somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শতাব্দির আলোচিত রাস্ট্রনায়ক- দেশপ্রেমিক- ফ্যাসিস্ট- এডলফ হিটলার (৫ম পর্ব)

০৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকল যুদ্ধকে শেষ করার জন্য যুদ্ধ- ১ম বিশ্ব যুদ্ধ।
২৮ শে জুন ১৯১৪, অস্ট্রিয়ার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী আর্চডিউক ফ্রানয্ ফার্ডিনান্ড এক সার্বিয়ান আততায়ীর হাতে খুন হন। নিহত যুবরাজকে দেখুন নীচে:



এই ঘটনার পর জার্মানীর শাসক কাইজার উইলহেম (১৮৫৯- ১৯৪১) অষ্ট্রিয়াকে বলেন সার্বিয়াকে আক্রমন করার জন্য: নীচে কাইজার উইলহেম:



এর প্রতিবাদে রাশিয়া ফ্রান্স ব্রিটেন জার্মানীর বিরুদ্ধে সৈন্য সমাবেশ করে।
ইউরোপে তরুনরা স্বেচ্ছায় যুদ্ধে যাবার জন্য নাম লেখায় হিটলার তাদের মধ্য একজন যিনি বাভারিয়া রেজিমেন্টে কাজ করতেন। ছবিতে ডানদিকের বড় গোঁফওয়ালা তরুনটিই হিটলার:



বৃটিশদের সাথে প্রাথমিক যুদ্ধে তার রেজিমেন্টের প্রায় ৩০০০ সৈন্য মারা যায়, হিটলার আশ্চর্য জনক ভাবে অক্ষত থাকেন।

যুদ্ধে হিটলার বিভিন্ন সময়ে দক্ষতার পরিচয় দেন, কখনো ছুটি চাইতেননা, তার কোন চিঠিপত্রও আসতনা।
৭ই অক্টোবর ১৯১৬ তারিখে হিটলার পায়ে কামানের গোলার আঘাত পান এবং তাকে জার্মানীর এক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই প্রথম তিনি রণাঙ্গন থেকে দূরে গেলেন।

এরপর তাকে মিউনিখে হালকা ডিউটিতে নিয়োগ করা হয়। সেখানে তিনি বেসামরিক জার্মানদের যুদ্ধবিরোধী মনোভাব লক্ষ্য করেন, এছাড়া বেশ কিছু লোক যুদ্ধবিরোধী কাজ করছিল বলে তার কাছে মনে হল।
আর এসবের জন্য তিনি ইহুদীদেরই দায়ী মনে করলেন। এসমস্ত বিরক্তিকর জার্মানদের সংস্পর্শ থেকে দুরে থাকার জন্য তিনি আবার ফ্রন্ট লাইনে যুদ্ধে যাবার জন্য আবেদন করেন।
মার্চ ১৯১৭, হিটলার আবার সম্মুখ রণাঙ্গনে হাজির।

১৯১৮ সালের আগস্ট মাসে তাকে 'আয়রণ ক্রস প্রথম শ্রেনী' পদক প্রদান করা হয়। এটা ছিল পদাতিক সৈন্যদের জন্য একটা সত্যিকার অর্থে দুর্লভ সম্মান। আয়রণ ক্রসের ছবি দেখুন নীচে:
[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/HELLOPOP_1333881339_1-icon-ironcross-pic.jpg

এখানে একটা ব্যাপার লক্ষনীয়, যে জার্মান লেফটেন্যান্ট হিটলারকে এই পদকের জন্য সুপারিশ করেন তিনি ছিলেন একজন ইহুদী!

হিটলার মোট ৫ টা রনাঙ্গনের পদক লাভ করেন তবে কর্পোরালই থেকে যান। তার আর প্রমোশন হয়নি। কতৃপক্ষ তাকে সার্জেন্ট হবার জন্য যোগ্য মনে করেননি।
১৯১৮ সালে হিটলার ক্লোরিন গ্যাসের আক্রমনে পড়েন এবং বেশ অসুস্হ হয়ে পড়েন।

এই সময়ের মধ্যে মানে প্রায় ৪ বছরের যুদ্ধে সার্বিকভাবে বিভিন্ন কারনে জার্মানী প্রায় হেরেই গেছে, আর হিটলার তখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে ইহুদীদের এই পরাজয়ের জন্য দায়ী করে আক্রোশে ফুসতে থাকেন।

১ম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীর পরাজয়:

*বৃটিশদের প্রচন্ড অবরোধ,
*ফ্রান্স আর বৃটেনের দুঃসাহসিক বাধা,
*পরাক্রমশালি যুক্তরাস্ট্রের মিত্রশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়া,
*জার্মানীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্দশা,
*জার্মান নৌবাহিনীতে অসন্তোষ আর বিদ্রোহ আর বিভিন্ন রণাঙ্গনে শোচনীয় পরাজয় এসব............ হতাশাগ্রস্হ

জার্মান জেনারেলদের বাধ্য করে মিত্রশক্তির কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিতে। ১১ নভেম্বর ১৯১৮ প্রস্তাবটি পাঠানো হয়। জার্মান জেনারেল ছিলেন জনৈক জেনারেল জর্জ সেবাস্টিয়ান ফ্যাকেনহায়েন। ১৯১৬ সালে যুদ্ধের মাঝখানে তিনি বরখাস্ত হন আর তার জায়গায় আসেন হিন্ডেনবুর্গ।নীচে দেখুন জেনারেল জর্জ সেবাস্টিয়ান ফ্যাকেনহায়েন:



নীচে হির্ডেনবুর্গ:



জার্মানরা ঠিক পুরোপুরি সারেন্ডার করেননি, মিত্রবাহিনীও তাদের সেই অর্থে বাধ্য করেননি। এর একটা প্রভাব পরে আমরা দেখব।
মিত্রবাহিনীর এক বাহিনী যুক্তরাস্ট্রের খ্যাতনামা জেনারেলদের একজন ছিলেন জেনারেল জন জোসেফ পার্শিং (১৮৮৬- ১৯২৪), ছবি দেখুন:



জার্মান জেনারেলরা ভাবত তারা পরাজিত হয়নি, তাদের দেশের অভ্যন্তরে কিছু লোক 'তাদের পিছনে ছুরি মেরেছে'।

হিটলারও মনে করতেন যে সমস্ত রাজনীতিক ১১ নভেম্বর ১৯১৮ তারিখের যুদ্ধবিরতির চুক্তি সই করেছে তারা দেশের শত্রু --------' সংক্ষেপে
'নভেম্বর ক্রিমিনালস' ।
যুদ্ধ শেষে জার্মানীকে প্রজাতন্ত্র (?) ঘোষনা করা হল।

জর্মানীর সর্বশেষ কাইজার, কাইজার উইলহেম (Kaiser Wilhem: 1859- 1941) যিনি ছিলেন মহারানী ভিক্টোরিয়ার নাতি, তার পতন ঘটল। ছবি দেখুন:



আর সেই সাথে অটো ফন বিসমার্কের ( Otto Von Bismarck: 1815-1898)প্রতিষ্ঠিত জার্মান সাম্রাজ্যের পতন ঘটল, দেখুন বিসমার্কের ছবি:



যুদ্ধবিরতির পর জার্মানীতে এক বিশ্রি অবস্হা!

এই হট্টগোলের মধ্যে ২৮ শে জুন ১৯১৯ বিজয়ী মিত্রশক্তি প্রজাতন্ত্রী জার্মানীকে ঐতিহাসিক 'ভার্সাই চুক্তি' স্বাক্ষর করতে বলে। এটা ফ্রান্সের ভার্সাই (Versailles) নামক স্হানে স্বক্ষরিত হবার কথা:


নীচে দেখুন ঐ চুক্তির ইংরেজীতে ভাষার কপি:



এবার শুনুন ঐ চুক্তির প্রধান প্রধান কয়েকটা অংশ: এই চুক্তি মোতাবেক:-

১। যুদ্ধের পুরো দায়ভার জার্মানীকে বহন করতে হবে।

২। যুদ্ধের বিশাল ক্ষতিপূরণ জার্মানীকে বহন করতে হবে।

৩। জার্মানীর বেশ কিছু এলাকা ফ্রান্স এবং পোল্যান্ডকে দিয়ে দিতে হবে।

৪। জার্মান সেনাবাহিনীতে সর্বোচ্চ এক লাখ সৈন্য থাকতে পারবে।

৫। জার্মান সশস্ত্র বাহিনীতে কোন সাবমেরীন বা যুদ্ধবিমান থাকতে পারবেনা।

স্বাভাবিক ভাবেই জার্মান জাতি, বিশ্বের অন্যতম সেরা জাতি হিসাবে দাবিদার জাতি-- সারা বিশ্বের কাছে চরমভাবে অপমানিত হয়, হেয় হয়।

নীচে সবাই মিলে জার্মানীকে চুক্তি খাওয়াচ্ছে!!


যুক্তরাস্ট্র, বৃটেন, রাশিয়া, ইটালি জাপান সবাই মিলে বলছে এটা তোমাকে গিলতেই হবে!

কি ভয়ানক কথা!
এই অপমান জার্মানদের মনে সারাক্ষন আগুন জ্বালিয়ে রাখে। ক্ষোভ দুঃখ মনে মনে রাখে কিন্তু দ্রুতই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে শুরু করবে। হিটলার প্রায় প্রকাশ্যেই এই শৃংখল সম চুক্তির বিরুদ্ধে বলতে শুরু করেন।

১৯১৯ সালের গ্রীষ্মে সেনাবাহানীতে থাকা হিটলারকে বদলী করা হয় মিউনিখে, একজন কর্পোরাল, সেনাবাহিনীর একজন ইনফরমার।
অসাধারণ বক্তৃতা দেয়ার ক্ষমতার অধিকারী হিটলার তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সবাইকে চমৎকৃত করেন। তাকে Capt Karl Mayr নামে একজন অফিসার সবার নজরে আসতে বেশ সহায়তা করেন।

তার বিভিন্ন সময়ে বক্তৃতা শুনে লোকে ভাবত তিনি একজন জাত বক্তা।


আজ এপর্যন্তই, বকিটুকু আরেকদিন।

** যারা আগের পর্ব গুলি পড়েননি, ইচ্ছে হলে পড়তে পারেন, লিংক দেয়া হল:

১ম পর্ব: Click This Link
২য় পর্ব: Click This Link
৩য় পর্ব: Click This Link
৪র্থ পর্ব: Click This Link








সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৮:১১
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×