somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“টীনএজার” দের সামলাবেন কি করে ? ( হাউ টু ম্যানেজ টীনএজারস ? )

১০ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
“টীনএজার” দের সামলাবেন কি করে ?



টীনএজারদের সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়নি কার ? উঠতি বয়সীদের জন্যে সময়টা যেমন খুব জটিল আর ভঙ্গুর তেমনি আপনার জন্যেও যেন একটা কুরুক্ষেত্র ময়দান । মহাধৈর্য্যের এ পরীক্ষায় পাশ করার চেষ্টা আপনাকে করতেই হয় । সবাই যে তা পেরে ওঠেন তা কিন্তু নয় । নয় বলেই সমাজে হুতাশন বাড়ে দিনদিন । গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসলে এটাই আপনার ভাবনাকে জুড়ে বসবে – “কী হলো আজকালকার ছেলেমেয়েদের ?” এও মনে হবে, আমরা তো এমোনটা ছিলাম না ।
জটিল আর ভয়ঙ্কর একটা সামাজিক অংক সন্দেহ নেই । সমাজবিদরা, ইয়্যুথ ওয়ার্কাররা, শিক্ষকেরা সবাই মিলে এর ভুরিভুরি সমাধান দিয়েছেন যার যার প্রেক্ষাপটে । সব সমাধানই যে সব জায়গাতেই খাটবে, আমি তেমনটা মনে করি না । এবং আপনিও হয়তো করেন না । কারন সহজ – সব গাছ সব মাটিতেই হয়না । হতে হলে মাটিকে সে ভাবে ঢেলে সাজাতে হয় ।
ঘাটাঘাটি করলে আপনি হাযারো লেখা পাবেন টীনএজারদের কি করে সামলাতে হয় তার সমাধান সহ । অভিজ্ঞরাই এগুলো লিখেছেন । আমার আপনার বেলাতে এগুলো খাটবে কি ? আমার মনে হয়, খাটবেনা । কারন ঐসবের কোথাও সামাজিক গঠন, তার বিকাশ, তার সংষ্কৃতি, তার শিক্ষা, তার সদস্যদের চিন্তা চেতনার কথা বলা নেই । অথচ একটি উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মানসিক গড়ন, তার পরিবেশ - তার অভিজ্ঞতা - সমাজ আর তার কাছের মানুষেরাই অজান্তে তৈরী করে দেন । এটা যদি সুখকর হয় তবে টীনএজারদের সামলানো কষ্টকর নয় । বিপরীতটা হলেই যতো বিপত্তি । উদাহরন দিলে ভালো বুঝবেন – যে কৃষকটি সারাজীবন মাটির শানকিতে তার রোদে পোড়া হাত দিয়ে ভাত মেখে খেয়ে এসেছেন এবং তার চার পাশের লোকজনদেরও দেখেছেন তাই করতে, তাকে যদি হঠাৎ করে দামী রেষ্টুরেন্টে নিয়ে কাটা-চামচ ধরিয়ে দেন তবে একটা বিতিকিচ্ছিরি ঘটনা ঘটবে । এই ঘটনার উল্টোটাও সমান বিপত্তিকর হবে । আমরা ঠিক এখানটাতেই ভুল করে বসি বার বার । একদেশের গাছ আর একদেশে লাগাতে চাই ।
যারা এসব লিখেছেন তারা তাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের বিদ্যমান সামগ্রিক ব্যবস্থার আলোকেই লিখেছেন ( আমাদের দেশে এ জাতীয় গবেষনামূলক লেখা আমার চোখে পড়েনি ) তাই ওগুলোর উল্লেখ তাদের লেখাতে বাহুল্য । যেমন তারা তাদের উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের সাপ্তাহিক “পকেট মানি” কিভাবে দিতে হবে তা “নীড এ্যাসেসমেন্ট”এর হিসেবে দিতে সুপারিশ করেছেন । পছন্দের বেলাতে প্রকারান্তরে ছেলেমেয়েদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে বলা হয়েছে । বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডদের কথাও বলেছেন । এগুলো কী আমাদের সমাজে মানা যায় ? নাকি আমাদের সমাজে এগুলো প্রযোয্য ? এমনি হাযারো জিনিষের অনেক কিছুই আমাদের সাথে মিলবেনা ।

কথাটি হয়তো আপনার মন খারাপ করে দেবে, তবুও এটিই নির্ভেজাল সত্য । যেমন, ছেলেমেয়েদের সামলাতে গেলে আজকাল গায়ে হাত তুলতে নেই । এটি একটি অপরাধ । আপনার বেলাতে কি ঘটেছিলো, যে জন্যে আপনি বেপথে যাননি ? ঘরে বাবা-মায়ের লাঠির ভয়, বাইরে স্কুল শিক্ষকের বেত আর তাদের মূল্যবোধের শিক্ষা আপনাকে সোজা পথে নিয়ে গেছে । উন্নত দেশে সন্তানদের গায়ে হাত তোলা অপরাধ, জানি । সেসব দেশের মানুষের একটি মূল্যবোধ আছে । একটি অর্থনৈতিক ভিত্তি আছে । দীর্ঘদিন থেকেই আছে । তাদের সমাজ, তাদের কর্মকান্ড সবই গোছানো; সিষ্টেমেটাইজড । জন্মের পর থেকেই একটি শিশুর নিরাপত্তার দিকটিতে সমাজ এবং রাষ্ট্র অনুদার ভাবে কড়া । চোখ মেলতেই এই নিরাপত্তার আয়োজন একটি শিশুকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে আর দায়িত্বের প্রতি করে তোলে সজাগ । ছেলেমেয়েরা সেই পরিবেশে একটি নিরাপত্তার ভেতরে, সমাজের মূল্যবোধের ভেতরেই বেড়ে ওঠে বলে তাদের গায়ে হাত তুলতে হয়না, প্রয়োজন পড়েনা লাঠির ভয় দেখানোর । সুতরাং তাদেরকে লাগাম পরানোর যে কলাকৌশল তা আমাদের বেলাতে খুব একটা কাজে আসবেনা সম্ভবত । কারন উন্নতদেশের লোকগুলোর মূল্যবোধের মতো কোন মূল্যবোধই কী আমাদের আজ বেঁচে আছে ? নেই, না ব্যক্তিগত পর্যায়ে ; না সামাজিক পর্যায়ে । আমরা কী আমাদের সন্তান ভুমিষ্ঠ হবার পর থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্য্যন্ত তার নিরাপত্তা বিধান করতে পেরেছি ?
আমাদের “জিন” থেকে যে “হেরিডেটারী ক্যারেকটার” আমাদের সন্তানে প্রবাহিত তার ছোঁয়াকে এড়াবো কি করে আমরা ? ওখানকার গলদটার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে আমাদের টিনএজারদের লাগাম পরাতে গেলে ।
হিন্দিতে “পরম্পরা” বলতে একটি কথা আছে । বংশ ধারা । হাযার বার আপনারা হিন্দি সিনেমাতে কথাটি শুনেছেন । আমাদেরও তেমন একটি প্রবচন আছে – “ নদীর জল ঘোলাও ভালো, জাতের মেয়ে কালাও ভালো” । এই প্রবচনটি বলেছি বলে অনেকেই আমাকে হয়তো খু্ব সেকেলে ভাববেন । কিন্ত্তু কঠিন বাস্তবে আপনি ঠিকই টের পাচ্ছেন আপনার চারধারে ঘটে যাওয়া ঘটনাতে এর অন্তর্নিহিত অর্থের অনুপস্থিতি । একবার করে হলেও আপনার মনে পড়ে এই প্রবচনটি ।

আমাদের এই পরম্পরাটা কি জিনিষ ? স্বাধীনতার পর থেকে দেশ বড়জোড় ৪টি প্রজন্ম দেখেছে । প্রথম প্রজন্মের অর্থনৈতিক অস্বাচ্ছন্দ ছিলো যতো বেশী, ততোই বেশী ছিলো মূল্যবোধ । এর পরে কি ? আদর্শলিপির পাঠ উঠে গেছে ধীরে ধীরে । আদর্শ লোপ পেয়েছে, সদা সত্য কথা বলা বাদ দিতে হয়েছে দ্রুততার সাথে । “গুরুজনকে মান্য করিবে” এমোন হিতবাণী শোনা তো দূর, গুরুজনকে পেটানোর ভুরিভুরি উদাহরন জমা হচ্ছে হররোজ । ইত্যাদি ইত্যাদি । এখোন যে ভাবে এবং যে চক্রবৃদ্ধি হারে অর্থনৈতিক অস্বাচ্ছন্দ দূর হয়ে অনেকেরই স্বাচ্ছন্দ এসেছে ততোই তাদের মূল্যবোধে টান ধরেছে । অর্থাৎ সামগ্রিক অবস্থাটি প্রথম প্রজন্ম থেকে শেষ প্রজন্মে বিপ্রতীপ হারে এগিয়েছে । এই ঘুনধরা মূল্যবোধের ভেতরে থেকে, তা দেখে দেখেই তো আমাদের সন্তানেরা বড় হয়েছে এবং হচ্ছে । এই রকম সমাজে আমরা কী করে নীতিকথা শেখাবো যেখানে আমাদের নিজেদেরই নীতিবোধ নেই ? কী করে লাগাম টেনে ধরবো যেখানে আমাদের নিজেদেরই লাগাম নেই ?
তাই টীনএজারদের সামলাবো কি করে, এর উত্তরে আগে এই দিকটাতে দৃষ্টিপাত করতে হবে । ফাইন ফোকাসিং করতে হবে নিজের দিকে ।
আমরা যে মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠেছি বা যে মানসিকতা পোষন করি, আমার আপনার পরিবারের উঠতি বয়েসী সদস্য-সদস্যারাও তো তাই অনুসরন করবে । শুধু তাই-ই নয় তারা বরং আর এক কাঠি সরেস হবে । উদাহরন দিলে বুঝতে সহজ হবে । ধরা যাক, আমার বৈধ-অবৈধ পথে আয় আছে প্রচুর । আমি বিলাসী জীবন যাপন করি । একটাকার জায়গাতে চোখ বুজে দশটাকা খরচ করে ফেলি । ব্যতিক্রম বাদে আমার উঠতি বয়েসী ছেলেমেয়েরা তো সঙ্গত কারনেই উড়নচন্ডী হবে । আর অস্বচ্ছল পরিবার থেকে আসা যে সব উঠতি বয়েসীরা আমার ছেলেমেয়ের বন্ধু বা তাদের জাঁকজমক প্রতিদিন লক্ষ্য করে থাকে তাদের ভেতর একটি অক্ষমতার যন্ত্রনা জন্ম নেবে যা তাদের হীনমন্য একটি প্রতিযোগিতার সামনে দাঁড় করিয়ে দেবে । এরা বিপথগামী হবে আর এর বিষময় প্রতিক্রিয়াটি হবে তাদের পরিবারের উপর, সমাজের উপর । এদের কে আমরা কোন রাশ টেনে সোজা পথে রাখবো ? হ্যা, এদেরকে আমরা “কাউন্সেলিং” দিতে পারি । কিন্তু সেটি কী তেমন ফলপ্রসু হবে ? কারন উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা স্বভাবতই প্রচন্ড প্রানশক্তির অধিকারী হয়ে থাকে । একই সাথে তারা আবার ভয়ঙ্কর জেদীও বটে । তাই উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের সামলাতে হবে খুবই সতর্কতার সাথে । দোষত্রুটি থেকে যতোখানি সম্ভব দূরে সরে থেকে নিজেকে আগে প্রস্তুত করে নিতে হবে এই কাজটির জন্যে । নিজেকে এভাবে গুছিয়ে নিতে না পারাটাই হলো মূল বাঁধা ।

আপনি নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারলে তখোন যে ভাবে এগুবেন -

আপনার উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের সাথে কথা বলুন । তাদের কে বুঝতে চেষ্টা করুন । কথা বলুন তাদেরকে যথাযথ সম্মান সহকারে । কারন তারাও এখোন বড় হয়েছে । নিজেদেরকে একজন পূর্ণ মানুষ হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে । এটিকে মূল্য দিন । আপনার ইগোতে লাগবে ? তাহলে আপনাকে দিয়ে এ কাজটি হবেনা ।

ধীর স্থির হতে হবে আপনাকে । আপনি যে আপনার উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের একদম চিনে ফেলেছেন এরকমটি মোটেও ভাববেন না । এরকমটা ভেবে তাদের সাথে কথা বললেই দেখবেন আপনি আপনার “টেম্পার” হারিয়ে ফেলেছেন, কিম্বা আপনার উঠতি বয়সের সন্তানটিও । এ সময় কথা বলা না চালিয়ে বিরতি নিন । যখোন দু’পক্ষই ঠান্ডা হবেন তখোন আবার থেমে থাকা কথারা চলf শুরু করতে পারে । নতুবা দু’পক্ষই গরম মেজাজে থাকলে কোনও সমাধানে পৌঁছে যাওয়া এভারেষ্ট জয়ের মতো দূর্ল্যঙ্ঘ হয়ে উঠবে । তাই ধৈর্য্য ধরার ক্ষমতা আর মেজাজ ঠান্ডা রাখার সব কলা-কৌশল আপনাকে আয়ত্ব করে নিতে হবে আগে, টিনএজারদের সামলাতে হলে । অন্যথা হলে আপনার সন্তানটি জেনে যাবে কোন বোতামটি টিপলে আপনাকে “অফ ব্যালান্স” করে দেয়া যায় । তখোন আপনার উপরে জয়ী হবার এই কৌশলটি সে যখোন তখোন কাজে লাগাবে তার প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে ।



প্রতিদিনের কাজে কর্মে আপনি যে তাদের কতোখানি “কেয়ার” করেন তা তাদেরকে বোঝার সুযোগদিন । সব বাবা-মায়েরাই যে সন্তানদের “কেয়ার” করেন তা কিন্তু নয় । অধিকাংশই করেন । কিন্তু তারাই আবার সারাক্ষন ছেলেমেয়েদেরকে শৃঙ্খলার কথা বলতে থাকলে কিম্বা তাদেরকে শাসাতে থাকলে তারা যে আসলেই সন্তানদের “কেয়ার” করেন তা বোঝানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় । আপনার সন্তান তখোন দ্বিধায় পড়ে যায় যে, আসলেই আপনি তাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসেন কিনা । সন্তানকে বোঝান যে, আপনি তাকে খুব বেশী ভালোবাসেন বলেই তাকে নিয়ে আপনি চিন্তিত । তাই কিছু বিধি-নিষেধের মধ্যে তার চলা মঙ্গলকর । এভাবে তাদের আস্থা অর্জন করুন, দেখবেন তারা আপনার কথা শুনছে ।

কোনও মানুষই পূর্ণাঙ্গ (পারফেক্ট) নয় । আমি কিম্বা আপনিও নন । উঠতি বয়েসীরা এটা যে বোঝেনা তা নয় । তাই আপনিই পারেন যে কোনও অপূর্ণতা শুধরে দিতে । আপনি কোনও ভুল করে ফেললে আপনার উচিৎ হবে প্রথমেই নিজের থেকে ভুলটি স্বীকার করে নেয়া । এতে আপনার উপর সন্তানের আস্থা বাড়বে । আপনার এই গুনটি থেকে তারা সৎ হতে শিখবে, শিখবে নম্রতা । আর তা না করে যদি আপনি আপনার “গো” ধরে থাকেন তবে আপনার সন্তানটিও তার চারদিকে আত্মরক্ষার একটি বুহ্য তৈরী করে ফেলবে । তখন তাকে লাগাম পড়ানো সুকঠিন হয়ে যাবে আপনার জন্যে ।

এটা তো ঠিক যে, উঠতি বয়েসীরা সঠিক কোনও সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময়ই গড়বড় করে ফেলে । তবুও সিদ্ধান্তটি তারাই নিতে চায় নিজেরা । যতোখানি সম্ভব সে সুযোগটি তাকে দিন । কিন্তু সাথে সাথে তাকে “গাইড” করুন, সহায়তা করুন । নিজের একক সিদ্ধান্তটি চাপিয়ে দেবেন না জোর করে । এতে তার অসন্তোষ বাড়বে । যেমন ধরুন – কলেজে সে কোন বিষয় নিয়ে পড়বে কিম্বা কোন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়াবে তা তাকে ঠিক করতে দিন । জোর করে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না । প্রয়োজনে তাকে সাহায্য করুন ঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে । এতে নিজের উপর যেমন তার আস্থা বাড়বে তেমনি আপনার উপরও শ্রদ্ধা বাড়বে তার । আর একই সাথে সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে শিখবে ।



অভিভাবক হয়েছেন বলেই আপনি তাকে দোষারোপ করার একচেটিয়া অধিকার রাখেন, এটা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন । মানুষ স্বভাবজঃ কারনেই তিক্ত সমালোচনা পছন্দ করেনা । আর বুদ্ধি-বৃত্তিতে অপরিপক্ক হওয়ার কারনে আর দোদুল্যমান মানসিকতা নিয়ে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা এটা আদপেই সহ্য করবেনা, গোড়াতেই প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করবে । সে অযৌক্তিক ভাবে প্রতিবাদী হয়ে উঠবে এবং এটি তার অভ্যেস এ পরিনত হবে । এরপরে সে আপনার যে কোনও কথা শোনা থেকে এক’শো হাত দূরে থাকবে ।
রাগ না করে তাকে তার কৃত কোনও কাজের পরিনতিকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলুন । বুঝিয়ে বলুন, কি থেকে কি হয়েছে বা কি করলে কি হতে পারে । যেমন তাকে বলুন - পড়াশোনায় মনযোগী না হলে সে পরীক্ষায় হয়তো পাশ করতে পারবে না । ফলে বড় হয়ে সে যা হতে চায়, তা হয়ে উঠতে পারবেনা সে কখোনই । কিম্বা বলতে পারেন, যে কাজটি তুমি করেছো তা অনেকটাই ভালো হয়েছে কিন্তু যদি এভাবে করতে তবে আরো ভালো হতে পারতো । এটি সারুন মুন্সীয়ানার সাথে, তার বন্ধু হয়ে; পুলিশ অফিসারের মেজাজে নয় । পয়েন্ট ব্লাংক রেঞ্জে ফায়ার করবেন না কখোনোই ।



তাদের চাহিদার দিকে খেয়াল রাখুন । “নীড” আর “ওয়ান্ট” যে এক নয় তা বোঝান । তাদের আবদার, যৌক্তিকতার ভেতরে যতোখানি সম্ভব পুরন করুন । সামর্থ্য থাকলেই ঢেলে দেবেন না । এতে সে ভবিষ্যতে একরোখা বা “ডিমান্ডিং” হয়ে উঠতে পারে । আর সামর্থ্য না থাকলেও তাদের অতি প্রয়োজনীয় চাহিদা পুরনের চেষ্টা করুন যে ভাবে পারেন । নতুবা সে অক্ষমতায় ভুগবে । নিজেকে অচ্ছুত মনে করবে সে । ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স তৈরী হবে তার ভেতরে । এবং তার চাহিদা পুরন করতে গিয়ে সে বিপথে চলে যেতে পারে ।
পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখতে হবে, কোনও কিছুই যেনো সীমা অতিক্রম না করে ।

পাশাপাশি স্নেহের আতিশয্যে তাকে ছাড়ও দেবেন না । একবারেই না । ছাড় দেয়া তার জন্যে ভয়ানক পরিনতি ডেকে আনবে একদিন । আমরা অনেকেই সন্তানদের অতিরিক্ত এবং অযৌক্তিক স্নেহ করি । এগুলো তাদের অপরাধের মাত্রাকে দিনদিন বাড়িয়ে তোলে । যেমন, পিতার অগোচরে মা তার ছেলেমেয়েকে চাওয়া মাত্রই টাকাপয়সা দিয়ে থাকেন । পিতার কাছে জবাবদিহিতা করার হাত থেকে বাঁচাতে আঁচলের নীচে লুকিয়ে রাখেন (উল্টোটাও ঘটে থাকে)। এই টাকা দিয়ে তারা কি করে , বাইরে কাদের সাথেই বা মেলামেশা করে খোঁজ ও রাখেন না । দেখা গেছে, আমাদের সমাজে এই একটি কারনেই নেশাগ্রস্থ বা বখে যাওয়া উঠতি বয়েসীদের সংখ্যা অন্যান্য কারনগুলোর চেয়ে সর্বাপেক্ষা বেশী ।



তাদের জন্যে কিছু কিছু সীমা নির্দিষ্ট করে দিন । আদর যেমন করবেন তেমনি কিছুটা শাসনের ভেতরেও রাখবেন । যেমন - আপনার সন্তানটি দিনের কতোটা সময় বাইরে থাকতে পারবে বা কখোন তাকে ঘরে ফিরতে হবে এটি নির্দিষ্ট করে দিন । এর বিধিনিষেধের গুরুত্বটুকু তাকে বুঝিয়ে বলুন । নির্দেশ দিয়েই চোখ বুজে থাকবেন না । চোখকান খোলা রাখতে হবে আপনার নির্দেশ মানা হচ্ছে কিনা তার দিকে । এ ব্যাপারে আপনার নমনীয়তা দ্বিতীয় ...তৃতীয়বার তাদের নিয়মভাঙ্গার কায়দাকানুন শেখাবে । তারপরে একদম শেকল ছেড়ার পালা...... ।

কাজের ফাঁকে যতোখানি সম্ভব তাদের সঙ্গ দিন । ছুটির দিনটি কেবল মাত্র তাদের জন্যেই বরাদ্দ করে রাখুন । তারা কি করে না করে খোঁজ নিন । তাদের “হবি”গুলোর দিকে নজর দিন । যেসব বিষয়ে তারা বুঁদ হয়ে থাকে তা আপনার ভালো না ও লাগতে পারে । যেমন, আপনার সন্তানটি রক মিউজিকের ভক্ত, আপনি আধুনিক গানের । রক মিউজিকে কী যে আছে আপনার মাথাতে আসে না । তবুও কষ্ট করে তার কাছে এসব ব্যাপারে জানতে চান । দেখবেন সে উৎসাহিত হয়ে আপনাকে বোঝাচ্ছে । আগ্রহ নিয়ে তার সাথে অংশগ্রহন করুন । বুঝতে চেষ্টা করুন কেন সে এটা পছন্দ করছে । এ থেকে আপনি তার মানসিকতার একটা ছবি পেয়ে যাবেন । আর এতে আপনি তাকে সমঝে রাখার একটা পথও পেয়ে যেতে পারেন । মাঝে মাঝে তার কাছে নতুন রক মিউজিকের খবর নিন । দেখবেন, আপনাকে সে কড়া অভিবাবক নয় একজন বন্ধু ভাবতে শুরু করেছে । তখোন তাকে লাগাম পড়ানো সহজ হয়ে উঠবে ।



আপনিও একদিন উঠতি বয়েসের (Teenager) ছিলেন । নিজের সাথে আজকালকার ছেলেমেয়েদের মেলাবেন না । এখোন সময় পাল্টেছে । আপনি সঠিক ভাবে জানেন না , আজকাল উঠতি বয়েসী হলে কী রকমের হয় তাদের মতিগতি । ভাব-ভঙ্গীই বা কেমন । তাই তাদের ব্যক্তি-জীবনের সব অভিজ্ঞতাই আপনার সম্পূর্ণ জানার মধ্যে আছে কিম্বা কী সব অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে তারা যাচ্ছে, এমোনটা ভাবলে ভুল করবেন । তখোন আপনি যে তাদের ভুল বুঝেছেন এমোন একটি ধারনা তাদের মধ্যে বাসা বাঁধবে । আপনার কাছে তারা আর অকপট হবে না কখোনও ।
তাকে কাছে ডাকুন, তার অভিজ্ঞতার বিষয়ে ভালোমন্দ জানতে চান । যে কোনও ঘটনার বিষয়ে তারা কি “ফিল” করছে জেনে নিন । প্রয়োজনে তাকে বলুন, আপনার কোনও সাহায্য তার প্রয়োজন আছে কিনা । কি ভাবেই বা আপনি তাকে সাহায্য করতে পারেন জানতে চান তা ও । বাইরের কোনও ঘটনার কারনে তার কষ্টের সাথী যেমন হবেন তেমনি তার খুশিতেও অংশীদার হবেন । দেখবেন, আপনার উপর সে শুধু আস্থা রাখতেই দ্বিধা করছেনা বরং নির্ভর করে বসে আছে । বন্ধু ভাববে আপনাকে । আপনি তো এমোনটা-ই চান ? না কি আপনাকে গুরুগম্ভীর একজন অভিবাবক হতেই হবে ?



. নিয়ম শৃঙ্খলা শেখাতে হলে তাকে অনেক কাজের স্বভাবিক পরিনতির ( ন্যাচরল কন্সিকোয়েন্সেস ) কথা বুঝতে দিন হাতে কলমে । এটা শুরু হতে পারে ঘর থেকেই । যেমন তাকে বলতে পারেন, ঠিক সময়ে খাবার টেবিলে না এলে তাকে নিজ থেকেই খাবার এনে খেতে হবে আর প্লেট , গ্লাস যাবতীয় জিনিষ তাকেই ধুঁয়ে রাখতে হবে । এমোন ছোটখাটো নির্দেশ দিন এবং তা না মেনে চললে তার স্বাভাবিক পরিনতি যা হবার তা তাকেই বহন করতে দিন । এতে সে নিয়ম মেনে চলতে অভ্যস্ত হবে আর একটা শৃঙ্খলার ভেতর দিয়ে চলবে । অর্থাৎ প্রত্যাশা আর তার স্বভাবিক পরিনতির সাথে তাকে পরিচিত করে তুলুন । পুরস্কৃত করুন প্রত্যাশিত ভাবে চলার জন্যে ।

এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, উঠতি বয়েসী ছেলেমেয়েদের নিয়েই পারিবারের ভেতর “কনফ্লিক্ট” তৈরী হয় সবচেয়ে বেশী। যদিও সব পরিবারের পারিবারিক বন্ধন এক নয় কিম্বা নিয়ম কানুন । প্রতিটি পরিবারেরই থাকে নিজস্ব কিছু স্বকীয়তা । তারপরেও দেখা যায় উঠতি বয়েসী ছেলেমেয়েদের নিয়ে কনফ্লিক্টগুলির কারন প্রায়ই এক ।
কারন, উঠতি বয়েসী ছেলেমেয়েরা সবাই স্বাধীনতা চায়, চায় নিজেদের ভুবন বাড়াতে । মস্তিষ্ক দিয়ে যতোটা নয় তার চেয়েও বেশী চলে থাকে হৃদয়াবেগের বশে । আর যেহেতু এসময়টাতে তাদের বুদ্ধিবৃত্তি বাড়তে থাকে আর এই বয়েসেই তারা আধুনিক পৃথিবীর অনেক কিছুই জেনে বসে আছে তাই তাদের মধ্যে যুক্তিতর্কের এবং কড়া সমালোচনার প্রবনতাও বাড়তে থাকে । এগুলোকে সতর্কতার সাথে সামাল দিন । তাদের মন-মানসিকতাকে ভালো করে “ ষ্টাডি” করুন তারপরে সেই মতো চাবি ঘোরান । নতুবা ভুল চাবিতে তালা খুলবেনা ।



পারিবারিক অশান্তি, বিশেষ করে বাবা-মায়ের মধ্যে অসমঝোতা একটি উঠতি বয়েসী ছেলেমেয়ের স্বাভাবিক মানসিকতাকে বাঁধাগ্রস্থ করে । তারা ঘরের ভেতরেই অশান্তি দেখে দেখে বড় হয় আর বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে, ঘৃনা করতে শুরু করে । তখোন তাদের কিছু বলতে গেলেই তারা ঘরের উদাহরন টানে । বিতৃষ্ণায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে । তাই সবার আগে এদিকটাতেও নজর দিন । তেমন প্রয়োজনে ঘরের কিছু কিছু ছোটখাটো অশান্তির ব্যাপারে তাদের পরামর্শ নিন । তখোন তারা নিজেদের একজন দায়িত্ববান হিসেবে ভাবতে শুরু করবে । আপনার উপরে হারিয়ে যাওয়া শ্রদ্ধা তখোন ফিরে আসতে পারে অনেকটা ।





পরিশেষে বলি – উঠতি বয়েসী ছেলেমেয়েরা দারুন প্রানশক্তিতে ভরপুর থাকে । তাদের এই প্রানশক্তির গোড়াতে ভালোবাসার, জ্ঞানের, সহিষ্ণুতার, ধৈর্য্যের জলটুকু ঢেলে না দিতে পারলে তা একদিন শুকিয়ে কঠিন পাথর হয়ে উঠবে । সে পাথরে আর ফুল ফোঁটানো সম্ভব হবেনা কোনদিন ………..

[ ইন্টারনেট থেকে সহায়তা নেয়া হয়েছে .. ]

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৪৬
২৮টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×