somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবী বিখ্যাত ছবিরা (শেষ পর্ব)

২৬ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পৃথিবী বিখ্যাত ছবিরা

[শেষ পর্ব]
প্রথম পর্ব এখানে -
পৃথিবী বিখ্যাত ছবিরা

গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়াররিং / জোহানেস ভারমীর ।


ছবি - গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়াররিং

এ ছবিটিও একজন ডাচ শিল্পীর । জোহানেস ভারমীর এর । তেমন ডাক সাইটে আঁকিয়ে নন একজন । তার নিজের সম্পর্কে কিম্বা তার ছবি সম্পর্কে তেমন বেশী কিছু জানা যায়না । তবুও তার ছবিটি বিশ্বখ্যাত কেন ? কারন বিশ্বজুড়ে এই ছবিটিকে বলা হয় “ ডাচ মোনালিসা”। আপাতঃ খুব সাধারন একটি তৈলচিত্র । মাত্র ১৭.৫ ইঞ্চি বাই ১৫ ইঞ্চির ক্যানভাস । ছবিটি কবে আঁকা হয়েছে সে তারিখটি ছবিতে নেই । তবুও ছবিটির হিষ্ট্রিকাল প্রোফাইলে ১৬৬৫ সালে আঁকা বলে উল্লেখ আছে । ছবিটি কারো ফরমায়েশে আঁকা হয়েছে কিনা তাও জানা নেই । হয়ে থাকলে কার নির্দেশে তা্রও হদিশ নেই ।
জোহানেস ভারমীর বেঁচে ছিলেন ১৬৩২ থেকে ১৬৭৫ সাল পর্য্যন্ত । জীবণের বেশীর ভাগ ছবিই তার মধ্যবিত্ত শ্রেনীর গৃহাভ্যান্তরীন দৃশ্য নিয়েই আঁকা । আর খুব কম ছবি এঁকেছিলেন বলেই ঘর গৃহস্থালী নিয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছিলো নিদারূন দারিদ্রে । তার বেশীর ভাগ কাজেই তিনি উজ্জল রংয়ের ব্যবহার করেছেন খুব যত্ন নিয়ে আর এঁকেছেন ধীরেসুস্থে । রংয়ে ব্যবহার করেছেন দামী “পিগমেন্টস” । গরীবের ঘোড়া রোগ ?
তার এই “ গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়াররিং” ছবিটি ভারমীর এর শ্রেষ্ট “মাষ্টারওয়র্ক” বলে বিবেচিত হয়ে আছে । ছবিটি নিয়ে আছে অনেক প্রশ্ন । শ’খানেক বছর ধরে নিরীক্ষন করার পরেও এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো উঠে আসছে আজো । ছবিটির মেয়েটি কে ? আসলেই ছবিটিকে কি একটি
“ পোর্ট্রেইট” বলা যাবে ? ১৮৮২ সালের আগে এর খোঁজটি কেনই বা পাওয়া যায়নি ? কেনই বা লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিলো এ্যাদ্দিন ? কেনই বা ছবিটিকে “রি-প্রোডাকশান” এর মূল্য ধরে বিক্রয় করা হয়েছে ? ছবিটি কি ঝুলিয়ে রাখা যায় এমোন কোনও কিছুর অংশবিশেষ ? ভারমীর কি নিজের জীবৎকালেই এটি বিক্রি করেছিলেন ? আজ ছবিটির যে কালো ব্যাকগ্রাউন্ড দেখছি আমরা তা আসলেই যে গাঢ় কিন্তু স্বচ্ছ সবুজ রংঙের, তা কেন ? কানে ঝোলানো মুক্তোটি কি আসল মুক্তো ? মাথার আচ্ছাদনটির আবেদন কি এখানে ? কোন ধরনের আঁকার পদ্ধতি অনুসরন করেছেন শিল্পী এখানে ? কোন পিগমেন্টই বা ব্যবহার করেছেন ভারমীর ?
১৯৯৪ সালে ছবিটির সর্বশেষ “রেষ্টোরেশান”এর পরে দর্শকদের দিকে চেয়ে থাকা মেয়েটির চোখের গভীরতা আর রংয়ের বিন্যাস বেশ অনেকটাই খোলতাই হয়েছে ।
১৮৮১ সালে রাজধানী হেগ এর একটি নিলামে তোলা হলে ছবিটিকে কিনে নেন আর্নল্ডাস আন্দ্রেইজ দ্যেস টমবী নামের কেউ একজন । এই সময় ছবিটি ছিলো খুবই খারাপ ভাবে রক্ষিত । টমবীর কোনও উত্তরসূরী না থাকায় ছবিটিকে ১৯০২ সালে দান করে দেয়া হয় হেগ এর “Mauritshuis” মিউজিয়মে । সেখানেই আছে দ্বিতীয় মোনালিসার এই ছবিটি আজো ।

ডাচ মোনালিসা নামের পৃথিবীখ্যাত এই রহস্যময় ছবিটি আন্দ্রেইজ দ্যেস টমবী কতো টাকায় কিনেছিলেন জানেন ? মাত্র............... দুই গিল্ডার্স আর ত্রিশ সেন্টে । শিল্পী জোহানেস ভারমীর এর জীবনের মতোই ছবিটির ভাগ্যেও জুটেছিলো সেদিন দারিদ্রতা ।


ছবি – ঘরের মেয়ে ঘরে । “Mauritshuis” মিউজিয়মের দেয়ালে ।

আর আজ ছবিটিকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই । কে টানছে দর্শকদের আগ্রহ ? মেয়েটির চোখ নাকি তার কানে দোলানো পার্ল রিংটি ? ছবিটির জন্ম রহস্য নিয়ে ঔপন্যাসিক ট্রেসী শ্যাভালিয়র ইতিমধ্যেই একটি ঐতিহাসিক কল্পকাহিনীও লিখে ফেলেছেন । এই উপন্যাসের সূত্র ধরে ২০০৩ সালে আবার তৈরী হয়েছে একটি চলচ্চিত্রও । শিল্পী জোহানেস ভারমীর এর সহকর্মী হিসেবে সেখানে মুক্তোর ইয়াররিং পরিহিত অবস্থায় অভিনয় করেছেন স্কারলেট জোহানসন ।


গোয়ের্ণিকা / পাবলো পিকাসো ।


ছবি - “গোয়ের্ণিকা”

বেথভেনের নাইনথ সিম্ফনী যেমন সঙ্গীতে তেমনই পিকাসোর “গোয়ের্ণিকা” ছবিতে ।
যুদ্ধের ভয়াবহতা আর নিরীহ মানুষের আর্ত চীৎকার নিয়ে পিকাসোর আঁকা “ গোয়ের্ণিকা” ছবিটির কথা শোনননি বা কোথাও দেখেননি কেউ, এটা ভাবাই আমার বোকামী হবে । স্প্যানিস গৃহযুদ্ধে বাসক শহর “গোয়ের্ণিকা”তে স্প্যানিস স্বৈরাচার ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর পক্ষ হয়ে বিদ্রোহ দমনের নামে আগ্নেয়াস্ত্রের পরীক্ষা করতে গিয়ে জার্মান বোমারু বিমান যে হামলা চালিয়েছিলো তার প্রতিবাদ করতেই পিকাসো এঁকেছেন ছবিটিকে ।
গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত স্পেনের গোয়ের্নিকার সেই ধংশস্তুপ থেকে ডানা মেলা এক ফিনিক্স পাখি “গোয়ের্নিকা” । প্রথমে সাড়া না তুললেও ধীরে ধীরে ছবিটি আলোড়ন তোলে শান্তিপ্রিয় মানুষের মনে ।
অথচ ১৯৩৭ সালে “প্যারিস ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোজিশান” এর বিশাল চত্বরের এক কোনে ছোট ছোট দেশগুলোর ভীড়ে পড়ে থাকা স্পেন প্যাভেলিয়নের প্রধান আকর্ষন গোয়ের্নিকা যেন একটি আউট অব দ্য ওয়ে ছবি । সাড়া ফেলতে পারেনি তেমন । ১৯৩৯ থেকে ১৯৫২ পর্য্যন্ত সারা আমেরিকাতে এটি প্রদর্শিত হয় আর একটু একটু করে শিল্পবোদ্ধারা, সমালোচকেরা আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এর প্রতি । আলোচনার ঝড় ওঠে আর গোয়ের্নিকাকে দেখতে উৎসাহী মানুষের ঢল নামে । সেদিন পিকাসোর গোয়ের্নিকা যুদ্ধের বিরূদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে একদিন শতাব্দীর সবচেয়ে বড় একটি অমীমাংসিত দলিল হয়ে উঠবে জানা ছিলোনা কারো ।
এটি একটি ম্যুরাল চিত্র । ক্যানভাসে তেল রংয়ে আঁকা । কেবল ১১ ফুট উচ্চতা আর ২৫.৬ ফুট প্রস্থ নিয়েই ছবিটি ব্যাপ্ত নয় । সকল দেশ-কাল-পাত্রকে ছাড়িয়ে গেছে এর ব্যাপ্তি ।
শুরু থেকেই গোয়ের্নিকার বিভীষিকাকে বাস্তবসম্মত অথবা রোমান্টিক করে আঁকার ইচ্ছে ছিলোনা পিকাসোর । ছবিটির মূল বিষয়বস্তু – প্রসারিত হাতের এক নারী, একটি ষাঁড়, একটি যন্ত্রনাকাতর ঘোড়া কে বার বার স্কেচ করতে হয়েছে তাকে । আবার মুছে ফেলতে হয়েছে আরো পরিশুদ্ধ করতে । সব স্কেচকে আবার মূল ক্যানভাসে বসিয়েছেন । তাতেও সন্তুষ্ট হননি পিকাসো । কয়েকবারই তিনি তাতে রি-টাচ করেছেন । শেষমেশ ১৯৩৭ সালের জুনের মাঝামাঝি একটি দিনে সমাপ্ত হয়েছে ম্যুরাল পেইন্টিংটি ।
একটি হযপচ তৈলচিত্র ।
হ্যাঁ, এমোনটিই মন্তব্য ছিলো মেলা উপলক্ষ্যে প্রকাশিত জার্মান ফেয়ার গাইডের । তারা এটিকে শুধু হযপচ বলেই ছেড়ে দেয়নি, বলেছে – “এটি যেনতেন করে আঁকা মানুষের হাত-পা, যা চার বছরের বাচ্চারাও আঁকতে পারে” । আপনারও মনে হবে তাই-ই ।
তারা ম্যুরালটিকে এককথায় বাতিল করে দিয়েছে এই মন্তব্যটি দিয়ে - পাগলের আঁকা ।
কি আছে এ ছবিতে ?
হিংস্রতার আঘাত আর বিশৃঙ্খলায় দোমড়ানো মোচড়ানো মানুষ, প্রানী আর আবাসস্থলের বিমুর্ততা । বিশাল ক্যানভাসের বা-পাশের উন্মুক্ত জায়গাটুকুতে মর্মভেদী চীৎকারে শিশুর লাশ নিয়ে প্রসারিত হাতের এক নারীর ঠিক উপরে আছে চোখগরম করা এক ষাঁড়ের প্রতিকৃতি । মাঝখানটি জুড়ে আছে বর্শাবিদ্ধ যন্ত্রনা কাতর এক ঘোড়ার আকুতি । ঘোড়ার শরীরের পার্শ্বদেশে বড়সড় একটি ক্ষত যা আপনার দৃষ্টি কাড়বেই । মানুষের মাথার একটি খুলি ঘোড়াটির শরীরের উপরে প্রচ্ছন্ন রয়েছে । প্রচ্ছন্ন ভাবে আরো আছে, একটি ষাঁড় যেন নীচ থেকে ঘোড়াটিকে ক্ষতবিক্ষত করতে মুখিয়ে আছে । আর ষাঁড়টির মাথা তৈরী হয়েছে মুলত হাটু মুড়ে থাকা ঘোড়াটির সামনের পা জুড়ে । ঘোড়াটির বুকে রয়েছে ষাঁড়ের একটি শিং । ষাঁড়ের লেজটি তৈরী করেছে এক অগ্নিশিখার আকৃতি যা আপনি খুঁজে পাবেন আশেপাশের তুলনায় হালকা ধুসর রংয়ে আঁকা একটি জানালার অবয়বে । মৃতপ্রায় ঘোড়াটির নীচে আপনি দেখতে পাবেন একটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন সৈনিকের দেহ , যে দেহের ছিন্ন হাতটি তখনও ধরে আছে ভাঙ্গা এক তলোয়ার । আর সেই ভাঙ্গা তলোয়ারের ভেতর থেকে উদগ্‌ত হয়েছে একটি ফুল ।
শয়তানের চোখের মতো একটি জ্বলজ্বলে বৈদ্যুতিকবাল্ব দেখতে পাবেন যন্ত্রনাকাতর ঘোড়াটির মাথার উপরে ।
ঘোড়াটির ডানদিকে আর উপরে ভয়ার্ত এক নারীমূর্ত্তি, মনে হবে যেন জানালার ভেতর দিয়ে ভেসে এসেছে আর তাকিয়ে আছে সামনের দৃশ্যপটের দিকে । প্রজ্বলিত এক বাতি নিয়ে তার হাতটিও যেন ভেসে আছে জ্বলজ্বলে বৈদ্যুতিকবাল্ব এর কাছাকাছি এক সাংঘর্সিক অবস্থানে । ভাসমান নারীর নীচে ভয়ার্ত আর এক নারী শুন্যদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে জ্বলজ্বলে বাতিটির দিকে । ষাঁড়টির জিহ্বা আঁকা হয়েছে একটি ছুরি হিসেবে । আরো আছে আর্তনাদকারী এক নারী, ঘোড়া, আতঙ্কিত একটি পাখি সম্ভবত একটি ঘুঘু ।
সর্বডানে রয়েছে আতঙ্কে দু’হাত উত্তোলিত একটি মুর্তি, মনে হবে যেন আবদ্ধ হয়ে পড়েছে আগুনের মাঝে । ম্যুরালটির ডান প্রান্তের শেষ সীমানায় দাঁড়িয়ে আছে খোলা দরজা নিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি দেয়াল ।
এই দৃশ্যপট নিয়ে গোয়ের্নিকা ।

বিস্তারিত জানতে চাইলে অনুগ্রহ করে এখানে দেখুন - Click This Link )

ছবিটি কোথায় যাবে এ নিয়ে অনেক আইনি যুদ্ধের পরে পিকাসোর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী এ ছবির প্রথম ঠিকানা হয় মাদ্রিদের প্রাডো মিয়্যুজিয়মে । পরে সংরক্ষনের অসুবিধার কারনে ১৯৮৫ সালে গোয়ের্নিকাকে সরিয়ে আনা হয় পাশের “রেইনা সোফিয়া” মিয়্যুজিয়মে আর আজ গোয়ের্নিকার স্থায়ী ঠিকানা এটাই ।

গোয়ের্নিকা নয়, দামের দিক থেকে পিকাসোর আঁকা “বয় উইথ আ পাইপ” (Garcon a la Pipe) ২০০৪ সালে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে । সারা বিশ্বের চিত্রকলা জগৎ হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো যখোন ১৯০৫ সালে আঁকা এই ছবিটি ২০০৪ সালে নিউইয়র্কের সোথবী নিলাম ঘরে বিক্রি হয়েছিলো ১০৪ মিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশী দামে । অথচ আর্ট-ক্রিটিকদের কাছে পিকাসোর এই ছবিটি একটি গড়পড়তা ছবি হিসেবেই চিহ্নিত ।
আর এই সম্প্রতি ২০১৩ সালের মার্চে তার “ লা রীভ” ছবিটি বিক্রী হয়েছে ১৫৫ মিলিয়ন ডলারে ।
বেশ মজার আর অদ্ভুত, তাইনা ? মানুষের কি বিচিত্র খেয়াল ! ক্ষুধায় কাতর পৃথিবীতে কেবল মাত্র ছবির জন্যে মিলিয়নস এ্যান্ড মিলিয়নস ...........


ছবি - মিলিয়নস এ্যান্ড মিলিয়নস ডলারের ছবি “বয় উইথ আ পাইপ”


দ্য ক্রিয়েশান অব এ্যাডাম / মাইকেলেঞ্জোলো ।


ছবি - দ্য ক্রিয়েশান অব এ্যাডাম

সর্বকালের সেরা ছবি এটিও । দ্য ক্রিয়েশান অব এ্যাডাম । একটি ফ্রেশকো । দেখতে পাবেন ভ্যাটিকান সিটির সিসটাইন চ্যাপেলের সিলিংয়ে, বাইবেলের বুক অব জেনেসিসে বর্ণিত বিশ্বসৃষ্টির সময়কালের ঘটনাপঞ্জী নিয়ে যে ফ্রেশকোটি আঁকা রয়েছে সেখানে । পুরো ফ্রেশকো প্যানেলের নয়টি ছবির মধ্যে ৪র্থ ছবি । অথচ আঁকা হয়েছে সব শেষে । আঁকার অদ্ভুত জায়গা বটে । এরকম আঁকার জন্যে একজনই আছেন – মাইকেলেঞ্জোলো । একাধারে চিত্রকর, ভাস্কর, স্থপতি এবং কবি এই হ’লো মাইকেলেঞ্জোলোর পরিচয় । মেডিক্যাল ছাত্র না হয়েও ভিঞ্চির মতোই মানুষের এ্যানাটমীতে সিদ্ধহস্ত । ফ্রেশকোটির দিকে তাকালেই তা পরিষ্কার । এর সুনামের সাথে কেবল প্রতিযোগিতা হতে পারে ভিঞ্চির আঁকা মোনালিসার ।
তার ভাস্কর্য্যগুলোর দিকে তাকালেও বোঝা যায় কি ঋদ্ধ তার ধারনা মানুষের শরীর সম্পর্কে । নিঁখুত এক একটি মূর্তি সব ।
“দ্য ক্রিয়েশান অব এ্যাডাম” ছবিটিতে দেখানো হয়েছে সৃষ্টির প্রথম সন্তান আদম ( এ্যাডাম) এর ভেতরে সৃষ্টিকর্তা কি করে প্রানের সঞ্চার করছেন । ১৫১১ থেকে ১৫১২ সালে এই “দ্য ক্রিয়েশান অব এ্যাডাম” অংশটুকু আঁকা হয় । পুরো ফ্রেসকোটির কাজ শুরু হয় ১৫০৮ সালে পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস এর নির্দেশে । সিসটাইন চ্যাপেলের সিলিংয়ে আদমের প্রান সঞ্চারের এই অংশটুকু সহ বাকী ফ্রেশকোগুলো সর্বকালে সবচেয়ে বেশী অনুকরনকৃত ধর্মীয় ছবি ।


ছবি - সিসটাইন চ্যাপেলের সিলিং ।

কি আঁকতে হয়েছে শিল্পীকে ? শ্বেতশুভ্র শশ্রুমন্ডিত বৃদ্ধস্য ঈশ্বরকে উপরে আর তারঁ বাড়িয়ে দেয়া হাতিখানির ঠিক নীচেই নগ্ন এ্যাডামকে, তার বাড়িয়ে দেয়া বাম হাতখানি সহ । বোঝানো হয়েছে, ঈশ্বরের প্রসারিত ডান হাতের অঙুলীয় থেকে প্রানের ছটা এ্যাডামের দিকে ধেঁয়ে যাচ্ছে । আপনি খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, এ্যাডামের প্রসারিত বা’হাতখানি অবিকল ঈশ্বরের প্রসারিত ডান হাতের ভঙ্গীমার অনুকরন । কেন ? আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়া যে, ঈশ্বর মানুষকে তাঁরই প্রতিভু করে সৃষ্টি করেছেন । আরো দেখতে পাবেন, দু’জনার অঙ্গুলীয় কিন্তু পরষ্পরকে ছুঁয়ে নেই । এর অর্থও পরিষ্কার । সৃষ্টিকর্তা আর সৃষ্টি একই মাত্রায় অবস্থান করেনা । এখানে একজন দাতা, একজন গ্রহীতা । সমান নয় । সৃষ্টিকর্তা সবসময়ই অধরা ।
অনেক “হাইপোথিসিস” আছে ছবিটির অর্থ নিয়ে । ১৯৯০ সালে “জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল এসোসিয়েশান” ম্যাগাজিনে চিকিৎসক ফ্রাঙ্ক লীন মেসবার্জার এম.ডি’র বরাত দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে যে, ঈশ্বরের পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ডে যে ফিগার আর সেপস রয়েছে তা হবহু মানুষের মস্তিষ্কের ছবি ।এখানকার বর্ডারগুলো মানুষের মস্তিষ্কের বিভিন্ন এলাকাগুলো যেমন সালকাই, সেরেব্রাম, ব্রেইনস্টেম, পিটুইটারী গ্লান্ড, অপটিক কায়াজমাকে ফুটিয়ে তুলেছে । খুব কাছে থেকে আপনি এগুলো দেখতে পাবেন । ধারনা; শিল্পী এটা বোঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের “ সিন্যাপ্টিক ক্লেফট” ( দু’টি স্নায়ুকোষের সংযোগস্থল) এর ভেতর দিয়ে যেভাবে ইমপালস পরিবাহিত হয় ঈশ্বরও ঠিক তেমনি করেই এ্যাডামের মাঝে প্রানকে পরিবাহিত করেছেন । আরো আশ্চর্য্যের বিষয় হ’লো, - ঈশ্বরের ডান হাতের নীচে যেখানটাতে একটি দুঃখী এ্যাঞ্জেল রয়েছেন , PET scans করে দেখা গেছে মস্তিষ্কের ঠিক সে জায়গাটিই উত্তেজিত হয় মানুষ যখন দুঃখে ভারাক্রান্ত হয় । আর ঈশ্বরকে যেখানে “সুপার ইমপোজড” করা হয়েছে সেখানটা হলো মানুষের মস্তিষ্কের “ লিম্বিক সিষ্টেম” যাকে মেডিক্যাল সায়েন্সে বলা হয় “ ইমোশোনাল সেন্টার” । দার্শনিক ভাবে এই সেন্টারটিকে কি মানুষের আত্মার সাথে তুলনা করা যায়না ? আত্মার এ্যানাটমিক্যাল কাউন্টার পার্ট ?
আরো আছে । ঈশ্বরের চারপাশ ঘিরে থাকা লাল কাপড়টি যেন জরায়ু (uterus )আকৃতির আর ঝুলে থাকা সবুজ কাপড়খন্ডটি ঠিক যেন সবে কেটে ফেলা নাভী (umbilical cord ) । সব মিলিয়ে একটি প্রানের জন্মের কথাই যেন বলছেন শিল্পী ।

দ্য লাষ্ট সাপার / লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ।


ছবি - দ্য লাষ্ট সাপার

পিকাসোর ম্যূরালের মতোই ভিঞ্চির এই ছবিটাও একটি ম্যূরাল পেইন্টিঙ । পনের শতকের ।
সেইন্ট জন এর গোসপেলের ১৩ : ২১ অধ্যায়ে বর্ণিত যীশুখ্রীষ্টের শেষদিনগুলোর একটিকে স্মরন করে আঁকা হয়েছে “দ্য লাষ্ট সাপার” ছবিটি ।সেদিন যে নাটকীয় ভাবে ক্রাইষ্ট ঘোষনা দিলেন, তার বারোজন অনুসারীর মধ্য থেকে একজন তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে; সে মূহুর্তটির কাল্পনিক ছবিটিই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই চিত্রে । ছবিতে অনুসারীদের ভেতরে যে আতঙ্ক, ক্রোধ আর হতবিহ্বলতা ছুঁয়ে গেছে তাই-ই ফুঁটিয়ে তুলেছেন ভিঞ্চি । ছবিটি আঁকার পরথেকেই শুরু জল্পনা কল্পনার ।
ইটালীর মিলান শহরের সান্তা মারিয়া দ্যেল গ্রাজিয়ে মন্যাসট্রির খাবার ঘরের ১৫ ফুট বাই ২৯ ফুট দেয়াল জুড়ে রয়েছে ছবিটি । একটি ভোজনকক্ষের দেয়ালে যেমনটি থাকা উচিৎ তেমন গতানুগতিক চিন্তাধারাতেই ছবিটি আঁকা । যদিও ছবিটি যখন আঁকা হয় তখন এটি মোটেও ভোজনকক্ষ ছিলোনা । ১৪৯৮ সালেই মাত্র প্রধান গীর্জাটির নির্মান শেষ হয়েছিলো যখন ছবিটিতেও তুলির শেষ আঁচড় পড়েছিলো । আসলে ল্যুদোভিকো ফোর্জা পরিবারের জমকালো সমাধিক্ষেত্র হিসেবে গীর্জাটির পুনঃনির্মান করা হচ্ছিলো আর ছবিটি ছিলো সমাধিক্ষেত্রের “সেন্টার পীস” ।
১৪৯৫ তে ভিঞ্চি এটা আঁকতে শুরু করলেও একনাগাঢ়ে আঁকেন নি । ৩ বছর সময় নিয়েছেন তিনি ছবিটি শেষ করতে । গপ্প প্রচলিত আছে, মন্যাসট্রির কোনও এক সন্যাসী লিওনার্দোকে সরাসরি অভিযোগ করে বলেছিলো , এতো দেরী করছে কেন সে কাজটি শেষ করতে । এটা লিওনার্দোকে রাগিয়ে দিয়েছিলো । আর লিওনার্দো ও এই অভিযোগের জবাবে মন্যাসট্রির অধ্যক্ষকে লিখে বসলেন, “ মহাশয়, জুডাসের অতি দুবৃত্ত চেহারার (ভিল্যানিয়াস)ঠিক কি ভাবটি ফুটিয়ে তুলবো ছবিটিতে , আমি তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাবছি । আমার মনের মধ্যে যে ভাবটি আছে তা যদি ঠিক মতো পেতে আমার অসুবিধা হয় তবে আপনি নিশ্চিত জেনে রাখুন, অভিযোগকারী সন্যাসীর মুখটি আমি জুডাসের মুখের বদলে বসিয়ে দেবো ।”
ছবিটিতে কি আছে ? আছে অনেক কিছুই । ছবিতে যে মুখগুলি আছে আর সেই মুখগুলিতে যে ভঙ্গী ফুঁটে উঠেছে তা বিশেষভাবে এক ইতিহাসেরই চিত্ররূপ । আর আছে সর্বকালের রহস্যময় শিল্পী ভিঞ্চির নিজস্ব কুহেলীকাময় উপস্থাপন ।
ছবিতে যারা আছেন তারা সবাই জেসাসের একান্ত কাছের অনুসারী (অ্যাপসল)। মোট ১২ জন । তিনজন তিনজন করে মোট চারটি দলে এদেরকে সাজিয়েছেন ভিঞ্চি ।
আধো-অন্ধকারে সবুজ আর নীল রঙের কাপড়ে বিশ্বাসঘাতক জুডাসকে এঁকেছেন ভিঞ্চি । তার চোখেমুখে আঁকা হয়েছে নির্লিপ্ততা এবং তার গোপন দুরভিসদ্ধি হঠাৎ প্রকাশিত হওয়ায় হতচকিত ভাব ।
ছবিটিতে আরো চমকপ্রদ যা রয়েছে তা হলো “৩” সংখ্যার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ । অনুসারীরা ৩ জনের এক একটি দলে ভাগ হয়ে আছেন । তাদের পেছনে জানালা রয়েছে ৩ টি । আর দু’পাশে ছড়ানো হাত স্বয়ং জেসাসের ফিগার একটি ত্রিভুজাকৃতির। শিল্পী কি খ্রীষ্টানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের “হলি ট্রিনিটি”র দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করছেন ? কেন ?
সবকিছু মিলিয়ে ছবিটিকে ঘিরে রয়েছে রহস্য । লেখক থেকে শুরু করে ইতিহাস বিশ্লেষকরা পর্য্যন্ত এর ভেতরে লুকানো কোনও বার্তা রয়েছে কিনা, খুঁজে দেখছেন । কেউ কেউ জেসাসের ডানে থাকা জেসাসের অনুসারী “জন” নামের পুরুষ চরিত্রটিকে শনাক্ত করেছেন নারী বলে । নারীটি কি জেসাসের স্ত্রী কিম্বা রক্ষিতা বলে কথিত “মেরী ম্যাগদালেন” ? হয়তো তাই । খেয়াল করলে দেখবেন , ভিঞ্চি তাদের দু’জনার শারীরিক অবস্থান দিয়ে একটি “এম” অক্ষর তৈরী করে মেরী ম্যাগদালেনকেই বোঝাতে চেয়েছেন কিনা ! তার উপর, জেসাস যে রঙের কাপড় পরে আছেন পাশের ব্যক্তিটিকে ঠিক তার বিপরীত রঙের কাপড় পরিয়ে তিনিই যে ম্যাগদালেন তাই কি বোঝাতে চেয়েছেন ভিঞ্চি ? আ নেগেটিভ ইমেজ অব ইচ আদার ?
এই “মেরী ম্যাগদালেন” বিষয়টি উঠে এসেছে লীন পিকনেট এবং ক্লাইভ প্রিন্স এর বই “ দ্য টেম্পলার রিভিলেশান” এ । আর আপনাদের অবশ্যই পড়া এবং দেখা ড্যান ব্রাউনের “ দ্য ভিঞ্চি কোড” বইটি এবং ছায়াছবিতে ।
কেউ এটার ভেতরে একটি মিউজ্যক্যাল নোট খুঁজে পেয়েছেন । কেউ পেয়েছেন পৃথিবী ধংশের বার্তা ।

বিস্তারিত জানতে চাইলে অনুগ্রহ করে এখানে দেখুন - Click This Link
http://www.somewhereinblog.net/blog/GSA1953happy/29674281

স্টারী নাইট / ভিনসেন্ট ভ্যান গ্যঁ ।


ছবি - স্টারী নাইট

এবারেও এক ডাচ শিল্পীর ছবির কথা । তবে ভাগ্যাহত এক শিল্পী । জীবনকালে জাতশিল্পী হিসেবে যার কোনও জায়গা ছিলোনা কোথাও । বেঁচে থাকতে মাত্র একটি ছবিই বিক্রি করতে পেরেছিলেন তিনি , তা ও মাত্র ৪০০ ফ্রাঙ্কে যা বর্তমানের ১৬০০ ডলারের সমান । আর বিগত হওয়ার পরেপরেই তার ভাগ্যের বৃহষ্পতি যেন উঠেছে তুঙ্গে । আজ পৃথিবীর সবচেয়ে দামী শিল্পকর্মের মাঝে বেশ ক’টিই তার । নাম ভিনসেন্ট ভ্যান গ্যঁ । চিত্র শিল্পের ইতিহাসে বহু উচ্চকিত একটি নাম । জীবদ্দশায় যার দাম ছিলোনা কানাকড়িও মৃত্যুর পরে তার নিজের পোর্ট্রেটই বিক্রি হয়েছে সাড়ে একাত্তর মিলিয়ন ডলারে । তাও ১৯৯৮ সালে । একেই কি বলে “নিয়তির পরিহাস” ?
ভ্যান গ্যঁ’য়ের এই ছবি “স্টারী নাইট” শিল্প সৌকর্য়্যের শিখরে উঠে যাওয়া একটি ছবি । আধুনিক সংস্কৃতিতে ছবিটি বহু আলোচিত আর সবচেয়ে বেশী আঁকা হয়েছে এর প্রতিকৃতি ।
১৮৮৯ সালে সেইন্ট রেমীর একটি এ্যাসাইলামে থাকা অবস্থায় ছবিটি এঁকেছেন ভ্যান গ্যঁ । ছবিটিতে তাই উঠে এসেছে উথাল-পাতাল আকাশের নীচে ঘুমন্ত সেইন্ট রেমীর দৃশ্যপট । আলোচ্য ছবিটির আগে আরো বেশ কয়েকটি ছবি এঁকেছেন একই দৃশ্যপট নিয়ে ভিন্নভিন্ন আঙ্গিকে । তবে এটিই শিল্পবোদ্ধাদের নজর কেড়েছে বেশী । ছবিতে বাম দিকে যে সাইপ্রেস গাছটি আপনি দেখতে পাচ্ছেন তা যোগ করা হয়েছে পরে ।
যে ছবিটিকে সাদা চোখে দেখলে মনে হবে বাচ্চাদের চিত্র প্রতিযোগিতায় আঁকা ধ্যাবড়ানো রংয়ের কিছু , তা ই সারা বিশ্বের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কেন ? এমোন একটি চিন্তা সাধারন মানুষের আসতেই পারে । আপনার চোখে কিন্তু ধরা পড়বে অন্য কিছু । ঘূর্ণাবর্ত মেঘেরদল, উজ্জল নক্ষত্রখচিত আকাশ আর জ্বাজল্যমান আঁধফালি চাঁদ আপনার চোখকে টানবেই । আপনার চোখ একটি জায়গাতে স্থির হয়ে থাকবেনা । আকাশের বস্তুগুলিতে তুলির ঘুর্ণায়মান টান তার রংয়ের খেলায় আপনার দৃষ্টিকে নিয়ে যাবে একবিন্দু খেকে আর একটি বিন্দুতে । আপনার চোখের এই চলা আপনাকে রাখবে ছবিটিতে প্রোথিত করে ।
আকাশের নীচে ঘুমিয়ে থাকা শহরটিকে মনে হবে খুব শান্ত । ঠান্ডা মেজাজের গাঢ় রংয়ের ব্যবহার, আর জানালায় আলোর আভা আপনার ছেলেবেলাকার শহরটির কথা মনে করিয়ে দেবে ।
আপনি যদি শিল্পীর জীবন কাহিনী জানেন তবে আরো একটি বিষয় আপনার মনে হতে পারে । ছবিটি কি ভ্যান গ্যঁ’য়ের জীবন থেকে নেয়া কিছুর কল্পরূপ ? যে বোহেমিয়ানা আর ঘূর্ণাবর্তের ভেতরে কেটেছে তার জীবন তাকেই কি তিনি দেখিয়েছেন মেঘদল আর তারাদের মাঝে ? নিজের কান পর্য্যন্ত কেটে ফেলেছেন যে শিল্পী অনুশোচনায়, তিনি সেইন্ট রেমীর এ্যাসাইলামের জানালার ফাঁক দিয়ে দূরের দেখা নিঃস্তরঙ্গ শহরটির মতো শান্ত হতে চেয়েছেন হয়তো । আকাশের নীচে শান্ত শহরটি কি তারই ইঙ্গিত ?
আবার আপনার এও মনে হতে পারে, আকাশের সাতটি তারা কি তার জীবনের অপূর্ণ কোন অভিলাষের প্রতিকৃতি ? হতে পারে । কৈশোরে (১৮৭৬ – ১৮৮০) শিল্পী নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন দুস্থ মানবতার সেবার জন্যে সন্যাস(পাদ্রী) শিক্ষায় । পূর্ণ হয়নি তা । জীবনের খামখেয়ালীপনা তাকে নিয়ে গেছে চরম হতাশা আর দারিদ্রতায় । আকাশের সাতটি তারার মাঝে তিনি কি তার প্রথম জীবনের ধর্মীয় অভিলাষটি ফুঁটিয়ে তুলতে চেয়েছেন ? কারন বাইবেলের জেনেসিসের ৩৭ : ৯ অধ্যায়ে এই কথাটি লেখা আছে - "And he dreamed yet another dream, and told it his brethren, and said, Behold, I have dreamed a dream more; and, behold, the sun and the moon and the eleven stars made obeisance to me." ।
ভ্যান গ্যঁ’য়ের আকা এই ছবিটি আপনি দেখতে পাবেন নিউইয়র্কের মিউজিয়ম অব মডার্ণ আর্টের গ্যালারীতে । ১৯৪১ সাল থেকেই ছবিটি আছে সেখানে ।



আত্ম প্রতিকৃতি । ভিনসেন্ট ভ্যান গ্যঁ । ১৯৯৮ সালে নিউইয়র্কের “ক্রিস্টি”র নিলাম ঘরে যার মূল্য উঠেছিলো সাড়ে একাত্তর মিলিয়ন ডলারে । সেই সময়ের বিশ্বের তৃতীয় এক্সপেন্সিভ ছবি । অথচ সত্যিকারের জীবনে সমাজের কাছে তার দাম ছিলো না কানাকড়ি ও ।

দ্য কিস / গুস্তাভ ক্লীমট


ছবি - “দ্য কিস”।

অপূর্ব সুন্দর একটি তৈলচিত্র সাথে সোনার পাতার কাজ । অস্ট্রিয়ান শিল্পী গুস্তাভ ক্লীমট এর আঁকা ১৯০৭ সালে । অলঙ্কার যুক্ত সোনার চাদরে মোড়ানো দু’টি মানব মানবীর আবেগঘন চুম্বনের দৃশ্য “দ্য কিস”। ফেসকো আর মোজাইক প্যাটার্নে আঁকা হয়েছে ছবিটি । আধুনিক জামানার শুরুর দিকের একটি মাস্টারপীস । শিল্পী এরকম অনেক ছবি এঁকেছেন যেখানে ভালোবাসার তীব্র আবেগ আর সৌন্দর্য্যকে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে । এই ছবিটিতে দেখানো হয়েছে , কি করে ভালোবাসতে হয় ।
আঁকার ধরনটিকে শিল্পবোদ্ধারা বলেছেন “ নিউ আর্ট” যেখানে আর্টের দর্শন আর ভঙ্গী, স্থাপত্যবিদ্যা এবং ফলিত আর্ট বিশেষ করে অলঙ্করনের আর্ট একসাথে মিশে আছে । আসলেই তাই । এখানে সোনার পাতার কাজগুলো পুরোকালের মোজাইক প্যাটার্নের আদলের মতো যা ছবিটিকে একটি অন্যমাত্রা দিয়েছে । পুরুষটির গায়ে পেচানো বস্ত্রখন্ডটি যেন ব্রোঞ্জ যুগের গন্ধ ছড়ায় । অলঙ্করনের ধাঁচটি প্রাচীন কালের অবব্যহিত পরের পশ্চিমা ধাঁচের । আর পুরুষটির মাথা যে ক্যানভাসের শেষপ্রান্তে গিয়ে ঠেকেছে তা প্রচলিত পশ্চিমা রীতির ধার না ধেরে জাপানীজ ছাপার কাজের প্রভাবকে ফুটিয়ে তুলেছে । ছবিটিতে প্রানের স্পন্দন ফোঁটাতে ক্লীমট সোনার পাতার কাজ করেছেন । ছবিতে খয়েরী, হলুদ আর সবুজ রংয়ের ব্যবহার যেন সে স্পন্দনকে আরো প্রগাঢ় করেছে ।



প্রশ্ন উঠতে পারে, ছবির মডেল কারা । ভাবা হয়, শিল্পী নিজে আর তার সহকর্মী এ্যামিলি ফ্লগ এতে মডেল হয়েছেন । কিন্তু এই ভাবনার পেছনে কোনও প্রমান কেউ দেখাতে পারেননি । কেউ কেউ আবার বলেন “ রেড হিলডা” নামের যে মডেলটি ক্লীমট এর অন্যান্য ছবি যেমন “ উওম্যান উইথ ফেদার বোয়া” কিম্বা “ গোল্ডফিস এ্যান্ড ডানা” ছবিটির মডেল হয়েছেন, তিনিই ।

কে কে মডেল হলেন এ নিয়ে আমাদের হয়তো না ভাবলেও চলবে । আমাদের যেটা ভাবাবে তা হলো এই, এমোন আবেগময় ভালোবাসা এখোনও কি আছে বেঁচে পৃথিবীতে যেখানে হানাহানি নিত্যদিন !
তবুও মানুষ ভালোবাসতেই চায় । ধংশস্তুপের ভেতর থেকেও ভালোবাসা খুঁজে পেতে চায় সে ।এমোনটাই খুঁজেছেন জন্মসূত্রে সিরিয়ান শিল্পী তাম্মাম আযম । সিরিয়ার বোমা বিধ্বস্ত জনপদে
“দ্য কিস” এর মর্মবাণী খুঁজেছেন । বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, বুলেটে ঝাঝরা হয়ে যাওয়া গৃহের দেয়ালের উপর সুপারইম্পোজ করেছেন ক্লীমট এর “দ্য কিস” ছবিটি ।


ছবি - “ফ্রিডম গ্রাফিটি”

এই “ফ্রিডম গ্রাফিটি” তিনি করেছেন গেল বছর দুবাই এর আইয়াম গ্যালারীর প্রদর্শনীর জন্যে । নিউইয়র্ক টাইমস এর সাথে এক স্বাক্ষাতকারে আযম বলেছেন, "সিরিয়াতে আসলে কি ঘটছে আমার অন্যান্য ছবির মতো এই ছবিতেও আমি তা দেখাতে চেয়েছি । ক্লীমট মানুষের মাঝে ভালোবাসা আর সম্পর্কের ছবি এঁকেছেন আর আমি এটার বিপরীতে দেখিয়েছি সিরিয় সরকার তার জনগণের জন্যে কি পরিমান ঘৃনা জমা করে রেখেছেন ।"
তাম্মাম আযম দেখিয়েছেন, মানবজাতির এক বৃহত্তম অর্জনকে আর একই সাথে তার ধংশকারী ক্ষমতাকে ।
আর একটি “গোয়ের্ণিকা “?


তথ্যসূত্র – UFFIZI.org / wikipedia.org / totallyhistory.com / এবং অন্যান্য ইন্টারনেট সাইট ।


সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩৯
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×