somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বামী কেন চাকর ; জীবন থেকে নেয়া রম্য ।

১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




এক লোক দোকানে গিয়ে নাপিতকে বলছে , আচ্ছা তুই ছাগলের দাঁড়ি কামাতে পারিস ?
নাপিত বলল , আসেন চেষ্টা করে দেখি।

চেষ্টা করতে দোষ নাই ,তাই একটা রম্যের অপচেষ্টা ।
ছোট বেলায় সম্ভবত সুকুমার রায়ের এক ছড়া পড়েছিলাম , ‘’মেজাজ ছিল তিরিক্ষি তার , মাথায় ছিল চুলের বাহার।‘’ সাথে এই চুলের বাহার ওয়ালা লোকটির খড়ের গাঁদার মত বিশাল চুল সমেত মাথার একটা ছবি । জিনিষটা ছিল দেখার মত । বেটার চুলের ভিতর পাখিরা বাসা বেঁধে ছানাপোনা নিয়ে দিব্যি বসে আছে ।

এরকম এক লোক গেল চুল কাটাতে । নাপিত তাকে চেয়ারে বসিয়ে অনেকক্ষণ ধরে চুলে বিলি কাটছে ,চুল কাটার নাম নাই । লোকটা অধৈর্য হয়ে খেঁকিয়ে উঠলো , আধা ঘনটা ধরে চুল নিয়ে টানাটানি করছিস বিষয় কি ? চুল কাটবি কখন ?
নাপিতও খ্যাপা – রাখেন আপনার চুল কাটা ! চুলের ভিতরে কাঁচি হারাই ফেলছি , খুইজ্জা পাইতাছিনা ।

কাঁচি হারালে কাঁচি পাওয়া যায় , আমার নানা বাড়ীতে যে নাপিত আসতো সে হারাতে বসেছিল এমন বস্তু যা হারালে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না ।
প্রতি শুক্রবার ছিল নানা বাড়িতে ‘ক্ষেরি’ দিবস । হরেন্দ্র নাপিত এসে সবার চুল দাঁড়ি কেটে দিয়ে যেতো । টাকা পয়সা দিতে হতনা । ধানের মৌসুমে এসে ধান নিয়ে যেতো ।

চুল কাটার বিষয়ে আমার বৈরাগ্য ছিল , কাটাতে চাইতাম না । যতটা ছিল বৈরাগ্য তার চেয়ে বেশি ছিল ভীতি । চুল কাটা শেষ হলে ফিনিশিং টাচ দেয়া হত ক্ষুর দিয়ে । এ জিনিষ আমার ঘাড়ে ছোঁয়ানোর সাথে সাথে আমার ভীষণ কাতুকুতু পেতো । একবার ঘাড়ের উপর ৯ যায়গায় ক্ষুরের পোঁচ লেগেছিল ।

এক শুক্রবার আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে হরেন্দ্রর দুই হাঁটুর মাঝে সোপর্দ করা হল । আমি নাকি বেশি নড়া চড়া করি তাই হাঁটু থেরাপি । বৃদ্ধ হলে কি হবে বেটার হাঁটু যেন শিল কাঠে তৈরি । দুদিক থেকে চেপে ধরেছে ,মাথা ঝিম ঝিম করছে, চোখে অন্ধকার দেখছি ।
আধা ঘণ্টা শেষে ফিনিশিং টাচ ! এই বার সে আমার ঘাড়ের উপর পা তুলে দিয়ে ঝাঁতি মেরে ধরেছে ।

সেকালে তসরের সুতা দিয়ে এক প্রকার জালির থলে বানানো হত । সেখানে টাকা ,খুচরা পয়সা রাখা হত । পয়সা খুচরা হলেও তখন তার ভ্যালু ছিল । ৫ পয়সায় একটা আস্ত বারো মিঠাই পাওয়া যেতো । এই থলিকে আমরা বলতাম ‘খইলতা’ । টাকা থাক বা না থাক খইলতা একটা সকলের কোমরের তাগির সাথে ঝুলে থাকতো । বয়স্করা কাপড়ের তৈরি খইলতা ব্যবহার করতো , একে ‘দোলবান’ও বলা হত ।

একটা চল তখনো ছিল এখনো আছে , চুল কাটা শেষ হলে নাপিত দুই হাতের তালু এক করে আঙ্গুলে আঙ্গুল লাগিয়ে ঠাশ ঠাশ করে মাথায় বাড়ি মারতো এতে বেশ আরামই লাগে ।

আমারও তখন ঠাশ ঠাশ কর্ম চলছে । এমন সময় ধুতির ফাঁক দিয়ে আমার আবচা নজর পড়লো বেটার ‘খইলতা’র উপর । ঠাশ ঠাশ এর সাথে তাল মিলিয়ে ওটাও বেশ দোল খাচ্ছে । মাল পানি ভালই আছে বলে মনে হল । মনে একটা দুষ্ট বুদ্ধি এল , এতক্ষন ব্যাটা হাঁটু দিয়ে ,কাঁধে পা তুলে আমার জান পেহচান করে ফেলেছে । এখন টান দিয়ে বেটার ‘খইলতা’ নিয়ে পালিয়ে যাবো ।

যেই ভাবা সেই কাজ , ‘খইলতা’ ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে দিলাম দৌড় ! ভাগ্য খারাপ ! শক্ত রশি দিয়ে ওটা বেঁধে রেখেছে, ছিঁড়তে পারিনি । পিছনে ফিরে দেখি ব্যাটা রাম রাম , ভগবান ভগবান বলে গড়া গড়ি দিচ্ছে আর চিৎকার করছে । সবাই দৌড়ে এল বিষয় কি ? বিষয় কি ?

হরেন্দ্র আর্ত চিৎকারের ফাঁকে ফাঁকে জানালো – ‘’চবুরার হোলায় আঁর ‘অন্তরকোষ’ টানি ছিঁড়ি ফালাইতো লাগছে গো --- ।‘’

বয়সে বড় মামাতো ভাই বলল - করছস কি ?
আমি বললাম , কি করছি ? আমি বেটার ‘দোলবান’ ধরে টান দিছি , ‘দোলবান’রে বুঝি ‘অন্তরকোষ’ কয় ?
মামাতো ভাই বলল – ‘বলদ ! তুই বেটার ‘অণ্ডকোষ’ ধরি টান দিছত!’’ :P

আমার বুঝে আসছিল না ও বস্তু তার নিজের স্থান ছেড়ে বিঘত খানেক নিচে এসে ঝুলছিল কেন?

ঘটনা এখানেই শেষ হলে ভাল হত ।



আমার আম্মা ছিলেন কট্টর রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে । সেকালে হিন্দু ,মুসলমান একে অন্যকে অস্পৃশ্য মনে করতো ।
আম্মা ছিলেন আরো এক কাঠি সরেস, হিন্দুদের ধরা ছোঁয়া কিনা এই ভয়ে তিনি জীবনে বাজারের মিঠাই মণ্ডা খান নি । আমার মেঝ ভাই একবার উনার দুস্তিয়ালা গৌরাঙ্গকে আমাদের ঘরে খাইয়েছিলেন , আম্মা ঘরে ছিলেন না । পরে কোন প্লেটে খেয়েছে ভাবীরা এটা সনাক্ত করতে না পারায় উনি সব প্লেট ফেলে দিয়েছিলেন ।

সেই মায়ের পুত্র হয়ে আমি কিনা হরেন্দ্রর ‘ইয়ে’ ধরে বসে আছি । আমার আম্মা পারলে প্লেটের মত আমাকেও ফেলে দেয় অবস্থা । মাটিতে ঘষে ঘষে হাত ধুইয়ে আমার হাত ক্ষয় করে ফেলার জোগাড় । এর পরে ছাই , সব শেষে সোডার সাবান । মামী মামাতো বোনরা যেভাবে ছ্যা ছ্যা করছে , খেতে গিয়ে দেখি হাতের উপর আমার নিজেরই ঘেন্না লাগছে । চামচ দিয়ে কাজ সারালাম ।



আঘাত পেলাম সমবয়সী মামাতো বোনটির কথায় , সে ফরমান জারী করলো – সাবধান ! তোর ডান হাত যেন আমার গায়ে না লাগে ।‘
জামাই বউ খেলায় আমরা নিয়মিত দম্পতী , এমতাবস্থায় শুধু বাম হাতে পোষাবে ? যাক কি আর করা !
এমন সময় রিনা আরেক ফরমান পেশ করলো , আজ থেকে জামাই খলিল , তুই চাকর ! ফুট ফরমাশ খাটবি , বাজার করবি ।

পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই , ৬/৭ বছরের এই আমি তখনো মনে হয় পুরুষ হয়ে উঠিনি ; অন্য দিকে ফিরে চোখের জল মুছলাম ।

হরেন্দ্রর ''দোলবানের'' অভিশাপে ফুট ফরমাশ খাটা , বাজার করার চাকরীটা এখন আমার স্থায়ী , এমনই স্থায়ী যে এর কোন এল পি আর নাই , রিটায়ার নাই । :P :P





সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৭
৩৯টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×