somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষক” একটি অবহেলিত প্রানীর নাম…..(?)

১৮ ই জুন, ২০১১ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“শিক্ষক” কে ?
একটি চমৎকার প্রশ্ন । ভীষন ভাবে নাড়া দেবে প্রশ্নটি ।

কেউ ই নিজের পছন্দে শিক্ষক হতে চায়না ।
একজন ডাক্তার চান তার সন্তানটিও “ডাক্তার” হবে ..
একজন ইঞ্জিনিয়র চান তার সন্তানটিও “ইঞ্জিনিয়র” হবে ..
একজন বিজনেসম্যান চান তার সন্তানটিও “বিজনেসম্যান” হবে ..
অর্থাৎ সবাই চান তার সন্তানটি তারই মতো হবে ।
তেমনি একজন “শিক্ষক” চাইবেন তার সন্তানটিও যেন “শিক্ষক” হয় ..

কিন্তু বাস্তবের নিষ্ঠুর পরিহাস – কেউই স্বেচ্ছায় “শিক্ষক” হতে চায়না । দুঃখজনক অথচ এই ই সত্য । কারন পার্থিব জগতে বিনিময় মূল্যে একজন শিক্ষকের অর্জন কিছুই নেই । জীবনের কাছে তার প্রাপ্তি অনেকগুলি প্রশ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ ।

তারপরেও দেখি একজন অবহেলিত মানুষ, যাকে আমরা “শিক্ষক” বলি আসলে তিনি কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন ।

কোনও একটি স্কুলের “গ্রাজুয়েশান” অনুষ্ঠানের আপ্যায়ন পর্বে আড্ডায় বসেছিলেন অভিভাবকেরা । স্বভাবতই আড্ডায় কথা উঠলো জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে । চলে এলো শিক্ষার কথাও । একজন নামকরা “সিইও” শিক্ষার সমস্যা নিয়ে জ্বালাময়ী ভাষন দিচ্ছিলেন । প্রসঙ্গক্রমে তিনি প্রশ্ন তুললেন, “ একজন ছাত্র কি শিখবে স্কুলে ? কি শেখাবে তাকে একজন শিক্ষক, যিনি মনে প্রানে বিশ্বাস করেন “শিক্ষকতার” মতো মহান পেশা নেই ? শিক্ষক হয়ে একজন ছাত্র জীবনে কি পাবে ? কিছুই না ।”
নিজের স্বপক্ষে মতামত জোড়ালো করতে স্কুলের প্রধান শিক্ষককেই প্রশ্ন করলেন, “ আপনিই বলুন, কি পেয়েছেন আপনি জীবনে ?”

প্রধান শিক্ষক নিরব রইলেন ক্ষানিকক্ষন ।
তারপরে বললেন, “ আপনি কি জানতে চাচ্ছেন, আসলেই আমি কি করতে পেরেছি জীবনে ?”
এরপরে শিক্ষক কিছুটা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বললেন –
- “ ওয়েল, আমি একটি শিশুকে কঠিন পরিশ্রম শেখাতে পেরেছি যা সে ধারনাও করতে পারতোনা যে সে তা পারবে কোনদিন ।
- আমি একজন সি+ গ্রেড পাওয়া শিশুকেও এই আত্মবিশ্বাসটুকু দিতে পেরেছি যেন সে একটি মহামূল্যবান মেডাল বিজয়ী হয়েছে ।
- আমি সেই সব শিশুদের ৪৫ মিনিট পর্য্যন্ত ক্লাসে একই জায়গাতে বসিয়ে রাখতে পেরেছি যেখানে বাড়ীতে তাদের পিতামাতা তাদেরকে গেমস কিউব, আই-পড ইত্যাদি হরেক খেলনা দিয়েও ৫ মিনিটের বেশী বসিয়ে রাখতে পারেননি ।

শিক্ষক থামলেন পুনরায় । উপস্থিত সকলের দিকে ঘুরে ঘুরে তাকালেন একবার – “ আপনারা জানতে চাইছেন আমি আসলে কি করেছি ?”
- আমি শিশুদের ভাবতে শিখিয়েছি ।
- তাদেরকে প্রশ্ন করতে শিখিয়েছি ।
- আমি তাদেরকে ক্ষমা চাইবার মতো মহৎ একটি উপলব্ধি অর্জন করতে শিখিয়েছি ।
- তাদের নিজেদের কাজের প্রতি সম্মান জানাতে আর সেই কাজের প্রতি দায়িত্বশীল হতে শিখিয়েছি।
- আমি তাদের শিখিয়েছি কি করে লিখতে হয় আর তারা লিখতে শিখেছে ।
- আমি তাদের কেবল পড়তে শিখিয়েছি, পড়ো…পড়ো… আর পড়ো ।
- তাদের প্রতিটি কাজের ভেতরের অংক শিখিয়েছি যাতে তারা তাদের নিজস্ব মাথা খাটাতে শেখে, ক্যালকুলেটর নয় ।
- প্রতিটি শিশুই যেন তার প্রয়োজনীয় শেখাটি শিখতে পারে এমোন করে তাদের তৈরী করেছি আর তাদের জাতীয় সংস্কৃতি যেন ধরে রাখতে পারে সেই বোধের জন্ম দিয়েছি তাদের ভেতরে ।
- আমি আমার ক্লাসরুমটিকে এমোন একটি জায়গা বানিয়েছি যেখানে সব শিশুই নিরাপদ বোধ করে ।
- সবশেষে আমি তাদের শিখিয়েছি, যে মেধা নিয়ে তার জন্ম হয়েছে যদি তার সঠিক ব্যবহার তারা করে, কঠিন পরিশ্রম করে, নিজের হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারে তবেই তাদের জীবনে সাফল্য নেমে আসবে …………..
শিক্ষক শেষবারের মতো থামলেন ।
তাকালেন সবার মুখের দিকে – “ এর পরেও যদি মানুষ জানতে চায় আমি জীবনে কি করেছি বা কি পেয়েছি আমার উত্তর, অর্থই জীবনের সব নয় । তাই যারা এমোনটা প্রশ্ন করেন তাদের অজ্ঞতা দেখে আমি কষ্ট পাইনা আমি আমার মাথাকে উঁচুতে তুলে রাখতে পারি সেদিকে কোনও ভ্রক্ষেপ না করেই ।

আপনারা জানতে চান আমি কি করেছি ?
……………………… আমি আপনাদের প্রত্যেকের জীবনে বৈচিত্র আর সাফল্য এনে দিয়েছি । কারন আমিই আপনার শিশুকে (হয়তো আপনাকেও আমার মতো কেউ একজন) শিক্ষা দিয়েছি, শিখিয়েছি কি করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়র কিম্বা সফল বিজনেসম্যান হতে হয় .................
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×