somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“লভ এ্যান্ড রোমান্স” । সখি ভালোবাসা কারে কয়......

১৫ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত শব্দটিই হলো “ ভালোবাসি” । এটা বলা যতো সহজ , বোঝানো লক্ষকোটি গুন কঠিন । আপনি হয়তো একশত ভাগ আন্তরিক যখন আপনি বলেন, “ আই লাভ য়্যু ” । কিন্তু একথা বলে আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছেন আপনি ?
তাই এই পোস্টটি পড়ার আগে কাগজ, কলম নিন । নীচের শূন্যস্থান যুক্ত বাক্যটি লিখুন ১০ বার । তারপর শূন্যস্থানগুলো পূর্ণ করুন -
“যখন ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলি তখন আমি তোমাকে বোঝাতে চাই যে --------- ”

কি , কিছু বোঝাতে পেরেছেন ? খুব কষ্ট হবে বোঝাতে । কারন ঐ বাক্যটির অর্থ একেক জনের কাছে একেক রকম অর্থে ধরা দেবে ।
আপনি হয়তো আপনার স্ত্রী বা স্বামী কিম্বা সন্তান কিম্বা ছেলে বা মেয়ে বন্ধুদের , এমনকি আপনার কলিগদেরও এমন কথা হাযারবার বলেছেন ।
খুব খেয়াল করে দেখুন , যতোবারই আপনি বলেন, “ আই লভ য়্যু ” তখন একেকবার একেক অর্থে বলেন । ভিন্ন ভিন্ন ভাব বোঝাতে বলেন ।
যে মানুষটি পরিবারের কারো কাছ থেকে জীবনেও কোন ভালোবাসাই পায়নি তার কাছে এই বাক্যটি একটি স্বপ্নের মতো মনে হবে ।
আপনি আপনার সন্তানকে কড়া শাসনে রাখেন আবার বলেন, খুব ভালোবাসেন বলেই তাকে এমন শাসনে রাখতে হয় । আপনার সন্তানের কাছে এই ভালোবাসার রূপটি আপনার স্ত্রী বা স্বামীকে ভালোবাসার রূপটি নয় । আবার যৌবনদীপ্ত ছেলে বা মেয়েটি পরিবারের এতো এতো স্নেহ- ভালোবাসা পাওয়ার পরেও অন্যকারো কাছ থেকে “ আই লাভ য়্যু” শোনার জন্যে নির্ঘুম রাত কাটায় । বর্তমানে যা হালচাল, সেখানে ছেলেমেয়েদের বলা “ আই লভ য়্যু” বাক্যটিতে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিতটাই থাকে বড় বেশি ।
এমন উদাহরন দেয়া যাবে হাযারো ।
আসলে “আমি তোমাকে ভালোবাসি” বাক্যটি অনেক কনফিয়্যুশানের, অনেক বেদনার আবার অনেক আনন্দেরও ।
আপনি কাগজে ১০ টি শূন্যস্থানে যে ১০টি উত্তর লিখেছেন তা আপনাকে বিভ্রান্তিতেই ফেলে দেবে । এবং সম্ভবত ঐগুলোর কোনটিতেই আপনি একশতভাগ স্বচ্ছ নন । বলুন তো, কোন উত্তরটি আপনি সততার সাথে দিয়েছেন ?
আসলে “আমি তোমাকে ভালোবাসি” এর অর্থ এই বাক্যের তিনটি শব্দে নেই । আছে এটা বলার পেছনের আকুতিতে, বলার অনুভবে ।



এবার তাহলে দেখা যাক “ সখি ভালোবাসা কারে কয়......” এর “ভালোবাসা” কি জিনিষ ।
কোনও জিনিষের প্রতি অনুভবের সুতীব্রতা , আবেগের তীক্ষ্ণতা, অতল আকর্ষণেচ্ছা বা নিজের সবটুকু দিয়ে সমর্পণের নামই হলো - ভালোবাসা । ভালোবাসা একটা অনুভূতি, একটা বিশ্বাস । একে বর্ণনায় বর্ণীল করা যায়না, যায়না ছোঁয়া । ভালোবাসা হলো সম্ভাব্য মাত্রার সব্বোর্চ্য অর্থ নিয়ে ভরপুর, তরঙ্গায়িত এক ভাষা । এর দেশ, কাল , পাত্র নেই । নেই বর্ণ, নেই জাত ।
ভালোবাসা হতে পারে বিভিন্ন ধরনে, এটা প্রসারিত হতে পারে, আবরিত হতে পারে , লতিয়ে উঠতে পারে জাগতিক যে কোনও কিছুর শরীর-মন ঘিরে । এই যেমন আপনি ভালোবাসেন -
- তীর ভাঙা ঢেউ ,
-ঝুম বর্ষা কিম্বা
-ঘাসের ডগায় একটি শিশির বিন্দু ।
আবার ভালোবাসতে পারেন -
-দুলকি চালে চলা ঘোড়া,
-গরর...গররর করে কোলের উষ্ণতা খোঁজা বেড়াল কিম্বা
-দৌঁড়ে এসে পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়া কুকুরটিকে ।
কেবলমাত্র সুন্দরের প্রতিই আমাদের সকল ভালোবাসা লুটিয়ে পড়বে এমন কোনও কথাও নেই । প্রকৃতির অসুন্দরতাকে , অপূর্ণতাকে মেনে নিয়ে যিনি ভালোবাসা সমর্পণ করেন , ভালোবাসার পাত্র-পাত্রীটিকে বা বস্তুটিকে গড়ে তোলেন মনের মাধুরী মিশিয়ে তার ভালোবাসা নিখাদ - সত্যিকারের ।
মনে হয় , এই ভালোবাসা আপনার একটা জন্মগত অধিকারও বটে । আপনি ভালোবাসা পাবার যেমন অধিকার রাখেন তেমনি রাখেন ভালোবাসতেও । আপনি যে বেঁচে আছেন, এমন একটা অনুভূতিই তো আপনার নিজেকে ভালোবাসতে শেখায় । একটা “ নার্সিসাস” বোধ প্রতিটি মানুষেরই জন্মগত, প্রকৃতিদত্ত । এও তো ভালোবাসা, নিজেকে !

তেমন কারো জন্যে, কিছুর জন্যে ভালোবাসায় আপনার খাঁদ নেই মোটেও , এমনটাই মনে হয় । ভালোবাসার এই প্রকাশটি খুব সাধারন থেকে হতে পারে উচ্চাঙ্গের । আবার পাত্র ভেদে এর ভেতরে থাকতে পারে ভরসার জায়গাটি, থাকতে পারে নিরাপত্তাবোধের নিশ্চয়তা । এর সাথে সঙ্গ, আস্থা, আনুগত্য, আকর্ষণ, নিবেদনের মতো মানবিক কিছু কিছু চাওয়া তো থাকতেই পারে । তবে সবকিছু ছাপিয়ে ভালোবাসার যে ধ্রুপদী রূপ তা “বিশ্বাস” নামের ইটে গাঁথা । ভালোবাসার এমন একটি রূপ আপনি পাবেন অচ্ছেদ্য বন্ধুত্বে । এরকম ভালোবাসার স্বরূপটি মনে হয় যেন নীচের শের’টিতেই দ্যোতনায় ভাস্বর --

দোস্তি দিল হ্যাঁয়, দিমাগ নহী...
দোস্তি সোঁচ হ্যায়, আওয়াজ নহী ।
দোস্তি কী জজবো কো,
কোই আঁখো সে দেখ সেকতা নহী
কিঁউকি দোস্তি এহসাস হ্যাঁয়, আন্দাজ নহী ।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, “ভালোবাসা” বললেই এসবের কিছুই আপনার মনে পড়েনা ।
আপনার কেবলই মনে হয় - অন্যকিছু , গা শিউরে ওঠা কিছু , মনকে উথাল পাথাল করে দেয়া কারো মুখখানি, কোনও কিছুর অবয়ব । যা ভালোবাসার নামে শুধুই “ মোহ” । মানব-মানবীর বেলায় এ যেন , একজোড়া চোখের বিদ্যুত তরঙ্গ আর এক জোড়া চোখের ভেতর দিয়ে হৃদয় নামের জায়গাটিকে তরঙ্গায়িত করে যাওয়া মাত্র ।

গ্রীকো-ক্রিশ্চিয়ান মতে এমন “লভ” বা “ ভালোবাসা”র চারটি ধারা রয়েছে । ভালোবাসা বলতে প্রচলিত ধারনায় আমরা যা বুঝি তার নাম -“ ইরোস” (Eros) । ইরোটিক শব্দটি এখান থেকেই জন্ম নেয়া । দর্শন এবং মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এই ইরোটিক শব্দটির যতো ব্যাখ্যাই থাকনা কেন, আমাদের ধারনায় তা শারীরিক উত্তেজনা । তাই আমাদের ধারনা মতের ভালোবাসায়, শারীরিক একটা আকর্ষণের ব্যাপার - স্যাপার থেকেই যায় জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে।
“ষ্টোর্জ” (Storge) হলো পারিবারিক ভালোবাসা । নিজের ধারে কাছের লোকজনদের প্রতি ভালোবাসা । যেমন সন্তান, ভাইবোনদের প্রতি ভালোবাসা । এমন ভালোবাসা এক ধরনের অনুরাগ , স্নেহ জাতীয় আবেগ ।
“ ফিলিয়া” ( philia) হলো বন্ধুত্বপূর্ণ ভালোবাসা । রক্তের সম্পর্কের বাইরে কাউকে আস্থার জায়গায়, বিশ্বাসের জায়গায়, অন্তরঙ্গতার জায়গায় বসানো ।
“ এ্যাগেপ” (agape) হলো স্বার্থহীন ভালোবাসা । এর কোন ব্যাখ্যা নেই, কেন এমনটা হয় । অনেকটা ইউটোপিয়ার মতোন ।
আবার ঈশ্বরেও ভালোবাসা সমর্পিত হয় । এখানে আমাদের সবার ভালোবাসাতে কোনও আলাদা রঙ মনে হয় নেই । এ এক নিখাদ আত্মসমর্পণ । আ ডিভাইন লভ উইথ নো ক্যাটেগরী !

ভালোবাসাকে মানুষ যে কতোভাবেই না শ্রেনীকরণ করেছে । এই সব শ্রেনীভেদের ব্যাখ্যায় আবার আছে হাযারো মতভেদ । দার্শনিকরা বলেন এক , তো মনোবিজ্ঞানীরা বলেন আরেক ।
ফ্রয়েড সাহেব তো আবার সকল ভালোবাসার মাঝে কামগন্ধ খুঁজে পান ।
সাইকোলোজিষ্ট রবার্ট ষ্টার্ণবার্গ ভালোবাসার একটা ত্রিভুজ থিওরীও দাঁড় করিয়েছেন । প্যাশন (physical arousal), অন্তরঙ্গতা (psychological feelings of closeness) আর কমিটমেন্ট (the sustaining of a relationship). এই তিনটি বাহু দিয়ে নাকি ভালোবাসার ঘরটি বাঁধা হয় ! আবার এ বাহু তিনটির পারম্যুটেশান করে আবার সাত রকমের ভালোবাসাও নাকি হয় । এর ভেতরে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভালোবাসা হলো “রোমান্টিক” আর “কনজ্যুমেট লভ” । অন্যগুলো হলো লাইকিং, কমপ্যাশনেট লভ, ইম্পটি(শুন্য) লভ, ফ্যাটিউঅ্যাস লভ আর ইনফ্যাচুয়েশান বা মোহাচ্ছন্ন হওয়া। ষ্টার্ণবার্গ বলেছেন, বিবাহিত দম্পতিদের মাঝে অন্তরঙ্গতাই হলো বিবাহিত জীবনের সন্তুষ্টি ।



যে যা্-ই বলুক আসলে সত্যিকারের ভালোবাসা এক ও একক, নির্দোষ, অবিচল , স্বয়ংসিদ্ধ, অক্ষয় এক মানসিক অনুভূতি । সকল ভালোর সমন্বয়, একটি সুর । বিশ্বাস এর মূল উপাদান । হুট করে এমনটা হয়না । অনুরাগের কুঁড়ি থেকে ফুল, ফুল থেকে পরাগায়ন হয়ে ফল হয়ে ওঠার দীর্ঘ পরিক্রমায় যেতে হয় তাকে । তারপর জড়িয়ে ওঠা, আত্মার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে, যেখানে শরীরের কোনও জায়গা নেই । নিজের আমিকে (ইগো) অন্যের মাঝে বিলীন করে দেয়াই ভালোবাসার প্রথম শর্ত ।
আবার অবিচ্ছেদ্য হলেই গাঢ় বা সত্যিকার ভালোবাসা হয়না । বিচ্ছেদের পরেও দু’জনে দু’জনার প্রতি বিশ্বাসে অবিচ্ছেদ্য হলেই তবে তা হয় ।

আর রোমান্স হলো ভালোবাসার উপস্থাপনার ঢং । একটি শিল্প । এতে ভালোবাসা বোঝাতে একটি নিবেদন স্পষ্ট করা হয় । এটা বাহ্যিক । যেমন, ভালোবাসার পাত্র-পাত্রীটিকে আপনি একটি ফুটন্ত গোলাপ দিয়ে স্বাগত জানাতে পারেন । আর যদি সবে কুঁড়ি হয়ে ওঠা একটি শিশির স্নাত গোলাপ দু’হাতে তুলে ধরে, হাটু মুড়ে যদি আপনার ভালোবাসার পাত্র-পাত্রীটিকে সমর্পণ করেন তবে তা আরো গাঢ় একটি নিবেদনকেই ঈঙ্গিত করে । একটি সময় ছিলো, যে সময়ে একটি মেয়ে তার ভালোবাসার পাত্রটিকে রুমালে নিজ হাতে ফুল তুলে এমন একটি বাক্য- “ যাও পাখি বলো তারে , সে যেন ভোলেনা মোরে” বা “তুমি মোর বন্ধু বটে , রেখো মোর স্মৃতি” লিখে উপহার দিতো । এগুলো হলো রোমান্টিক রোমান্টিসিজম । ভালোবাসার ক্যানভাসে রঙের কি জেল্লা ধরাবেন সেটা নির্ভর করে আপনার সৃজনশীলতার উপর , আপনার আবেগের গভীরতার উপর , ভালোবাসার জনের প্রতি আপনার অনুরাগের মাত্রার উপর, তাকে চমৎকৃত করার উপায়ের উপর । এটা আপনার ভালোবাসাকে প্রলম্বিত করতে , দৃঢ় করতে সাহায্য করে । করে আবেগাপ্লুত, সুমিষ্ট। দু’জনাকে কাছে টানার রসায়নে এও ভালোবাসার গুরুপাকে একটি পাঁচফোঁড়ন ।
ভালোবাসা যদি হয় নিভৃত এক ফল্গুধারা , তবে রোমান্স তার বয়ে যাওয়ার কুলুকুলু ধ্বনি ।

ইতিহাসবিদরা বলেন , ইংরেজি “রোমান্স” শব্দটি এসেছে ফরাসী আঞ্চলিক ভাষা থেকে যা কেবলমাত্র সমাজের উচ্চশ্রেনীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ একটি ধারনা । এটা সে সময়কালের ফ্রেঞ্চ এলিটদের কথা বলা , লেখা আর শৈল্পিক চিন্তার নান্দনিক প্রকাশ । আবার এটাও বলা হয় “রোমান্স” শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ““রোমান্টিকাস” শব্দটি থেকে যার অর্থ “ রোমান ষ্টাইল” । আমাদের ধারনায় “ রোমান ষ্টাইল” বললেই যেমন আভিজাত্যময় কিছু বুঝি, আসলেও এটা যেন ভালোবাসায় আভিজাত্যের পরাগ মাখানো কিছু।
এই রোমান্সের খেলায় আমি আপনি যেভাবে খেলি তাকেও আবার ছকে ফেলেছেন সমাজবিজ্ঞানীরা ।
তারা বলেন , এটা হতে পারে ফ্লার্ট ( Flirt) করা । যেমন , “আহ কি মুক্তো ঝরানো হাসি আপনার।” কাউকে এমনটা বলা ।
হতে পারে অন্তরঙ্গতা (Intimacy)- যেমন, চোখে চোখে চাওয়া (Eye contact) । সেই গানটির মতোন - চোখ যে মনের কথা বলে ।
আবার আলতো চুমু খাওয়া (Kissing), আদর করা (Hugging), হাতে হাত রাখা (Holding hands) এগুলোও আরেক ধরনের রোমান্স ।
আবার পারষ্পারিক যোগাযোগের গুটি চেলেও এই রোমান্সের খেলাটি খেলতে পারেন আপনি । একসময়ে প্রেমপত্রের চল ছিলো খুব । নীলখামে চিঠি দেয়া । ডাকপিয়নের অপেক্ষায় বসে থাকা । চিঠি চালাচালি এখন আর নেই বললেও চলে । মোবাইলে মেসেজ চালাচালি সে জায়গাটাকে দখল করে ফেলেছে বেমালুম । অবশ্য এখনকার অস্থিরতার যুগে রোমান্সকে হতে হয় গরম গরম । ডেটিং করা , ফেসবুক চ্যাটিং, ফোন রোমান্স ইত্যাদি হলো চলতি সময়ের পালে লাগা গরম হাওয়া।

ভালোবাসা আর রোমান্স নিয়ে যারা ঘাঁটাঘাঁটি করেন তারা বলেন , রোমান্টিক ভালোবাসা হলো একটি জটিল আবেগ । এ ধরনের ভালোবাসা আবর্তিত হয় দু’টো ধরনে । আসক্তিমূলক (প্যাশনেট) আর অংশীদারীত্বমূলক (কমপ্যাশনেট) । আসক্তিমূলক ভালোবাসা (প্যাশনেট লভ) জন্ম নেয় সক্রিয় আর সুতীব্র একটি আবেগ থেকে যেখানে আপনি মনে করেন , পৃথিবীর সব সুখ এখানেই । কখনও কখনও এটা আপনাকে কষ্টও দেয় । বিজ্ঞানীরা এধরনের ভালোবাসাকে তুলনা করেন , “কোকেন” এর নেশার সাথে । কারন, কোকেন গ্রহনে আপনার মস্তিষ্ক থেকে যেমন “ ডোপামিন” নামের একটি হরমোন নিঃসৃত হয় এবং একটি সুখানুভূতিময় আবেগ সৃষ্টি করে তেমনি প্যাশনেট লভ এর সময় আপনার মস্তিষ্ক থেকে এই “ ডোপামিন” টিই নিঃসৃত হয়ে থাকে । এ ধরনের ভালোবাসা সাধারনত স্বল্পমেয়াদী । যার পরিনতিতে অনেক সময় আপনাকে গাইতে হয় - “ তুমি অনেক যত্ন করে আমায় দুঃখ দিতে চেয়েছো..............”
আর অংশীদারীত্বমূলক ভালোবাসায় (কমপ্যাশনেট লভ)পরষ্পরের মাঝে একটি ধীরস্থির আস্থার জন্ম হয় , জন্ম হয় প্রশান্তির । তখন আপনার গেয়ে উঠতে ইচ্ছে করে ---“ভালোবাসি - ভালোবাসি, জলে স্থলে বাজায় বাঁশি......”
রোমান্স, ভালোবাসার প্রতি একপ্রকার বিনয়ের প্রকাশ ও বটে । আবার ভালোবাসায় যে রোমান্স থাকতেই হবে এমন কোন কথাও নেই ।

শুরুতেই বলেছি , পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত শব্দটিই হলো “ ভালোবাসি” । এটা বলা যতো সহজ , বোঝানো লক্ষকোটি গুন কঠিন ।
সব মিলিয়ে ভালোবাসায় পতিত হওয়া যেন গভীর এক কুয়োর মাঝে পড়ে যাওয়া । যারা সে কুয়ো থেকে জমজমের পানি তুলতে পারেন তারা উৎরে গেলেন । আর যারা পারেন না তাদের হৃদয় ভাঙা জল সে কুয়োর জলকেই বাড়ায় শুধু । তখন মনের ভেতরে এই গান গুনগুনিয়ে ওঠে -“ ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে ......”
এই শ্রেনীর জন্যে একথাটিই বলতে হয় - একটি হাসি দিয়ে ভালোবাসার শুরু । চুম্বনে তা বাড়ে । কিন্তু শেষ হয় চোখের জলে ।

এখনকার যুগে ভালোবাসার এইসব ধারনা পাল্টেছে । লাইলি-মজনু , শিরী-ফরহাদ কিম্বা রোমিও-জুলিয়েটদের দিন পার করে, কেয়ামত সে কেয়ামত তক হয়ে আসা প্রেম-ভালোবাসা, আজ আর ডুব-সাতার দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবেনা । প্রেম-ভালোবাসায় সেদিনের সেই লালিত্য আজ যান্ত্রিকতার যাতাকলে পড়ে কর্পোরেট মানসিকতার খোলসে শুধু “গিভ এ্যান্ড টেক” হিসেবে বাজারজাত হয়ে গেছে । যাকে আমরা এই দিনকালে “প্রেম-ভালোবাসা” বলছি তা আসলে “মোহ”, যেখানটা প্রান কিম্বা হৃদয় ছাড়া আর অনেক কিছু দিয়েই সাজানো । অনেকটা যেন হাইব্রীড হয়ে গেছে এর নান্দনিকতাও । গায়ে গতরে বেশ ভারী দেখালেও স্বাদ নেই, সুগন্ধ নেই ।
তাই আজকাল “ভালোবাসা” বললেই অনেকের মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে যায় শারীরিক সম্পর্কের মধুরতা ।
ভালোবাসা বলতে যারা বোঝেন - গোলাপী নেশা, শরীরের ঢেউ, উদ্দাম নাচ, সমুদ্র সৈকতে একটি রাত তাদের কাছে ভালোবাসা ধরা দেয় মুহূর্তেই, আবার হারিয়ে যায়ও নিমিশেই । এরা ভালোবাসায় স্নিগ্ধ রোমান্সের বদলে স্পাইসি ডিওডোরান্টের সুবাস মাখেন । এটা ভালোবাসা নয় - মোহ বা কাম ।

সবশেষে বলি , অনেকের কাছেই হয়তো ভালোবাসা একটা ফালতু জিনিষ ।
তবু ঐ ফালতু জিনিষটা আমাদের কিছুতেই ছাড়েনা । প্রতিদিনই আমরা বলি , ভালোবাসি - ভালোবাসি, আবার প্রতিদিনই তা বাদামের খোসার মতো ভেঙেও ফেলি । আবার নতুন করে ভালোবাসায় মাতি । এভাবে কতোবার শ্বাস টেনে নিয়েছি তা দিয়েই জীবনটা শুধু মেপে যাই আমরা । কিন্তু ভালোবাসার যে মূহুর্তগুলো আমাদের শ্বাস রূদ্ধ করে দিয়ে গেছে তা পড়ে রয় অবহেলায় । মেপে দেখিনে ।

ছবির কৃতজ্ঞতা ইন্টারনেট এর কাছে
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:৫০
৯৯টি মন্তব্য ১০০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×