somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার যাত্রা দর্শন পর্ব ( কিছুটা রম্য :), কিছুটা ১৮+ :P:P )

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মিন্টু , সম্পর্কে আমার দূরসম্পর্কের ভাতিজা । সমবয়সী হওয়ায় ফ্রেন্ডও ।
মাঘের ১ তারিখ এলেই ভাতিজা মিন্টুর কেমন জানি উশখুশ শুরু হয়ে যেত । কারন মাঘের ১ তারিখ থেকে বিখ্যাত '' নলদিয়ার '' মেলা শুরু হয় ।
ওই মেলায় তার উপস্থিতির পরিমান , সমবয়সী অন্য যে কারো কাছে ঈর্ষনীয় ছিল । মেলা যত দিন , সেও ততদিন । মানে সে ছিল মেলার বান্ধা কাস্টমার । ঠিক মেলার কাস্টমার নয় , মেলার মুল আকর্ষণ যাত্রার কাস্টমার । কেউ মেলায় যাবে বললে সে বলতো আমি যাত্রা ষ্টেজের দক্ষিণ পূর্ব কোণের বাঁশের গোড়ায় আছি , ওটা মনে হয় তার রিজার্ভ সিট ছিল ।

আরেক জুনিয়র ফ্রেন্ড ভাগিনা বাবুল ।
মিন্টু একবার ভাগিনা বাবুল কে প্রিন্সেস ''বেবি'' ''মুন্নি'' , বিবসনা , কি সব ভুজং ভাজং দিয়ে রাজী করিয়ে ফেলল । দেখি তারা দুজন বেবি ট্যাক্সি নিয়ে এসে হাজির । ( তখনো সিএনজির যুগ আসেনি )

বাবুল প্রস্তাব দিল , মামা চলো , যাত্রা দেখতে যাব ।
আমি বললাম , ধুর ! বেটা । যাত্রা দেখে ফাত্রা লোকে ।
ভাগিনা বলল , আমরাও ফাত্রা লোক , ট্যাক্সিতে উঠো ।

দেশের নাম করা এক অপেরা যাত্রা পরিবেশন করছে । অসাধারণ তাদের অভিনয় ।
যাত্রার ফাঁকে ফাঁকে '' টর্চ লাইট ওয়ালাদের '' মনোরঞ্জন ।

যারা যাত্রার দর্শক নন তারা এই '' টর্চ লাইট ওয়ালাদের '' চেনার কথা নয় ।
যাত্রার কয়েক দৃশ্য পর পর দর্শকদের ঘুমের ভাব দূর করতে , ও বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ করতে স্টেজে হঠাৎ আবির্ভাব ঘটে রাজকন্যাদের ।
এদের পিতৃদেব কোন রাজ্যের রাজা , জানা না গেলেও দেখলাম সকলের নামের শেষেই প্রিন্সেস বিশেষণ লাগানো ।

ধুমকেতুর মত এরকমই এক প্রিন্সেসের স্টেজে আগমন । পোশাক আশাকে বেশ ধ্রুপদী । সুন্দর এক গানের সাথে চমৎকার নৃত্য ।
একটু পরে দেখি কড়া বাদ্য বাজনার সাথে চটুল গান । গানের কথা সব আদিরসাত্মক ।
নাচ আর গানের তালে রাজকন্যার পোশাক একটা একটা করে খুলে যাচ্ছে । একটা সময়ে এসে --- আস্তাগফেরুল্লাহ !
লজ্জায় তাকাতে পারিনা । দেখলাম বাবুল লজ্জায় লাল হয়ে আরেক দিকে তাকিয়ে আছে , মিন্টু চেয়ার থেকে উঠে আনন্দে ফেটে পড়ছে , আর হাতের টর্চের আলো দিগম্বরীর গায়ে বিদ্ধ করে হুম ! হাম উল্লাস ধ্বনি করছে । এরকম টর্চ লাইট ওয়ালাদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয় ।

এক সময় ঝড় থেমে পৃথিবী আবার শান্ত হল ।

'' তুহার কোন ভয় নাইরে মায়েজি , '' বলে মঞ্চে এক জংলী রাজের আবির্ভাব । হাতে কোয়েল জাতীয় একটা জ্যান্ত পাখি । জংলী রাজ পাখিটার দুই রান দুই দিকে টান মেরে চ্যাৎ করে ছিঁড়ে কাঁচাই খাওয়া শুরু করলো । কি ন্যাচারাল অভিনয় !
দর্শকের মুহুর্মুহু করতালি ।

হঠাৎ জংলি শুরু করল বমি , একেবারে মঞ্চে ফিট । সেটাও ন্যাচারাল । কিন্তু একি ! জংলি উঠার নাম নাই ।

এমন সময় হা রে রে রে বলে মঞ্চে আরেক তুর্কীর আগমন । বমিতে পা পড়ে বে মক্কা আছাড় । তরবারি গিয়ে পড়লো মিন্টুর কোলে ।
কিন্তু একি ! জংলি উঠার নাম নাই কেন ?

পরে জানা গেল অভিনয়ের ঘোরে জংলিটি পাখির নাড়িভুঁড়ি সব গিলে ফেলেছে ।

অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার আগেই মঞ্চে কোমর অবধি চুল ওয়ালা আরেক জংলির আবির্ভাব ।
হাতে পিস্তল ।
উপরের দিকে ৩/৪ রাউনড গুলি । ''জংলী''দের পালায় পিস্তল এলো কোথা থেকে ?
দর্শকের বুঝে আসার আগেই একদল হকিস্টিক ধারী শুরু করলো চেয়ার ভাঙ্গা , সাথে কয়েক জনের মাজা ও ।

(পরে জেনেছিলাম , এই জংলী যাত্রার কোন কুশীলব নয় , সে কোম্পানি গঞ্জের বিখ্যাত সেলিম গুন্ডা । ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় তার এই রুদ্র মূর্তি ) ।

যে যেদিকে পারে দে ছুট ।

অন্ধকারের ছুটাছুটিতে তিন জন তিন জন কে হারিয়ে ফেললাম ।

কাউকে খুজে পাচ্ছিনা । বাকি দুজন এখানে এসে জড়ো হবে এই আশায় , বেবি ট্যাক্সির দিকে এগিয়ে গেলাম ।

দেখি ট্যাক্সি ওয়ালা ব্যাটা ট্যাক্সি সমেত অনেক আগেই পালিয়েছে ।
অনেক কষ্টে ফজরের আজানের পর তিন গুনমুগ্ধ দর্শকের পুনর্মিলন ঘটলো ।
দেখি মিন্টু ঠক ঠক করে কাপছে । খালি পা , পুরো গা ভিজা ।

-- কিরে ঘটনা কি ?
বলল - ষ্টেজের পশ্চিম পাশের পানিতে পড়ে গেছিলাম ।

সে যেখানে পড়েছিল ওটা ছিল একটা বড় গর্ত । যেখান থেকে মাটি তুলে স্টেজ উঁচু করা হয়েছিল ।
মুগ্ধ দর্শকের ছোট খাটো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ডাক তথা , জল বিয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে ,সবাই সেখানে এসে ভার মুক্ত হচ্ছিল ।
যার পরিণতিতে পানি সদৃশ ওই তরলে ওখানে থই থই অবস্থা ।

বললাম , পানি কোথায় পেলি ? ওখানেতো সব পেশাব ।

মাঘ মাসের স্যাঁতস্যাঁতে মাটি , যেন ঠাণ্ডা বরফ ।
বললাম তুইতো শিতে মরে যাবি । চল তোর স্যানডেলের খোঁজ করি ।
প্যান্ডেলে তার স্যান্ডেলের কোন সন্ধান পাওয়া গেল না । একটা রূপসা আর একটা চামড়ার স্যান্ডেল পাওয়া গেল । এই শীতের ভিতর তাই সই ।

সমস্যা হল রূপসার একটা বেল্ট ছিঁড়া । ফানটার একটা পাইপ দিয়ে সে অনেক কষ্টে সেটা পায়ে আটকানোর ব্যাবস্থা করলো ।

পদব্রজে রওয়ানা হলাম । গন্তব্য বসুর হাট । প্রায় ৮ মাইল । অনেক্ষন হাঁটার পর ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে । পিছনে দেখি ম্যারাথনে প্রচুর লোক । মিন্টুকে দেখিনা ।

মিন্টুউউউউউউউউউউউউ বলে যত বারই ডাকি , পিছন থেকে এক পাগল এইতোওওওও বলে জবাব দেয় ।
বাবুল মহা বিরক্ত ।
পাগলটাও কাছে চলে এসেছে ।
বাবুল বলল , এই ব্যাটা ফাইজলামি করচ কা , চোবাই দাঁত ফালাই দিমু ।
পাগলটা হাউমাউ করে উঠলো , বাবুল ; আমি মিন্টু ।

গায়ে পোশাকে , প্রস্রাবে কাদায় মাখামাখি , গা থেকে বিকট গন্ধ বেরুচ্ছে , আসলেই তাকে চেনা মুশকিল ।

এর পরের ঘটনা আরো করুণ ! মামা ভাগিনা গাড়ীতে উঠতে পারি , মিন্টু উঠতে গেলেই পাগল ভেবে হেল্পার ছেই ছেই করে দৌড়ানি দেয় ।

পোশাক , কাদা , পাদুকা আর গন্ধে তার যে অবস্থা , এক্ষেত্রে পাগলরা রীতিমতো ভদ্র লোক । এমতাবস্থায় হেল্পারকে যে সুপারিশ করবো সে উপায়ও নাই । অগত্যা সেই ই একমাত্র ছাদের যাত্রী ।
ওই নিউমোনিয়ায় সে তিন মাস ভুগেছিল ।
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×