রুনা লায়লা: জন্ম সিলেটে, (১৭ই নভেম্বর ১৯৫২)। বড় বোন দীনা লায়লার হাত ধরে গানের জগতে প্রবেশ। মাত্র ৬ বছর বয়সেই রেকর্ড করেন '"ছোটিসি মুন্নী মেরী ভাইয়া কি পিয়ারী"' গানটি।শিল্পীর জীবনের বিরাট একটা অংশ কেটেছে পাকিস্তানে। সেখানকার প্রচুর ছবিতে প্লে-বেক ও করেছেন। একের পর এক হিট গান উপহার দিয়ে জনপ্রিয়তা যখন উর্ধ্বমুখী তখন পাকিস্তানের পপ সম্রাজ্ঞী নুরজাহানের নোংরা পলিটিক্সের শিকার হলেন। ভারতে গিয়ে কয়েকটা হিন্দী গান গেয়েই যখন লতা-আশার একচেটিয়া রাজত্বে একটা ঝাকুনি দিলেন,সেখানেও বিপত্তি।লতা আশা প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলেন, রুনা এ দেশে গান করলে তারা গান গাওয়া ছেড়ে দেবেন।স্বাধীনতার পর যখন দেশে ফিরলেন, স্বরলিপি ছবিতে প্রথম প্লে-বেক করলেন। গাজী মাযহারুল ইসলামের লেখা এবং সুবল দাসের সুরে "গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে " অসাধারন এই গানটি দিয়েই যাত্রা শুরু।এখানেও এলো প্রতিবন্ধকতা। আবারও শুরু হল নোংরা পলিটিক্স। যার নেপথ্যে কাজ করতে লাগলেন সাবিনা ইয়াসমিন সৈয়দ আব্দুল হাদী প্রমুখরা। নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্য্যন্ত আব্দুল হাদী তো রুনার সাথে কোন গানই করেন নাই। আর সাবিনা গেয়েছিলেন মাত্র একটি (১৯৭৫ সালে, প্রতিনিধি ছবির 'তুমি বড় ভাগ্যবতী' )। মোটকথা যখন যেখানেই গিয়েছেন তাকে খুব স্ট্রাগল করতে হয়েছে।
যাইহোক, আলোচিত এই শিল্পীকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এককথায় বলা যায় ঈশ্বর প্রদত্ত কন্ঠ। ক্যারিয়ারের এই লম্বা সময়ে প্রচুর গান গেয়েছেন। সার্বিকভাবে তাঁর গান গুলো পর্যালোচনা করলে যেটা ধরা পড়ে, সারাজীবন প্রচুর অখাদ্য গান গেয়ে তার অমুল্য কন্ঠটা বাজে খাতেই ব্যবহার করেছেন বেশী। "লাল দুপাট্টা অঙ্গে আমার থাকতে চায়না, আমার গালে ছোট্ট একটা তিল আছে, এই দিলের তালা খুললো কে..এক চাবিওয়ালা"----এ ধরনের সস্তা আর চটুল গান এত বেশী গেয়েছেন যে, তার ভাল গান গুলো খোজার জন্য দুরবীন হাতে নিতে হয়। (আমার মনে হয়না কেউ তার ভাল গানের সংখ্যা তিরিশ টার বেশী দেখাতে পারবে।)
ফিল্মের গান ফরমায়েসী গান। এখানে নিজস্ব মতামত হয়তবা গৌন। কিন্তু এসব ফালতু গানে উনার নিজেরও যে আগ্রহ ছিলনা তাই বা বলি কি করে। যারা তার লাইভ অনুষ্টান দেখেছেন, তাদের অবশ্যই খেয়াল থাকার কথা, কোন টাইপের গানগুলো উনি স্টেজ প্রোগ্রামের জন্য সিলেক্ট করেন। প্রায় প্রতিটি অনুষ্টানেই গৎ বাধা কিছু গান যেমন 'দমাদম মাস্কালান্দর, দিয়ে শুরু আর সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী দিয়ে শেষ। মাঝখানে " বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িত গেলাম, হায়রে কপাল মন্দ,তোমারো দুনিয়া দেখিয়া শুনিয়া" এগুলা থাকবেই। অথচ মজার ব্যাপার হল এই গান ক'টির(বন্ধু তিন তিন দিন--ছবি কসাই, হায়রে কপাল মন্দ--ছবি গোলাপী এখন ট্রেনে, তোমারো দুনিয়া--ছবি সুন্দরী)মূল শিল্পী যিনি, সেই সাবিনা ই্য়াসমিনকে কোনদিনই কোথাও এগুলো গাইতে দেখিনি।আর রুনাকে এসব গান না করলে যেন অনুষ্টানের পূর্ণতা পায়না।অথচ যে গান গানগুলো মানুষ বারবার শুনতে চায় সেগুলোর মুল্য রুনার কাছে নিতান্তই তুচ্ছ।তেমনই কিছু গানঃ
গানেরই খাতায় স্বরলিপি
যখন থামবে কোলাহল
অনেক বৃষ্টি ঝরে তুমি এলে
সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে
আয়রে মেঘ আয় রে
হাতের কাঁকন ফেলেছি খুলে
যখন আমি থাকবো নাকো
আমার মন বলে তুমি আসবে
আমি তো সুজন দেখে ভাব করেছি
তোমারে পেয়েছি আমি হাজার বছর পরে
তুমি ছিলেনা যখন, চোখে ছিল না স্বপন
কি দিয়ে তোমায় জানাই প্রীতি
আকাশ বিনা চাঁদ বাচিতে পারিনা
গান নয় জীবন কাহিনী
হেরে গেছি আজ আমি নিজের কাছে
দুটি মন যখন কাছে এলো
ভূলনা আমাকে ভুলে যেও না
আমায় গেঁথে দাও না মাগো
স্মৃতি ঝলমল সূনীল নদীর কাছে
নদীর মাঝি বলে এসো সুজন
শেষ করো না ,শুরুতেই খেলা
হায়রে স্মৃতি বড় জ্বালাময় ।......এরকম হ্য়তো আরও ২/১টা গান বাকী থাকলেও থাকতে পারে ।