somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিনন্দন! তবে বিজয়ের তোড়ে যেন প্রতিপক্ষের কণ্ঠ হারিয়ে না যায়

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সত্তুরের নির্বাচনের কথা স্মরণ করে প্রবীণ অনেকে নস্টালজিক হবেন নিশ্চিত, তবে গত শনিবারের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিশ্চিতভাবেই ইতিপূর্বেকার সবগুলো নির্বাচনকে ম্লান করে দিয়েছে। এমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, এমন স্বচ্ছ পদ্ধতি আর জনতার এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ইতিপূর্বে আর দেখা যায়নি। এই প্রথমবারের মতো মোট ভোটারের ৮০ শতাংশ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কোথাও কোথাও এই হার ৯০ শতাংশেরও বেশি। কোনো সন্দেহ নেই, নির্বাচনে দেশের সিংহভাগ মানুষের রায় পেয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। ভূমিধস বিজয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট পেয়েছে ২৬২টি আসন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট পেয়েছে ৩২টি আসন। মহাজোটের এই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন নিঃসন্দেহে আনন্দের খবর, তবে খুব বেশি নয়।

নিরঙ্কুশের সমূহ শঙ্কা
এমনিতে ভূমিধস বিজয় কিংবা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কখনোই ঠিক পছন্দ করার মতো নয়। এতে প্রথমত ভারসাম্যটা নষ্ট হয়ে যায়। অতীতে এ ধরনের নিরঙ্কুশ বিজয়ের অভিজ্ঞতাও আমাদের ভালো নয়। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় গিয়েছিল, তখনকার অভিজ্ঞতা সুখকর নয় মোটেও। মানুষ এর জবাব দিয়েছে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এনে। সেবারও এবারের মতো ধসনামানো বিজয় পেয়ে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে একনায়ক হয়ে ওঠা বিএনপি-জামায়াতের স্বৈরতান্ত্রিক-ঘিনঘিনে মৌলবাদী চেহারাটা দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছিল আমাদের। দিনে দিনে চলা সেই স্বৈরতন্ত্র জন্ম দিয়েছিল একপাল আপাদমস্তক লোভী মানুষের। গত দু বছরে আমরা তাদের নির্লজ্জ মুখ দেখেছি কখনো প্রিজনভ্যানে, কখনো আদালতের বারান্দায়, কখনোবা কারাফটকে ফুলের মালা গলায়।
ফলে, সবমিলিয়ে, মহাজোটের এই ভূমিধস বিজয় সচেতন নাগরিক এবং শিক্ষিত শ্রেণীর অনেককেও কিছুটা শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে নিশ্চিত। এই শঙ্কা দলের প্রতি বিদ্বিষ্ট হয়ে নয়, বরং প্রকৃত ভালোবাসার প্রকাশ।

শক্তিশালী বিরোধী দল যে কারণে জরুরি
এই মুহূর্তে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে, আগামী সংসদে শক্তিশালী কোনো বিরোধী দল থাকছে না। এই নির্বাচনে বিএনপির যা প্রাপ্তি, তাতে তাদের সম্মিলিত চিৎকারও সংসদ স্পিকারের চেয়ার পর্যন্ত পৌঁছাবে কিনা সন্দেহ। জাতীয় পার্টি তার স্বভাবমতোই 'এই বসন্ত এই হেমন্ত' নীতিতে এগোবে। এমনকি তাদের গৃহপালিত বিরোধী দলের ভূমিকায়ও হয়তো দেখা যেতে পারে। তাতে আর যাই হোক, শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাবটা পূরণ হয় না। তবে এমন নয় যে, বিএনপি আরো কটি আসন পেলে, আরো একটু ভালোভাবে জিততে পারলে তারা বেশ দায়িত্বশীল আচরণ করতো। বরং বিএনপির মধ্যে এই একটি গুণেরই অভাব বেশি। তারপরও শক্ত একটি বিরোধী দলের উপস্থিতি জরুরি এই কারণে যে, নিরঙ্কুশ বিজয় পাওয়া কোনো দল একনায়ক হয়ে ওঠার সুযোগ সহজে পায় না। বিরোধী দলের চাপটা থাকলে শাসকদলের একনায়কসুলভ আচরণ সহজে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পায় না।

সম্মুখে দুটি পথ
নিরঙ্কুশ এই অর্জনের পর আওয়ামী লীগের সামনে দুটি পথ খোলা। প্রথমত তারা দিনে দিনে একনায়কের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের ইতিহাসে পরমতসহিষ্ণু আদর্শ সরকারের দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে তারা।
আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের কথা মনে থাকবে অনেকেরই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তিনি দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির নজির সৃষ্টি করেছিলেন, প্রতিপক্ষকে দমন করেছিলেন নারকীয় কায়দায়। পরের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর ঢাকার রাজপথে পুলিশের লাঠির আঘাতে নাসিমের রক্তমাখা জামা আমরা দেখেছি। প্রতিশোধ সবসময়ই প্রতিশোধের জন্ম দেয়। বরাবর অসহিষ্ণুতার যে চিত্রটি আমরা দেখি, সেটি বদলানোর সুযোগ আওয়ামী লীগের সামনে আছে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রতিশোধপরায়ণ অসংযত আচরণ নয়। বেদনাময় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয়। ভিন্নমতাবলম্বী প্রতিবেশী যেন কুণ্ঠা বোধ না করেন। বিজয় উদযাপনের তোড়ে আর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে যেন প্রতিপক্ষের কণ্ঠ হারিয়ে না যায়। আপনি বলুন, তাকেও বলতে দিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৩:৫৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×