somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শতাব্দির আলোচিত রাস্ট্রনায়ক- দেশপ্রেমিক- ফ্যাসিস্ট- এডলফ হিটলার (৪র্থ পর্ব)

০৭ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভিয়েনা, অস্ট্রো হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের রাজধানী।




এটার ছিল একটা অপুর্ব সংস্কৃতিক ঐতিহ্য, দেখেছে বিথোভেন, মোযার্টকে, আর এখন পেল এক নতুন বাসিন্দা, এজন পাতলা লিকলিকে দুঃখী চেহারার ১৮ বছরের এডলফ হিটলার।



উপরে বিথোভেন আর নীচে উলফাং আমেডিউস মোযার্ট:



শিশু মোযার্ট নীচে।



১৯০৮ সালে হিটলার আবার ভিয়েনার আর্ট স্কুলে আবার ভর্তির চেষ্টা করেন। ফলাফল যথা পুর্বং, ব্যার্থ। কতৃপক্ষ তাকে কোন প্রকার বিবেচনাতেই নেননি। এতে হিটলার খুব বিরক্ত হন। নীচে তার বন্ধু কুবিযেক:




তবে তার বন্ধু অগাস্ট কুবিযেক সংগীতে চান্স পেয়ে যান আর ভাল করেন।
যদিও তারা একসাথে শেয়ার করে থাকতেন, ঐ ফেল করার পর হঠাৎ একদিন হিটলার বন্ধুকে না বলেই উধাউ হয়ে যান। ১৯০৮ এর নভেম্বরে কুবিযেক বাসায় এসে দেখেন হিটলার কোন ঠিকানা না রেখেই গায়েব হয়ে গেছেন।



হিটলার তখন এক একা ঘুরে বেড়াতেন। তার জমানো টাকা শেষ হয়ে আসছিল, কিন্তু তবু হিটলার কোন চাকরী বাকরীর চেষ্টাই করেননি।
নিঃস্ব কপর্দহীন এডলফ হিটলার পার্কের বেন্চে ঘুমাতেন আর দ্রুতই তিনি একটা ময়লা পোষাক পড়া দুর্গন্ধযুক্ত যুবকে পরিনত হলেন।
১৯০৯ এর ডিসেম্বেরের কন কনে শীতে এডলফ হিটলারের কোন ওভারকোট ছিলনা!
শেষে অর্ধভুক্ত সহায়সম্বলহীন হিটলার শেষে এক নানের কনভেন্টে আশ্রয় নেন।



১৯১০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে হিটলার এক দরিদ্র লোকের বাসায় থাকা খাবার জন্য আশ্রয় নেন। তার কাজ ছিল শাবল দিয়ে বরফ সাফ করা অথবা রেল স্টেশনে কুলিগিরি করা। এছাড়া তার নিজের আকা ছবি বেচে কিছু আয় করতেন।
২৩ বছর পরে তিনিই জার্মানীর হর্তা কর্তা বিধাতা-- ফুয়েরার হবেন... কে জানতো?

তার ছবি বিক্রির এজেন্ট ছিলেন রেইনহোল্ড হ্যানিশ (Rhainhold Hanisch) --ছবি দেখুন:



হ্যানিশ পরে বলেছেন, হিটলার ছিলেন কিছুটা ভাবুক প্রকৃতির আর রাজনীতি নিয়ে অত্যন্ত উৎসাহী। আশে পাশের সবাইকে তিনি তার বক্তৃতা শোনাতে পছন্দ করতেন। হ্যানিশ একবার তার সাথে তর্ক করায় বেচারী হ্যানিশকে ৮ দিনের জেল খাটতে হয়। এই উপকারীকে হিটলারের নির্দেশে পরে ১৯৩৭ সালে খুন করা হয়,
কারন তিনি সাংবাদিকদের সামনে ফুয়েরার সম্পর্কে কিছু বলেছিলেন!

ঐ সময় হিটলার পৃথিবীখ্যাত দার্শনিক লেখকদের যেমন নিৎসে (১৮৪৪- ১৮৯০), হেগেল (১৭৭০- ১৮৪১), ফিশতে (১৭৬২- ১৮১৪), হাইনরিখ ফন ট্রেইটসকে (Heinrich Von Treitscchke 1853- 1927) এইচ এস চেমবারলেইনের (H.S Chamberlain) প্রচুর বই পড়েন।
নীচে ফিশতে;



হেগেলকে দেখুন:



নীচে হাইনরিখ ফন ট্রেইটসকে:



এডলফ হিটলার এই সমস্ত পন্ডিতদের লেখা পড়ে, এদের রাজনৈতিক দর্শনকে নিজের মত মেনে নিয়ে নিজেকে একজন রেসিস্ট, উগ্র জাতিয়তাবাদী জার্মানে পরিণত করেন। এটা তিনি তার 'মেইন ক্যামপফ' বইতে উল্লেখ করেছেন।

তবে প্রচন্ড দারিদ্র---- অভাব-- ক্ষুধার কষ্ট তাকে ভীষন ভাবে প্রভাবিত করে এক অন্য মানুষে পরিণত করে।
তাকে বানায় কঠিন, নিষ্ঠুর, নির্দয়, যে কোন কিছুর বিনিময়ে বাঁচার মনোভাব তার মধ্যে গেড়ে বসে, যেখানে দয়া মায়া বিবেচনার কোন স্হান ছিলনা। এটা তার জীবনের শেষ অবদি ছিল।
আর এসব না হলে হয়ত তিনি হিটলারই হতেন না।



'মেইন ক্যামপফ' বইতে হিটলার বলেছেন 'আমি কঠিন ভাবে বড় হয়েছি আর কঠিন কঠোর হতে পারি'। অনেক মনোবিজ্ঞানীরা কলেছেন হিটলারের দয়ামায়াহীন নিষ্ঠুর মানসিকতার জন্য তার ঘটনাবহুল ছেলেবেলা, বাবার কঠিন শাসন অনেকখানি অবদান রেখেছে। তবে মায়ের প্রতি ছিল তার অগাধ ভালবাসা।

২১ বছর বয়সে হিটলার রাজনীতির প্রতি আরো ঝুকে পড়েন। যে কোন শ্রমিক আন্দোলনে তাকে দেখা যেত। নীচে গোল চিহ্নিত হিটলার।



শ্রমিকদের পার্টি 'সোস্যাল ডেমোক্রাট পার্টি'র রাজনীতি নিয়ে প্রচুর পড়াশুনা করেন। সেই সাথে মাঝে মাঝে তাদের সংগঠিত করতে বেশ দক্ষতার পরিচয় দেন।
পাশাপাশি তিনি আরো দুটো পার্টি যেমন 'Pan German Nationalists' আর 'Christian Socialist Party' তাকে খুব অনুপ্রানিত করে, তাকে জার্মান জাতিয়তাবাদের দিকে ঝুকতে সহায়তা উদ্বুদ্ধ করে।



হিটলার তৎকালীন রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব 'Christian Socialist Party' এর কার্ল লুয়েগারের (১৮৪৪- ১৯১০) খুব ভক্ত ছিলেন। তার চালচলন কথাবার্তা অনুসরণ করার চেষ্টা করতেন। নীচে কার্ল লুয়েগার:


এই লোকও তার জীবনে অনেক প্রভাব ফেলেছেন।


পার্টি মিটিংএ কার্ল লুয়েগার।

১৯১৩ সালে ২৪ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হওয়া থেকে বাঁচার জন্য হিটলার ভিয়েনা ছেড়ে পালান। এভাবে তিনি মিশ্র সংস্কৃতির অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের চাকরী করা (যেটাকে তিনি খুব ঘুনা করতেন) থেকে রেহাই পান।
১৯১৩ সালের মে মাসে তিনি জার্মানীর মিউনিখে বাস করা শুরু করেন।

দুর্ভাগ্য হিটলারের,

অস্ট্রিয়ান কতৃপক্ষ ঠিকই তাকে খুজে বের করে ফেলেন। তার হয়ত জেল হতে পারে ভেবে তিনি একটা মাফ টাফ চেয়ে চমৎকার চিঠি লেখেন, অস্ট্রিয়ার কতৃপক্ষের কাছে। তার চিঠি পেয়ে আর পড়ে কতৃপক্ষ মুগদ্ধ হয়ে তাকে মাফ করে ফের ভর্তি হবার জন্য ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠায়।
আর হিটলার? অতি সহজেই ডাক্তারী পরীক্ষায় ফেল মেরে ফেরৎ আসে। ব্যাপারটা সেখানেই চুকে বুকে যায়।

মিউনিখে হিটলার তার ছবি টবি বেচেই পেট চালাতেন।

অস্ট্রিয়ার যুবরাজ হত্যাকান্ডের জের ধরে জার্মানী ১ লা আগস্ট ১৯১৪, যুদ্ধ ঘোষনা করে। শুরু হয় ১ম বিশ্ব যুদ্ধ। দুই দিন পরেই হিটলার জার্মানীর বাভারিয়া রেজিমেন্টে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন।
শুরু হল হিটলারের সৈনিক জীবন।
পরেরটুকু আরেকদিন।

** নীচে আগের তিনটা পর্বের লিংক দেয়া হল, ইচ্ছে হলে যারা আগে পড়েননি, পড়তে পারেন।

Click This Link

Click This Link

Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৫:১৫
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×