somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলাম পাগলা ও কয়েকটি লাইভ জোক । B-):D:):P

১৩ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন , '' এলাকায় এক আধটা পাগল থাকা ভালো , এতে এলাকার নাম ফাটে । ''

আমাদের এলাকায়ও এক জন ছিল । এর কারনে এলাকার নাম ''ফেটেছিল'' কিনা জানিনা , তবে অনেকের মাথা ফেটেছিল , এ আমি বিলক্ষণ বলতে পারি ।

আলাম পাগলা ।

বেশ এগ্রেসিভ । হাতে সব সময় একটা লাঠি থাকতো । আমার দোস্ত পারভেজ ক্লাসএইটের বছর , ২/৩ বার এর হাতে ''ছেঁচা'' খেয়েছিল ।

একবার ''আমারে দেখলে তুই ডরাছ কা ?'' বলেই মারল বাড়ি । সেই থেকে আলাম সাহেবকে দেখলেই সন্ত্রস্ত পারভেজ, '' আলাম ভাই হাহ হাহ '' বলে একটা শব্দ করতো ।

এর জন্যও একদিন জবাব দিহি করতে হল , '' এই ব্যাটা হাহ হাহ কিরে ? ''
বিপদ আসন্ন টের পেয়ে পারভেজের গলা শুকিয়ে গেল । এই মাত্র রাস্তার ধারে ''কম্ম'' সারার পরও আবারো সে ''পিসাবের'' বেগ অনুভব করল ।

ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল , ভাই আপনারে দেখলে এখন আমি ডরাই না , তাই হাহ হাহ করে হাসতেছি ।

আলাম হুংকার দিয়ে উঠলো ,''আলাইম্মার ডরে পুরা গেরাম থরথর করি কাঁপে , আর তুই ডরাছ না ? এত বড় বুকের পাটা ? আইজকা তোরে দেখামু ডর কারে কয় !আইজ ২/৩ মাস দাঁত মাজিনা । তোর বুকের পাটার হাড্ডি চুনা কইরা আমি আইজকা সাদা মাজন বানামু । ''

শাঁখের করাত কি , এ তো রীতিমত রয়্যাল বেঙ্গলের পাল্লায় পড়া । পূর্বে একবার ''খিচ্চা'' দৌড় দিতে গিয়ে সে আলামের লাঠির রেঞ্জের ভিতর পড়ে গিয়েছিল । তাই পুনর্বার এই বিপদজনক সিদ্দান্ত নিতে সে সাহসী হল না ।
ভয়ে আধমরা ''শিকার'' ভাবল এই মুহূর্তে দোয়া দরূদ ছাড়া উপায় নাই ।
তাই সে ''লাকুম দি'নুকুম ওয়ালিয়া দিন , লাকুম দি'নুকুম ওয়ালিয়া দিন '' বিড়বিড় করতে থাকলো ।

গানের সুর শুনে দোয়া দরূদে কাজ হয়েছে ভেবে পারভেজ কিছুটা ধাতস্থ্য হল । আলাম বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে গাইছে ,''আজ পাশা খেলবোরে শ্যাম, আজ পাশা খেলবোরে শ্যাম ।
পাগলটা মনের সুখে গান গাইছে দেখে তার মনে কিছুটা আশার সঞ্চার হল ।
কিন্তু গানের কথা গুলি পারভেজের কাছে তেমন সুবিধার বলে মনে হল না । লিরিক্সে কেমন বিপদের গন্ধ !

লোকমান হুজুর বলেছিলেন , যত বড় বিপদ হোক , এই দোয়া পড়লে কেটে যাবে । তার বেলায় দেখা যাচ্ছে বিপদ আরো ''খামিরা খাইতেছে'' । এত বড় বিপদ মনে হয় দোয়ারও আওতার বাইরে ।

অকস্মাৎ তার মনে পড়লো ,সে বিরাট ভুল করে বসে আছে । লা হাওলা ওয়ালা কু'য়াতার স্থলে ভুল করে সে অন্য কি একটা পড়ে বসে আছে ।

পদ যুগলের আচরণও তার সুবিধার মনে হচ্ছে না । স্টার্ট দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লক্কর ঝক্কর ''মুড়ির টিনের'' গিয়ারও মনে হয় এত জোরে কাঁপে না । আলামের লোশঠাঘাতের পূর্বে এই কম্পন থামবে বলেও মনে হচ্ছে না ।

এইবার আর ভুল নয় । সে বিড় বিড় করে সঠিক দোয়াটা আওড়াতে থাকলো ।
এতক্ষনে দোয়ার ফল হাতে হাতে পাওয়া গেল । আলামের মুখে মৃদু হাসি । '' যা , বাড়িত গিয়া পেন্ট পাল্টা , ভাগ । ''

এই বয়সে ডায়াবেটিসে ধরল কিনা, এই চিন্তা পরে করা যাবে ভেবে পারভেজ তিন লাফেই পগার পার ।

স্থানীয় হাই স্কুলের ইংলিশ টিচার আবুল কালাম আজাদ । আমাদের বাড়িতে লজিং থাকতেন ।
আলাম একদিন ইনাকে চার্জ করে বসলো। মুখে তেলতেলে হাসি নিয়ে বলল ,
- মাস্টর সাব , লেকাপড়া কি পর্যন্ত করছেন ।
মাস্টার সাহেব উত্তর দিলেন , B.A পর্যন্ত ।
আলাম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো , --কির পুতে কয় কিরে ? এত দিন পর্যন্ত অক্ষর শিখচত দুইটা , তাও উল্টা । তুই পোলা মাইয়া গোরে কি পড়াইবিরে ! বলেই মারল বাড়ি । কালাম মাস্টার স্পোর্টস ম্যান ছিলেন তাই চতুর্থ বাড়িটা গায়ে লাগেনি । তিন দিন জ্বরে ভুগে তিনি বাড়িত্রয়ের প্রায়শ্চিত্য করেছিলেন ।

যাক , যা বলতে ছেয়ে ''আলাম কাহিনীর'' অবতারণা তাতে আসি ।

এই যুগে ইংরেজি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই । স্কুল জীবন থেকে এর ভিত মজবুত না করলে পরবর্তীতে ছাত্রছাত্রীদের কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় । একটা বিদেশী ভাষাকে সহজবোধ্য করে ছাত্র ছাত্রীদের সম্মুখে উপস্থাপন , তথা শিক্ষা দেয়ার মত যোগ্যতা , মেধা ,প্রশিক্ষন কি আমাদের ইংরেজি শিক্ষকদের আছে ?

মেধা আর যোগ্যতার অভাবে অন্য কোন চাকুরী প্রাপ্তির প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে , এরা অন্ধের ষষ্ঠী হিসাবে বেছে নিচ্ছে শিক্ষকতাকে ।
( অবশ্য এর ব্যাতিক্রম ও আছে )

প্রচলিত এক প্রাচীন প্রবচন , '' যার নাই কোন গতি , সেই করে পণ্ডিতী ।''
এখন চিত্র কিছুটা পালটালেও মফস্বলের অনেক শিক্ষকই এখনো এই প্রবচনের প্রতিনিধিত্ব করছেন ।

আমার মনে আছে আমাদের হাই স্কুলের এক শিক্ষক ইংরেজি Scurvy ( স্কার্ভি , এটি মাঢ়ির খুব পরিচিত একটি রোগ ) কে বার বার সারভিয়া পড়ছিলেন ।
আমার এক ছোট ভাই লাভলু ,তার এক ক্লোজ ফ্রেন্ড , উপজেলার নামকরা এক উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংলিশ টিচার । এক মেয়েকে না দেখেই তার প্রেমে পড়েছে । একদিন লাভলুকে বলল , আমার প্রেমে পড়ে মেয়েটার অবস্থাতো খুব সিরিয়াস ! দেখ কি S.M.S করেছে ।
( চা সিঙ্গারা জাতীয় কিঞ্চিৎ সন্মানির বিনিময়ে লাভলু তার এই লাইনের উপদেষ্টা ছিল )
লাভলু ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে , লিখা আছে I have no balance , plz call me .
এই S.M.S এ মেয়েটার সিরিয়াসনেস প্রমানে লাবু কোন বিশেষত্ব খুজে পেল না ।
তার এই অসহায়ত্ব অনুধাবনে শিক্ষক প্রবর নিজেই এগিয়ে এলেন , আরে !মেয়েটা আমার প্রেমে কি রকম মজে গেছে বুঝলেনা ? । সে লিখেছে I have no balance । মানে , আমি আমার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছি , plz call me .
বছর দুএক আগে , আমাদের উপজেলার আরেক স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক তার স্কুলের সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন , লোকটা যে এম এ আজিজ লিখে , সে কি আসলেই এম এ পাশ করেছে ?
শুনে আমি মূর্ছা !!!

কোন রকম ধাতস্থ্য হয়ে তাকে ইঙ্গিত বাহী প্রশ্ন করলাম ( যাতে সে নিজের ভুল বুঝতে পারে )
- কেউ M.A , B.A পাশ করলে এটা কি নামের আগে লাগায় ?
লোকটা উত্তর দিল ,-- না ! এটাতো নামের পরেই লাগায় । কিন্তু দেখেন এই ব্যাটা কত বড় বেকুব ,''M.A'' টা নামের আগেই লাগিয়ে বসে আছে ।

রীতিমত লাইভ জোক , কিন্তু আমি হাসতে পারলাম না ।

এই যখন আমাদের ইংরেজী শিক্ষকদের অবস্থা , তাদের ছাত্রদের ইংরেজীর অবস্থা আরও করুন হবে এটাই স্বাভাবিক ।
এই শিক্ষকদেরকে আমার আলাম পাগলার ''এত দিন পর্যন্ত অক্ষর শিখচত দুইটা , তাও উল্টা'' এই টাইফের শিক্ষক বলেই মনে হয় ।
ইংরেজি শিক্ষার মান উন্নয়নে এর একটা বিহিত হওয়া আবশ্যক , অন্যথায় একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় , আমাদের তরুনরা পিছিয়ে পড়বে ।

২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×