চারদিকে চক চক করছে সবুজ ধানক্ষেত, তার মাঝে নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতর কয়েকটি আধাপাকা ঘর। একপাশে বাংলাদেশী বিক্রেতারা বসেছেন, অন্যপাশে ভারতীয় বিক্রেতারা। বিজিবি বা বিএসএফকে পাস বা পরিচয়পত্র দেখিয়ে বাজারে প্রবেশ করছেন ক্রেতারা।
বলছিলাম ফেনীর ছাগলনাইয়া আর ভারতের শ্রীনগর সীমান্তে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে চালু হওয়া বর্ডার হাটের কথা।
দুই দেশের সীমান্তের ঠিক মাঝে তৈরি করা হয়েছে সীমান্ত হাটের কাঠামো।বাংলাদেশ অংশে হাটে ঢুকার এক কিলোমিটার আগেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার।
এখান থেকে নিতে হয় টিকেট বা পাশ
পাশ সংগ্রহে মেয়েদের লাইন
এখানে জাতীয় পরিচয় পত্র দেখিয়ে ও ২০ টাকা ফি দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হয়। এর পর পায়ে হেঁটে,সিএনজি বা হোন্ডায় যেতে হয় বর্ডার হাটের গেট পর্যন্ত। পথিমধ্যে ৩ জায়গায় বিজিবির চেকের মুখে পড়তে হয়।
ভিতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে পশরা নিয়ে বসা সারি সারি দোকান।মাঝখানে রয়েছে সীমান্ত পিলার।পিলারে বাংলাদেশ অংশে লিখা রয়েছে বাংলা। বাংলাদেশ না লিখে বাংলা কেন তা বুঝে আসেনি। বাংলা অংশে বাংলাদেশী দোকানি আর ইন্ডিয়া অংশে ইন্ডিয়ান।এখানে এক দেশের ২৫টি করে দুদেশের মোট ৫০টি রেজিস্টার্ড দোকানী আছেন।
তালিকাভুক্ত দোকানির বাইরেও রয়েছে আরও কিছু ছোট দোকানি যারা ফলফলাদি বা ছোট একটা কার্টুনে কিছু পণ্য নিয়ে বসেছেন।একজন ক্রেতা এখান থেকে সর্বোচ্চ ২০০ ডলার সমমূল্যের পণ্য কিনতে পারেন। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার টাকা।
ভারতীয় অংশের বেশিরভাগ দোকানেই কাপড়, সাবান,ডিটার্জেন্ট, মসলা, বাচ্চাদের জিনিসপত্র, গৃহস্থালি নানা জিনিসপত্র, তেল, হরলিক্স,গূড়ো দুধ,চকলেট,চাপাতা,টুথপেস্ট,বডিস্প্রে, বিক্রি হচ্ছে।বেশি বিক্রি হতে দেখা যায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রসাধনী। বিনিময় হার অনুযায়ী, পণ্যের গায়ের দামের সঙ্গে আরো কুড়ি শতাংশ যোগ করে প্রতিটি পণ্যের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ অংশে প্রায় দোকানের মালিক মহিলা। রয়েছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। প্রতি দোকানে একজন মালিক ও দুজন সেলসম্যান রাখার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ দোকানে ৪/৫ জন সেলসম্যানকেও হিমসিম খেতে দেখা যায়।
সীমান্ত বাজারের পণ্যে দুদেশের সরকারের কোন আমদানি রপ্তানি ট্যাক্স নেই তাই ইন্ডিয়ান কোন পণ্য বাংলাদেশে যে মূল্যে বিক্রি হয়, সেটা এখান থেকে কেনা যায় প্রায় অর্ধেক দামে।অনেক দোকানেই মেয়াদউত্তির্ন পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।আমি দেখেছি একটা হরলিক্স ও একটা লিটার শ্যাম্পুর মেয়াদ ১৭ সালেই পার হয়ে গেছে। তাই কেনার সময় এক্সপায়ার ডেট দেখে নিতে হয়।
বাংলাদেশী দোকানগুলোয় বিস্কুট,চানাচুর, মাছ, প্লাস্টিক ও লোহার তৈজসপত্র,চিপ্স,এনার্জি ড্রিংক , শুটকি, পুরনো কাপড় বিক্রি করতে দেয়া যায়। খেয়াল করে দেখলাম, আমাদের দেশে ফুটপাতে যে ধরনের পণ্য বেচা বিক্রি হয়, বর্ডার হাটের বাংলাদেশি দোকানগুলি সে ধরনের পণ্যই বেশি। তবে এখানে কেনা বেচা নেই বললেই চলে। অধিকাংশ দোকান ক্রেতাশুন্য।
এ বিষয়ে বাংলাদেশি একজন দোকানীকে জিজ্ঞেস করলে জানালেন। আগে ৩/৪ হাজার টাকা বিক্রি হত।ত্রিপুরায় নতুন সরকার ক্ষমতায় আসায় সেদিকের মানুষকে বাজারে তেমন ঢুকতে দেয়া হচ্ছেনা। বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ক্রেতা এলে সেদিক থেকে আসে ১৫০ থেকে ১৭০ জন। এরাও প্রায় সকলেই দরিদ্র। ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকার ভিতর তাদের কেনাকাটা শেষ হয়ে যায় ।
আর আমাদের দেশের মানুষগুলি ২ থেকে ৩০ হাজার টাকার পণ্য কেনার প্রস্তুতি নিয়ে আসেন। আরো কয়েজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ইন্ডিয়ান দোকানিরা গড়ে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন।সেখানে বাংলাদেশিরা বিক্রি করেন ২ থেকে ৫ হাজার টাকার পণ্য।তবে ইদার্নিং গড়ে ১ হাজারও বিক্রি হচ্ছে না বলে জানালেন তারা।
মানুষ কি ধরনের ও পরিমাণে পণ্য কিনছে দেখার জন্য আমি দুদেশের বহির্গমন গেটে ৩০ মিনিট করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দেখলাম বাংলাদেশীরা প্রায় সকল ধরনের পণ্যই কিনছেন, আর ভারতীয়রা কিনে নিচ্ছেন হিদোল, ইলিশ শুটকি ও নানা প্লাস্টিক সামগ্রী।
ইদার্নিং সাংবাদিক ও বিশেষ পাস ছাড়া বর্ডার হাটের ৫ স্কয়ার কিলোমিটারের বাইরের কাউকে বাজারে ঢুকতে দেয়া হচ্ছেনা।
ইন্ডিয়ান পণ্যের পশরা
ক্রেতার চোখে ধরা পড়া ডেট এক্সপায়ার্ড একটি হরলিক্স
ইন্ডিয়ান অংশে প্রচুর ক্রেতার ভিড়
প্যাকেট ছিঁড়ে ফেলার কারণ কি? একটা প্যাকেট দেখতে চাইলে উনি লুকিয়ে ফেলেন
ইন্ডিয়ান পণ্য
ত্রিপুরায় কয়েকজন বিএসএফ জওয়ান দুপুরের খাবার এর প্রস্তুতি নিচ্ছেন
আমি দেখছিলাম, কি ধরনের পণ্য নিয়ে ঘরে ফিরছেন ভারতীয়রা
ইন্ডিয়ান জাম্বুরা পিচ ১৫ টাকা কলার কাঁদি ২০০
বাংলাদেশী দোকান। ক্রেতা নেই। জানালেন, যে সিএনজি ভাড়া দিয়ে এসেছেন তাও বিক্রি হয়নি
বাংলাদেশি দোকানে একজন ভারতীয় ক্রেতা
ক্রেতা শূন্য বাংলাদেশী দোকান।
বাংলাদেশি শুটকির দোকানে দুএকজন ক্রেতা দেখা গেছে
ইন্ডিয়ান অংশে প্রচুর ভিড়
বাংলাদেশ অংশ প্রায় ফাঁকা
একজন বাংলাদেশী ক্রেতা
ইন্ডিয়ান পণ্যের পশরা নিয়ে একজন মহিলা, স্থান-আমার ঘর
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:২২