somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা সেই দিন, ফিরে আর আসবে কি কখনও ......

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা সেই দিন, ফিরে আর আসবে কি কখনও ...... [ ছবি ও লেখা ব্লগ ]
দ্বিতীয় পর্ব



............................ছয় সেবাদাসী
ছয় ঋতু ফিরে ফিরে নৃত্য করে আসি
নব নব পাত্র ভরি ঢালি দেয় তারা
নব নব বর্ণ-ময়ী মদিরার ধারা ......

বর্ষা তার নূপুরের ছন্দ থামিয়ে হারিয়ে গেলে সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে আসে শরৎ , শিউলির গন্ধ ডানায় মেখে ।

আসে নীলাকাশের দিন ।
স্নিগ্ধ সফেন জোছনা মাখা আকাশ আর হৃদয় উদাস করা আলোর বান ডেকে যাওয়া রাত । সে আকাশের সুঠাম কপালে সন্ধ্যাতারা যেন টিপ হয়ে জ্বলে ।
দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে শিশু ধানের চারা তোলে মাথা । আর গোধূলীর নরম আলো গায়ে মেখে আলপথে ঘরে ফেরে শ্রান্ত কৃষক ।

মেঘের অমল ধবল পালে লাগে হাওয়া । দল বাঁধা মেঘের নাও কোত্থেকেই যে আসে আর কোথায়ই বা যায় ! কেউ জানেনা , কোন ঘাটে ভিড়বে সে তরী ! শুধু পেঁজা পেঁজা তুলোর নাও হয়ে ভেসেই চলে ।

আশ্বিনের আগমনী সুরে সুরে দিগন্ত বিস্তারী কাশফুল বনে বয়ে যায় বাউরী বাতাসের লুটোপুটি । স্নিগ্ধ সফেন ফুলের ঢেউ তুলে শরতের দিন হেসে খেলে যায়। এরি মাঝে দু’দন্ড শান্তি খোঁজে কোনও যুগল মানব-মানবী ।

প্রান চঞ্চল করে দেয়া শিশির ভেজা ব্যাকুলতা নিয়ে ঝরে শিউলি । গেরুয়া রঙের পায়ে পায়ে যেন জড়িয়ে থাকা কোনও শ্বেতশুভ্র শাড়ীর আঁচল । শিউলি গন্ধে ভরে থাকে সকালের বাতাস । গেঁথে তোলা শিউলির মালা জড়িয়ে থাকে কারো ধবল - নরম হাত ।

এ ছবিও হেইইইইইইইইইইইইইইইই সুদূরের ।
ছিঁটে ফোটা হয়ে রয়ে গেছে আজও । আমাদেরই লোভে – লালসায় গুটিয়ে গেছে নীল শরতের দিন । ক্রমাগত ক্ষয়ে আসা ফসলের মাঠ, অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাশয় ভরাট করে শিল্পায়ন , বনাঞ্চল উজার করে নাগরিক সুবিধা প্রদানের নামে ব্যবসায়িক চেতনা শরতের আকাশে জড়িয়ে দিয়েছে এক পরত ধুলোর আবরন । আর আকাশও হয়ে গেছে ছোট ।
আমি বলি –যে চোখ আকাশের নীলিমার দেখা পায়না সে চোখ খুঁজে ফেরেনা জীবনের কোনও রঙ । যে মন দিগন্ত জোড়া বিশালতা দেখেনি কোনদিন , সে মনে উদারতার ছায়া পড়েনা । তেমন চোখ ও মনে বদ্ধ পুকুরের মতো জমে ওঠে শ্যাওলা । তেমন জঞ্জালে ভরা অনুদার মানুষেই আজ সব গৃহ ভরপুর । জানালা খুলে শিশুটিও আজ অবারিত আকাশ নয় , দেখে আলোহীন ইট-পাথরের কারাগার । তার ছোট্ট মনে সংকীর্নতা বাসা বেঁধে থেকে যায় ।
সে শিশু উদার হয়ে উঠবে কি করে ?

তাই শারদ প্রাতের প্রানময় ভালোবাসার নৈবেদ্য সাজিয়ে প্রকৃতি আর তেমন করে আসেনা আমাদের মনের আঙিনায় । ঠিক যেন -----
শরতের আকাশে আজ সারাদিন খর আলো
শিশিরের ফোঁটা আজ কোথায় হারালো
দেয়ালের ওপারে শিউলির গাছ
কি করে ফোঁটাবে ফুল !
মৌমাছি উড়ে যায় দূরে
বিষাদ লুকিয়ে থাকে
আমাদের ইট-কাঠ ও পাথরে .........

তবুও কারো কারো দিগন্তে “তোমায় দিলাম ভূবন ডাঙার হাসি ....” র মতো এক চিলতে নীল আকাশ হাসে .......




আহা মরি মরি - রাতের কিন্নরী
কেনো কাশফুলে গান গেয়ে যাও
আকাশ ভরিয়া কেবলি উছলাও
আমারে দিয়ে যাও দু’হাত ভরি ।

আমারে ফিরায়ে লহো
সেই সর্ব-মাঝে যেথা হতে অহরহ
অঙ্কুরিছে মুকুলিছে মুঞ্জরিছে প্রান
শতেক সহস্র রূপে, গুঞ্জরিছে গান
শতলক্ষ সুরে ......


সন্ধ্যার বিদায় রাগে
আকাশ রাঙাও কি অনুরাগে
একাকী বিষন্ন তরুচ্ছায়ে
লাগে তার দোলা ......





সবুজ কেশের সিঁথি মেলে
প্রান্তর যেন ডাক দিয়ে যায়
যেতে হবে দূর কোন গাঁয়
শরতের মেঠো পথ ভেঙে........



সবে দুলিয়া উঠিছে ধানের চারা
তারি মাঝে উল্লাসে পাগলপারা
আমারি শৈশব যেন উঠে ভাসি !
আকাশ যেখানে দিগন্তে গেছে মিশি
সেই নভঃতলে আরও একবার
যেন ফিরে ফিরে আসি ........



সাঁঝের আধারের কোমল হাত ধরে
হে কুশলী কোন পাখি , ফেরো নীড়ে
আমি পড়ে রই , শুধু রয়ে যাই
ক্লান্ত এক-পৃথিবী মানুষের ভিড়ে ।



জনবিরল গভীর বাতাসে বাতাসে
সন্ধ্যার আলো ভেসে ভেসে আসে
একদিন এইখানে, উদ্বেল কাশের বনে .....




আজ শরতের কাশের বনে
হাওয়ার লুটোপুটি ...



অম্বর বিস্তারী সঘন মেঘের ভেলা
উড়ে উড়ে কোন দেশে যাও ভাসি ,
আমার বধূয়া যেথায় আমারি লাগিয়া
অশ্রুসজল চোখে থাকে দিবা-নিশি ?



আনমনে নিরবধি , বয়ে চলো হে নদী
নীলাঞ্জন ছায়া সঞ্চারী তব বুকে,
মেঘের ভেলা ভেসে যায় কী সুখে
সেই বুকে একদিন ভাসাতাম খেয়া যদি .....



কোন সুদূরের পানে ওরে মনমাঝি বেয়ে যাও
উদাসী গাঙে একাকী আনমনে
আমার মন পবনের নাও ......


শেষ শরতের গন্ধ মেখে নীলাকাশ
মেঘের কুন্তলে সাজে
আলোর প্রজাপতি ছড়িয়ে ডানায়
সে আকাশ যেন - মরি মরি লাজে .....



সন্ধ্যার আকাশের কাছে
শরৎ সূর্য্যের মাধুরীমা নিয়ে
কিছু নগ্ন নির্জনতা পড়ে আছে
.......


ভিজে হয়ে আসে এ নদী
শরৎ সন্ধ্যার কোমল মুরতি
কেমন মেখে থাকে বুকে তার,
এইখানে একদিন
ফিরে আসিব আবার
কোলের সন্তান তব কোলের ভিতর !


বর্ষা হয়ে গেছে শেষ
তবুও প্রান্তরে তার রেশ
বিপুল বিস্তারে,
শরতের নীল নভ তলে
তারি ছায়া ভাসে জলে
কড়ি ও কোমলে........



পঞ্চ পল্লবখানি মেলি
শুভ্রবসনা , বাসন্তী নয়না
শিশিরে ভেজা এক শিউলি ........


ভেজা শিউলির তলে .......


শিউলি ফুঁটে ঝরছে কতো আমার আঙ্গিনায়
শিশির ভেজা সকাল বেলা তার গন্ধে ভরে যায় ...


অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের সাথে সাথে পরিবেশও যেমন ধ্বংশ হতে বসেছে তেমনি সামাজিক – সাংস্কৃতিক অবক্ষয় ও আজ জেঁকে বসেছে ।
তবুও শরতের নীলাকাশ বেয়ে , শিউলির গন্ধ গায়ে মেখে আসে শারদোৎসব । ঈদ উৎসবের মতোই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ যেন বাঙলার প্রানের উৎসব । মহা মিলনের উৎসব । ঈদ যেমন সব ভেদাভেদ ভুলে মানুষকে বুকে টেনে নেয়ার মন্ত্র শেখায় , শরতের এই উৎসবও যেন তাই ।

বাতাস যেমন একদিকে কাশের বনে দোলা দিয়ে যায় তেমনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উঠোনেও ফুল্লরার আগমনী বার্তা নিয়ে লুটিয়ে পড়ে হেসে হেসে ।
শিউলি হয়ে ঝরেন তিনি , আসেন মহামায়া, যজ্ঞেশ্বরী হয়ে । অসুরের বিরূদ্ধে সুরের জয় , পামরাত্মার বিরূদ্ধে পুণ্যাত্মার জয় নিয়ে । গমন করেন সর্বভুতে , দুর্গতিনাশিনী হয়ে শান্তির - সমৃদ্ধির বারতা ছড়িয়ে ।
এ এক প্রতীকি বার্তা । ইহলৌকিক । মানুষ যেন নিবেদিত হয় মানবকল্যানে । মানুষ যেন মানুষকে ডেকে নেয় অন্তরে । সহমর্মিতার বন্ধনে যেন জড়ায় তাকে । মনের অসুরকে জয় করে মানুষ যেন ছোটে সুরের অমৃতকুম্ভের সন্ধানে । জলে, বায়ুতে, অন্তরীক্ষে, বাক্যে, মননে , চিত্তে এই সংস্কৃতির সুর যেন বেজে চলে দ্রিম দ্রিম তালে ।

যা দেবী সর্বভুতেষু
শান্তি রূপেন সংহস্থিতাঃ


হে কল্যানী, কল্যান করো
এ মানবে,
ধুম্রজালে নাশ
দানবে .......



অন্তরের নৈবেদ্য ঢালি
সাজাই পুজোর থালি
যদি করুনায় ফিরে দেখো চাহি ,
দুর্গতি নাশ এ ধরাধামে
তুমি বিনা কল্যানী আর নাহি .....



আরতির ঘন্টা কেঁদে কেঁদে শেষ
বিসর্জনের পালা কি যে অনিমেষ
বাজে বুকের তলে ।
হৃদয় নিঙ্গাড়ী অর্ঘ্য
তুলে দিয়ে এই বেলা
সাঙ্গ হলে সব খেলা
ভাসাই তোমায় জলে .......


আবাহনের এই সুর সংষ্কৃতি হয়ে বাঙলার ঘরে ঘরে যেন বাঁধে সামাজিকতার বন্ধন ।
আগেই বলেছি , আকাশ দেখেনা বলেই আজকাল মানুষ উদারতা জানেনা ; বিশালতা কি বোঝেনা তাও ।
তাই মনে হয় - মানুষে মানুষে সামাজিকতার ,সংস্কৃতির, সহযোগিতার, সহমর্মিতার এই অচ্ছেদ্দ বন্ধন ছিড়ে গেলে দেশ আর দেশ থাকেনা , একটি ভূখন্ড হয়ে যায় ।

চলবে ..........
প্রথম পর্ব : Click This Link

[এই ছবি ও লেখা ব্লগটি সাজানো হয়েছে কয়েকটি অধ্যায়ে – বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত আর গ্রীষ্ণ নিয়ে ঋতুচক্র – পালাবদলের দিন, নিঃস্বর্গ, দেশ ও জীবন গাঁথা ; এমন করে।

আমার একটি পোষ্ট “মাগো, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফেরে .....” [ ছবি ও লেখা ব্লগ ] তে সহব্লগার সচেতনহ্যাপীর মন্তব্যটিই আমার এই ছবি ও লেখা ব্লগটির প্রেরনা । ......]


ছবি – ইন্টারনেট থেকে ।
প্রতিটি ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি তাঁদেরই যারা ছবিগুলোর প্রকৃত দাবীদার ।
আর স্বনামধন্য যে সব কবি-লেখকের দু’একটি চরন তুলে এনেছি, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি সেই মহাগুনীজনদের ও ।
এদের সকলের কাছেই ঋনী হয়ে রইলুম ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫
৪৭টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×