somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অ-রম্য! =p~ মৃণালিনী দেবীর রান্না করা কচুশাক খেয়ে রবি বাবু যে গানটি লিখেছিলেন ও মুজতবা আলীর অসার কথা ।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১ /
খেতে বসেছি । প্রথমেই গিন্নি ডালের বাটি দিয়ে গেলেন !
ডাল কেমন জানি বিবর্ণ দেখাচ্ছে । চামুচ দিয়ে একটু মুখে দিয়ে ওয়াক করে উঠলাম ।
- চ্যা চ্যা চ্যা ! কি ডাল রেঁধেছ , এর চেয়ে মহসিন হলের ডালওতো আরো ভাল ছিল !

দৌড়ে এলেন গিন্নী ।

- ডাল কোথায় দেখলে ? এগুলো স্যুপ !
- স্যুপ ? ও ইয়ে ! তাইলে আমার ক্ষিদা নাই ।
- এতক্ষণ ক্ষিদা ক্ষিদা বলে বাসা মাথায় তুলছো , এখন বলছো ক্ষিদা নাই ? একটু খেয়ে দেখ , দারুণ হয়েছে । ছিদ্দিকার রেসিপি ।
- কোন ছিদ্দিক্কা ? ছিদ্দিক ভাই ?
- আরে নাহ ! ছিদ্দিকা আফা । ও তুমি চিনবেনা ।

২ /
একটু পিছনে যাই ---
সকালে বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছি । গিন্নি তার বান্ধবীর সাথে ম্যারাথন আলাপ জুড়ে দিয়েছেন । এক পর্যায়ে কার জানি মৃত্যু সংবাদ চালাচালি হচ্ছে । কান খাড়া করলাম !
- আহারে ! চুমকির হাজব্যান্ড টা মারা গেল , কি যে খারাপ লাগছেরে ---

চুমকি আমার খালাতো শালী । অনার্স ফাইনালের সময় আমাদের বাসায় ছিল । মাস ছয়েক আগে বিয়ে হয়েছে । বরটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী , অমায়িক ভদ্রলোক । এমন তরতাজা মানুষটা মারা গেল আর আমি জানলাম না ! ভীষণ রাগে গিন্নীদের পরবর্তী আলাপ আমার আর কানে ঢুকেনি । আলাপ চারিতা শেষ হলে গিন্নীকে ডাকলাম ।

- চুমকির বর কবে মারা গেছে ?
- গত কাল ।
- এরকম একটা সংবাদ তুমি আমাকে দিলেনা ?
- তোমাকে দিয়ে কি হবে ? তুমি এসব বুঝ নাকি ?
- দেখ কাজে কর্মে বিজি থাকি তাই হয়তো শ্বশুর কুলের আত্মীয় স্বজনের খোঁজ খবর তেমন রাখতে পারিনা । কিন্তু চুমকিতো আমাদের পরিবারের সদস্যের মত ! তার বরের মরার সংবাদ আমি পাবো না , এটা কেমন কথা ?

গিন্নী খিল খিল করে হেসে উঠলেন , আমার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে ।
- আরে পাগল এই চুমকি সেই চুমকি নয় ! এ চুমকি ''বুঝে সে সব বুঝে'' সিরিয়ালের চুমকি ! ( হাসির বাকি অংশ--)

ছোট্ট বেলায় বাবা নিয়মিত ইত্তেফাক পত্রিকা পড়তেন । সেখানে টারজান নামে এক কার্টুন সিরিয়াল দেখতাম ।
ওই টারজান দেখি ইত্তেফাকে এখনো চলছে ।

ভারতীয় চ্যানেল গুলিতেও এ জাতীয় কিছু সিরিয়াল চলে । আগা, মাথা লতা, পাতা ছড়িয়ে সিরিয়ালের এমন অবস্থা হয়েছে , কিভাবে এর সমাপ্তি টানা যায় তা এর নির্মাতারা জানে না । তাই চালিয়েই যাচ্ছে ! যেন ব্রেকহীন রেলগাড়ী ।
অনেকটা ''চাবি মাইরা দিছে ছাইড়া , চলতে আছে জনম ভরে '' টাইফ !

গিন্নী এরকম সব সিরিয়ালের ডাইহার্ট ফ্যান । সেরকম কোন সিরিয়ালের কে মারা গেছে , এটাও তাদের আলোচনার অংশ ! আর আমি কিনা তাকে বাস্তব জীবনের সাথে গুলিয়ে ফেলছি !

ইদারনিং দেখি তিনি চ্যানেল বাদ দিয়ে বই পাঠে মনোযোগ দিয়েছে । এত দিনে সুমতি হয়েছে , সিরিয়ালের চেয়ে বই পড়া লক্ষ গুণ ভাল ! আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি ।

নানা পুষ্টির প্রলোভন আর অনুরোধ উপরোধে মাড় জাতীয় ও তরল গলা দিয়ে নামাতে বাধ্য হলাম ।
মানুষ অনুরোধে ঢেঁকী গিলে , পিতা পুত্র কন্যা গিললাম 'রাইচমিল' । স্যুপ !

ফলাফল নোস্পা , ওমিডন , ওমিপ্রাজল , ফ্লাজিল আরও কি কি মিলিয়ে জন প্রতি ৩১৬ টাকার ঐষধ !

৩ /
আরেক দিন টেবিলে কাউডাং সদৃশ্য এক বস্তু । জিজ্ঞাসিলাম এগুলা কি ?
জানালেন কচুপাতার পাতুরি ; ইন্ডিয়ান রেসিপি ।

ইন্ডিয়ান এক মুভি দেখেছিলাম , 'বিধিলিপি' না কি যেন নাম। সেখানে ইলিশের মাথা দিয়ে কচু শাক রান্না করে, বউ ; শশুর শাশুড়িকে না দিয়ে তা একা খাওয়ার পাঁয়তারা করছে । এই নিয়ে বিরাট গৃহ যুদ্ধ , যেন ওটা কচু শাক না হয়ে অমৃত ছিল ।

আর আমাদের বাড়ীতে ইলিশের মাথাটা কাঁটার ভয়ে কেউ খায় না । ওটা সচরাচর কুকুর বেড়ালের পেটে যায় । এই নিয়ে গিন্নী অনেক হাসাহাসি করেছিলেন ।
সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে কিছু কথা বললাম ।
আরো বললাম , তুমি ভাল করেই জান ,কচু শাকে ''ঝগড়াটে মহিলাদের স্বামীর গলা ধরে'' , সেই সুত্রে আমারও ।

গিন্নি কটমট করে আমার দিকে তাকালেন - ''ঝগড়াটে মহিলাদের স্বামীর''? দেখ এখন আমার ঝগড়া করার মুড় নাই । গলা ধরবেনা , সোডিয়াম কার্বনেট দিয়েছি । ও বইতে লিখেছে কচু ,লতি, কচুশাকে সোডিয়াম কার্বনেট দিলে গলা ধরেনা ।

এতক্ষণে বই পড়ার মাজেজা আমার কাছে পরিস্কার হল । ওটা ছিল অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবিরের 'উপমহাদেশের হাজার রান্না' বা এ জাতীয় কোন রেসিপির বই । যাকে সিরিয়াল দেখার চেয়ে হাজারগুণ ভাল বলে ভ্রম করেছি ।

পাতুরি না চচ্চড়ি পুত্রের দিকে এক চামুচ এগুতেই পুত্র বিদ্রোহ করে বসলো -

- দেখ ! এসব গোবর খাবর যদি আমার প্লেটে দাও , প্লেট শুদ্ধ উড়াল মেরে ফেলে দেব ।
মেয়ে লেইজারে বাসায় এসেছে , বলল ওইসব আমাকে দিতে চাইলে না খেয়ে চলে যাবো ।
মা হলে আমিও বিদ্রোহ করতাম ।

গৃহশান্তি ভঙ্গের আশংকায় এক চামুচ মুখে দিলাম ।
সাথে সাথে মুখ দিয়ে স্বগতোক্তির মত রবি বাবুর একটা গান বেরিয়ে এল - ''আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান--'' ।
আমার ধারণা ঠাকুর সাহেব মৃণালিনী দেবীর রান্না করা কচু শাক খেয়ে এই গান লিখেছিলেন ।

গিন্নি বললেন - বিড়বিড় করে কি বলছো ? খেতে কেমন লাগছে ?
বললাম - গোবরের মত ।
গিন্নি ঝামটা দিয়ে উঠলেন - ওসব খাওয়ারও অভিজ্ঞতা আছে দেখছি !

৪ /
খেয়ে উঠলাম । পেটের অবস্থা সুবিধার মনে হচ্ছেনা ।
গায়ে শার্ট জড়াচ্ছি দেখে গিন্নি জানতে চাইলেন , কোথায় যাই ।
বললাম -সৈয়দ বাড়ীর মোস্তফা আলীর কথার ঠিক নাই ।
- সে এখনো তোমার টাকা দেয়নি ?
- সে মোস্তফা নয় , লিখক মোস্তফা । লিখতে শিখে মোস্তফা আলী থেকে হয়ে গেছেন মুজতবা আলী ।
- তিনি তোমার কি করলেন ?
- তিনি বলেছিলেন 'বই পড়ে কেউ দেউলিয়া হয়না। ''
তোমার বই পড়ার কারণে আমি ঐষধ কিনতে কিনতে দেউলিয়া হতে বসেছি!
এখন ডিসপেনসারিতে যাচ্ছি ।

৫ /
বেশ কিছু দিন থেকে গিন্নি একটা ওভেন কিনে দিতে বলছেন । আজ কিনে দিলাম ।
তবে শর্ত প্রযোজ্যঃ - আমাকে স্যাম্পল প্রোডাক্ট খেতে বাধ্য করা যাবেনা ।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫০
৮০টি মন্তব্য ৮০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×