somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

''কসম'' আমি ভূত দেখেছি'' =p~

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



- ভাই জান,এই ভাই জান তাড়াতাড়ি উঠেন ।
সুনীলের পূর্ব পশ্চিম পড়ে রাতের একটায় শুয়েছি । সবে ঘুমটা ঝাঁকিয়ে বসেছে এমন সময় বিরক্তিকর ডাকাডাকিতে আমার ঘুমের বারোটা বেজে গেল ।

বিরক্ত হয়ে বললাম - কি হইছে ?
- হঠাৎ পেটে মোচড় দিয়ে উঠেছে ।
- হঠাৎ কেমনে হইল ? গতকালওতো আপনার এমনটি ঘটেছে ।
- গতকাল নয় পরশু ।
- ওই হইলো !
- ভাই ,ভাই , ভাই সময় নষ্ট কইরেন না --
অনিচ্ছা সত্ত্বেও পায়ে স্যান্ডেল ঢুকাতে ঢুকাতে বললাম - চল ! আইজকা তোরে খাইছি !
এ কথাটা অবশ্য মনে মনে বলেছি । হাজার হোক তালেবে এলেম মানুষ ।

আমাদের বাড়ীর দরজায় ছিল বিশাল এক কাছারি ঘর । এর দুপাশে দুই কামরা আর মাঝের বিরাট অংশ ফাঁকা , সামনে সিংহ দরজা ।
সবে ফার্স্ট ইয়ারে উঠেছি , বিরাট বড় হয়ে গেছি , মনে এরকম একটা ভাব ।

নাটক ,পালা গান , যাত্রা দেখা জাতীয় পরিপূর্ণ স্বাধীনতা উপভোগ করতে ঘর ছেড়ে কাছারি ঘরের উত্তরের কামরায় আসন পেতেছি । এজন্য অবশ্য আম্মাকে - আমি যে বিরাট বিদ্যাসাগর , ঘরে আমার পড়া লিখার বিরাট সমস্যা ইত্যাদি বলে অনেক ভুজং ভাজং দিতে হয়েছে ।

দক্ষিনের অংশে থাকতেন একজন হুজুর আর মাষ্টার , দুজনেই জায়গীরদার (লজিং) ।
পেটের পিড়াটা হুজুরের সাথে বিরাট দোস্তিয়ালী করে বসে আছে । সেই সুত্রে ''ল্যাট্রিন''এর সাথে হুজুরের বন্ধুত্বটাও স্থায়ী রূপ নিয়েছে ।
''ল্যাট্রিন'' জিনিষটা বন্ধু হিসেবে তেমন সুবিধার না , তার কোন সময় জ্ঞ্যান নেই । রাত দুটা তিনটায়ও হুজুরকে ডেকে বসে । সাড়া না দিয়ে হুজুরের কোন উপায় থাকে না ।
হুজুরটা ছিল আবার ভীতুর একশেষ । দিনে দুপুরেও সে ভূতের ভয় পেত ।

পূর্বে মাস্টারকে সাথে নিয়ে তিনি বন্ধুর সাথে মোলাকাত করে আসতেন ।
একদিন ''কাচা ঘুম'' ভাঙানোয় ঘুমের ঘোরে মাষ্টার হুজুরের তলপেটে ক্যোঁৎ করে এক লাথি দিয়ে বসলেন । ব্যাস ! কম্ম সারা ।
রুমটা ধোয়া মোছা করতে হুজুরের ঘণ্টা দুই সময় লেগেছিল এই যা !

তবে ধোয়া মোছার কাজটা হুজুরের খুব একটা মনপুত হয়নি , তাছাড়া লাথির ব্যাথা সারাতে হুজুরকে সপ্তাহ খানেক ওষুধ খেতে হয়েছিল ।
তাই তিনি মাষ্টারকে ডেকে আর রিস্ক নিতে চান না ।
আমার রুমের দরজায় ধাক্কা ধাক্কি করে আমাকে ডেকে তুলেন । বিরক্ত হলেও আম্মার ভয়ে কিছু বলতে পারিনা ।

অগত্যা সামনে বদনা হাতে হুজুর , পেছনে আমি । গন্তব্য ছনখোলা বনের খোলা ল্যাট্রিন ।

আষাঢ় মাস ,চারদিকে পানিতে থৈ থৈ । ব্যাঙের ডাক ,পানিতে মাছের লাফ ঝাপ , নানা পতঙ্গের ডাক আর কবরের অন্ধকার মিলিয়ে এক ভয় ধরানো পরিবেশ । এর ভিতরে আবার সামনে দিয়ে চলে গেল তিনটি শেয়াল ।

হুজুরের মাশুকের কাছাকাছি এসে আমি বললাম , যান ; আমি এখানে আছি ।
হুজুর কি সব বিড়বিড় করে বুকে ফুঁ দেন আর আগে বাড়েন ।

তিনি জানেন আমি ভুত প্রেতে ভয় পাইনা ।
তাই আমার সাহসে বলিয়ান হয়ে হুজুর মনের সুখে কাম সারা করছেন , মাঝে মাঝে গলা খাঁকারি দিয়ে উনি যে এখনো কন্দ কাটার খপ্পরে পড়েন নি তা জানান দিচ্ছেন ।
আমিও প্রত্যুত্তর দিচ্ছিলাম ।
হুজুরের এরকমই এক গলা খাঁকারির প্রত্যুত্তরে আমিও গলা খাঁকারি দিয়ে অন্ধকারে কাছারি ঘরের উদ্দ্যেশ্যে দিলাম ভোঁ দৌড় ।

সোজা নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম ।

কিছুক্ষন পর হাঁপাতে হাঁপাতে হুজুর এসে আমার দরজায় ধাক্কা ধাক্কি শুরু করে দিলেন ।
কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় মহা বিরক্ত এরকম একটা ভাব নিয়ে আমি দরজা খুললাম ।

হুজুর পারলে কেঁদে দেয় এরকম হয়ে আমাকে বলল - ভাই জান এইটা আপনি কি কাম করলেন ? আমাকে ভূতের দুর্গম আস্তানায় একা ফেলে আপনি চলে এলেন ? আমি খালাম্মার কাছে বিচার দিমু । এর একটা বিহিত না হলে আমি আপনাদের বাড়ীতে থাকুম না , সকালেই আসসালামুয়ালাইকুম ।

সর্বনাশ ! ওলামা মাদ্রাসার মুহাদ্দিস সাহেবকে (আমার আম্মার ভাই) অনেক বলে কয়ে আমার আম্মা এই হুজুরকে জায়গীর এনেছেন ।
সে চলে গেলে আম্মা মনে কষ্ট পাবেন , আর চলে যাওয়ার পিছনে আমার হাত আছে এরকম প্রমান হলে আমারও রক্ষা নাই ।

বললাম - আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতেছিনা । আবার বলেন ।
হুজুর আবার বললেন - আপনাকে নিয়া আমি ল্যাট্রিনে গেলাম , আর আপনি এই রাতের দুটায় আমাকে সেখানে একা ফেলে চলে এসেছেন ?

আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ! আমাকে নিয়ে আপনি ল্যাট্রিনে গিয়েছেন ? কখন ? এসব কি বলছেন আপনি ? আমিতো এর কিছুই জানিনা !!

হুজুর চোখ বড় বড় করে বললেন - কি বলেন ? ওটা আপনি ছিলেন না ?
- আরে না ! আমিতো আজ নয়টায়ই শুয়ে পড়েছি , এই এখন আপনার ডাকে আমার ঘুম ভাঙল ।
- লা হাওলা অলা কুউয়াতা ------ লা হাওলা অলা কুউয়াতা ------ হুজুর বিড়বিড় করে পড়তে লাগলেন ।

বললাম আপনি ভাল করে খেয়াল করেছেন তো ? ওটার ছায়া ছিল ? কথা কি নাঁকি নাঁকি বলছিল ? পা কি উলটা দিকে ? গায়ে কি মাছের গন্ধ ছিল ----- আমি বলেই যাচ্ছি ।
হুজুরের প্রতিক্রিয়া কি বুঝতে উনার দিকে তাকালাম । দেখি হুজুর ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ করতে করতে ধপাশ করে মাটিতে পড়ে নাকে মুখে ফেনা ছেড়ে দিয়েছেন ।

পুনশ্চ ঃ এর পরে ''কসম'' আমি ভূত দেখেছি বলে ডাল পালা বিস্তৃত করে হুজুর এই কাহিনীটি বহুস্থানে বিবৃত করেছেন ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪১
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×