছিল। সেই সাথে সরকারের সাথে নিজেদের দাবী দাওয়া নিয়ে দেন দরবার করার জন্যও সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল। অন্যদিকে নিজেদের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছিল সর্বাত্মকভাবে। তাই তখন পার্বত্যাঞ্চলের নিরীহ অসহায় পাহাড়ি-বাঙালিরা শান্তিবাহিনীকে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে পাহাড় থেকে বাঁশ-কাঠসহ অন্যান্য বনজ সম্পদ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছিল। রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার সীমান্তবর্তী বাঘাইছড়ির পাকুয়াখালীতেও একই অবস্থা বিরাজমানছিল। সেখানে প্রতিদিন শত শত পাহাড়ি এবং বাঙালি কাঠুরিয়া শান্তিবাহিনীকে চাঁদা দিয়ে বাঁশ এবং গাছ কাটতে যেত।
চাঁদা আদায় সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনার জন্য মাঝে মধ্যে পাহাড়ে শান্তিবাহিনীর সঙ্গে কাঠুরিয়াদের বৈঠক হতো। এক পর্যায়ে ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ ইং একটি বৈঠক ডাকা হয়। এই বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য কাঠ ব্যবসায়ীদের নেয়ার জন্য শান্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়। শান্তিবাহিনীর কালেক্টর লংগদু থানার মাইনি বাজারে এসে ব্যবসায়ীদের চিঠির মাধ্যমে বৈঠকে অংশগ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু ইতিপূর্বে কোন বৈঠকে ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব দিয়ে ডাকা হয়নি। ফলে ৯ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে ব্যবসায়ীদের প্রতি অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়ায় ব্যবসায়ীরা বিষয়টি এড়িয়ে যায়। কিন্তু কাঠুরিয়ারা প্রতিদিনের মতো সেই দিন সকালে স্বাভাবিকভাবেই পাহাড়ে প্রবেশ করে। তখন শান্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদেরকে জানানো হয়, বড়বাবু আজ সবার সঙ্গে মিটিং করবেন। তাই আগে মিটিং-এ যেতে হবে। এর পর যে যার কাজে যাবে। একথা বলেই এক সাথে চার-পাঁচজন বাঙালি কাঠুরিয়াকে কিছুদূর নিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেদিনকার বাঁধা অবস্থা থেকে পালিয়ে আসা এক মাত্র ব্যক্তি মোহাম্মদ ইউনুছ মিয়া। এই ইউনুছ মিয়ার দেখানো পথ ধরেই পরবর্তীতে ১১ সেপ্টেম্বর খুঁজে বের করা হয় ২৮ জনের ক্ষত-বিক্ষত, বিকৃত লাশ। কারো হাত নেই, কারো চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, কারো কেটে নেয়া হয়েছে কান কিংবা পুরুষাঙ্গ। কাউকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে থেতলে দেয়া হয়েছে মাথা। আবার কাউকে জবাই করা হয়েছে অমানবিকভাবে। অপর ৭ হতভাগ্যেরতো লাশও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমন নির্মম দৃশ্য দেখে সেদিন পার্বত্যাঞ্চলের আকাশ-বাতাস স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। শোকে ভারি হয়ে ওঠেছিল সমস্ত পরিবেশ।

সেদিন নিহত ৩৫ কাঠুরিয়ার স্বজনদের আহাজারী আর উত্তাল পার্বত্য পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখার জন্য তৎকালীন সরকারের ৪ জন প্রভাবশালী মন্ত্রী লংগদু গিয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, শিল্প মন্ত্রী তোফায়েল আহম্মদ, পানি সম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এবং শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রী এম.এ. মান্নান। তাঁরা লংগদু গিয়ে মানুষের বুক ফাটা কান্না আর আহাজারী দেখে হত্যাকারীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে পুনর্বাসন করার। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সন্তাদের লেখা পড়ার দায়িত্ব নেয়ার প্রতিশ্রুতিও তারা দিয়েছিলেন। লংগদু থেকে ফিরে আসার পর তৎকালীন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সুলতান মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি ৩১ অক্টোবর ৯৬ ইং বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।

তাবে ১ নভেম্বর ১৯৯৬ ইং দৈনিক জনকণ্ঠের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, উক্ত প্রতিবেদনে শান্তিবাহিনীকেই পাকুয়াখালী ট্রাজেডির জন্য দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু দু:খের বিষয় হচ্ছে যে, তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার ১৩ বছর পরেও শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কোন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়নি। পুনর্বাসন করা হয়নি কষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে। কষতিগ্রস্থদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারেও কোন দায়িত্ব নেয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। তাই আজ তারা শিক্ষা-দীক্ষাহীনভাবে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে। তাই পাকুয়াখালী ট্রাজেডির শিকার কাঠুরিয়াদের পরিবারগুলোকে দ্রুত পুনর্বাসন করা প্রয়োজন।
১৯৯৭ সালে শান্তিবাহিনী সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে অস্ত্র জমা দিলেও তারা তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে বলে বিশ্বাস করা যায় না। কেননা পাহাড়ে অস্ত্রবাজী এবং চাঁদাবাজী রয়ে গেছে আগের মতই। গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ইং তারিখেও একই এলাকায় এক হতভাগ্য বাঙালির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পাহাড়ে সংগঠিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দেখে বুঝা যায় ধীরে ধীরে তারা অস্ত্রের মজুদ রাড়িয়ে আরো শক্তিশালী হচ্ছে। তাছাড়া কোন অপকর্ম করে বিচারের সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা যদি না থাকে তাহলে অপরাধীরা তো তাদের অপকর্মে উৎসাহ পাবেই। তাই মানবাধিকার এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই পাকুয়াখালী গণহত্যা সহ সকল হত্যাকান্ডের তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা প্রয়োজন। অন্যথায় পার্বত্যাঞ্চলে শান্তির আশা কোনদিনই বাস্তবায়িত হবে না।

ক্যাপশন: পাকুয়াখালীর গণহত্যার শিকার হতভাগ্য বাঙালি কাঠুরিয়াদের লাশ।


৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×